আমাদের বাংলাদেশ নিউজ ডেস্কঃ ১।পাত্রী দেখার জন্য ছেলের কম করে ১০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা হতে পারে।
২।মেয়ে পছন্দ হওয়ার পর মেয়ে পক্ষের খরচ শুরু!৫ জনের বৈঠকের নামে ছেলে পক্ষ থেকে কম করে হলেও ১৫-২০জন আসবে মেয়ের বাড়ি।কোন কোন সময় ৫০ জনও পার হয়ে যায়।খরচ ২০-২৫হাজার টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাদিক টাকা পার হয়।
৩।এবার ছেলে মেয়ের উভয় পক্ষের একে অপরের আকদের সাজানির জন্য ৫০হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকার বাজার।
৪।আকদের দিন ছেলে মেয়ে উভয় পক্ষকে মসজিদে দেওয়ার জন্য নাস্তার প্যাকেট করতে হয়।তবে এখনো মেয়ে পক্ষকে এর জন্য বাধ্য করা হয় না।খরচ ৫-৫০ হাজার টাকা।
৫।এবার আকদের দিন ছেলে মেয়েকে দেখতে ও শুশুর শাশুড়ী কে সালাম করতে আসবে।জামাই তো একা আসতে পারবে না,তাই বেশী না ৫০-৬০ জন নিয়ে আসে।আর বড় লোকের ছেলেরা আবার বেশী ভয় পাই!!তাই তারা ২০০ থেকে ৫০০ জন নিয়ে আসে।মেয়ের পক্ষ কে এর জন্য ৪০-৫০ হাজার থেকে শুরু করে ২-৩ লক্ষ টাকার মত খরচ হয় আর কি!!
৬।এবার বিয়ে ও গায়ে হলুদ এর বাজারের পালা।ছেলেপক্ষ কে কম করে হলেও লক্ষাধিক টাকা খরছ করতে হয়।বড় লোকের পোলামায়ার তো আলাদা হিসাব নিকাস। যারা বেশী চালাক তারা ৫০ থেকে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ ধরে মেয়েপক্ষ কে দিয়ে দেয়। এবার মেয়েপক্ষ ছেলেপক্ষ কে বুঝানোর জন্য তারা সম্পূর্ণ টাকার সাজানি কিনেছে, মেয়ের বাপের পকেটের দিগুন টাকা খরচ করে মেয়ের সাজানী কিনে।
ছেলেকে সাজানীর পাশাপাশি,পাঁচ কাপড় বা স্যুট দিতে হবে।অনেকে এর বদলে ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। আর পার্টওয়ালা ছেলেরা তো ৭০-৯০ হাজার টাকার নিচে স্যুট পরেও না।কিছু পরিবারে ছেলেকে একা দিলে হয় না।দেবরদুলা ভাইদেরও দিতে হয়।দুলার সঙ্গে যারা যারা যায় তাদেরও কিছুনা কিছু কিনে দিতে হয়।
৭।আমাদের চট্টগ্রামে গায়ে হলুদ ২ধরনের হয়।১টা হলো ছেলে মেয়ে উভয়পক্ষ একসাথে করেন, আর একটা হলো ২ পক্ষ ২দিন গায়ে হলুদ করেন।উভয় পক্ষ একে অপরের হলুদে অনেক উপহার নিয়ে উপস্থিত হয়।একসাথে করা গায়ে হলুদ এর সম্পুর্ন খরচ এর দায়িত্ব থাকে মেয়ে পক্ষের।বেশী না ২-৩ লক্ষ টাকা করছ হয় আর কি!!
৮।বিয়ের দিন হয় এলাহি কান্ড।১ থেকে দেড় হাজার বরযাত্রী, কম করে হলেও ৫০০-৬০০জন। অনেকে কিছু খাবার আগে নিয়ে যায় বা টাকা নিয়ে নেয়।অনেকে বলে দেয় যাতে বরযাত্রীকে ভালো মতো দেখার জন্য যাতে তাদের আপ্যায়নে বা অন্য কিছুতে ভুল বা ত্রুটি না হয়। সম্মান করার জন্য। খাবারের মেন্যু ঠিক করে দেয়, অবশ্য এটা একেবারে ছোট লোক তারা করে থাকে, কারণ চট্টগ্রামে বিয়ের খাবার এর কথা বলতে হয় না।মেয়ের পক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে খাবারের মান ও আইটেম ঠিক রাখার জন্য।
যদিও চিংড়ি মাছ না থাকার জন্য এখানে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। আর বিয়েটা তো অবশ্যই নামিদামি ক্লাবের ফেলতে হবে,সুন্দর ডেকোরেশন করতে হবে।ছেলের বোন জামাই কে, ছেলের ভাইকে স্বর্ণের আন্টি দিতে হবে। ছেলেকে ঘড়ি দিতে হবে। এই ভাবে বিয়ের দিন বেশী না ৬-৭ লাখ টাকা, তা না হলে ১০-১২ লাখ টাকা খরচ হয় আর কি।
৯।এবার বউ ফিরাপারা বা পুনরায় নিজের বাড়ি আসা পর্যন্ত বউ এর কোন না কোন আত্মীয় প্রতিদিন জামাই বাড়ি আসতে থাকবে। তাই তাড়াতাড়ি বউকে ফিরাপারার ব্যবস্থা করা হয়।অনেকে একসাথে বউএর কিছু আত্মীয়কে খাইয়ে দিয়ে ওয়ালিমাটা সেরে ফেলে।কিছু ছোট লোক বউ এর বাড়ি থেকে আনা খাবার গুলো দিয়ে এইসব আত্মীয়দের আত্মীতিয়তা সেরে ফেলে। কেউ কেউ ওয়ালিমায় ২০০-৩০০ থেকে শুরু করে ৫০০-১০০০ মানুষের খাবার করে।ওয়ালিমাতে ছেলেপক্ষ ১ লাখ থেকে শুরু করে ৭-৮ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে।
১০। এবার ছেলে চুরি করে মেয়েকে দেখতে যাবে বন্ধুবান্ধব নিয়ে।তখন বেশি না ৩০-৪০ জন যায় আরকি।চুরি করে যায় বলে এটাকে চোরা বৈরত বলা হয়।জামাই চুরি করতে গেলেও সম্মানের সাথে অনেক গুলো আইটেম এর নাস্তা, রাতের খাবার ও ডেজার্ট তৈরি করা হয়। ৫০-৬০হাজার টাকার মধ্যে অবশ্য একটা চোরা বৈরতের আয়োজন করে ফেলে যায়। তবে হ্যাঁ!! ই বৈরাতীর দিকে কড়া নজরদারী করতে হয়। তা না হলে কিছু না কিছু এরা চুরি করবেই।
১১।এবার বউ জামাইবাড়ী ফিরে আসার পালা। এই ১০-১২জন আসে নিয়ে যেতে। দেবর, ননদের জামাই আসলে ওদের কে স্বর্ণের আন্টি দিতে হয় অথবা বকসিস দিতে হয়। এই২০ হাজার থেকে লক্ষাধীক টাকা খরচ হয়।
১২।এবার বিয়াইনভাতার পালা। অর্থাৎ বরের মা-বাবা তাদের ভাই-বোন নিকট আত্মীয় নিয়ে বউ এর বাড়ি বেড়াতে যায়। এই ২০০-৩০০ লোক যায়।এইদিন বিশেষ করে বরের মা প্রথমবারের বউ এর বাড়ি দেখতে যায়। তাই তিনি এই আয়োজন এর মুল আকর্ষণ। তিনি এই আয়োজন ছাড়া বউ এর বাড়ি যান না।
