পরিস্থিতিটা যে হঠাৎ ওমন হয়ে পড়বে তা তিনি ভাবতেই পারেননি। ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গন যখন হাতাহাতি শুরু করলেন তখন তিনি তার চীরায়ত স্বভাবজাত স্নায়ুবিক দূর্বলতার চাপ অনুভব করলেন। বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি। তার পঞ্চ ইন্দ্রিয় তাকে সতর্ক করে জানালো- ভাগো ! নচেৎ তুমিও... ... . . .
লোকটি কম্পিত পদে বৃষ্টির পথে পা বাড়ালেন। কে যেনো বললো- ওকি যান কই ? অন্যজন বললো- ছাতা নিয়ে যান। একবার ভাবলেন - পেছনে ফেরে তাকাবেন এবং হাতটা বাড়িয়ে ছাতাটা তুলে নেবেন। কিন্তু ওকি! বিশ্রি সব শ্লোগানের মধ্যে সমস্বরে কয়েক জন বলছে- ধর হালারে । মার হালারে!
শব্দ মানুষকে গতি এনে দেয়। লোকটির ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো। তার জরাজীর্ন পা দুটি হঠাৎ রকেটের গতি পেলো। তিনি তুমুল বেগে বৃষ্টির বেগ অতিক্রম করে বিদ্যুৎ বেগে ছুটলেন অনির্ধারিত গন্তব্যে।
বহু বছর তিনি ওমন ভাবে ছুটেননি- বৃষ্টির মধ্যে তো নয়ই। তার শরীরের পানি এ্যালার্জি এবং এ্যাজমার কারণে তিনি প্রকৃতির অপরূপ ছন্দময় বৃষ্টির স্পর্শ সব সময় এড়িয়ে চলেছেন। কিন্তু আজ নিয়তির ফাঁদে পড়ে তিনি এ্যাজমা- এ্যালার্জি সব ভুলে গেলেন। দৌড়াতে গিয়ে টের পেলেন কেবল বড় বড় বৃষ্টির ফোটার পতিত আঘাত এবং পেছন থেকে ভেসে আসা অশ্লীল এবং অশ্রাব্য শব্দমালার সুতীব্র কম্পন।
কিছুদুর চলার পর লোকটি অনুভব করলেন- তার হাত পা কাঁপছে। পেটের মধ্যে কিঞ্চিত আম বাতের যন্ত্রনা এবং বমন ভাবের কারণে তার মাথাটি চক্কর দিয়ে উঠলো। তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর রাস্তার পাশের নিরিবিলি একটি ইটের তৈরী বেদীতে গিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়লেন। তার খুব কান্না পাচ্ছিলো। ক্লান্তি, ভয়, লজ্জা আর অপমানের সুতীব্র যন্ত্রনায় তার চোখের জল শুকিয়ে গেলো। ফলে তিনি বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে কাঁদতে পারলেন না।
শোয়া অবস্থায় তিনি হঠাৎ ২/৩ জন লোকের পদধ্বনি শুনতে পেলেন। বৃষ্টি পড়ার টাপুর টুপুর শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মনুষ্য পায়ের এগিয়ে আসার শব্দ তাকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুললো। তিনি পুনরায় ছুটে চলার প্রত্যয় নিয়ে শোয়া থেকে বসতে গিয়ে দেখলেন আগতরা তারই দলের ক্যাডার- তাকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ছাতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তার ভীত সন্ত্রস্ত মন এবার প্রবল বেগে অভিমানী হয়ে উঠলো- তিনি বলে উঠলেন- আমার এখন গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত।
লেখক: গোলাম মওলা রনি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন