প্রথমে বলা হয়েছে "ভালোবাসা দিবস", এরপর এখন এটা কেবল "ভ্যালেন্টাইন্স ডে"। যিনার বিস্তার ঘটানোর জন্য আরও ডে বের করেছে সপ্তাহব্যাপী- রোয ডে, চকলেট ডে, হাগ ডে, কিস ডে ইত্যাদি। আগে ভ্যালেন্টান্স ডে কে "ভালোবাসা দিবস" নাম দিয়ে এদেশে বোঝানো হয়েছে- মায়ের ভালোবাসা, বাবার ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা ইত্যাদি। যেনো সারাবছর সবাই মারামারিতে থাকে আর একদিন ভালোবাসা ভালোবাসে। কিন্তু ক্লোজআপের মতো টুথপেস্ট ব্র্যান্ড এসে "কাছে আসার গল্পের" আহবান করতে লাগলো। এখন আর ভালোবাসা দিবস নেই- হয়ে গেছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে আর ভ্যালেন্টাইন্স ডে নেই- কিস ডের পরের সিরিয়ালে কী ডে হয়ে গেছে সামান্য ঘিলু থাকলেই বোঝা যায়। আগে এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষ্যে নাটক-বিজ্ঞাপন দিয়ে একটা ভাইভ তৈরি করা হয়েছে। এখন শহর থেকে শুরু করে গ্রামেগঞ্জে বেহায়াপনা চরম আকার ধারণ করেছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ওদিকে ভারতীয় সিনেমা এবং তার অনুকরণে বাংলা সিনেমা দেখে কোমলমতি শিশুরা "জীবনের অর্থ কী তুমি ছাড়া?" মার্কা শ্লোগান দিচ্ছে। না, এটুকুই না। এরপর যিনা-ব্যভিচার হচ্ছে। কিছুদিন পর দেখা যাচ্ছে মেয়েগুলো "প্রতারিত"। ধর্ষণ নাকি করেছে "বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে"। বাড়ছে এসব খবর। বাড়ছে এ্যাবরশন, মৃত্যু, সন্তান ফেলে দেওয়া, স্ক্যান্ডাল ইত্যাদি।
.
প্রিয় পাঠক, আল্লাহ আমাদের সবচেয়ে ভালোটা চান বলেই তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব অশ্লীলতা হারাম করে দিয়েছেন। তিনি বলে দিয়েছেন- "যিনার কাছেও যেওনা।" রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।” ( সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
.
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোন, শুধু যৌনতার খায়েশকে কেন্দ্র করে ভেসে যেতে আপনাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'আলা সৃষ্টি করেননি। বরং ইসলাম সেজন্য বিয়ের বিধান দিয়েছে। আপনার যৌবন আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যত্রতত্র ব্যয় করার জন্য তা আল্লাহ আপনাকে দেননি। বরং তা করলে যে মর্মন্তুদ শাস্তি পেতে হবে তা খুব ভয়াবহ হবে।
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "গত রাতে আমি এক স্বপ্নে দেখি দু'জন (ফেরেশতা) আমার কাছে এসে আমায় জাগিয়ে দিল এবং বলল, "সামনে চলুন।" আমি তাদের সাথে যাত্রা শুরু করলাম আর... সুতরাং আমরা এগুলাম আর চুল্লীর মতো কিছু দেখলাম ঐ চুল্লী থেকে অনেক কান্না ও শোরগোল শোনা যাচ্ছিল। আমরা এর দিকে তাকিয়ে উলঙ্গ নারী পুরুষ পেলাম যাদের নিচে থেকে আগুনের শিখা উপড়ে উঠছে। যখনই তা তাদের পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছিল তারা চিৎকার করে কান্না করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "এরা কারা"? তারা বললো, "সামনে চলুন"... আমার দু'জন সঙ্গী আমায় বললো,... আপনি চুলার মতো জায়গায় যে উলঙ্গ নারী-পুরুষকে দেখলেন এরা ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভিচারী নারী।"( সহীহ আল-বুখারী) [মূল হাদিসটা অনেক বড়। এখানে সম্পর্কিত অংশটা উল্লেখ করা হয়েছে কেবল।]
.
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, " যে ব্যাক্তি যেনা করে কিংবা মদ পান করে, আল্লাহ তার কাছ থেকে ঈমান ছিনিয়ে নেন, যে ভাবে কোন ব্যাক্তি তার জামা মাথার উপর দিয়ে খুলে ফেলে । (হাকেম)
.
আপনার যদি সামান্য পরিমাণ আল্লাহর ভয় থাকে তবে একজন নারী যিনি আপনার জন্য হালাল নয় তার সামান্য স্পর্শও আপনার জন্য মাথায় পেরেক ঠোকার চেয়ে ভয়াবহ লাগার কথা। যেমনটা বলেছিলেন ইউসুফ আলাইহিস সালাম- "আমি আল্লাহকে ভয় করি।"
.এবার আসি বাংলাদেশে এ অযাচার পাপাচারকে কারা কারা প্রমোট করছে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানী হিসেবে:
১. যায়যায়দিন:
এই পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান সর্বপ্রথম ভ্যালেন্টাইন্স ডেকে বাংলাদেশে প্রবর্তন করে। এদের কিছু অশ্লীলতা প্রমোটকারী লেখাজোখা থাকতো। যা দিয়ে প্রেম-পরকিয়া প্রমোট করা হতো।
২.নারীবাদীগণ:
এরা কোমলমতি ও ইমোশনাল মেয়েদের বিভ্রান্ত করতে দক্ষতা দেখিয়েছে। সবাই নিজের পক্ষে কথা শুনতে চায়। আপনি যদি ন্যায়-অন্যায় না বুঝেন তবে আপনি স্বাভাবিকভাবেই তা করবেন। পক্ষে মিষ্টি কথায় অন্যের চিড়ে ভেজানোর সুযোগ করে দিলে আখেরে নিজের অকল্যাণ। নারীবাদটা হলো বাইরের মুখোশ। বেশ তথ্য আছে- লম্পট ছেলেগুলো নারীবাদী সাজে প্রথমে। বিশিষ্ট নারীবাদি ইমতিয়াজ মাহমুদের সাম্প্রতিক কুকর্ম তো সবাই দেখেছেন। লম্পট ইয়াং ছেলেপেলেদের ফরম্যাটও একই।
৩. ক্লোজআপ তথা ইউনিলিভার:
এর কথা সবাই জানেন। নতুন করে বলার শুধু এটুকু আছে- দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যভিচারী-ব্যভিচারিনীদের জন্য রিকশায় ব্যভিচারের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আজ ৯ তারিখ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত। কিয়ামতের একটা আলামত হলো- যিনা ব্যভিচার প্রকাশ্যে হওয়া।
৪. এয়ারটেল:
"ভালোবাসার টানে পাশে আনে" শ্লোগান দিয়ে এরাই ফ্রি-মিক্সিংকে ডালভাত করে দিয়েছে। লজ্জাকে করে দিয়েছে তাচ্ছিল্যের বস্তু। অথচ যার ঈমান আছে সে লজ্জাশীল স্বভাবতই। লজ্জা প্রাকৃতিক। নির্লজ্জতা বিকৃতির।
৫. প্রাণ-আরএফএল:
ক্লোজআপের সঙ্গে এদের প্রতিযোগিতা যেনো। এরা এখন অনেকগুলো পণ্যের বিজ্ঞাপনে চাইছে ব্যভিচারকে উস্কে দিতে।
.
সময় এখন প্রতিরোধের। সময় এখন এর লাগাম টেনে ধরার। নইলে আল্লাহর আযাবের অপেক্ষা করতে হবে সবার। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। আমরা যে যেখান থেকে যা করতে পারি, আমাদের তাই করা উচিত বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে।
.করণীয়:
১. আপনার মসজিদের খতিব সাহেবকে অনুরোধ করুন আজ জুমু'আর বয়ানটা যাতে এ সংক্রান্ত হয়। দরকার হলে বোঝান।
২. যার যার জায়গা থেকে দাওয়াহ-নসীহাহ দিন, সতর্ক করুন। বোঝান।
৩. প্রশাসনকে খুব ভালো করে বোঝান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পারলে বোঝান। অভিভাবকদের বোঝান যে এর ফল কী পেতে যাচ্ছি আমরা।
৪. নিজের আইডি, গ্রুপ, পেইজ থেকে শুরু করে সর্বত্র প্রতিবাদ করুন।
৫. সাস্টেইনেবল প্ল্যান করুন। ভাবুন কী কী করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যাতে হিতে বিপরীত না হয়।
৬. দু'আ করুন। আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। দু'আ হচ্ছে মু'মিনের অস্ত্র।
.
যে ভাইবোনেরা প্রেম (মূলত যিনার একরূপ) নামক মিঠে আলাপে মন গলিয়ে বসে আছেন তাদের বলছি-
না, আপনার জীবন বলে আপনি যাচ্ছেতাই করতে পারেন না। আপনার দশ তলা থেকে লাফ দিতে গেলে এগিয়ে যাও বলা লোকেরা আপনার শত্রু। গালে চড় দিয়ে ফিরিয়ে আনারা আপনার বাবা-মা-শুভাকাঙ্ক্ষী। আজ না বুঝলেও কাল যখন বুঝবেন তখন ক্ষতি হয়ে যাবে অনেক বেশি। ইসলামে প্রেম আছে- তবে তা বিয়ের মাধ্যমে হালাল উপায়ে। বিয়ের আগে নয়।
#Notourculture #Boycottcloseup
#HujurHoye পেইজ থেকে সংগৃহীত