বাংলাদেশ বার্তা ডেস্ক: আমার পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা, আমার প্রানের চেয়ে প্রিয় আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাথে সাক্ষাত শেষে ফিরছি। আমাদের অন্যান্য বারের সাক্ষাতের চেয়ে এবারের সাক্ষাতটি ছিল সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম। সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছে দেখি আব্বা আগে থেকেই সেখানে আমাদের অপেক্ষায় আছেন। সালাম বিনিময় শেষে আব্বার মায়াবী চেহারাখানি নয়ন জুড়ে দেখতে গিয়েই মনের গহীণে তীব্র এক ব্যাথা অনুভব করলাম। আব্বার চোখ বসে গেছে, মুখ মলিন। তার সাথে শেষবার সাক্ষাত করেছিলাম আজ থেকে ১৮/২০ দিন আগে। মনে হল সেই সাক্ষাতে আব্বাকে যেমন দেখেছিলাম তার থেকে বেশ খানিকটা শুকিয়ে গেছেন তিনি।
আব্বাকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম আমি। আব্বার জেল জীবনের ৬ বছর চলছে। এই ৬ বছরের মধ্যে এমন তো কখনো দেখিনি !! খুব অবাক হয়েই আব্বাকে প্রশ্ন করলাম, আব্বা! আপনাকে এমন লাগছে কেন! রাতে ঘুম হচ্ছেনা!?
আমরা কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আব্বা একেবারেই শিশুর মতো কেঁদে দিলেন। তিনি বললেন, "নিজামী ভাইকে কতো ভালবাসি, তা বুঝতে পারছি এখন ...। সেই রাত (অন্যায়ভাবে দেয়া ফাঁসি কার্যকরের রাত) থেকে আমার ঘুম হচ্ছেনা। ঠিক মতো খেতেও পারছিনা। বারবারই নিজামী ভাইয়ের কথা মনে পড়ছে। তার নূরানী চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ওরা কীভাবে পারলো তার মতো বিশ্ববরেণ্য একজন আলেমকে এতো নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতে .. !"
আব্বার চোখের পানি আমাদের হৃদয়-মন-শরীরকে ছুঁয়ে গেল। আমরা কেউই আর ধরে রাখতে পারলাম না নিজেদেরকে। আব্বার সাথে চোখের পানিতে বুক ভাসালাম আমরাও।
আব্বা আরো বললেন, "ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদেরকে জেল-জুলুম-ফাঁসি দিয়ে এ আন্দোলন বন্ধ করা যাবেনা। কারন, যেদিন ইসলামী আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছে, সেদিন থেকেই ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা জেল-জুলুম-ফাঁসির প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। জেল-জুলুম-ফাঁসি ইসলামী আন্দোলনের জন্য নতুন কিছু নয়। মিষ্টি খাওয়া সুন্নত সকলেই পালন করতে পারে, টুপি পড়া সুন্নত সকলেই পালন করতে পারে কিন্তু হেলমেট পড়া সুন্নত সকলে পালন করতে পারেনা, ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সুন্নত সকলে পালন করতে পারেনা। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এপাশে ফাঁসির মঞ্চ আর এপাশে আল্লাহর জান্নাত।"
সাক্ষাতের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে এলে বের হয়ে আসার মূহুর্তে আব্বা আমাদের সকলকে রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বললেন, শোক কে শক্তিতে রুপান্তরিত করে নেয়ার কথা বললেন, ইসলামী আন্দোলনের জন্য নিজেদের মাল ও জান বিলিয়ে দেবার মানসিকতা নিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বললেন।
সাক্ষাত শেষে চোখ মুছতে মুছতে আল্লাহর এক মজলুম গোলামকে তাঁরই কুদরতী হাতে সোপর্দ করে ফিরে চললাম বাড়ির পথে।মাসুদ সাঈদী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন