বিজ্ঞাপন দিন

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই ঈদ উত্তর সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। ব্যাংক খোলা এবং যথারীতি ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এই গ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। ঢাকার সবুজবাগ থানার রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১:b>ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার
স্মৃতি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
স্মৃতি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০

তাফসীর 'ফি যিলালিল কুরআন

 

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ24 ডেস্কঃ সাইয়্যিদ কুতুবকে জেলখানার মাঝে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এমনকি এখনো কেউ বলতে পারবে না, তাঁর কবর কোথায় অবস্থিত!!

যেদিন সাইয়্যেদ কুতুবকে হত্যা করা হলো, সেদিন মিশরের পথে পথে তাঁর রচিত তাফসীর 'ফি যিলালিল কুরআন' এর সাত অথবা আট হাজার সেট অর্থাৎ চৌষট্টি হাজার পুস্তক পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিলো।

রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, যার কাছে সাইয়্যেদ কুতুবের গ্রন্থ পাওয়া যাবে, তাকে দশ বছর জেলে রাখা হবে। সাইয়্যেদ কুতুবের গ্রন্থগুলো জাদুর মতো। যে পাঠ করে, সেই তাঁর অনুসারী হয়ে যায়।

তার শাহাদাতের ঘটনা পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন দেশের বেতারের সম্প্রচারিত হলে সবার মনে একটি প্রশ্ন উঁকি দিলো, এই ব্যক্তি কে? কেন তাকে ফাঁসি দেওয়া হলো?

সেই তাফসীর গ্রন্থটি কেমন যার কারণে তাকে ফাঁসি দেয়া হলো?

তখন বৈরুতের প্রকাশকেরা প্রকাশনা জগতে কোন খ্রিস্টান লোকসান খেলে তাকে বলতো আর তুমি যদি বাঁচতে চাও তাহলে সাইয়্যেদ কুতুবের 'ফি যিলালিল কুরআন' ছাপ। হ্যাঁ, যে বছর সাইয়েদ কুতুবকে ফাঁসি দেওয়া হলো সে বছরই তার তাফসীর গ্রন্থটির সাত সংস্করণ ছাপা হলো।

অথচ তাঁর জীবদ্দশায় মাত্র একবার ছাপানো হয়েছিল।

আর এখন তো অবস্থা এমন যে, পৃথিবীর এমন কোন প্রান্ত পাওয়া যাবেনা যেখানে সাইয়্যেদ কুতুবের এই তাফসীরগ্রন্থ গিয়ে পৌঁছে নি। এমন কোন ভাষাও পাওয়া যাবে না যে ভাষায় তা অনূদিত হয়নি।

[তাফসীরে সূরা তাওবা, শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম (রাহিমাহুল্লাহ), পৃষ্ঠা ২৮৪]

ফাঁসির আগের রাতে সায়্যিদ কুতুব (রাহিমাহুল্লাহ) কে কালিমা পড়ানোর জন্য জেলের ইমামকে পাঠানো হলো। জেলের ইমাম এসে সায়্যিদ কুতুবকে কালিমা পড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলেন।

তাকে দেখে সায়্যিদ কুতুব জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী জন্য এখানে এসেছেন?

ইমাম বললেন, আমি আপনাকে কালিমা পড়াতে এসেছি। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে আসামীকে কালিমা পড়ানো আমার দায়িত্ব।

সায়্যিদ কুতুব বললেন, এই দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে? ইমাম বললেন, সরকার দিয়েছে।
সায়্যিদ কুতুব বললেন, এর বিনিময়ে কি আপনি বেতন পান?

ইমাম বললেন, হ্যাঁ আমি সরকার থেকে বেতন-ভাতা পাই।

তখন সায়্যিদ কুতুব রহ.বললেন, কী আশ্চর্য! যেই কালিমা পড়ানোর কারণে আপনি বেতন-ভাতা পান, সেই কালিমার ব্যখ্যা মুসলিম উম্মাহকে জানানোর অপরাধেই আমাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে!

"তোমার কালেমা তোমার রুটি যোগায়,
আর আমার কালেমা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলায়!

হে আল্লাহ দয়া করে সাইয়্যেদ কতুব শহীদের(রা.) খিদমত কবুল করুন এবং ওনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসাবে কবুল করুন, আমীন।

কালেক্টেড

শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

চট্টগ্রাম ওমরগণি এমই এস কলেজের অধ্যাপনা থেকে অবসর নিলেন ড. আ. ফ. ম খালিদ হোসেন

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ24 ডেস্কঃ চট্টগ্রাম ওমরগণি এমই.এস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অবসর গ্রহন করলেন বিদগ্ধ আলিম, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক, মাসিক আত- তাওহীদ সম্পাদক ড. আ. ফ. ম খালিদ হোসেন। বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ ওই কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দীর্ঘ ২৭ শিক্ষকতার পর আজ তিনি ওই কলেজটির শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানলেন।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, আজ ৩১ জানুয়ারী’১৯ প্রথম বর্ষের অনার্সের ক্লাশ নেয়ার মাধ্যমে আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান ওমরগণি এমই.এস কলেজ থেকে বিদায় নিলাম। চেষ্টা করেও অশ্রুজল ধরে রাখা গেলো না। দেখতে দেখতেই ২৭টি বছর চলে গেল।টেরই পেলাম না। এরই নাম জীবনপরিক্রমা। কাল থেকে আর চিরচেনা ক্যাম্পাসে আসতে হবে না। সার্টিফিকেট মতে ৬০বছর পূর্ণ হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিঅনুযায়ী অধ্যাপনার আর সুযোগ থাকে না। স্মৃতিকাতরতায় আমি বিমুঢ় ও বিদায়ে বেদনাপ্লুত। পেছনে রয়ে গেল অনেক স্মৃতি, অনেক কথা, অনেক ভালবাসা। ৬জন অধ্যক্ষের বাৎসল্য ও সহযোগিতা পেয়েছি। আমার সহকর্মী অধ্যাপকবৃন্দ ও কর্মচারীরা ছিলেন সবাই আমার প্রতি আন্তরিক। সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতৃবৃন্দ আমাকে সর্বদা সমীহ ও শ্রদ্ধার চোখে দেখেছে। নতুন বিভাগীয় প্রধানকে দায়িত্ব ও একাউন্ট বুঝিয়ে দিয়েছি। ১৯৯২ সালের ২২ জুলাই অধ্যক্ষ আবদুল হাই সাহেবের সহযোগিতায় আমি এ কলেজে এসেছিলাম। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আলহামদুলিল্লাহ ২৭ বছরে আমার অর্জন অনেক। ছোট বড় বেশ ক’টি গ্রন্থ রচনা করি। কয়েকটা অনুবাদ গ্রন্থের কাজও শেষ করি। এ কলেজে শিক্ষকতাকালীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী নিয়েছি ২০০৬ সালে। কলেজে যোগ দেয়ার অব্যাবহিত পরে সারা বাংলাদেশে বক্তা ও ওয়ায়েয হিসেবে আমার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। বিদেশের সেমিনারের ব্যানারে আমার নামের সাথে কলেজের নাম লেখা থাকতো। কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে বসে আমার শিক্ষক ড. ইনাম উল হক সাহেব ও ড. শব্বির আহমদ সাহেবকে নিয়ে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের ইসলামী বিশ্বকোষ ২য় সংস্করণের ৩য় থেকে ১০ম খণ্ড সম্পাদনা করেছি। আজ তাঁরা জান্নাতবাসী।
বহু অধ্যক্ষ, সহকর্মী শিক্ষক ও কর্মচারীকে হারিয়েছি। আজ তাঁদের কথা বেশি করে মনে পড়ছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন অধ্যক্ষ এ এ রেজাউল করিম চৌধুরী, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান, অধ্যক্ষ আজিজুল বারি, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম (অর্থনীতি), অধ্যাপক আওরঙ্গজেব চৌধুরী (ব্যবস্থাপনা), অধ্যাপক গোলাম নবী (ইংরেজী), অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুছ (দর্শন), অধ্যাপক ইস্কান্দার (হিসাব বিজ্ঞান), অধ্যাপক আনোয়ারুল হক কাদেরী (ইতিহাস), অধ্যাপক আযিয উদ্দিন আহমদ (বাংলা), অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন (বাংলা), প্রদর্শক কামরুল হাসান ও প্রদর্শক মুর্শিদ কুলি। অনেকে অবসরের পর আবার অনেকে চাকুরিরত অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা তাঁদের জান্নাতবাসী করুন।
আগামী মাসে বিভিন্ন বিভাগে ১১জন নতুন শিক্ষক স্থায়ীপদে যোগ দেবেন। তালিকা এসেছে। আমরা পুরনোরা চলি যাচ্ছি, নতুনদের জন্য আসন খালি করে দিচ্ছি। এটাই পৃথিবীর চিরন্তন রীতি।এটা না মানার সুযোগ নেই। দোয়া চাই অবসর জীবন সুন্দর ও প্রীতিময় হোক, ভরে উঠুক বাকিদিন সুস্থতার স্নিগ্ধতায়।সুস্থতা সাপেক্ষে অবশিষ্ট সময় ধর্মর্চচা, ওয়ায-নসীহত, দেশভ্রমণ, অনুবাদ ও সাহিত্যচর্চায় মগ্ন থাকতে চাই। বাকি আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে।
-হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর, কক্সবাজার নিউজ ডটকম

শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮

কাদের মোল্লার উস্তাভাজি- ডাল, বৈকালিক গান এবং একটি চিরকুটের ইতিকথা... -গোলাম মওলা রনি .


আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ ছোট্ট একটি ব্যক্তিগত দায় থেকে আজকের লেখাটির অবতারণা। কাসিমপুর জেল থেকে মুক্তির দিন সকালেই ঘটলো ঘটনাটি। মুক্তি লাভের আশা আর জেল গেটে পুনরায় গ্রেফতার হবার আশংকার দোলা চলে দুলতে দুলতে আমি আমার মালপত্র গুছাচ্ছিলাম। এমন সময় লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তি আমার রুমে ঢুকে সালাম দিলো এবং বললো- কাদের মোল্লা সাহেব আপনাকে একটি চিঠিদিয়েছেন। মুহুর্তের মধ্যে আমি কিং কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়লাম। সিদ্বান্ত নিতে পারছিলাম না, চিঠিটি কি গ্রহণ করবো না ফেরত পাঠাবো। এরই মধ্যে আগন্তক টেবিলের ওপর চিঠিটি রেখে তড়িৎ গতিতে চলে গেলেন। আমি কম্পিত হস্তে চিঠিটি খুললাম। একটি ছেড়া ছোট কাগজে ৩/৪টি বাক্য লিখেছেন কাদের মোল্লা। কিন্তু বাক্যগুলোর তীর্যক অভিব্যক্তি আমাকে যারপরনাই আহত করলো।
.
সেই চিরকুটের ইতি কথা বলার পূর্বে আরো কিছু প্রসঙ্গ পাঠকগণকে জানাতে চাই-
কাসিমপুর জেলে ঢোকার পর পরই আমার জেলমেটগণের নিকট কাদের মোল্লার সম্পর্কে বহু কথা শুনছিলাম হররোজ। বিশেষ করে খাবার টেবিলে তার সম্পর্কে আলোচনা হতো সব চেয়ে বেশি। ট্রাইব্যুনালের রায়ে দোষী সাবস্ত হবার পূর্বে ডিভিশন প্রাপ্ত বন্দী হিসেবে সুরমা সেলেই ছিলেন। ডায়াবেটিসের রুগি। খাবার টেবিলে বসে প্রথমেই বলতেন কিছুই খাবেন না। তার পর একটার পর একটা খাবারের দিকে তাকাতেন। শিশুর মতো হাসি দিয়ে বলতেন মামুন- গোস্তের রংটা বোধ হয় ভালই হয়েছে। তার পর মাহমুদুর রহমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলতেন ঘ্রানটাও তো চমৎকার। মীর কাসিম বা অন্য বন্দীদের দিকে তাকিয়ে এমন ভাব করতেন যেন কাদের মোল্লা সাহেবকে খাওয়ার জন্য একটু অনুরোধ করেন। এক সময় তিনি অনুরোধে সাড়া দিয়ে খাওয়া শুরু করতেন এবং হই-হল্লোড়, হাসি- তামাসা এবং নানা রকম গল্প উপাখ্যান বলে পুরো খাবার টেবিল মাতিয়ে রাখতেন। বিষন্ন বন্দীরা তাই কাদের মোল্লার উপস্থিতিটাকে এক ধরনের প্রশান্তি হিসেবে গণ্য করতো।
.
অমি যখন জেলে ছিলাম তখন কাদের মোল্লা ছিলেন অন্য সেলে সাধারণ বন্দীদের মতো। যুদ্ধাপরাধের সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে তার প্রতি ছিলো জেল কর্তৃপক্ষের সতর্ক প্রহরা। ফলে প্রতি বিকেলে পাশাপাশি সেলের বন্দীরা নিজেদের সীমানা প্রচীরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বার্তা বলার চেষ্টা করতো আবার পুরোনো বন্দীদের কেউ কেউ রাস্তায়ও বের হয়ে আসতো। কিন্তু কাদের মোল্লাকে সেই সূযোগ দেয়া হতো না। কাদের মোল্লার সেবক সকাল বিকালে আমাদের সেলে আসতো ফ্রিজ থেকে ইনসুলিন নেবার জন্য। জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কে বা কারা যেনো সুরমা সেলে ছোট্ট একটি ফ্রিজ বসিয়েছিলো কেবল মাত্র কাদের মোল্লার ওষুধ পত্র রাখার জন্য। সেই ফ্রিজে কাদের মোল্লার ডায়াবেটিসের ওষুধ পত্র থাকতো। সেবক যখন ওষুধ নিতে আসতো তখন তার নিকট থেকে কাদের মোল্লা সম্পর্কে টুকটাক জানতে পারতাম।
.
বন্দী জীবনের নিরন্তর সময় যেনো আর কাটতে চাইতো না। ফলে আমরা সময় টুকুকে যথাসম্ভব আনন্দ মূখর করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতাম। যার যতো জ্ঞান বা প্রতিভা ছিলো- সবই উজার করে দিতাম সহযাত্রীদেরকে আনন্দ দেবার জন্য। একদিন বিকেলে বসেছিলাম সুরমা সেলের বারান্দায়। পাশাপাশি চেয়ার নিয়ে আমরা সবাই- গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, মাহামুদু রহমান, মীর কাসিম আলী আর এটিএম আজাহার। হঠাৎ নীরব হয়ে গেলাম অজানা কারনে। অর্থ্যাৎ বলার মতো কোন কথা ছিলোনা কারো মূখে। হঠাৎ মামুনই বলে উঠলো- এই সময় মোল্লা ভাই থাকলে আমাদের সবাইকে গান শোনাতেন। জামাতের লোক আবার গান গায় নাকি- মনে মনে টিটকারী কেটে জিজ্ঞাসা করলাম- কি গান গাইতেন? রবীন্দ্র সঙ্গীত- অসাধারণ তার গায়কী গলা আর সুরের ঢং- মাহমুদুর রহমান বললেন।
.
আমি নিজে টুকটাক গাইতে জানি। তাই প্রস্তাব করলাম কিছু একটা গাওয়ার জন্য। তারা আগ্রহ দেখালে আমি একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইলাম- ‘মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে চলে’। সবাই শুনলেন এবং প্রশংসা করলেন। তবে একথা বললেন যে, আমার চেয়েও কাদের মোল্লা সুন্দর করে গান করেন। তার গান পরিবেশনের সময় তিনি উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে এমনভাবে চোখের ভাব বিনিময় করেন যে শ্রোতাগণ তার সঙ্গে গুণগুনিয়ে কন্ঠ মেলাতে বাধ্য হন। ফলে পুরো অনুষ্ঠান হয়ে উঠে প্রাণবন্ত। অন্যদিকে আমি গান করি চোখ বুঝে। যখন আমার সঙ্গী-সাথীগণ যখন আমাকে চোখ খোলা রেখে আরো একটি গান গাইতে অনুরোধ করলেন তখন আমি ভারী লজ্বা পেয়ে গেলাম এবং আর এগুতো পারলাম না। ফলে তারা আবার পুনরায় কাদের মোল্লার প্রশংসা করতে থাকলেন।
একদিন আমরা সকলে খাবার টেবিলে বসে দুপুরের খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সেবকরা তখন খাবার পরিবেশনের জন্য এঞ্জাম করছিল। এমন সময় কাদের মোল্লার সেবক এসে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের নিকট ছোট একটি চিঠি ধরিয়ে দিল। চিঠিটি পড়ার পর মামুনের মূখমন্ডল ক্ষোভ, লজ্বা আর রাগে লাল হয়ে গেল। এরপর সে চিঠিটি মীর কাসেম আলীর হাতে দিল। কাসেম সাহেব চিঠিটি পড়ে কাদঁতে আরম্ভ করলেন। 
.
আমার হাতে যখন চিঠিটি এলো তখন দেখলাম কাদের মোল্লা লিখেছেন-
প্রিয় মামুন,
সালাম। নিতান্ত বাধ্য হয়েই তোমার সেবক মতির বিরুদ্ধে তোমার নিকট নালিশ জানালাম। ইদানিং কোনো জানি আমার বেশি বেশি ডাল আর উস্তা ভাজি খেতে ইচ্ছে করে। আমার নিজের অর্থ দিয়ে এসব কিনে খাওয়া যে সম্ভব নয় তা তুমি জানো। তুমি আমার জন্য এ যাবৎ অনেক কিছু করেছ- আর তাই তোমার উপর অজানা এক অধিকার জন্ম নিয়েছে। সেই অধিকার বলে আমার সেবককে বলেছিলাম চোখায় (রান্না ঘরে) যখন খাবার ভাগাভাগি হয় তখন মামুনদের ভাগ থেকে একটু ডাল আর উস্তাভাজি বেশি করে নিও আমার জন্য। কিন্তু তোমার সেবক আমাকে এই সূযোগ দেয়নি। জীবন-মৃত্যুর শেষপ্রান্তে দাড়িয়ে এই অভাগা তার ছোট ভাইয়ের নিকট একটু ডাল আর উস্তাভাজি চেয়ে যদি অন্যায় করে থাকি তবে মাফ করে দিয়ো। ইতি-
.
চিঠি পড়ে আমরা সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। মাহমুদুর রহমান সাহেব বললেন- কাল থেকে মোল্লা সাহেবের জন্য আলাদা ডাল আর উস্তাভাজি রান্না হবে। সব বিল আমি দেব। মামুন ক্রোধে কাঁপছিল আর সেবককে শাসাচ্ছিল। আর অন্যরা একধরনের বিষন্নতার নষ্টালজিয়ায় ভুগতে লাগলাম।
.
এবার আমি বলছি- আমার কাছে লিখা কাদের মোল্লার চিরকুট কাহিনী। তিনি লিখেছেন-
.
প্রিয় রনি,
যদি কখনও সময় পাও এবং তোমার ইচ্ছা হয় তবে আমার ফাঁসির পর একবার হলেও বলো বা লিখো- কাদের মোল্লা আর কসাই কাদের এক ব্যক্তি নয়। আমার আত্মা কিয়ামত পর্যন্ত কাঁদবে আর কসাই কাদের তখন কিয়ামত পর্যন্ত হাসবে।

মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭

১২ই ডিসেম্বর আব্দুল কাদের মোল্লার শাহাদত দিবস


আমাদের বাংলাদেশ অনলাইন নিউজঃ শহীদ কাদের মোল্লা ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার দিন তার স্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি তার অনেক ইচ্ছের কথাও জানিয়েছেন। পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন কেন তার ফাঁসি হচ্ছে, কারা করছে, কারা ছক করেছেন। চিঠিতে তিনি লিখেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং আওয়ামী লীগকে শুধু সাহস দেননি, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও চাপ দিয়েছেন। জামায়াত-শিবিরের ক্ষমতায় আসার ভয়ও দেখিয়েছেন। আরো লিখেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে এটার সবটা ছকই ভারতের অঙ্কন করা। ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করে সরকার। আব্দুল কাদের মোল্লা চিঠিটি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে লেখা শুরু করেছেন। সেখানে তার স্ত্রীকে প্রিয়তমা জীবন সাথী পেয়ারী সম্বোধন করে সালাম দিয়েছেন। আট প্যারার চিঠিতে লিখেছেন, "আজ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর খুব সম্ভব আগামী রাত বা আগামীকাল জেলগেটে আদেশ পৌঁছার পরই ফাঁসির সেলে আমাকে নিয়ে যেতে পারে। এটাই নিয়ম। সরকারের সম্ভবত শেষ সময়। তাই শেষ সময়ে তারা এই জঘন্য কাজটি দ্রুত করে ফেলার উদ্যোগ নিতে পারে। আমার মনে হচ্ছে তারা রিভিউ পিটিশন গ্রহণ করবে না। যদি করেও তাহলে তাদের রায়ের কোনো পরিবর্তন হওয়ার দুনিয়ার দৃষ্টিতে কোনো সম্ভাবনা নেই। মহান আল্লাহ যদি নিজেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ইচ্ছোর বিরুদ্ধে তার সিদ্ধান্ত কার্যকর করেন, তাহলে ভিন্ন কথা। অথচ আল্লাহর চিরন্তন নিয়মানুযায়ী সব সময় এমনটা করেন না। অনেক নবীকেও তো অন্যায়ভাবে কাফেররা হত্যা করেছে। রাসুলে করীম (সা.)-এর সাহাবায়ে কেরাম এমনকি মাহিলা সাহাবীকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। আল্লাহ অবশ্য ওই সমস্ত শাহাদাতের বিনিময়ে সত্য বা ইসলামকে বিজয়ী করার কাজে ব্যবহার করেছেন। আমার ব্যাপারে আল্লাহ কী করবেন তা তো জানার উপায় নেই। দ্বিতীয় প্যারায় তিনি লিখেছেন, "গতকাল ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং এসে আওয়ামী লীগকে শুধু সাহস দেন নাই, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও চাপ দিয়েছেন এবং সতর্ক করার জন্য জামায়াত শিবিরের ক্ষমতায় আসার ভয়ও দেখিয়েছেন। এতে বুঝা যায় যে জামায়াত এবং শিবির ভীতি এবং বিদ্বেষ ভারতের প্রতি রক্তকণায় কিভাবে সঞ্চারিত। আমিতো গোড়া থেকেই বলে আসছি, আমাদের বিরুদ্ধে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে এটার সবটা ছকই ভারতের অঙ্কন করা। আওয়ামী লীগ চাইলেও এখান থেকে পেছাতে পারবে না। কারণ তারা ভারতের কাছে অাত্মসমর্পণের বিনিময়েই এবার ক্ষমতা পেয়েছে। অনেকেই নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে কথা বলেন, আমাকেসহ জামায়াতের সকলকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে যে কায়দায় জড়ানো হয়েছে এবং আমাদের দেশের প্রেসের প্রায় সবগুলোই সরকারকে অন্যায় কাজে সহযোগিতা করছে, তাতে সরকারের পক্ষে নীতি-নৈতিকতার আর দরকার কী? বিচারকরাই স্বয়ং.. তাতে স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের আশা অন্তত এদের কাছ থেকে করা কোনোক্রমেই সমীচীন নয়। তবে একটি আফসোস যে, আমাদেরকে বিশেষ করে আমাকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে তা জাতির সামনে বলে যেতে পারলাম না। গণমাধ্যম বৈরী থাকায় এটা পুরোপুরি সম্ভবও নয়। তবে জাতি পৃথিবীর ন্যায়পন্থী মানুষ অবশ্যই জানবে এবং আমার মৃত্যু এই জালেম সরকারের পতনের কারণ হয়ে ইসলামী আন্দোলন অনেক দূর এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এর পরই তিনি লিখেছেন, কালই সূরা আত-তাওবার ১৭-২৪ আয়াত পড়লাম। ১৯নং আয়াতে পবিত্র কাবা ঘরের খেদমত এবং হাজিদের পানি পান করানোর চাইতে মাল ও জান নিয়ে জেহাদকারীদের মর্যাদা অনেক বেশি বলা হয়েছে। অর্থাৎ স্বাভাবিক মৃত্যুর চাইতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আল্লার দেয়া ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা অর্থাৎ ইসলাম প্রতিষ্ঠার জেহাদে মৃত্যুবরণকারীদের আল্লাহর কাছে অতি উচ্চ মর্যাদার কথা আল্লাহ স্বয়ং উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ নিজেই যদি আমাকে জান্নাতের মর্যাদার আসনে বসাতে চান তাহলে আমার এমন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। কারণ জালেমের হাতে অন্যায়ভাবে মৃত্যুতো জান্নাতের কনফার্ম টিকিট। এরপর তিনি লিখেছেন, সম্ভবত ১৯৬৬ সালে মিসরের শাসক কর্নেল নাসের। সাইয়্যেদ কুতুব, আব্দুল কাদের আওদাসহ অনেককে ফাঁসি দিয়েছেন। ‘ইসলামী আন্দোলরে অগ্নিপরীক্ষা’ নামক বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষাশিবিরে বক্তব্য শুনেছি। একাধিক বক্তব্যে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব বাম হাতটা গলার কাছে নিয়ে প্রায়ই বলতেন, ওই রশিতো এই গলায়ও পড়তে পারে। আমারও হাত কয়েকবার গলার কাছে গিয়েছে। এবার আল্লাহ যদি তার সিদ্ধান্ত আমার এবং ইসলামের অগ্রগতির সাথে সাথে জালেমের পতনের জন্য কার্যকর করেন, তাহলে ক্ষতি কি? শহীদের মর্যাদার কথা বলতে গিয়ে রাসুলে করিম (সা.) বারবার জীবিত হয়ে বারবার শহীদ হওয়ার কামনা ব্যক্ত করেন। যারা শহীদ হবেন জান্নাতে গিয়েও তারা আবার জীবন এবং শাহাদত কামনা করবেন। আল্লাহর কথা সত্য, মুহম্মাদ (সা.) এর কথা সত্য। এ ব্যাপারে সন্দেহ করলে ঈমান থাকে না। এরা যদি সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলে তাহলে ঢাকায় আমার জানাজার কোনো সুযোগ নাও দিতে পারে। যদি সম্ভব হয় তাহলে মহল্লার মসজিদে এবং বাড়িতে জানাজার ব্যবস্থা করবে। পদ্মার ওপারের জেলাগুলোর লোকেরা যদি জানাজায় শরিক হতে চায় তাহলে আমাদের বাড়ির এলাকায় যেন আসে। তাদেরকে অবশ্যই খবর দেয়া দরকার। তিনি তার কবর দেওয়ার ব্যাপারে লিখেছেন কবরের ব্যাপারে তো আগেই বলেছি আমার মায়ের পায়ের কাছে। কোনো জৌলুসপূর্ণ অনুষ্ঠান বা কবর বাঁধানোর মতো বেদআত যেন না করা হয়। সাধ্যানুযায়ী ইয়াতিমখানায় কিছু দান-খয়রাত করবে। ইসলামী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করবে। বিশেষ করে আমার গ্রেপ্তার এবং রায়ের কারণে যারা শহীদ হয়েছে, অভাবগ্রস্ত হলে ওইসব পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। হাসান মওদুদের পড়াশোনা এবং তা শেষ হলে অতি দ্রুত বিবাহ শাদির ব্যবস্থা করবে। নাজনীনের ব্যাপারেও একই কথা। পেয়ারী, হে পেয়ারী, তোমাদের এবং ছেলেমেয়ের অনেক হকই আদায় করতে পারিনি। আল্লাহর কাছে পুরস্কারের আশায় আমাকে মাফ করে দিও। তোমার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করছি যদি সন্তান-সন্ততি এবং আল্লাহর দ্বীনের জন্য প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আল্লাহ যেন আমার সাথে তোমার মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা করেন। এখন তুমি দোয়া করো, যাতে আমাকে দুনিয়ার সমস্ত মায়া-মহব্বত আল্লাহ আমার মন থেকে নিয়ে শুধু আল্লাহ এবং রাসুলে করীম (সা.)-এর মহব্বত দিয়ে আমার সমস্ত বুকটা ভরে দেন। ইনশাআল্লাহ, জান্নাতের সিঁড়িতে দেখা হবে। চিঠিতে তিনি ইতি টেনেছেন এটা বলে যে, সন্তানদের সবসময় হালাল খাওয়ার পরামর্শ দিবে। ফরজ, ওয়াজিব, বিশেষ করে নামাজের ব্যাপারে বিশেষভাবে সকলেই যত্নবান হবে। আত্মীয়-স্বজনদেরও অনুরূপ পরামর্শ দিবে। আব্বা যদি ততদিন জীবিত থাকেন তাকে সান্ত্বনা দিবে। তোমাদেরই প্রিয় আব্দুল কাদের মোল্লা।

বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

একজন দেশপ্রেমিক মীর কাসেম আলী ও বিত্ত-বৈভবের গল্পগুজব -মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন


আমাদের বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ  গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ শনিবার, রাত ১০.৩৫ টা। মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণে গুণান্বিত, সজ্জন, সদালাপি, পরোপোকারী ব্যক্তি, একজন খ্যাতিমান সৎ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, শান্তিপ্রিয় মানুষ জনাব মীর কাসেম আলী। মীর কাসেম আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস, একজন যোগ্য সংগঠক, এক ক্ষণজন্মা যুগ স্রষ্টার নাম। তিনি ছিলেন একাধারে একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা। 

বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে মীর কাসেম আলীর বিত্ত-বৈভব নিয়ে হইচই লাগিয়ে দিয়েছে। তারা আংশিক সত্য বহুলাংশ অসত্যের মিশ্রণে এক মুখরোচক খিচুড়ি পাকানোর আয়োজনে ধুমধাম ফেলে দিয়েছে। শুধু একশ্রেনীর মিডিয়াই নয়, দলকানা কিছু চিহ্নিত মানুষ অব্যাহতভাবে গোয়েবলসীয় কায়দায় অপপ্রচার চালিয়েই যাচ্ছেন। 

তাদের বর্ণনায় আংশিক সত্য যে আছে তা ঠিক। মীর কাসেম আলী সাহেবের প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব, উৎসাহ উদ্দীপনা ও সহযোগীতায় এদেশে অসংখ্য ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সেবা-প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা বিদেশে চিকিৎসার জন্য ব্যর্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় যাতে মারা না যান, সেজন্য ঢাকায় প্রথম আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল ইবনে সিনা গড়ে তুলেছিলেন মীর কাসেম আলী। তার পথ ধরে অনেকেই পরে বড়-বড় হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন। এক শ্রেণির মিডিয়ার অপপ্রচার, মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তির হাত থেকে জাতিকে রক্ষা, সত্য ও সুন্দরের প্রকাশে ভূমিকা রাখার জন্য তিনি মিডিয়া গড়ে তুলেছিলেন। যা ইতিমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যদিও টিভি চ্যানেলটি সরকারের রোষানলে পড়ে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি গড়ে তুলেছেন ইসলামী ব্যাংক, যা কিনা বিশ্বের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম সারির মর্যাদা লাভ করেছে। যে ব্যাংকের মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্রতা ও বৈষম্য গুছাতে প্রয়াস চালিয়েছিলেন তিনি। 

আজকে তাঁর প্রতিপক্ষদের পক্ষ থেকে তার এই যুগান্তকারী দেশের উন্নতিতে বিরাট অবদান রাখার সাক্ষী এসব কার্যক্রমকে ভিন্নভাবে চিত্রায়িত করা হচ্ছে। তার এসব উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের ইতিবাচক মূল্যায়ন না করে তারা জাতির সামনে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলতে চাচ্ছে, তিনি সামান্য থেকে বিরাট ধনকুবের হয়ে গিয়েছেন। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, গোটা বাংলাদেশের সম্পদ যদি এক পাল্লায় তোলা হয় আর অপর পাল্লায় উঠানো হয় মীর কাসেম সাহেবের ধন-সম্পদ, তাহলে ঐ চিহ্নিত মহলের বর্ণনা মতে, মীর কাসেম সাহেবের সম্পদের পাল্লাই ভারি হয়ে যাবে। 

আসলে কি তাই! মিডিয়ার বন্ধুদেরকে অনুরোধ করতে চাই, যাকে ঘিরে আপনারা এই রমরমা, মুখরোচক, জগাখিচুরী মার্কা ব্রিফিং চালিয়ে যাচ্ছেন, সত্যকে অনুসন্ধান ও অনুধাবন করার জন্য তার সাথে আপনাদের সাক্ষাৎ হয়তোবা আর হবে না। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি, ছোট ছেলে, তাঁরই মামলার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য ব্যারিষ্টার আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)-এর সাথে যোগাযোগ করলে তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাবসহ সার্বিক তথ্য আপনারা জানতে পারবেন।

কিন্তু এ ব্যাপারে আপনাদের কিছু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আপনারা সেই ত্যাগ স্বীকার করতে পারবেন। কারণ বিগত কয়েক বছর মীর কাসেম সাহেবের অর্থ বিত্ত-বৈভব অনুসন্ধানের পিছনে ও তাঁর তথাকথিত অপরাধ খুঁজে বের করার নামে আপনারা যে সময়, শ্রম, মেধা ও আরাম-আয়েশের কুরবানী করেছেন, তা ইতিহাসে সমুজ্জল হয়ে না থাকলেও মানুষের স্মৃতি থেকে বিস্তৃত হবে না। আপনারা এত কষ্ট যখন করেছেন, আরেকটু ধৈর্য্য সহকারে ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে প্রকৃত সত্য জানার উদ্দেশ্যে মীর কাসেম আলী সাহেবের নিখোঁজ ছেলে ব্যারিষ্টার আরমানের অবস্থান নির্ণয়ে ভূমিকা পালন করুন। 

উল্লেখ্য গত ৯ আগষ্ট মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিষ্টার আরমানকে রাতের আধাঁরে সাদা পোষাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তার বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও সরকারের কোন বাহিনী তার দায়িত্ব স্বীকার করেনি এবং তাকে আদালতেও উপস্থাপন করেনি। 

জনাব মীর কাসেম আলী সাহেবের সাথে তাঁর পরিবার ও স্বজনদের জেলখানায় সর্বশেষ যে সাক্ষাৎ হয়েছিলো, সে সময় ব্যারিষ্টার আরমান ছিলেন অনুপস্থিত। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মীর কাসেম আলীর সহধর্মীনি খন্দকার আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “মীর কাসেম আলী স্বাভাবিক ও সুস্থ আছেন। তার শহীদি মৃত্যু হবে এই আনন্দে তিনি উজ্জীবিত। কিন্তু তাঁর ছেলে ও তার আইনজীবী ব্যারিষ্টার আরমানের জন্য তিনি উদ্বিগ্ন।” তাই আবারো মিডিয়ার বন্ধুদেরকে অনুরোধ করবো, যেভাবে মীর কাসেম সাহেবের বিত্ত-বৈভব ও তথাকথিত অপরাধ অনুসন্ধানে গায়ে-গতরে খেটে চেষ্টা চালিয়েছেন, ঠিক ততটুকু সম্ভব না হলেও বিবেকের দায়িত্ববোধ থেকে বিদায় বেলায় মীর কাসেম আলী তাঁর ছেলে ব্যারিষ্টার আরমানকে নিয়ে যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, একটু করে হলেও প্রতিটি নিউজ আওয়ারে তা প্রচারের ব্যবস্থা করুন। এই প্রচেষ্টার পাশাপাশি যতদিন পর্যন্ত ব্যারিষ্টার আরমানকে পাওয়া না যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আপনাদের অনুসন্ধানী রিপোর্টের মাধ্যমে ও বিভিন্ন প্রোগ্রাম শেষে মন্ত্রীদের সামনে গিয়ে ঠেলাঠেলি করে মাইক্রোফোন এগিয়ে দিয়ে যেভাবে প্রশ্ন করেছেন, কবে মীর কাসেমের রায় কার্যকর হবে? ঠিক একইভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করুন কবে মীর কাসেম আলী সাহেবের ছেলে ব্যারিষ্টার আরমান ফিরে আসবে কিংবা তার সন্ধান পাওয়া যাবে। 

মিডিয়ার বন্ধুদেরকে আবারো অনুরোধ করতে চাই, আপনারা পূর্ব ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ ও অনুসন্ধানী মন নিয়ে প্রকৃত তথ্য জানার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করুন, তাহলে জানতে পারবেন, মীর কাসেম আলী সাহেবের পরিবার আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই চলে। কেউ বলতে পারবে না মীর কাসেম আলী সাহেবের পরিবারে বিলাসিতা ছিলো বা আছে। তার সন্তানেরা রাজকীয় হালে বড় হয়নি। অতি সাধারণ একজন হিসেবে বড় হয়েছে। তারা কেউই গাড়ি হাকিয়ে চলে না, বিশাল অট্টালিকার মালিক নয়। ঢাকার মীরপুরে যে বাড়িটি তাদের রয়েছে, সেটি মীর কাসেম আলী সাহেবের পিতার হাতে ক্রয় করা ও তাঁর হাতেই তৈরি হয়েছিলো এই বিল্ডিং। মীর কাসেম বা তার পরিবারের কারো নামে বিদেশে কোন একাউন্ট নেই। দেশে তার বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে কতটি একাউন্ট ও তাদের কত টাকার ডিপোজিট আছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করা কোন কঠিন কাজ না। জাতি কেন তথ্যভিত্তিক সঠিক রিপোর্ট পাবে না? জাতিকে সঠিক তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা কখনই কাম্য নয়। বাগাড়াম্বর আর বিভ্রান্তি ছড়ানো ছাড়া প্রকৃত সত্য উদঘাটনের সাহস অনেকেরই নেই তা জাতি জানে। 

পূর্বে উল্লেখ করেছিলাম, মিডিয়ার আংশিক সত্য প্রকাশের কথা। তারা যা প্রচার ও প্রকাশ করেছে তার আংশিক সত্য এভাবে বলা যায় যে, হ্যাঁ! মীর কাসেম আলী অনেক কিছু করেছেন এটা সত্য। তিনি একজন যোগ্য সংগঠক হিসেবে যেখানেই হাত দিয়েছেন আল্লাহর রহমতে সেখানেই সোনা ফলেছে। তবে তিনি যা করেছেন তার নিজের ও পরিবারের জন্য নয়, সবই করেছেন দেশ ও জনগণের জন্য। তিনি নিজে যা করেছেন, ব্যক্তিগতভাবে কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা কেউ এসবের মালিক নন। তিনি ছিলেন উদ্যোক্তা আর এসবের সেবক মাত্র। 

মীর কাসেম আলী একজন নিষ্ঠাবান ঈমানদার ও সাচ্চা দেশপ্রেমিক আল্লাহর এক বান্দা। তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। সেই লক্ষ্যে সকল লোভ-লালসার উর্ধ্বে থেকে নিঃস্বার্থভাবে দেশে ও মানবতার উন্নয়নে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এটাই কি তাহলে তার অপরাধ?

প্রকৃতপক্ষে হত্যা, খুন, নির্যাতনের যে অভিযোগ সরকার তার বিরুদ্ধে দাড় করিয়েছে, তা শতভাগ বানোয়াট।এর মধ্যে সত্যের লেশমাত্র নেই। তিনি যদি প্রকৃত অপরাধী হতেন, তাহলে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১২ সালে তাকে গ্রেফতার করার পূর্ব পর্যন্ত অসংখ্যবার বিদেশ সফরে গিয়েছেন। তিনি নিজেকে অপরাধী ভাবলে বিদেশে গিয়ে দেশে ফেরত না আসলেই পারতেন। কিন্তু তিনি তো তা করেননি। তিনি তো পালিয়ে ছিলেন না। প্রকাশ্যে থেকেই দেশ, জাতি ও মানবতার সেবায় নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। 

যারা প্রচার করছেন মীর কাসেম আলী জামায়াতে ইসলামীর অর্থের যোগানদাতা, তাদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনাদের এই তথ্যের উৎসটা কি তা জাতিকে মেহেরবাণী করে জানাবেন। আপনাদের এই বক্তব্যের তথ্য সূত্র যদি হয় ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনাসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যা তিনি করেছেন দেশের মানুষের জন্য। এটাকে যদি আপনারা জামায়াতের সম্পত্তি হিসেবে চিত্রায়িত করতে চান, তা সত্যের অপ্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। যে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দেশের ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠী উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি আপনাদের মুরুব্বীদের দল ও তাদের সমর্থকগোষ্ঠীর উপকারভোগীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, এটাও আপনাদের মনে রাখতে হবে। একটু অনুসন্ধানী মন নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করলে বুঝতে পারবেন, দলগতভাবে উপকারী হিসেবে জামায়াত নয় বরং উনাকে যারা প্রতিপক্ষ ভাবেন তাদের দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক গোষ্ঠীর পার্সেন্টিসের পাল্লা-ই ভারী হবে।

সুতরাং আসুন আর পারস্পরিক কাঁদা ছুড়াছুড়ি ও বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে কাউকে কোন রকম সুযোগ না দিয়ে বরং প্রকৃত তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করে মিডিয়াকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের যে মর্যাদা দেয়া হয়, সেটাকে অক্ষুণ্ণ রাখি এবং মিডিয়ার মাধ্যমে গণমানুষের কল্যাণ ও পাহারাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই। 

মীর কাসেম আলী সাহেবদের আসল অপরাধ কী তা আমরা জানি! তাঁর অপরাধ তিনি হত্যাকারী তা নয়। তার আসল অপরাধ পবিত্র আল কুরআনের ভাষায়- “ওই ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্রুতার এ ছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে তারা মহাপরাক্রান্ত-মহামহিম, স্ব-প্রসংশিত সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল।” (সূরা বুরুজ-৮)। 

মীর কাসেম আলী সাহেবের অপরাধও একটি তিনি ইসলামের সৌন্দর্যকে ধারণ করে সকল লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে নিজেকে একজন নিঃস্বার্থপর পরোপোকারী মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। এই অপরাধে শুধু মীর কাসেম আলীই নন, যুগে-যুগে শহীদ হাসানুল বান্না (র), সাইয়েদ কুতুব শহীদ (র), মাওলানা মওদূদী (র), অধ্যাপক গোলাম আযম (র), শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (র), শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (র), শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা (র)-দেরকে জালিমের খঞ্জরের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

ইসলামের পথে চলার অপরাধ! যেই করবেন, তাকেই এই পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হবে এটাই চির সত্য। আর এ পথ ধরেই মুমিনরা সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যারা মুমিনদের ওপর যুগে-যুগে নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাধ্যমে তাদেরকে হত্যা করে দুনিয়া থেকে বিদায় করে সাময়িকভাবে উল্লাসে মেতে উঠে, তাদের পরিণতি কি হবে? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, “আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কোন মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার ওপর আল্লাহর গজব ও তাঁর লানত এবং আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।”(নিসা- ৯৩) 

সুতরাং হত্যাকারীদের পরিণতিও সুস্পষ্ট। তাদের আজকের এই বেপরোয়া আচরণের জন্য ইহকালে ইতিহাসের কাঠগড়ায় অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। আর অপরাধীদের পরকালের শাস্তি তো আল্লাহর কাছে নির্ধারিত আছেই।

মীর কাসেম আলীর সাথে পরিবার-পরিজনের সাক্ষাৎ শেষে, ফিরে এসে তাঁর সহধর্মীনি খন্দকার আয়েশা খাতুন বলেন, “মীর কাসেম আলী মৃত্যুর ভয়ে ভীত নন, বরং শাহাদাতের অমীয় সুধা লাভের জন্য তিনি উদগ্রীব। তিনি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রীসংস্থাসহ ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামীদের প্রতি সালাম জানিয়ে বলেছেন, “ফাঁসি দেখে ভয় পেয়ো না, হতাশ হয়ো না। শহীদি রক্তে স্নাত ভূমি ইসলামের জন্য সতেজ আরো উর্বর হয়। তাতে কালেমার পতাকা শক্ত হাতে দৃঢ়ভাবে পুঁতে দিতে পারবে অক্লেশেই ইনশাল্লাহ।” 

তাই আসুন, শহীদ মীর কাসেম আলী সাহেবের প্রত্যাশিত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি আজীবন যে পথে অবিরাম সংগ্রাম করেছেন, সেই পথ তথা মহান আল্লাহর রাস্তায় চলার প্রত্যয়কে আরো শাণিত করি। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তাঁর কামনা অনুযায়ী শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন। আমীন।।

শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৫

শুধু ছবি নয়, এ হচ্ছে ইতিহাসঃ


এই দূর্লভ ছবিটির সময়কাল ১৯৭৬ সালের শুরুর দিকে। জিয়াউর রহমান সবে মাত্র বাংলাদেশের দ্বায়িত্ব গ্রহন করেছেন। এসময় এক অনুষ্ঠানে ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরায় এভাবেই ধরা পড়লেন এই অনন্য সাধারন জুটি।
সম্ভবত এখন পর্যন্ত দুনিয়ায় যে গুটি কয়েক দম্পতির দুই জনই একই দেশের সরকার প্রধান হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন , জিয়া এবং বেগম জিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম।
শহীদ জিয়ার রুহের মাগফেরাতে দোয়া চাইছি এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ ও দির্ঘায়ু কামনা করছি, আমীন।

ক্যাপ্টেইন (অবঃ)মারুফুর রহমান রাজু

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৫

আনন্দের ঈদ, আজ নিরানন্দ ... আবদুল্লাহিল আমান আযমীর ফেইসবুক স্ট্যাটাস

ঈদের নামায শেষে দোয়া পরিচালনা করছেন
“রমযানের ঐ রোজার শেষ এলো খুশীর ঈদ” .........
ঈদ মুবারাক ...... ঈদ মুবারাক ...... ঈদ মুবারাক ...... আসসালাম।
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে উৎসব। আজ ঈদ এসেছে সব ঘরে ঘরে, বিশ্ব মুসলিমের আজ আনন্দের দিন, সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন। কিন্তু, বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বের হাজারো পরিবারে আজ ঈদের আনন্দ নেই! বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি-হানাহানি-খুনাখুনি, যুলুম-নির্যাতন-সন্ত্রাস মানুষের সুখ-শান্তি কেড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের চারিদিকে, আমাদেরই আশেপাশে আজ কত পরিবারে বেদনার হাহাকার, কস্টের আহাজারি, অসহায়ের আর্তনাদ – ঈদের আনন্দ কি আছে তাদের ঘরে, অন্তরে? আমাদের পরিবারের অবস্থাও একই – আমাদের ঘরে, অন্তরে আজ বেদনার কান্না, চাপা কস্ট, কারণ আমাদের সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে প্রিয়, সর্বাধিক ভালবাসা ও শ্রদ্ধার মানুষটি আমাদের মাঝে আজ নেই। তাই, আজকের দিনটা আমাদের জন্য আনন্দের না হয়ে বেদনার দিন, নিরানন্দের দিনে হয়েই থাকছে।
নামায শেষে পারিবারিক কবরস্থান যিয়ারত
বাবাকে ছাড়া জীবনের এই প্রথম ঈদের দিন দেশে-বিদেশে আমাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের আসল আনন্দের দিন হতে পারেনি, হওয়া সম্ভব ছিলনা। যেই মানুষটা ছিল পরিবারের সকলের মধ্যমণি, বৃহত্তর পরিবারের সকলের অন্তরে বিশাল এক জায়গা নিয়ে এক বটবৃক্ষের মত, ছোট-বড় সকলের একান্ত আপন, তিনি আজ সবাইকে ফেলে রেখে তাঁর প্রিয় স্রস্টার সান্নিধ্যে; আর এদিকে আমাদের সবার মনের মাঝে বিরাজ করছে এক বিশাল শূন্যতা, ফাঁকা লাগছে সবকিছুই। উনার অবস্থান তো আর কাউকে দিয়ে পূরণ হবার নয়!
সেই ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, জেনেছি, উপভোগ করেছি - ঈদ মানে চরম উত্তেজনাকর এক অনুভূতি, অবাধে ‘বৈধ’ সকল আনন্দ করার লাইসেন্স। ঈদ-উল-ফিতরের (রমযানের ঈদ) চাঁদ দেখা থেকে পরদিন সারাদিন ঘুরে বেড়ানো এবং মজাদার সব খাবার খাওয়ার উত্তেজনা ও আনন্দ ছিল মাত্রাহীণ। “মহাকবি” নজরুলের (আমি তাঁকে “মহাকবি বলি”, “বিদ্রোহী কবি” বলিনা। আমি মনে করি নজরুলের প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে বেশী ছিল। নজরুলকে কেবলমাত্র “বিদ্রোহী”কবি আখ্যা দিয়ে সীমিত গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে রেখে, রবীন্দ্রনাথকে “বিশ্বকবি”আখ্যা দিয়ে “ভগবান”এর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে। এগুলো একশ্রেণীর বিকারগ্রস্থ লোকের মানসিক রোগের বহিঃপ্রকাশ। নজরুল ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন; নজরুলকে “বিদ্রোহী কবি” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল তাঁকে খাটো করার উদ্দেশ্যে। এ নিয়ে কারো ভিন্নমত থাকতেই পারে। আমি বিতর্কে যেতে চাইনা; দয়া করে এ নিয়ে যুক্তিতর্ক শুরু করবেন না।) “রমযানের ঐ রোজার শেষ এলো খুশীর ঈদ” গানটি আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলের মনেই এক নাচন ধরিয়ে দেয়, দিচ্ছে গত ৭০/৮০ বছর হতে।
আমি একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছি। দাদা সহ বাবা-চাচা-ফুফু সকলেই পাশাপাশি থাকি। দাদার ছোট ভাই, আব্বাদের ছোট চাচাও পাশেই থাকেন। একেক বেলা ৫০ থেকে ৬০ জনের খাবার রান্না হতো। বাসায় ফল ও সব্জী বাগাণ ছাড়াও দাদার নাতি-নাতনীদের সব কিছু খাঁটি খাওয়ানোর ইচ্ছা থেকে বাসায় গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী, কবুতর ইত্যাদি লালন-পালন করা হতো। শুনেছি সব মিলিয়ে কাজের লোকই ছিল ১৭ জন! তিন বিঘা জমির উপর পাশাপাশি সবার বাসা, কিন্তু একত্রে, দাদা-দাদু আর বড় বউ হিসেবে আমার মা এর তত্বাবধানে বাজার-রান্না-খাওয়া হতো; এক হুলুস্থুল অবস্থা। সবার বাসায় অবাধে যাতায়াতের জন্য ভিতর দিয়ে পকেট গেইট ছিল।
আমার সাথে কোলাকুলির পর হ্যান্ড শেইক
এই পরিবেশে প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় শাওয়ালের চাঁদ দেখার সে যে কি আনন্দ ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। চাঁদ দেখার পর সব কাজিনরা মিলে এ মাথা থেকে ও মাথা, এ বাড়ী থেকে সে বাড়ী দৌড়াদৌড়ি আর হৈ চৈ করার মধ্যেই ছিল আমাদের বিশাল আনন্দ! টিভি পুরা মহল্লা জুড়ে কেবল এক বাসায়; কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল, ফেইসবুক, ফাস্ট ফুড এসব শব্দ/ টার্ম তখন অনাবিষ্কৃত। তারপরও আমাদের সেই আনন্দের কোন সীমা ছিলনা। রান্নাঘরের আশেপাশে মা-চাচি-ফুফুদের ব্যস্ততা, কর্মতৎপরতা আর হাঁকডাক, পর দিনের জন্য নানান প্রস্তুতি; পূরুষরাও ব্যস্ত নানা কাজে। ঈদের দিন সক্কাল বেলা থেকেই গোসল আর নামাযের প্রস্তুতি চলতো সরবে। এরপর, দাদা উনার ছেলে ও নাতিদের নিয়ে নামাজে যেতেন রমনা থানার সামনের মসজিদে, কেননা তখনও দাদা আমাদের এই মসজিদটি নির্মাণ করেন নি। ঈদ-উল-ফিতর হলে নামাযে যাবার পূর্বে রাসূল (স.) এর সুন্নত অনুযায়ী সকলে নাস্তা সেরে নিতাম। যখন হাইস্কুলে উঠলাম, তখন গন্ডীটা একটু বড় হলো; পাড়ার বন্ধুদের সাথেও পাড়া জুড়ে হৈ হুল্লোড় করতাম তখন। সেই সময়ে পাড়ার মানুষরাও অনেকটা ‘পরিবার’ এর সদস্যের মতই ছিল। আমাদের এই ২০০ গজ লম্বা গলিতে তখন পরিবার ছিল মাত্র ৮/১০টা; এখন এই গলিতে ৩০০ এর মত পরিবার বাস করে! আমাদের হাই স্কুল জীবন শেষ হবার আগেই দাদা ইন্তেকাল করেন, চাচারা সব (একজন ডাক্তার, ২ জন ইঞ্জিনিয়ার) সরকারি চাকুরীর কারণে বিভিন্ন জায়গায় বদলী হয়ে যান, জয়েন্ট ফ্যামিলি থেকে সবাই পৃ্থক হয়ে যায়; ছোটবেলার সেই উত্তেজনায় অনেকটা ভাটা পরে যায়। আমাদের সেই দিনগুলো ছিল সত্যিই সোনালী দিন।

কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় ইংল্যান্ডে চলে গেলাম উচ্চ শিক্ষার জন্য। ঈদের আনন্দ, আমেজ, উত্তেজনা সব যেন হারিয়ে গেল, চলে গেল। ওখানে কেবল ঈদের ওয়াজিব নামাযটা আদায় করাই ছিল আমাদের ঈদ। সকালে নামাযে যেতাম কলেজের বইখাতা নিয়ে- নামায শেষ সোজা কলেজে ক্লাস করতে চলে যেতাম। বাংগালী/ বাংলাদেশী কমিউনিটি খুব ছোট ছিল। তাই এ বাসা ও বাসা বেড়ানোর তেমন কিছু ছিলনা। আমার আপন ছোট চাচা ছিলেন একই শহরে – রাতে উনার বাসায় খাওয়া হতো। সেই কয়টা বছর (১৯৭৫-১৯৭৮) ঈদ বলতে এই ই ছিল আমাদের দিনপঞ্জী।
নিজ হাতে ক্কোরবাণী দিচ্ছেন
১৯৭৮ এর শেষে দেশে ফিরে ৮০ এর ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীতে চলে গেলাম। ঈদের আনন্দ তখন ভিন্নমাত্রার; আনন্দ ও উত্তেজনা আর আগের মত থাকলোনা। একাডেমির ট্রেনিং এর দুই বছর অবশ্য ঈদে ছুটি পাওয়া যেত। তবে ছুটিতে বাড়ী এলেও নানা কারণে খুব বেশী আনন্দ উল্লাস করার মত মন মানসিকতা ছিলনা সেই বছরগুলোতে- মূলতঃ ট্রেনিংজনিত ক্লান্তির পর সময় পেলেই তখন বিশ্রাম নেয়া বা ঘুমানোটাই বেশী প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো। এছাড়া, বোধ করি ট্রেনিং এর ফলে কিছুটা মনস্তাত্বিক পরিবর্তনের ফলেও আর আগের মত সেই উত্তেজনা, উল্লাস বোধ করতাম না।
১৯৮১ এর ডিসেম্বরে কমিশণ পাবার পর হতে ২০০৯ পর্যন্ত যতগুলো ঈদ গেছে তার বেশীর ভাগই কাটিয়েছি ক্যান্টনমেন্টে। সেনানিবাসের ঈদ বিভিন্ন ‘ফরমাল’ আনুস্ঠানিকতায় পরিপূর্ণ থাকে- ছোটবেলার, কিশোর বয়সের ঈদ আর ফিরে পাওয়া যায়নি। ট্রুপ্স কমান্ডে সাধারণতঃ ছুটি পাওয়া যায় না; তবে যেই বছরগুলোতে স্টাফ অফিসার বা ইন্সট্রাক্টর হিসেবে চাকরী করেছি, সেই বছরগুলোতে ঈদে বেশ কয়েকবারই ছুটিতে এসে বাবা-মা এর সাথে ঈদ করার সুযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে পাড়ায় আমার বয়সী ১২/ ১৩ জনের মধ্যে ২/১ জন ছাড়া বাকিরা সব হয় বিদেশে, না হয় অনত্র। যারা ছিল তাদেরও নিজস্ব একটা আলাদা গন্ডী (ব্যাবসা/ চাকুরীস্থল; শশুর বাড়ী ইত্যাদি) হয়ে গিয়েছিল; যার ফলে তারাও সেই বলয়ে ব্যস্ত দিন কাটাতো। সব মিলিয়ে, আর কখনো ছোটবেলার বা কিশোর বয়সের সেই “ঈদ” আর ফিরে পাইনি।
২০০৯’এ সামরিক বাহিনী থেকে “বরখাস্তের” পর আমার নতুন জীবন শুরু হলো ভিন্ন এক ধারায়। সেই বছর থেকে ২০১১ পর্যন্ত, এই তিন বছর বাবা-মা এর সাথে থেকেছি, ঈদ করতে পেরেছি। এই তিন বছর কিছুটা হলেও আবার ঈদের হারিয়ে যাওয়া আনন্দ ফিরে পাবার চেস্টা করেছি। কিন্তু, ২০১২’তে আব্বা গ্রেফতারের পর হতে আমাদের ঈদ আর কখনো “ঈদ” হয়নি! আর, এ বছরের ‘ঈদ’টা তো পুরো মাত্রায় ছিল বেদনার, রক্তক্ষরণের আর কস্টের! আম্মা সারাদিনই থেমে থেমে কান্নাকাটি করেছেন – ৬৫ বছরের জীবন সংগী ছাড়া প্রথম “ঈদ”; সহজেই অনুমেয়!
গত তিন বছরে আব্বার ৬টি ঈদ কেটেছে কারাগারে। এর আগে, ১৯৯২-৯৩’তে আরো ৪টা ঈদ তিনি কারাগারে কাটিয়েছিলেন। এরও অনেক আগে, আমার জন্মেরও পূর্বে, ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত তিনি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে (!) তিনবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে যদ্দুর জেনেছি, তখন বন্দী অবস্থায় কোন ঈদ করতে হয়নি। আমার জন্মের পর, আমার ৫ বছর বয়সের সময় ১৯৬৪ সালে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইউব খানের সামরিক শাসনের সময় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবার তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। অবশ্য, সেই সময়কার কথা আমার তেমন মনে নেই, কেবল উনার মুক্তি পাওয়ার দিনের সামান্য কিছু স্মৃতি ছাড়া।
এবারে আব্বার গ্রেফতারের পর হতে ঈদের দিনগুলোতে নামায এর পরপরই সাক্ষাতের অনুমতির জন্য নাজিমুদ্দিন রোডে দৌড় দিতে হতো। অনুমতি পেলে সাক্ষাতে যাবার জন্য নানান প্রস্তুতি চলতে থাকতো যাবার আগ পর্যন্ত। এর মাঝে আত্মীয়-স্বজন এলে আবার সাক্ষাৎ ও সংগ দেয়াও লাগতো। ঈদ-উল-আযহা এলে তো ক্কোরবাণীর অতিরিক্ত দায়িত্ব চলে আসে। আমার সব ভাইয়েরা বিদেশে থাকায় তাঁদের ক্কোরবাণী দেশে আমাকেই সামাল দিতে হয়। ৩/৪টা গরু আর ২/৩টা ছাগল ক্কোরবাণী করে সব ভাগাভাগি করে বিতরণ করার ঝামেলা বেশ কস্টকর- তবুও করতেই হয়। আগে আব্বা সবগুলো নিজ হাতে জবেহ করতেন- পর্যায়ক্রমে গরু জবেহ এর দায়িত্বটা আমার উপর চলে আসে- আব্বা কেবল উনার নিজের নামে দেয়া ছাগল সহ অন্য ছাগলগুলো জবেহ করতেন। অবশ্য গত তিন বছর সেগুলোও আমাকেই জবেহ করতে হয়েছে।
যা হোক, আব্বার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি পাবার পর পরিবারের সকল সদস্যই সেদিন দেখা করতে যেতাম - আম্মা, আমি, আমার স্ত্রী এবং সন্তানরা। ঈদ ছাড়া অন্য সময় অবশ্য একসাথে সবাইকে অনুমতি দিত না, কেবল ৪ জনকে অনুমতি দিত; সময় মাত্র ৩০ মিনিট। ঈদের সাক্ষাতের ২/৩ দিন আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি শুরু হতো উনার সাথে সাক্ষাতের। প্রস্তুতির মূল কাজ ছিল উনার জন্য রান্না করা খাবার তৈরীর আয়োজন। আয়োজন বললাম এই জন্য যে, ঘনিস্ঠ আত্মীয়-স্বজন সকলেই ঈদে আব্বার জন্য খাবার রান্না করে দিতে চাইতেন। তাই, ২/৩ দিন আগে থেকেই যারা যারা খাবার দিতে চায় তারা ফোন করে আলাপ পরামর্শ করতো, কে কি দিতে আগ্রহী তা জানিয়ে কনফার্ম করে নিত যেন ডুপ্লিকেশন না হয়। এটা সমন্বয়ের ঝামেলাটা অনেকটা ‘আয়োজন’ই হয়ে যেত কেননা সবাই এত বেশী আইটেম দিতে চাইতো অথচ আব্বা এত পরিমিত খেতেন যে তা নস্ট হয়ে যাবার আশংকাই বেশী ছিল। উনার ‘সেল’ এ কোন ফ্রিজ না থাকায় খাবার রেখে কয়েকদিন ধরে খাওয়া সম্ভব ছিলনা; তাই আইটেম এর সংখ্যা এবং টাইপ সমন্বয় না করে উপায় ছিলনা। আমরা যেই খাবার নিয়ে যেতাম, উনি তার সিকি ভাগও খেতেন না; বাকি সব কারারক্ষীদের মধ্যে বিতরণ করে দিতেন। সারা জীবনই দেখেছি, কাউকে না দিয়ে উনি কখনো কিছুই খেতেন না। বাসার গাছের আম বা অন্য কোন ফল নিজ হাতে নিয়ে গিয়ে আশেপাশে উনার ভাইবোনদের বাসায় দিয়ে আসতেন। গাছে মাত্র ১টা আম হলে সেটাকেও কাটিয়ে টুকরা টুকরা করিয়ে কাজের ছেলেমেয়ে সবাইকে নিজ হাতে তুলে দিতেন খাবার জন্য, এরপর নিজে খেতেন। কি চমৎকার এক অনুকরণীয় আদর্শ তিনি রেখে গেছেন আমাদের জন্য! নবীজির (স.) এর সুন্নত অনুসরণে উনি ছিলেন আমার দেখা শ্রেস্ঠ নমুনা!
বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে যাওয়া একটু ঝামেলাপূর্ণ ছিল। বলা বাহুল্য, উনার জন্য দৈনিক বাসা থেকে তিন বেলা খাবার সরবরাহের ব্যাপারে আদালতের আদেশ থাকলেও আমরা তা দিতাম না। আমরা কেবল ঈদের দিন এবং নিয়মিত পাক্ষিক সাক্ষাতের দিন সাথে করে খাবার নিয়ে যেতাম। অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে যে, ‘কেন দিতাম না’? এ নিয়ে পরে অন্য সময় বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রইল।
যা হোক, আনুমানিক বেলা ১টার মধ্যে বাসায় রান্না করা খাবার (তালিকা সহ) বাসা থেকে লোক দিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতাম। খাবার এবং তালিকা নিয়ে আমাদের লোক ডাক্তারের কাছে চলে যেত। ডাক্তার তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে (টিফিন বাটি খুলে, প্রত্যেকটি আইটেম দেখে, প্রয়োজনে মুখে দিয়ে টেস্ট করে) তালিকার নীচে লিখিতভাবে অনুমোদন করে স্বাক্ষর করে দিতেন। আমাদের প্রতিনিধি তখন ঐ খাবার সহ হাসপাতলেই অপেক্ষা করতো। আমরা যখন সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত সময়ে (নিয়মিত পাক্ষিক সাক্ষাতে বিকেল ৪টায় এবং ঈদের সাক্ষাতে বেলা ২টায়) হাসপাতালে যেতাম তখন আমি আমার হাতে খাবারটা নিয়ে নিতাম। প্রবেশের সময় প্রিজন সেল এর মূল ফটকে সকল গোয়েন্দা বাহিনীর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ডেপুটি জেলার নিজে তালিকা অনুযায়ী সব খাবার চেক করার পর আমি আমার হাতে করেই সকল রান্না করা খাবার আব্বার রুম পর্যন্ত নিয়ে যেতাম। অন্যান্য শুকনা খাবার এবং ব্যবহারের আইটেমগুলো গেইটেই কারা কতৃপক্ষ রেখে দিতে এবং পরে আব্বার নিকট পৌঁছানো হতো। প্রথম দিকে আমাকে হাতে করে রান্না করা খাবার নিয়ে যেতে দেয়ার ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষ আপত্তি করলেও আমাকে নাছোরবান্দা দেখে কারা কতৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে। আমি একজন প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং ওদের আইজি (প্রিজন) থেকেও সিনিয়র সেটা ওরা সবাই জানতো। তাই, দু’একজন ব্যতিক্রম ছাড়া সকলেই যথাযথ সন্মান দেখাতো ও সমীহ করতো এবং “স্যার” বলেই সম্বোধন করতো।
প্রিজন সেল এর সাইজ অনুমানিক ১৮০(১২X১৫) বর্গফুট। সাক্ষাতের সময় রুমের ভিতরে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও আরো ৮/১০ জন লোক (কারা কর্তৃপক্ষ এবং সকল গোয়েন্দা বাহিনীর প্রতিনিধি) পুরা সময়টা দাঁড়িয়ে থাকতো; আমরা কি আলাপ করি তা খুব সিরিয়াসলি ওরা “নোট” করতো! পারিবারিক কথা ছাড়া আমাদের আর কোন কিছুই আলাপ হতোনা, কিন্তু তারপরও কি “নোট” করতো তা ভেবে আশ্চর্য্য হতাম! কয়েকবার ভেবেছি জিজ্ঞাসা করবো যে, “আমাদের পারিবারিক আলাপের ব্যাপারে কি নোট করছেন”? বিব্রতকর পরিস্থিতি হতে পারে ভেবে আর করিনি। প্রতিটি পরিবারের কিছু না কিছু পারিবারিক গোপণীয় বিষয় থাকে। কিন্তু সেগুলো গোপণে বলার মত কোন পরিবেশ সেখানে ছিলনা। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা এ বিষয়ে কখনো আপত্তি করিনি।
যা হোক, সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত এই ৩০ মিনিট আসলে খুবই অল্প সময়! সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করতে করতেই প্রায় ৮/১০ মিনিট লেগে যেত। এরপর উনাকে আমার সব ভাইদের ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের খবরাখবর সহ বৃহত্তর পরিবারের অন্যান্য আত্মীয়দের গুরুত্মপূর্ণ কোন খবর (জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে ইত্যাদি) থাকলে তা জানাতাম। এর বাইরেও আব্বা নাম ধরে ধরে অনেকের খবর নিতেন, এমন কি বাসার কাজের লোকদেরও খবর নিতেন। উনার প্রতিস্ঠিত মাদ্রাসার খোঁজ নিতেন এবং উনার কোন পরামর্শ থাকলে বলতেন, মসজিদের খবর নিতেন, উনার সহকর্মীদের ব্যাপারে জানতে চাইতেন, অন্য কাউকে কোন কিছু বলার মত থাকলে বলতেন, কাউকে সাহায্য করার থাকলে বলে দিতেন। কথার ফাঁকে ফাঁকে আমার স্ত্রী আব্বাকে স্যুপ খাওয়াতো, মাঝে মাঝে হাল্কা নাশতা খাওয়াতো। বেশীর ভাগ সময়ই তিনি স্যুপ ছাড়া আর কিছু খেতে চাইতেন না; অসময়ে কোন কিছু খাওয়া উনার স্বভাব বিরুদ্ধ – উনি বলতেন, “আমিই খুচরা খাই না”! এছাড়া, আমার স্ত্রী আব্বার হাত-পা এর নখ কেটে লোশন লাগিয়ে দিত। আমি দাঁড়ি-মোচ ছেঁটে দিতাম, গলায় (দাঁড়ির নীচে) শেভ করে দিতাম। এরই মধ্যে মূল ফটকে আমাদের রেখে আসা শুকনা খাবার আর ব্যবহারের জিনিষগুলো রুমে পৌঁছে দেয়া হতো; আমি লিস্ট ধরে সেগুলো আব্বাকে বুঝিয়ে দিতাম। এভাবেই সময়টা শেষ হয়ে যেত, উনাকে ভারাক্রান্ত মুখে রেখে আমরাও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরে আসতাম। উনার ব্যবহার করা ময়লা কাপড় এবং অন্য কোন আইটেম উনি ফেরত দিতে চাইলে কারা কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে তা নিয়ে আসতাম।
গত ২০১৪ সালের ক্কোরবানীর ঈদ ছিল আব্বার জীবনের শেষ “ঈদ”, যদিও তা আসল “ঈদ” ছিলনা কোন অর্থেই। যদ্দুর মনে পরে, তারিখটি ছিল ৬ই অক্টোবর। সেদিন উনার যে করুণ অবস্থা দেখে এসেছিলাম, সেদিনই আমার মনে হয়েছিল, ‘উনার দিন বোধ হয় ফুরিয়ে আসছে’। কংকালসার দেহটা বিছানায় লেপ্টে ছিল, কথা বলতে পারছিলেন না, নিজের হাত-পা নাড়াবার ক্ষমতাও ছিলনা তখন উনার। কথা বলার চেস্টা করছিলেন, কিন্তু গলা দিয়ে কেবল ‘ফিসফিস’ শব্দ বের হচ্ছিল। মুখের কাছে কান লাগিয়ে অনেক কস্টে কিছু কিছু কথা বুঝা গেছে, অধিকাংশই বুঝা যায়নি। সেদিন উনার এই অবস্থা দেখে এসেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে, অনেক চেস্টার করে দু’দিন পর উনাকে সিসিইউ’তে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় উনার অবস্থার ক্রমাবনতি হতে হতে ২৩শে অক্টোবর তিনি আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে যান।
উনার মুক্ত জীবনের শেষ বছরগুলোর ঈদে উনার কর্মকান্ড ছিল ছকে বাঁধা, যেন ক্লাসের রুটিন। ফযরের পর সামান্য কিছু বিশ্রাম নিয়ে উঠে গোসল করে নামাযের প্রস্তুতি নিয়ে নাস্তা সারতেন। তবে, ঈদ-উল-আযহা’র সময় নবীজির (স.) এর সুন্নত অনুযায়ী নিজ হাতে পশু জবেহ করে সেই পশুর গোশত রান্না হলে তারপর নাস্তা খেতেন। নামাযের আগে তিনি আনুমানিক ৩০ মিনিটের মত আলোচনা করতেন, আর নামাযের পর খুৎবা। উনার এই আলোচনা ও খুৎবা শুনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লীরা আসতেন আমাদের মসজিদে। নামাযের পর খুৎবা ও দোয়া শেষ উনার সাথে কোলাকুলি করার জন্য লম্বা লাইন লেগে যেত। আমরা, পরিবারের সদস্যরা, কোলাকুলির সুযোগ পেতে অনেক সময় লেগে যেত, কখনো প্রায় আধা ঘন্টা! উনি যতক্ষন পারতেন দাঁড়িয়েই কোলাকুলি করতেন, এরপর চেয়ারে বসে বসে কোলাকুলি করতেন। কোলাকুলি শেষে মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থান যিয়ারত করতাম পরিবারের সকল পূরুষ সদস্য একত্রে মিলে। এই কবরস্থানে আমার দাদা-দাদু, এক চাচা (এখন আব্বারা ৪ ভাই; আব্বা জেলে থাকাকালীন ২০১৩ এর জানুয়ারিতে এক চাচা ইন্তেকাল করেন। তিনি তখন প্যারোল এ মুক্তি না পাওয়ায় জানাযা বা দাফনে অংশ নিতে পারেন নি। আরেক চাচা ইন্তেকাল করেন আব্বার ইন্তেকালের পর, জানুয়ারি ২০১৫’তে), এক ফুফু (আব্বা কারাবন্দী থাকাকালীন ডিসেম্বর ২০১২’তে ইন্তেকাল করেন), দুই চাচী, এক ফুফা এবং আমার বড় ভাবী’র কবর রয়েছে। এছাড়া, পেছনের দিকে (মসজিদের পূর্ব দিকের পায়ে চলা পথ দিয়ে সোজা উত্তরে শেষ প্রান্তে) আরো একটা পারিবারিক কবরস্থান রয়েছে আমাদের- সেখানে কবর হয়েছে আমার বড় ফুফু ও নানীর। ওটাও সকলে মিলে একত্রে যিয়ারত করতাম। যিয়ারত শেষে, সবাই মিলে পাশেই আব্বার ছোট চাচী (আব্বার জীবিত একমাত্র মূরুব্বী ছিলেন। তিনিও আব্বা কারাবন্দী থাকাকালীন ইন্তেকাল করেছেন।) থাকেন, উনার সাথে সাক্ষাৎ করতাম। এরপর আব্বা বাসায় চলে আসতেন আর আমরা বাকিরা অন্যান্য মূরুব্বীদের সাথে সাক্ষাৎ করে যার যার বাসায় ফিরতাম।
সারাদিন আব্বার সাথে সাক্ষাতের জন্য আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ আসতেন। তবে, যে কোন অবস্থায়ই আব্বা নিজ রুটিন যথারীতি অনুসরন করতেন; অত্যন্ত সুশৃংখল জীবনযাপনেও তিনি ছিলেন এক উৎকৃস্ট নমুনা। যোহরের নামাযের আধা ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত সাক্ষাৎ করে তিনি নামাযের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে চলে যেতেন। অধিকাংশ দিন বেশীর ভাগ ওয়াক্তের নামাযে তিনিই প্রথম মূসল্লী হিসেবে মসজিদে প্রবেশ করতেন। যোহর শেষে বাসায় ফিরে খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিতেন। অন্যান্য সময় বাসায় উনার নিজস্ব বেডরুমে বিশ্রাম নিলেও ঈদের দিন যেহেতু সারাদিন মেহমান আসতে থাকতো, তাই মেহমানদের বেড়ানো যেন বাধাগ্রস্থ না হয় এবং একই সাথে উনার বিশ্রামেরও যেন কোন সমস্যা না হয় সেই লক্ষ্যে বাসার সাথেই যে উনার চেম্বার আছে সেখানে একটি বিছিনা রাখা ছিল, উনি সেটাতেই বিশ্রাম নিতেন। আসরের সময় যথারীতি নামাযে সেরে, এর পর হতে রাতের খাবারের পূর্ব পর্যন্ত (মাগরিব ও এশা সময়মত মসজিদে যেয়ে পরতেন) আবার সাক্ষাৎ প্রার্থীদের সাথে দেখা করতেন। রাত ১০টায় রাতের খাবার সেরে সাড়ে ১০টায় খবর দেখতেন; ১১টা নাগাদ বিছানায় চলে যেতেন। যতক্ষন পর্যন্ত ঘুম না আসতো ততক্ষন টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়তেন; ঘুম এলে লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে পরতেন। উনার এই রুটিন এর কোন হেরফের হতোনা কখনো; এমন কি গ্রেফতারের আগের রাতেও (১০ই জানুয়ারি ২০১২) না।
আজকের এই ঈদের দিনে আমাদের মনে কোন আনন্দ নেই, উল্লাস নেই, খুশী বা উৎসবের কোন আমেজ নেই। নিছক আনুস্ঠানিকতা করার জন্য যা যা করা দরকার তা-ই করেছি, দূঃখ ও ভারাক্রান্ত বেদনাবিধুর মনে; বার বার মনে পরেছে বাবার কথা, তাঁর রেখে যাওয়া হাজারো স্মৃতি। আমিই জানি, এই অবস্থা কেবল আমাদের পরিবারেই না, এমন অবস্থা এখন এদেশের হাজারো পরিবারের। কাতর হয়ে মহান স্রস্টার কাছে বিনীতভাবে দোয়া করি যেন তিনি সকল মযলুমের মনের ব্যাথা দূর করার জন্য যা প্রয়োজন তা “কুন” বলে হবার ব্যবস্থা করে প্রতিটি পরিবারে কিছুটা হলেও সুখ ও শান্তি আনার ব্যবস্থা করে দেন, আমীন!
তারিখঃ ১৮ই জুলাই ২০১৫

About

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

আমার ব্লগ তালিকা

Translate

Translate

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24

সর্বশেষ

অনুসরণকারী