বিজ্ঞাপন দিন

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই ঈদ উত্তর সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। ব্যাংক খোলা এবং যথারীতি ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এই গ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। ঢাকার সবুজবাগ থানার রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১:b>ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার
ইতিহাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ইতিহাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২০

মীর নিসার আলী তিতুমীর: তাঁর শহীদ দিবসে রইল আন্তরিক ও বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ দু'হাজার চার সালে বিবিসি বাংলা একটি 'শ্রোতা জরিপ'-এর আয়োজন করে। বিষয়টি ছিলো -সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ২০০৪-এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত।

বিবিসি বাংলার সেই জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ কুড়িজন বাঙালির তালিকায় ১১ তম স্থানে আসেন মীর নিসার আলী তিতুমীর।

বিপ্লবী, বিদ্রোহী মীর নাসির আলী বেশি পরিচিত শহীদ তিতুমীর হিসাবে। তিনি শুধু ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধেই লড়াই করেননি, তিনি বাংলার জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করেছিলেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তাঁর বাঁশের কেল্লা থেকে।

ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মীর নিসার আলী তিতুমীরের নাম উজ্জল হয়ে আছে।

তিনি সর্বপ্রথম ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

মীর নিসার আলী তিতুমীরের জন্ম ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলার বারাসত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে। বাবা সৈয়দ মীর হাসান আলী এবং মা আবিদা রোকেয়া খাতুন।

গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণের পর তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। কোরান ও হাদিস বিষয়ে অল্প বয়সেই তিনি পাণ্ডিত্য লাভ করেন।

পবিত্র হজ্জ পালন করতে গিয়ে মক্কায় অবস্থানকালে তিতুমীর মুক্তি সংগ্রামের পথপ্রদর্শক সৈয়দ আহমদ শহীদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

১৮২৭ সালে দেশে ফিরে গিয়ে তিনি সমাজ সংস্কারে আত্মনিয়োগ করেন।

নীলচাষীদের বিদ্রোহের পিছনে ছিল অর্ধ শতাব্দী ধরে নীল চাষীদের উপরে ব্রিটিশ নীলকরদের অত্যাচার ও নিপীড়ন। ভারতীয় উপমহাদেশের মাটি নীল চাষের উপযোগী হওয়ায় ব্রিটিশ নীলকররা এতে বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ করেছিল। প্রথমদিকে নীলচাষ একচেটিয়া ছিল ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির।

বাংলাদেশে ইতিহাসের অধ্যাপক আব্দুল মোমেন চৌধুরী জানান তিতুমীর জীবন শুরু করেছিলেন একজন সমাজ ও ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে।

"তখন মুসলমান সমাজে যেসব বিদআত (এমন রীতি যা ইসলামসম্মত নয়) এবং শিরক্ (আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে সাব্যস্ত করা বা তার উপাসনা করা) ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলোকে দূর করার উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন।"

"কিন্তু এই ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট পরে একটা অর্থনৈতিক এবং ব্রিটিশ বিরোধী প্রেক্ষাপটে পরিণত হয়েছিল," বলেন আব্দুল মোমেন চৌধুরী।

তিতুমীর হিন্দু ও মুসলমান কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করেন এবং জমিদার ও ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে নিতে উৎসাহিত করেন। ২৪ পরগণা ও নদীয়ার অনেক কৃষক তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।

অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন জানান কৃষকদের নিয়ে তিতুমীরের আন্দোলন অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গণ আন্দোলনে রূপ নেয়।

"তিতুমীরের আন্দোলন, সংগ্রাম, কর্মকাণ্ড এবং জীবনাদর্শ সব কিছুকেই আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে ঔপনিবেশিক পটভূমিতে," বলেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

বাংলায় ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে জয়ী হবার সুবাদে প্রথম রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি।

"এই বাংলায় ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে জয়ী হবার সুবাদে প্রথম রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং সেখান থেকেই ক্রমাগত সারা উপমহাদেশে তাদের রাজ্যসীমা সম্প্রসারিত হয়। আবার এই বাংলা থেকেই ইংরেজ রাজত্বের বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রতিরোধ আন্দোলন," বলেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন একাধিক এবং অসংখ্য প্রতিরোধ আন্দোলন হয়েছে বাংলায় ইংরেজ রাজত্বের বিরুদ্ধে।

"ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনগুলির পটভূমিতে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হচ্ছে তিতুমীরের সংগ্রাম," ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক হোসেন।

প্রজাদের ওপর অত্যাচারের প্রতিকার তিতুমীর করতে চেয়েছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে ও সমঝোতার মাধ্যমে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে বারাসাতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কোম্পানির বিরুদ্ধে এটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদ্রোহ।

তিনি ২৪ পরগণার কিছু অংশ, নদীয়া ও ফরিদপুরের একাংশ নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহ "বারাসাতের বিদ্রোহ" নামে পরিচিত।

এই বিদ্রোহে তিরাশি হাজার কৃষক সেনা তিতুমীরের পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন।

"তাঁর আন্দোলনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য, শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছিল উপনিবেশ বিরোধিতায়। এবং এই উপনিবেশ বিরোধিতা করতে গিয়ে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে নিজের শক্তি পরীক্ষা করতে গিয়ে, তিনি কখনও ভাবেননি যে তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, ক্ষুদ্র একটি শক্তির প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং তাঁর বিপরীতে আছে বিরাট, বিশাল, শক্তিধর ইংরেজ রাজশক্তি," বলেছেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

বারাসাত বিদ্রোহের পর তিতুমীর বুঝতে পারেন ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য।

১৮৩১ সালে তিনি বারাসতের কাছে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে সেখানে অস্ত্র জমা করেন। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা এই কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন।

তাঁর আন্দোলনের একটি বড় প্রতীকী তাৎপর্য ছিল অন্যায়, এবং শাসকবর্গের অসঙ্গত শোষণের বিরুদ্ধে একটি ন্যায়সঙ্গত অবস্থান নিয়ে দাঁড়ানো এবং প্রতিবাদে জ্বলে ওঠা।

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মনে করেন তিতুমীরের আন্দোলনের দ্বিমাত্রিক একটা তাৎপর্য রয়েছে।

"তিনি শুধু উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন করেছেন একথা বললে তাঁর অবদানকে কিছুটা সীমিত করা হয়, খণ্ডিত করা হয়। সমাজে অন্যায়, অবিচার, শোষণের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ, আন্দোলন ও সংগঠন- সেসব ব্যাপারে তাঁর যে অবদান ছিল, ঐটিই সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক।"

আঠারোশ একত্রিশ সালে কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে পদাতিক বাহিনী, অশ্বারোহী ও বন্দুকধারী সৈন্যদের একটি বিশাল বাহিনী পাঠায় ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি তিতুমীরের সঙ্গে লড়াইয়ের লক্ষ্যে।

নারিকেলবাড়িয়ায় ১৮৩১এর উনিশে নভেম্বর ভীষণ যুদ্ধ বাঁধে।

ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ১৮৩১ সালে বারাসতের কাছে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীরা একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে সেখানে অস্ত্র জমা করেছিলেন।

ব্রিটিশ সৈন্যরা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাদের বাঁশের কেল্লা। তিতুমীর তাঁর অনুসারীদের অভয় দিয়ে বলেন মৃত্যুকে ভয় পলে চলবে না। এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ দেশ উদ্ধার করবে। এই লড়াইয়ের পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।

ইংরেজদের কামানের গোলাবর্ষণে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা। তিতুমীর ও তাঁর চল্লিশজন সঙ্গী যুদ্ধরত অবস্থায় সেই বাঁশের কেল্লাতেই প্রাণ হারান।

তিতুমীরের এই আন্দোলন, দেশপ্রেম আর আত্মত্যাগ সব স্বাধীনতাকামীদের মনে প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে ।

আজ তাঁর শহীদ দিবসে তাঁর প্রতি রইল আন্তরিক ও বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য ।
সৌজন্য: B B C NEWS l বাংলা
"""""""""""""""""""""""""""""""

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মুসলিম বিজ্ঞানীদের আড়াল করার চক্রান্ত : ল্যাটিন অনুবাদে নাম পরিবর্তন।

 

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের সবগুলাে বই ল্যাটিনসহ অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়। তবে অনূদিত গ্রন্থগুলােতে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম বিজ্ঞানীদের নামও ল্যাটিনে অনুবাদ করা হয়। অন্য যে কোনাে ভাষায় কোনাে লেখকের বই অনুবাদ করার সময় কেবলমাত্র বইয়ের বিষয়বস্তু অনুবাদ করা হয়। কখনাে লেখকের নাম অনুবাদ করা হয়। । লেখকের নাম অনুবাদ করার এমন অদ্ভুত উদাহরণ ইতিহাসে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর সব দেশের কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের নাম অক্ষত রেখে অনুবাদ কর্ম সম্পাদন করা হলেও স্বর্ণযুগের মুসলিম দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের নাম অক্ষত রাখা হয়নি।

ল্যাটিন ভাষায় মুসলিম পণ্ডিত ও বিজ্ঞানীদের নাম বিকৃত করার এই হীন প্রচেষ্টা অধ্যাপক সারটনের উক্তিকে সত্য বলে প্রমাণ করছে। আরবী গ্রন্থগুলাে ইউরােপীয় ভাষায় অনুবাদ করা হলেও গ্রন্থকারের ল্যাটিন নাম দেখে বুঝার উপায় নেই যে, তারা মুসলমান। প্রত্যেক মুসলমান গ্রন্থকারের নাম আরবীতে লম্বাচুরা হলেও ল্যাটিন ভাষায় তাদের নাম দেয়া হয়েছে, একটি মাত্র শব্দে।
ইবনে সিনার পুরাে নাম আবু আলী আল-হুসাইন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সিনা। কিন্তু ল্যাটিন ভাষায় তার নাম ‘আভিসিনা’ (Avicenna)।
বীজগণিতের জনক খাওয়ারিজমির পূর্ণ নাম আবু আবদুল্লাহ মােহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খাওয়ারিজমি। ল্যাটিন ভাষায় তার নাম ‘এলগােরিজম’ (Algorism)।
ইবনে বাজ্জাহর পুরাে নাম আবু বকর মােহাম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া ইবনে আল-সায়িগ। কিন্তু তার ল্যাটিন নাম ‘অ্যাভামপেস (Avempace)।
আল-ফরগানি আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে মােহাম্মদ ইবনে কাছির হলাে আলফরগানির পূর্ণ নাম। কিন্তু ল্যাটিনে তার নাম ‘আলফ্রাগানাস’ (Alfraganus)।
পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র অঙ্কনকারী আল-ইদ্রিসীর পূর্ণ নাম আবু আবদুল্লাহ মােহাম্মদ ইবনে মােহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ইদ্রিস আল-শরীফ আল-ইদ্রিসী। কিন্তু ল্যাটিন ভাষায় তিনি ‘দ্রেসেস’ (Dreses) নামে পরিচিত।
শুধু ইবনে সিনা, খাওয়ারিজমি, ইবনে বাজ্জাহ, আল-ফরগানি কিংবা আল-ইদ্রিসী নয়, সব মুসলিম বিজ্ঞানীর প্রতি ল্যাটিন ইউরােপ এ অবিচার করেছে।
মুসলিম বিজ্ঞানীদের শুধু নামের বিকৃতি নয়, খােদ তাদের পরিচয় নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাদের কারাে কারাে ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, তারা আদৌ মুসলমান নন, জরােস্ত্রীয় অথবা ইহুদী কিংবা ইউরােপীয়। রসায়নের জনক জাবির হাইয়ান এমন এক অপপ্রচারের শিকার। ইউরােপের কোনাে কোনাে ঐতিহাসিক দাবি করছেন, জাবির ইবনে হাইয়ান ছাড়া আরেকজন জাবির ছিলেন। তার নাম ‘জিবার’ এবং এ জিবার হলেন ইউরােপীয় ।
বীজগণিতের জনক আল-খাওয়ারিজমি সম্পর্কেও অনুরূপ কথা বলা হচ্ছে। কোনাে কোনাে ঐতিহাসিক তাকে জরােস্ত্রীয় হিসাবে দাবি করছেন। খাওয়ারিজমির বিপরীতে আরেকজন ‘খাওয়ারিজমি’র অস্তিত্ব আবিষ্কার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে দ্বিতীয় খাওয়ারিজমি হলেন গণিতে প্রথম শূন্য ব্যবহারকারী।
পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়কারী আলফরগানিও ষড়যন্ত্রের শিকার। তার পরিচয় নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করে বলা হচ্ছে, ফরগানি হলেন দু’জন।
এমনি আরাে কতভাবে বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান অস্বীকার অথবা তাদের অবদানকে খাটো করার হীন চক্রান্ত চালানাে হচ্ছে তার শেষ নেই। আমরা সবাই একনামে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও ও নিউটনের মতাে ইউরােপীয় বিজ্ঞানীদের চিনি। চিনি না কেবল তাদের গুরু ইবনে বাজ্জাহ, ইবনে রুশদ অথবা নাসিরুদ্দিন তুসিকে। আমরা না চিনলেও ইতিহাস থেকে তারা হারিয়ে যাবেন না। বিজ্ঞান যতদিন টিকে থাকবে মুসলিম বিজ্ঞানীরাও ততদিন ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন ।
– সাহাদত হোসেন খান

বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব কি সত্যিই হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন ?

 

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব।

সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে, যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোহ'কে পর্যন্ত রেহাই দেননি।

আর তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তাঁর জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দী করে রেখেছিলেন।

সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদীম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল, যেদিন আওরঙ্গজেব তাঁর ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন।

জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তাঁর বই 'ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া'তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন।

তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তাঁর বই 'আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ' বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস করেছেন বলে যে দাবী করা হয়, তা ভুল।

ইউনিভার্সিটি অব নিউয়ার্কে দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস পড়ান ট্রাশকা।

তিনি লিখেছেন, ব্রিটিশদের শাসনের সময় তাদের 'ডিভাইড অ্যান্ড রুল' অর্থাৎ জনগোষ্ঠীকে 'বিভাজন আর শাসন করো' নীতির আওতায় ভারতে হিন্দু বর্ণবাদী ধারণা উস্কে দেয়ার কাজটি করেছিলেন যেসব ইতিহাসবিদরা, তারাই মূলত: আওরঙ্গজেবের এমন একটি ইমেজ তৈরির জন্য দায়ী।

তিনি তাঁর বইয়ে আরও বলেছেন যে আওরঙ্গজেবের শাসন যদি ২০ বছর কম হতো, তাহলে হয়তো আধুনিক ইতিহাসবিদরা তাকে অন্যভাবে দেখতেন।

ভারতে ৪৯ বছরের শাসন

দেড় কোটি মানুষকে ৪৯ বছর ধরে শাসন করেছিলেন আওরঙ্গজেব। তাঁর রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য প্রথমবারের মতো এতটা বিস্তৃত হয়েছিল যে প্রায় পুরো উপমহাদেশ তাঁর শাসনের করায়ত্ত হয়েছিল।

ট্রাশকা লিখেছেন যে আওরঙ্গজেবকে দাফন করা হয়েছিল মহারাষ্ট্রের খুলদাবাদে একটি কাঁচা কবরে।

ঠিক এর বিপরীতে, হুমায়ূনের জন্য দিল্লিতে একটি লাল পাথরের মকবরা তৈরি করা হয়েছিল, আর সম্রাট শাহ জাহানকে দাফন করা হয়েছিল জাঁকজমকপূর্ণ তাজমহলে।

ট্রাশকার মতে, "এটা একটা ভুল ধারণা যে আওরঙ্গজেব হাজার হাজার হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। ডজনখানের মতো মন্দির তাঁর সরাসরি আদেশে ভাঙ্গা হয়েছিল। তাঁর সময়ে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যাকে হিন্দুদের গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। সত্যিকার অর্থে আওরঙ্গজেব হিন্দুদেরকে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন।"

আওরঙ্গজেব ও সাহিত্য

আওরঙ্গজেবের জন্ম হয়েছিল ১৬১৮ সালের ৩রা নভেম্বর। তখন সম্রাট ছিলেন তাঁর পিতামহ জাহাঙ্গীর।

তিনি ছিলেন শাহ জাহানের তৃতীয় পুত্র। শাহ জাহান ছিলেন চার ছেলের পিতা, আর এদের সবার মা ছিলেন মমতাজ মহল। ইসলাম ধর্মীয় সাহিত্য চর্চার বাইরে তিনি তুর্কি সাহিত্য এবং বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি পড়েছেন।

অন্যসব মুঘল সম্রাটদের মতোই, আওরঙ্গজেব ছোটবেলা থেকেই হিন্দিতে অনর্গল কথা বলতে পারতেন।

একেবারে তরুণ বয়স থেকে শাহ জাহানের চার ছেলেই মুঘল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। মুঘলরা মধ্য এশিয়ার ওই প্রথায় বিশ্বাস করতেন যে রাজনৈতিক ক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সব ভাইদেরই সমান অধিকার রয়েছে।

শাহ জাহান চেয়েছিলেন বড় ছেলে দারা শিকোহ তাঁর উত্তরাধিকারী হোক। কিন্তু আওরঙ্গজেব বিশ্বাস করতেন মুঘল সালতানাতে তাঁর চেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই।

অড্রে ট্রাশকা দারা শিকোহর বিয়ের পরের একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন।

শাহ জাহান বিয়ের উৎসব উদযাপন করার অংশ হিসেবে সুধাকর ও সুরাত-সুন্দর নামের দুই হাতির মধ্যে লড়াইয়ের আয়োজন করেন। মুঘলরা এ ধরণের বিনোদন খুব পছন্দ করতো।

পাশেই আওরঙ্গজেব একটি ঘোড়ায় বসেছিলেন। হঠাৎ সুধাকর ঘোড়াটির দিকে ছুটে যায়। তখন আওরঙ্গজেব হাতিটির কপালে একটি বর্শার আঘাত হানেন, যা সুধাকরকে আরও ক্রুদ্ধ করে তোলে।

দারা শিকোহর সঙ্গে শত্রুতা

হাতিটি এত জোরে ঘোড়াটিকে ধাক্কা দেয় যে আওরঙ্গজেব মাটিতে পড়ে যান। ঘটনাটি যারা দেখছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন তাঁর ভাই শুজা ও রাজা জয় সিংহ। তাঁরা আওরঙ্গজেবকে বাঁচাতে চেষ্টা করেন।

তবে এরই মধ্যে অন্য হাতিটি সুধাকরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এবং তাকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনে।

শাহ জাহানের দরবারের রাজকবি আবু তালিব তাঁর কবিতায় ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন।

আরেকজন ইতিহাসবিদ, আকিল খাসিন রাজি, তাঁর বই 'ওয়াকিতাত-ই-আলমগীরী'তে লিখেছেন যে পুরো ঘটনার সময় দারা শিকোহ পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু আওরঙ্গজেবকে বাঁচাতে কোন চেষ্টাই করেননি।

শাহ জাহানের দরবারের ইতিহাসবিদরাও এই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন এবং ১৬১০ সালের একটি ঘটনার সঙ্গে এর তুলনা করেছেন - যখন শাহ জাহান তাঁর পিতা জাহাঙ্গীরের সামনে একটি সাংঘাতিক বাঘকে বশ মানিয়েছিলেন।

আরেকজন ইতিহাসবিদ ক্যাথরিন ব্রাউন 'আওরঙ্গজেব কি সঙ্গীতের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন?' - শীর্ষক একটি নিবন্ধ লিখেছেন।

তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে আওরঙ্গজেব একবার তাঁর চাচীর সঙ্গে দেখা করতে বুরহানপুর গিয়েছিলেন। আর সেখানেই তিনি তাঁর ভালোবাসার মানুষ হিরাবাঈ জাইনাবাদীকে খুঁজে পেয়েছিলেন।

হিরাবাঈ ছিলেন একজন গায়িকা ও নৃত্যশিল্পী।
আওরঙ্গজেব তাকে প্রথম দেখেছিলেন একটি গাছ থেকে আম পারার সময়ে।

তাকে দেখে আওরঙ্গজেব এতটাই দিওয়ানা হন যে তিনি মদ না খাওয়ার প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গতেও সে মূহুর্তে রাজী ছিলেন। তবে আওরঙ্গজেব যখন মদের গ্লাসে চুমুক দিতে যাচ্ছেন, ঠিক ওই সময়ে হিরাবাঈ তাকে থামান।

তাদের এই প্রেম কাহিনী মাত্র এক বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় - হীরাবাঈয়ের মৃত্যুর সঙ্গেই।

তাকে আওরঙ্গাবাদে দাফন করা হয়।

দারা শিকোহ যদি সম্রাট হতেন

ভারতীয় ইতিহাসের একটি বড় প্রশ্ন হলো কট্টর আওরঙ্গজেবের বদলে যদি উদারপন্থী দারা শিকোহ ৬ষ্ঠ মুঘল সম্রাট হতেন, তাহলে কী হতো?

অড্রে ট্রাশকার উত্তর: "বাস্তবতা হলো মুঘল সাম্রাজ্য চালানো কিংবা জয় করার ক্ষমতা দারা শিকোহ'র ছিলো না। ভারতের সিংহাসন নিয়ে চার ভাইয়ের মধ্যে যখন প্রতিযোগিতা চলছিলো, তখন অসুস্থ্য সম্রাটের সমর্থন ছিলো দারার প্রতি। কিন্তু আওরঙ্গজেবের মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাঁর ছিলো না।"

১৬৫৮ সালে আওরঙ্গজেব ও তাঁর ছোট ভাই মুরাদ আগ্রা দুর্গে অবরোধ সৃষ্টি করেন। তাদের পিতা শাহ জাহান সেই সময়ে দুর্গের ভেতরেই ছিলেন। তাঁরা দুর্গে পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেন।

কয়েক দিনের মধ্যে শাহ জাহান দুর্গের দ্বার খুলে বেরিয়ে আসেন - দুই ছেলের হাতে তুলে দেন তাঁর সম্পদ, অস্ত্র-শস্ত্র এবং নিজেকেও।

নিজের মেয়েকে সালিশ মেনে শাহ জাহান তাঁর সাম্রাজ্যকে পাঁচ ভাগ করার প্রস্তাব দেন - তিনি চেয়েছিলেন চার ছেলে পাবেন সাম্রাজ্যের একেকটি ভাগ, আর পঞ্চম ভাগটি পাবেন আওরঙ্গজেবের বড় ছেলে মোহাম্মদ সুলতান।

কিন্তু আওরঙ্গজেব ওই প্রস্তাবে রাজী হননি।

দারা শিকোহ ধরা পরেন ১৬৫৯ সালে, নিজেরই এক বিশ্বস্ত সহযোগী মালিক জীবনের হাতে।

দিল্লি নিয়ে আসার পরে দারা শিকোহ আর তাঁর ১৪ বছরের ছেলে সিফির শিকোহকে আওরঙ্গজেব সেপ্টেম্বরের প্রচণ্ড গরমে চর্মরোগগ্রস্ত একটি হাতির পিঠে বসিয়ে গোটা দিল্লি ঘুরিয়েছিলেন।

একজন সৈন্য খোলা তরবারি নিয়ে তাঁর পাশে ছিলেন - কারণ তিনি যদি পালাতে চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁর শিরশ্ছেদ করা হবে।

ইতালির ইতিহাসবিদ নিক্কোলাও মানুচ্চি ওই সময়ে ভারতে এসেছিলেন। তিনি তাঁর 'স্তোরিয়া দো মগর' বা মুঘল ভারত বইয়ে লিখেছেন, "যেদিন দারা মারা গেলেন, সেদিন আওরঙ্গজেব তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে যদি নিয়তি উল্টোটা হতো, তাহলে ঠিক কী ঘটতো? দারার উত্তর ছিল যে তিনি আওরঙ্গজেবের শরীরকে চার ভাগ করে একেকটি ভাগ দিল্লির প্রধান চার সিংহ-দরজায় ঝুলিয়ে রাখতেন।"

আওরঙ্গজেব তাঁর ভাইকে দাফন করেন হুমায়ূনের মাজারের পাশে। পরে তিনি তার মেয়ে জাব্বাতুন্নিসাকে বিয়ে দেন দারা শিকোহ'র ছেলে সিফির শিকোহর সঙ্গে।

পিতা শাহ জাহানকে আওরঙ্গজেব আগ্রা দুর্গে বন্দী রেখেছিলেন সাড়ে সাত বছর, যেখানে তাকে প্রায়ই সঙ্গ দিতেন তাঁর বড় কন্যা জাহানারা।

তবে এই ঘটনায় তাকে সবচেয়ে বেশী বিপদে পড়তে হয়েছিল যখন মক্কার শাসক তাকে ভারতের শাসক হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। বছরের পর বছর তাঁর পাঠানো উপঢৌকন তিনি গ্রহণ করতে রাজী হননি।

আওরঙ্গজেব ১৬৭৯ সালে দিল্লি ছেড়ে দক্ষিণ ভারতে চলে যান। মৃত্যুর আগে তিনি আর উত্তর ভারতে ফিরে আসেননি।

আম ছিল তাঁর ভীষন প্রিয়

হাজার হাজার লোক-লস্কর, সেপাই, কর্মচারী সঙ্গে নিয়ে তিনি দাক্ষিণাত্যে গিয়েছিলেন। শাহজাদা আকবর বাদে বাকি সব ছেলেদের আর গোটা হারেমটাই তিনি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন।

তাঁর অবর্তমানে দিল্লিকে একটি ভূতুরে নগরীর মতো মনে হতে লাগলো। লাল কিল্লায় এতো ধুলো জমে গেল যে বিদেশী অতিথিদের আর এটা দেখানো হতো না।

আওরঙ্গজেব তাঁর পুস্তক 'রুকাত-ই-আলমগীরী'তে লিখেছিলেন যে দক্ষিণ ভারতে যেটির অভাব তিনি সবচেয়ে বেশী অনুভব করতেন, তা হলো আম। জামশেদ বিলিমোরিয়া এই বইটি অনুবাদ করেছেন।

বাবর থেকে শুরু করে সব মুঘল সম্রাটই আম খুব পছন্দ করতেন।

ট্রাশকা লিখেছেন আওরঙ্গজেব নিয়মিতই তার সভাসদদের নির্দেশ দিতেন যে তাঁর জন্য যে উত্তর ভারতের আম পাঠানো হয়। কয়েকটা আমের হিন্দি নামকরণও করেছিলেন তিনি, যেমন সুধারস আর রসনাবিলাস।

১৭০০ সালে ছেলে শাহজাদা আজম-এর কাছে লেখা একটি চিঠিতে আওরঙ্গজেব তাকে ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেন। আজম নাকি ছোটবেলায় নাকাড়া বাজানোর নকল করে আওরঙ্গজেবের জন্য একটা হিন্দি সম্বোধন তৈরি করেছিলেন - 'বাবাজী ধুন, ধুন।'

জীবনের শেষ দিনগুলো আওরঙ্গজেব কাটিয়েছেন ছোট ছেলে কামবাখশ-এর মা উদয়পুরীর সঙ্গে। উদয়পুরী ছিলেন একজন সঙ্গীত শিল্পী।

মৃত্যুশয্যা থেকে কামবাখশের কাছে লেখা এক চিঠিতে আওরঙ্গজেব লিখেছিলেন যে রোগে-শোকে উদয়পুরী তাঁর সঙ্গে আছেন, মৃত্যুর সময়ও তাঁর সঙ্গে থাকবেন।

আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর মাত্র কয়েক মাস পরেই ১৭০৭ সালের গ্রীষ্মে মৃত্যুবরণ করেন উদয়পুরী।
সংগৃহীত

মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৭

ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরজাতীয় বিপ্লব ওসংহতি দিবস:

আমাদের বাংলাদেশ  অনলাইন নিউজঃ ৭ নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে নস্যাৎ হয়ে যায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী ষড়যন্ত্র। আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। এদিন সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঢাকা সেনানিবাসের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে আনেন তৎকালীন সেনাপ্রধান ও স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে। 
৭ নভেম্বর সংঘটিত হওয়ার পর প্রতিটি সরকার দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে। কিন্তু ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দিনের সরকারি ছুটি বাতিল করে এবং দিবসটি পালন করা থেকে বিরত থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আঁতাতের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদে চেপে বসা বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারও তা পালন করছে না। এর আগে ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারও দিবসটি পালন করা থেকে বিরত ছিল। বাতিল করেছিল সরকারি ছুটি।
আগ্রাসী শক্তি তাদের থাবা বিস্তারে অনেকটাই সফল হয়েছে। ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের নামে অবাধ করিডোর দিয়ে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে।
১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দি করে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটালে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা সাধারণ জনগণ ও সিপাহীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষত সিপাহীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। ফলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব, যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করেছে। দেশবাসী সেদিন জিয়ার হাতেই তুলে দিয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তদানীন্তন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বিপ্লব সম্পর্কে বলা হয়, ‘সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চারদিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সিপাহী-জওয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা। ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’ জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ওইদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহী-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন তারা। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে ভণ্ডুল হয়ে যায় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী সব ষড়যন্ত্র। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়।’
৭ নভেম্বর সম্পর্কে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বইতে লেখেন, ‘১৯৭৫ সালের ৫ ও ৬ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টসহ সারা শহরে ছড়ানো হলো হাজার হাজার প্রচারপত্র। একটি ব্যাপারে ডান ও বাম উভয় রাজনৈতিক দলই একমত ছিল, আর তা হচ্ছে খালেদ মোশাররফ একজন বিশ্বাসঘাতক, ভারতের দালাল এবং সে ঘৃণিত বাকশাল ও মুজিববাদ ফিরিয়ে আনতে চাইছে।’
৭ নভেম্বরের ভোরের দিকে জওয়ানরা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে পড়ল। সারা ঢাকা শহরে এই ‘সিপাহী বিপ্লব’ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। রাত ১টার মধ্যেই সিপাহীরা পুরো ক্যান্টনমেন্ট দখল করে নিল। একদল জওয়ান গেল জেনারেল জিয়ার বাসভবনে। চারদিন বন্দি থাকার পর মুক্তি পেলেন জেনারেল জিয়া। নৈশ পোশাক পরা অবস্থাতেই জিয়াকে উল্লসিত জওয়ানরা কাঁধে করে নিয়ে গেল ২ ফিল্ড আর্টিলারির হেডকোয়ার্টারে। ঘটনার আকস্মিকতায় তখন বিহ্বল হয়ে পড়েন জিয়া। নাম না জানা অনেক জওয়ানের সঙ্গে আলিঙ্গন, করমর্দন করেন তিনি।
গ্রন্থটিতে আরও বলা হয়েছে, ‘রেডিওতে ক্রমাগত সিপাহী জনতার বিপ্লবের ঘোষণা এবং জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখলের খবর শুনে হাজার হাজার লোক স্রোতের মতো রাস্তায় নেমে এলো। তিন দিন ধরে তারা বিশ্বাস করছিল যে, ভারত খালেদ মোশাররফের মাধ্যমে তাদের কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে বিপন্ন করছে। এখন সেই দুঃস্বপ্ন কেটে গেছে। সর্বত্র জওয়ান এবং সাধারণ মানুষ খুশিতে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করল, রাস্তায় নামল। সারারাত তারা স্লোগান দিল, ‘আল্লাহু আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, সিপাহী বিপ্লব জিন্দাবাদ।’ অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের মতো এদেশের মানুষ আবার জেগে উঠেছে।
৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতা অভ্যুত্থানের প্রকৃত তাৎপর্য শাসক সমাজের ওপর বৈদেশিক মুরুব্বিয়ানার বাধ্যতা প্রত্যাখ্যান করে গণচেতনায় জাতিরাষ্ট্রের আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার। দেশবাসীর মনে সার্বভৌমত্বের গর্ববোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা। পঁচিশ বছর মেয়াদি শান্তি ও মৈত্রী চুক্তির অসম সম্পর্কের মায়াজাল এদেশের অভিজন সমাজে যে ভারতমুখাপেক্ষিতা ও হীনম্মন্যতার প্রসার ঘটিয়ে চলেছিল, তার বজ্রআঁটুনি ছিন্ন করেছিল দৃপ্ত সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান ও আত্মস্থশক্তির বহিঃপ্রকাশ। রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়েছিল দিল্লির প্রাসাদকামী পরগাছার জঞ্জাল।
এভাবে জাতিরাষ্ট্রের আত্মমর্যাদাবোধ ঐ দিন থেকে যে স্বকীয়তা, স্বনির্ভরতা ও আত্মোন্নতির উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল, আজও তা জাতিকে প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। যদিও ভূরাজনৈতিক চক্রান্তে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতা দিল্লির পদলেহি একটা পরিবারতন্ত্রের সংঘশক্তির করায়ত্ত, জাতিরাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও সংবিধানকে সাবোটাজ করে ঐ সংঘশক্তির পঞ্চম বাহিনী এদেশকে বিশ্বের চোখে স্বশাসনের অযোগ্য প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে, প্রকাপ্রন্তরে বাংলাদেশের ভারতভুক্তির একটা নীলনকশা অনুসরণ করে চলেছে, নভেম্বর বিপ্লবে জাগ্রত দেশবাসী পদে পদে নতজানু ভারতমুখাপেক্ষী সরকারি উদ্যোগগুলোকে জনমতের প্রাচীর দিয়ে অবরুদ্ধ করেছে। জনস্বার্থ রক্ষায় রাষ্ট্রের বিকলাঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর খর্বশক্তি দিয়েও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। চলমান বিশ্বব্যবস্থার সংঘাতসঙ্কুল আবর্তে, আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের হুমকিতে কিংবা বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার গোলকধাঁধায় পথ হারায়নি। রাষ্ট্রঘাতী চক্রান্তের মোকাবেলায় রাজপথে নেমে এসেছে, প্রতিবাদে প্রতিরোধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রঘাতী চক্রের কবল থেকে অচিরে আবার রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নেবে জাগ্রত জনতা, এ কথা সুনিশ্চিত।

মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদ ইনু, জিয়া ও এরশাদ??

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদ ইনু, জিয়া ও এরশাদ??
[১] 
এদিকে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর লিখা “ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস : বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড” বইটিতে দেখা যায় ১৯৮১ সালের ২১শে মে সেনাবাহিনীর ৩ জন সাবেক সদস্য জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তারিখের সামরিক অভ্যুত্থান এবং সপরিবারে শেখ মুজিব হত্যার ব্যাপারে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এবং বর্তমান ডেমোক্রেটিক লীগে যোগদানকারী আওয়ামী লীগের তৎকালীন গ্রুপ দায়ী”। 
২১শে মে ১৯৮১ জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশকারী সেনাবাহিনীর ৩ জন সাবেক কর্মচারীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক নায়েক সুবেদার মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন (সহ-সভাপতি, বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা - সাবেক গণবাহিনী, দফতর সম্পাদক ), সাবেক নায়েক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ (সদস্য - বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা)। 
তারা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, “১৯৭৪ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করা হয় বিপ্লবী গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা। বীরোত্তম কর্নেল তাহের হলেন সৈনিক সংস্থার প্রধান। জাসদের তরফ থেকে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকলেন হাসানুল হক ইনু। ক্যান্টনমেন্টে গোপনে গঠিত করা হতে লাগলো বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার ইউনিট। 
১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাসে জাসদ দেশব্যাপী এক হরতাল আহবান করে এবং সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার কর্মসূচি দেয়। হরতালের পূর্বদিন জাসদের অন্যতম কর্মী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিখিল চন্দ্র সাহা বোমা বানাতে গিয়ে মারা যান। তার নামানুসারে এই বোমার নাম রাখে নিখিল বোমা।
১৯৭৫ সনের জানুয়ারী মাসে শেখ মুজিব বাকশাল গঠন করেন এবং অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমতাবস্থায় হীনবল ও উপায়ন্তরহীন জাসদ নেতৃত্ব শেখ মুজিবের কাছে বাকশালে যোগদানের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু শেখ মুজিব তখন এই প্রস্তাবকে আমল দেননি।
ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে জাসদ নেতৃত্ব সেনাবাহিনীর কিছু বিক্ষুদ্ধ তরুণ অফিসারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। তাদের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলা হয় বিপ্লবী ফোরাম। এই ফোরামের ঘন ঘন বৈঠক বসতে থাকে এখানে সেখানে। গুলশানের এক বাড়িতে বসে নির্ধারিত হয় অভ্যুত্থানের নীল নকশা। সেই বৈঠকেই জাসদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করার প্রস্তাব প্রদান করা হয়।
এই নীল নকশা মোতাবেকই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। জাসদ নেতারা বিশেষত: গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার নেতারা প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর জিপে করে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে কুরিয়ারদের পাঠিয়ে দেয়া হয়। নির্দেশ দেয়া হয়, এই অভ্যুত্থান জাসদের স্বপক্ষে অভ্যুত্থান এবং এখনকার বিপ্লবী দায়িত্ব হলো বিভিন্ন ফাঁড়ি ও ট্রেজারিসমূহ থেকে যতটা সম্ভব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা। এই নির্দেশ অনুযায়ী মোহাম্মদপুর ফাঁড়ি ও নারায়ণগঞ্জের একটি ফাঁড়ি প্রকাশ্য লুট করা হয় এবং লুন্ঠিত অস্ত্র শস্ত্র তোলা হয় পিটার কাস্টার্সের এলিফেন্ট রোডস্থ বাসভবনে। পরবর্তীকালে পিটার কাস্টার্স এই অস্ত্র শস্ত্রসহই গ্রেফতার হয়। ভারত থেকে ২৪ ঘন্টার নোটিশে বহিষ্কৃত পিটার কাস্টার্সের সঙ্গে জাসদের কি সম্পর্ক ছিল তা জাসদ নেতারা কখনোই পরিষ্কার করে বলেনি। তবে জেলখানায় পিটার কাস্টার্স প্রকাশ্যেই বলে বেড়াতো যে, সে জাসদকে চল্লিশ লক্ষ টাকা দিয়েছে। জাসদের কেউই এর কোন প্রতিবাদ করতো না। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্যোগ্য যে, ১৫ই আগস্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশব্যাপী তিনটি ফাঁড়ি লুট করা সম্ভব হয়।
[২]
এছাড়াও আওয়ামীলীগের নিজেদের এই হত্যাযজ্ঞের সাথে সম্পৃক্ততার প্রমান পাওয়া যায় শহিদুল ইসলাম মিন্টুর সম্পাদনায় প্রকাশিত “শতাব্দীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অজানা অধ্যায়” বই তে -
"... শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের 'প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের' শিকার হয়ে নিহত হয়েছিলেন। এ যুক্তি যারা দেন তারা তাদের যুক্তির পক্ষে '৭৫-এর পরবর্তী ঘটনার উল্লেখ করেন। প্রকৃতপক্ষে ক্যু'দেতার পর যা ঘটলো তা হচ্ছে খন্দকার মোশতাক পুরোনো আওয়ামী লীগারদের নিয়ে সরকার গঠন করলেন। মুজিব বিরোধী অন্যান্য সংগঠনকে তিনি মন্ত্রিসভায় আমন্ত্রণ জানালেন না। মুজিবের ১৮ জন মন্ত্রীর মধ্যে তিনি ১০ জনকে বহাল রাখলেন। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে মাত্র ১ জন মোশতাকের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লো। পূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র আবু সাঈদ চৌধুরী বাদে ৯ জনই বাকশালের নির্বাহী পরিষদ বা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
মোশতাকের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের একক অন্তর্ভুক্তি 'প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের' ফল। এরা শেখ মুজিবের বাকশাল গঠন মেনে নিতে পারেননি। একটি তথ্যে জানা যায়, আওয়ামী নেতাদের একটি অংশ (যাদের মধ্যে ছিলেন ওবায়দুর রহমান, নুরে আলম সিদ্দিকী, নুরুল ইসলাম মঞ্জু, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন) বাকশাল গঠনের পর এক গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে বাকশাল বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নেন। এই সূত্রের মতে, অভ্যুত্থানকারীদের সাথে এইসব নেতাদের যোগাযোগ ছিল। আওয়ামী লীগের সংসদীয় আমলের শেষের দিকে যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেই মোহাম্মদ উল্লাহও স্বীকার করেছেন যে, মুজিবের মন্ত্রিসভায় অনেকে বাকশাল বিরোধী ছিলেন।
শেখ মুজিবের মন্ত্রীদের অন্যতম সদস্য ও বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইউসুফ আলী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'অভ্যুত্থানকারী মেজরদের অন্যতম মেজর ডালিম তৎকালীন ভাইস-প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ও কামরুজ্জামানকে ক্ষমতা গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছিলেন।' ব্যাপারটি যদি সত্যি হয়, তবে ভাবতে অবাক লাগে যে, সৈয়দ নজরুল ও কামরুজ্জামানের মতো ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা কেন শেখ মুজিবকে কথাটা খুলে বলেননি। এর সঠিক ব্যাখ্যা এখন আর পাওয়া সম্ভব নয়। কেননা এদের অধিকাংশ এখন বেঁচে নেই। অধ্যাপক ইউসুফ আলী মিথ্যা পরিবেশন করবেন এটা ভাবা না গেলেও ঘটনাটি অধিকাংশ মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। '৯১ জুলাই মাসে কর্নেল ফারুক বলেছেন, 'প্রয়োজনে তিনি হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দেবেন।' কর্নেল ফারুক কি আওযামী লীগ নেতাদের একটা অংশের সাথে তার পূর্ব যোগাযোগের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন?" 
[৩]
কর্নেল (অব:) শাফায়াত জামিল এর লিখা “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর” বইতে পনেরো আগস্টের অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে এরশাদের ঘনিষ্ঠতা ও তাদের প্রতি সহমর্মীতা লক্ষণীয়। পরবর্তী সময়ের দুটো ঘটনা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, কর্নেল শাফায়াত জামিলের বর্ননায় – “প্রথমটি, খুব সম্ভবত:, মেজর জেনারেল জিয়ার সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পরবর্তী দ্বিতীয় দিনের ঘটনা। আমি সেনাপ্রধানের অফিসে তার উল্টোদিকে বসে আছি। হঠাৎ করেই রুমে ঢুকলেন সদ্য পদন্নোতি প্রাপ্ত ডেপুটি চিফ মেজর জেনারেল এরশাদ। এরশাদের তখন প্রশিক্ষণের জন্য দিল্লিতে থাকার কথা।
তাকে দেখামাত্রই সেনাপ্রধান জিয়া বেশ রুঢ়ভাবে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি বিনা অনুমতিতে কেন দেশে ফিরে এসেছেন। জবাবে এরশাদ বললেন, তিনি দিল্লিতে অবস্থানরত তার স্ত্রীর জন্য একজন গৃহভৃত্য নিতে এসেছেন। এই জবাব শুনে জিয়া অত্যন্ত রেগে গিয়ে বললেন, আপনার মতো সিনিয়র অফিসারদের এই ধরণের লাগামছাড়া আচরণের জন্যই জুনিয়র অফিসাররা রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করে দেশের ক্ষমতা দখলের মতো কাজ করতে পেরেছে। জিয়া তার ডেপুটি এরশাদকে পরবর্তী ফ্লাইটেই দিল্লি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তাকে বঙ্গভবনে যেতেও নিষেধ করলেন। এরশাদকে বসার কোন সুযোগ না দিয়ে জিয়া তাকে একরকম তাড়িয়েই দিলেন।
পরদিন ভোরে এরশাদ তার প্রশিক্ষণস্থল দিল্লিতে চলে গেলেন ঠিকই, কিন্তু সেনাপ্রধান জিয়ার নির্দেশ অমান্য করে রাতে তিনি বঙ্গভবনে যান। অনেক রাত পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থানরত অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর থেকেই মনে হয় এরশাদ আসলে তাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করার জন্যই ঢাকা এসেছিলেন”।
দ্বিতীয় ঘটনাটি আরো পরের। জিয়ার শাসনামলের শেষদিকের কথা। ঐ সময় বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারী অফিসাররা গোপনে মিলিত হয়ে জিয়া সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করে। এক পর্যায়ে ওই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেলে তাদের সবাইকে ঢাকায় তলব করা হয়। সম্ভাব্য বিপদ আঁচ করতে পেরে চক্রান্তকারী অফিসাররা যার যার দূতাবাস ত্যাগ করে লন্ডনসহ বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। এদিকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে কর্মরত কয়েকজন সদস্য একই অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে বিচারের সম্মুখীন হন। আরো অনেকের সঙ্গে লে: কর্নেল দীদারের দশ বছর এবং লে: কর্নেল নুরুন্নবী খানের এক বছর মেয়াদের কারাদন্ড হয়। প্রধান আসামীরা বাংলাদেশের সরকার ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদেশে নিরাপদেই অবস্থান করছিল। ঐ বিচার তাই একরকম প্রহসনেই পরিণত হয়।
পরবর্তীকালে, জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর অভ্যুত্থানকারীদের মধ্যে যারা চাকরি করতে চেয়েছিলেন, এরশাদ তাদেরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে পুনর্বহাল করেন। দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্বাসিত হল ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারীরা পোস্টিং নিয়ে তাদের অনেকে বিভিন্ন দূতাবাসে যোগ দেয়।
শুধু পুনর্বাসনই নয়। এরশাদ আগস্ট অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত উল্লেখিত অফিসারদের কর্মস্থলে বিনাঅনুমতিতে অনুপস্থিতকালের প্রায় তিন বছরের পুরো বেতন ও ভাতার ব্যবস্থাও করে দেন”। 
বাংলাদেশের মানুষ আজ বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে, যারা সেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে, ছোট্ট শিশু রাসেল হত্যার সাথে প্রত্যাক্ষ্য বা পরক্ষভাবে যুক্ত ছিল অথবা হত্যার পর যাদের ট্যাঙ্কের উপর দাঁড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ্যে উল্লাস করতে দেখা গেছে তারাই আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কোলে আশ্রিত। অথচ যেই গুটিকয়েক লোক সেদিন এই হত্যার প্রতিবাদ করেছিল যেমন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি আজ নিগৃহীত।

তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা ॥ লে: কর্নেল (অব:) এম এ হামিদ পিএসসি [ শিখা প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ । পৃ: ২৫-২৮ ]
জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি ॥ মহিউদ্দিন আহমদ [ প্রথমা প্রকাশন : জানুয়ারি, ২০১৫ (তৃতীয় সংস্করণ) । পৃ: ১৭৬-১৭৯ ]
ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস : বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ॥ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
[ চারুলিপি - ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৬ । পৃ: ১৮৫-১৯০ ]
শতাব্দীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অজানা অধ্যায় / সম্পাদনা: শহিদুল ইসলাম মিন্টু ॥ [ শিখা প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৭ । পৃ: ৩৯-৪০ ]
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর ॥ কর্নেল শাফায়াত জামিল (অব:) [ সাহিত্য প্রকাশ - ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৮ । পৃ: ১২০-১২১ ]

রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৫

কক্সবাজার নামের ইতিহাসঃ

আরব ব্যবসায়ী ও ধর্ম প্রচারকগন ৮ম শতকে চট্টগ্রাম ও আকিব বন্দরে আগমন করেন। এই দুই বন্দরের মধ্যবর্তি হওয়ায় কক্সবাজার এলাকা আরবদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে। নবম শতাব্দীতে কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম হরিকেলার রাজা কান্তিদেব দ্বারা শাসিত হত। ৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আরাকান রাজা সুলাত ইঙ্গ চন্দ্র চট্টগ্রাম দখল করে নেবার পর থেকে কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অংশ। ১৬৬৬ সালে মুঘলরা চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। মুঘল সেনাপতি বুজুর্গ ওমেদ খান কর্ণফুলির দক্ষিণের মাঘ কেল্লা দখল করে নেন এবং আরাকানবাসী রামু কেল্লাতে আশ্রয় নেয়, যা কিনা পরে মুঘলরা হঠাৎ আক্রমণ করে দখল করে নেয়। কক্সবাজারে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চাষীদের মাঝে জমি বিতরণের এক উদারনীতি পদক্ষেপ নেয়। এর ফলে চট্টগ্রাম ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চল হতে মানুষ এই এলাকায় আসতে থাকে। বার্মা রাজ বোধাপায়া (১৭৮২-১৮১৯) ১৭৮৪ সালে আরাকান দখল করে নেন। প্রায় ১৩ হাজার আরাকানি বার্মারাজের হাত থেকে বাঁচার জন্য ১৭৯৯ সালে কক্সবাজার থেকে পালিয়ে যায়। এদের পুনর্বাসন করতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একজন হিরাম কক্সকে নিয়োগ দেয়। প্রতি পরিবারকে ২.৪ একর জমি এবং ছয় মাসের খাদ্যসামগ্রি প্রদান করা হয়েছিল। এ সময় ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স রাখাইন অধ্যুষিত এলাকায় একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। যা কক্স সাহেবের বাজার পরিচিত হয় স্থানীয়দের মাঝে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তার অবদানের জন্য কক্স-বাজার নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কক্স-বাজার থেকেই কক্সবাজার জেলার নামের উৎপত্তি। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হবার পূর্বেই ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হিরাম কক্স ১৭৯৯ সালে মৃত্যু বরণ করেন। ফয়জুর রহমান

About

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

আমার ব্লগ তালিকা

Translate

Translate

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24

সর্বশেষ

অনুসরণকারী