ভাই খরচের কথা আর বলতে ইচ্ছে করছে না। আপনাদের মত ধরে নিন কত খরচ হতে পারে।
১৩। ১ম রমজানের ঈদে উভয় পক্ষ ঘরের সদস্যকে পছন্দ সই কাপড় কিনে দিতে হবে। ছেলেপক্ষ না দিলে মেয়েপক্ষ তেমন কিছু বলে না। বউ একটু খুটা দেয় আর কি।
১৪। কোরবানির ঈদ বউ বাড়ি থেকে গরু অবশ্যই। ছেলে দয়া করে সে গরু থেকে ১টা আস্ত রান মেয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। গরু ছোট হলে কিন্তু কনেপক্ষ গরুর রান থেকে বঞ্চিত হয়।
এছাড়া বউ এর বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে বেনামে জামাই এর পুরো আত্মীয় সজন,পাড়া প্রতিবেশীর জন্য খাবার পাটাতে হয়। যেমন-শীতের পিঠা,মধুভাত, বিভিন্ন মৌসুমি ফলের সময় সে ফল গুলো, ইফতারী,নাতি হলে জীবন্ত হাঁস-মুরগি,নাতির আকিকা, নাতি দোলনায় দেওয়া, নাতির দাঁত ওটা, মিলাদুন্নবীর তবররুক, পরবী, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি....................!!!""""
আরে বিরাট বড় বড় দুই দুই টা খরচের কথা তো বলিই নাই!!
বিয়ের কাবিনের বাবদ স্বর্ণ।এই জায়গায় ছেলে অথবা মেয়ে যে কোন একজন টকবেই। প্রথমে এমন ভাবে কাবিনটা ধরা হবে ছেলের চৌদ্দ গুস্টিও এই কাবিন পরিশোধ করতে পারবে না। অবশ্য এই নিয়ে চিন্তা নাই। এটা পুরো টাই বাকি থাকলেও সমস্যা। মারা যাওয়ার আগে বউ এর পা ধরে ক্ষমা চাইলেই হয়।স্বর্ণ যায় দেওয়া হয় অনেক সময় পুরো টাই উপহার স্বরুপ ধরা হয়। কেউ স্বর্ণ দেয় ৬-৭ লক্ষ টাকার, উসুল ধরা হয় ১-২ লাখ টাকা। অনেক ৫-১০লাখ টাকা উসুল ধরে দেয় কিন্তু বিয়ের পর স্বর্ণ গুলো নিয়ে নেয়।
আর যৌতুক এর কথা বলা হয় নাই।। আমাদের চট্টগ্রামে আমরা কিন্তু যৌতুক নিই না। উপহার নিই। উপহার কিন্তু কম দিলে হবে না। বেশি বেশি করে দিতে হবে। যায় দিবেন আপনাদের মেয়েই তো ব্যবহার করবে।আমরা তো শুধু শুঁকে শুঁকে দেখব।
এতোকিছুর পরেও মেয়েটি হয় বেতন ছাড়া দাসী
অথবা ছেলেটি হয় বউ এর গোলাম। সেটা করতে না পারলে বিভিন্ন মামলায় জেল খাটো।
যারা মান সম্মান নিয়ে থাকতে চাই। ভালবাসা ছাড়া একে অপরের সাথে অসম্মানজনক ভাবে সারাটা জীবন কাটাই দেয়।
বর্তমানে চট্টগ্রামের ৯৯℅ মানুষ বিয়ের সময় লোন করে। এই বিয়ের আজাবে প্রায় প্রতিটি পরিবার কোন না কোন ভাবে জর্জরিত।
অথচ ইসলাম বলে সবচেয়ে কম খরচের বিয়েতে আল্লাহর রহমত নাজিল হয়।
ইসলামে বিয়ে কত সহজ বিষয়।
চট্টগ্রাম এ বিয়ের মত কঠিন আর কিছুই নাই!!!!!!
সংগৃহীত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন