বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেছেন, ইসলামের মূল চেতনার অপব্যাখ্যার কারণে বিশ্বব্যাপী ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। দার্শনিকসহ বিভিন্ন ইসলামিক গুণী ব্যক্তির পদচারণায় এক সময় ইসলামের স্বর্ণযুগ ছিল। তিনি বলেন, ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ইসলামের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। সন্ত্রাসবাদীদের কোনো ধর্ম নেই। সন্ত্রাসবাদই হচ্ছে তাদের ধর্ম। গতকাল শনিবার সকালে কুমিরাস্থ আইআইইউসি (আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)’র ক্যাম্পাস মিলনায়তনে ‘ওয়ার্ল্ড পিস এন্ড সিকিউরিটি–রোল অব ইসলাম’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইআইইউসির এটি ১১তম সম্মেলন।
প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, এটা আমরা গত ১৪০০ সাল থেকে বলে আসছি। বাংলাদেশে এটি আরো বেশি প্রযোজ্য। কারণ বাংলাদেশই সুফী মতবাদের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইসলাম কোনো শক্তির মাধ্যমে আসেনি, সুফী সাধকদের মাধ্যমে এসেছিল। বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ইসলাম নিয়ে বড় আকারের শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার কোন ঘটনা ঘটে নি। কিছু নির্বোধের কারণে ইসলাম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে জানিয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ধর্মের নামে যুদ্ধ চাপিয়ে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এক কোটি মানুষকে ঘর ছাড়া এবং একই সময় ৩ লাখ মা–বোনের সম্ভ্রমহানি করা হয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭১ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করেছি যে চিন্তা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিলাম,সেই বাংলাদেশের চরিত্র বজায় রাখার জন্য। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু নির্বোধের কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, একটি নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন রাষ্ট্র তৈরিতে আমরা অনেক দুর সাফল্য অর্জন করেছি। এখানে ধর্মের নামে শান্তি বিনষ্টকারী ঘটনা ঘটছে না। সরকারও এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে । বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে ইসলামকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে একত্রিত করে ফেলা হচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ইসলামের অপব্যাখ্যা। তিনি সম্প্রতি আফগানিস্তানে নিরপরাধ ও অবুঝ শিশুদের হত্যার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, মুসলমান ধর্মের কোথায় লেখা আছে, নিরপরাধ মানুষ অথবা মুসলমান কিংবা অন্য ধর্মাবলম্বী হোক আপনি হত্যা করতে পারবেন? ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, অন্য ধর্মের নামে সন্ত্রাস হলেও তা ফলাও করে প্রচার হয় না। কিন্তু ইসলামের নামে নেতিবাচক কিছু হলে তার ব্যাপক প্রচার হয়। ইসলামের মূল চেতনার অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলেই এই গন্ডগোলটা হয়। তিনি বলেন, বোমা মেরে ইসলাম কায়েম করা যায় না। তিনি বলেন, ইসলাম চর্চা করতে হলে বেশিদূর যেতে হবে না। চার্টার অব মদিনা, ইমাম বুখারী, ইবনে সিনার জীবনিসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ভালো করে পড়লে ও বুঝলে ইসলামকে আত্মস্থ করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুল করিম বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, যদি স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি একজন মানুষ নিবেদিত হয় তাহলে সে যে কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে না। সন্ত্রাসের মূল কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। এই অনুসন্ধানেও শিক্ষার প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, ইসলামের মূল চেতনা হচ্ছে সমতা ও শান্তি। সন্ত্রাসমুক্ত একটি শান্তির বিশ্ব পাওয়ার জন্য কোরআন ও হাদীস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আইআইইউসি’র ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এ কে এম গোলাম মহিউদ্দীন বলেন, মুসলিম বিশ্ব একটি সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই সংকটকালে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথ খুঁজতে হবে। এই সম্মেলন ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে সহায়ক হবে বলে তিনি এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর ড. এ কে এম আজহারুল ইসলাম, ভারতের আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ নাদভী, আলজেরিয়ার এমির আবদ আল কাদের ইউনিভার্সিটির ভাইস–রেক্টর প্রফেসর ড. ডিজেমাই চিবাইকি এবং আইআইইউসি’র প্রো–ভাইস চ্যান্সেলর (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. দেলাওয়ার হোসাইন।
এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন, শরীয়াহ অনুষদের ডীন ও আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. নাজমুল হক নদভী। অতিথি মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ এর ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ট্রাস্টি সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্যাহ ও মোহাম্মদ নুরুল্লাহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন চৌধুরী গোলাম মাওলা, ড. লুৎফর রহমান ও মামুনুর রশীদ।
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে বাংলাদেশের পাশাপাশি অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, হংকং, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আফ্রিকার ১৮ টি দেধের প্রতিনিধিরা অংগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৬ জন কী–নোট স্পিকার আছেন। কনফারেন্সে মোট প্রাপ্ত প্রবন্ধের সংখ্যা ১৫৮ টি। এরমধ্যে ৯০ টি প্রবন্ধ কনফারেন্সে উপস্থাপন করা হবে। এগুলোর ৬৯টি বিদেশি এবং ২১ টি দেশিয় প্রবন্ধ। সম্মেলনে ১৫ টি একাডেমিক সেশন হবে। প্রতিটি সেশনে ৬ টি করে প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইআইইউসি’র সাবেক ভাইস–চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কে. এম. আজহারুল ইসলাম,ভারতের আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ নাদভী, আলজেরিয়ার এমির আবদ আল কাদের ইউনিভার্সিটির ভাইস–রেক্টর প্রফেসর ড. ডিজেমাই চিবাইকি, মরক্কোর ইবনে জহির ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু ইয়াহিয়া, সুদানের আল কোরআন এন্ড ইসলামিক সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড, নাজি মুস্তাফা বাদউই সুলায়মান এবং সুদানের উম্মে দারমান ইসলামিক ইউনির্ভাসিটির প্রফেসর ড, আলী ঈসা বিন আব্দুর রহমান।