ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শুক্রবার রাতে বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৩ জনকে।
এরপর থেকেই এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। গ্রেফতার এড়াতে বাড়িঘর ছেড়েছেন পুরুষরা।
শুক্রবার ৫ বাড়িতে আগুন দেয়ার পর নাসিরনগরে বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। একদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর বজ্র আঁটুনি, অন্যদিকে গ্রেফতার আতংক- এরই মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় আরেক বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঘটেছে উসকানিমূলক বিপরীত ঘটনাও। এক মসজিদের ভেতরে কে বা কারা রেখে গেছে লক্ষ্মী মূর্তি।
পাঁচ বাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় মামলা হয়েছে। এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক তার সমর্থক তিন নেতাকে বহিষ্কারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন তিনি।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদের পদত্যাগ চেয়েছে। সেই সঙ্গে তাকেও তদন্তের আওতায় আনার দাবি তুলেছে তারা।
রোববার নাসিরনগরে ১৫ মন্দির ও শতাধিক বাড়িতে তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। অগ্নিসংযোগ করে।
ফেসবুক ঘেঁটে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই দিন উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন হরিণবেড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক আহমেদ।
রসরাজের ফেসবুক আইডিতে ধর্মীয় অবমাননার ব্যঙ্গচিত্র আপলোড হওয়ার পর ফারুকই তা শেয়ার দিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদের ডাক দেন।
অনেকেই মনে করেন, ফারুক ওই ব্যঙ্গচিত্র আপলোডের সঙ্গেও যুক্ত। রাজনৈতিক ও স্থানীয় বিলে আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বে পানি ঘোলা করে ফায়দা লোটার জন্য এমনটি করা হয়েছে। শুক্রবার যে তিন নেতাকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ, ফারুক তাদের একজন।
পুলিশের এক সূত্র জানায়, ভিডিও ফুটেজ দেখে এবং বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে শুক্রবার ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
তবে নাসিরনগর থানার ওসি (তদন্ত) শওকত হোসেন বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের ৭ দিনের রিমান্ডে আনার আবেদন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এ নিয়ে ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা অপরাধীদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান শুরু করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে ডিআইজি বলেন, পত্র-পত্রিকায় যেসব নেতার নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণ হলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ৭ কার্যদিবসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা চলছে।
শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অঞ্জন কুমার দেবের বাড়ির পাটশলার গুদামে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে যান।
এদিন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও উপাসনালয় পরিদর্শন শেষে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক শাহরিয়ার কবির যুগান্তরকে বলেন, নাসিরনগরে রামুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। রসরাজের মতো সাধারণ জেলের পক্ষে ওই রকম ব্যঙ্গচিত্র বানানো সম্ভব নয়। কারণ ধর্মীয় ওই ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করতে যে ধরনের মেধা প্রয়োজন তা রসরাজের নেই। সে ৪র্থ বা ৫ম শ্রেণী পাস।
তিনি বলেন, ওই ব্যঙ্গচিত্র তৈরিতে কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়েছে। রসরাজ ফটোশপের কাজ তো দূরের কথা, সে কম্পিউটার চেনে কিনা তাও আমার সন্দেহ রয়েছে।
শাহরিয়ার বলেন, হরিণবেড় গ্রামের একজন আইনজীবীর সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছিল। তিনি রসরাজের পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন কিন্তু দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। পরে তাকে রিমান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘হরিণবেড় বাজারে আল আমিন নামক একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে এই ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করে রসরাজের ফেসবুকে আপলোড করা হয়। এ ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নাসিরনগর থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২৯ অক্টোবর ইউএনও শুধু দুটি প্রতিবাদ সভার অনুমতিই দেননি, সেখানে তিনি বক্তব্যও দিয়েছেন। সেদিন ওই সমাবেশের অনুমতি যদি না দেয়া হতো তাহলে হিন্দু পরিবারগুলো হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেত।’ ঘটনার এক সপ্তাহ পরও ইউএনওকে স্বপদে বহাল রাখার সমালোচনা করেন তিনি।
শাহরিয়ার কবিরের সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট রসরাজের পক্ষে আইনজীবীকে দাঁড়ানোর সুযোগ দেননি। ম্যাজিস্ট্রেট যেটি করেছেন, সেটি সংবিধান পরিপন্থী কাজ। ম্যাজিস্ট্রেট রসরাজকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার বিরুদ্ধে রিমান্ড অর্ডার দিয়েছেন। এজন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত।’
এ সময় নির্মূল কমিটির সদস্য সচিব কাজী মুকুল, মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক রাখী দাস, জেলা নির্মূল কমিটির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন প্রমুখ সেখানে ছিলেন। এছাড়া শনিবার নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও বাড়িঘর পরিদর্শন করেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।
উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্বে রসরাজের গ্রাম হরিণবেড়। শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তিতাস নদীর পারের এ গ্রামে সবই জেলে পরিবার।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি যুগান্তরকে বলেন, রসরাজ দৈনিক শ্রমিক। বাড়ির পাশের বিলে জেলে হিসেবে মাছ ধরে। ফেসবুকে ছবি পোস্ট হওয়ার ক’দিন আগে থেকেই সে বালিঙ্গা বিলে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত ছিল। তার ফোনটিও বাড়িতে রেখে যায়। তার ছোট ভাই আরেকজনের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফোন করে রসরাজের সঙ্গে কথা বলে। তাকে জানায়, ‘তোমার ফেসবুক থেকে কী আপলোড করেছে? যা নিয়ে সমস্ত এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।’ এ কথা শুনে বাড়িতে আসে রসরাজ। ফেসবুকে ওই ব্যঙ্গচিত্র দেখে সে হতভম্ব হয়ে পড়ে।
রসরাজের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, ধর্মীয় যে ব্যঙ্গচিত্র আপলোড নিয়ে এত লংকাকাণ্ড সেটি মুছে ফেলা হয়েছে। তবে ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা ২৪ মিনিটে ওই ব্যঙ্গচিত্র আপলোডের বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়।
যাতে লেখা রয়েছে, ‘প্রথমেই আমি সকল মুসলিম ভাইদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। কারণ আমার অজান্তে কে বা কারা আমার আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করেছে। কাল (২৮ অক্টোবর) রাতে আমি, মামুন ভাই, আশু ভাই আর বিপুলের মাধ্যমে জানতে পারি ছবি পোস্টের কথা। তার আগ পর্যন্ত আমি কিছুই জানতাম না। জেনে সাথে সাথেই ডিলিট করি। যেখানে আমরা বসবাস করি হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই হিসেবে। ওইখানে ওইরকম মনমানসিকতা এবং দুঃসাহসিকতা অবশ্যই আমাদের কারও নেই। আমি কেন? আমি মনে করি ওই মনমানসিকতা কারও নেই।’
স্ট্যাটাসে আরও বলা হয়, ‘এখানে আমার মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন। ওইখানে আমার আইডি থেকে এমন ছবি আমার অজান্তে কিভাবে পোস্ট হল, কে বা কারা ওই কাজটা করল আমি জানি না। তাই সকলের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থী।’
ইউপি সদস্য দ্বীন ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কৈবর্তপাড়ার মনা মাস্টারের ছেলে আশুতোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল তথ্য পাওয়া যাবে। কারণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক আহমদের অফিসে ২৯ অক্টোবর সকালে আশুতোষ রসরাজের আইডি থেকে দুঃখ প্রকাশ করে পোস্ট দেয়ার কথা স্বীকার করে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক ইউপি সদস্য আবু লাল, স্কুল কমিটির সভাপতি খালেদ মোবারকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।
এলাকার একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুকের সঙ্গে মনা মাস্টারের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। ফারুক মনা মাস্টারকে শ্বশুর বলে সম্বোধন করেন। ওইদিন হরিপুর বাজারের আল আমিন সাইবার ক্যাফের মালিক বেনু মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম রসরাজের পোস্টটি প্রথম কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট করেন। পরে এগুলো ফটোস্ট্যাট করে এলাকায় প্রচার করেন।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে জাহাঙ্গীর আলমই তার সহযোগীদের নিয়ে রসরাজকে মনা মাস্টারের বাড়ি থেকে ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে নিয়ে আসে এবং আওয়ামী লীগ নেতা ফারুকের হাতে তুলে দেয়।
সেখান থেকে নাসিরনগর থানা পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। একই সময়ে হরিপুর এলাকায় ব্যাপক মাইকিং করে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক ও তার ভাই কাপ্তানের নেতৃত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। শনিবার দুপুরে হরিপুর বাজারে গিয়ে জাহাঙ্গীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল নম্বর দুটিই বন্ধ পাওয়া যায়।
চেয়ারম্যান আঁখি আরও বলেন, জেলে রসরাজের বিদ্যা-বুদ্ধি কোনোটাই এমন নেই। তিনি মনে করেন, বালিঙ্গা বিলের আধিপত্য নিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
এছাড়া গত ইউপি নির্বাচনে হরিপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নৌকা প্রতীকে ভোট দেয় কৈবর্তপাড়ার মানুষ। মন্ত্রী ছায়েদুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক সমর্থন করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদ চৌধুরীকে। তাদের উপেক্ষা করে কৈবর্ত সমাজের মানুষ আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেন। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেও রসরাজকে ফাঁসিয়ে কৈবর্ত সমাজের উপাসনালয়সহ তাদের বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর করা হতে পারে।
কৈবর্তপাড়ার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা রামেশ্বর দাস জানান, আমরা হরিণবেড় হরিপুর আহসান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ৩ বছর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বালিঙ্গা বিল লিজ এনেছিলাম। গত বছর বিলের মাছ ধরে বিক্রিও করা হয়। এ বছরের জন্য কয়েক মাস আগে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৪০ টাকা জমা দিয়ে লিজ নবায়ন করা হয়। এর কিছুদিন পরই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক আহমেদ তাদের ডেকে জোর করে কমিটি বাতিল করেন। ওই কমিটির সভাপতি রামেশ্বর আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন রাধুচরণ দাস। বিল আত্মসাৎ করতে তাদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করেন ফারুক। এ কমিটির সভাপতি সুভাষ দাস ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় রসরাজ দাসকে। এমনকি সাধারণ সম্পাদক রাধুচরণ দাসের কাছ থেকে জোর করে সব খাতাপত্রও নিয়ে যায় ফারুক।
এ বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব কথা বলা হচ্ছে। আমি রসরাজ ও তার এলাকার মানুষদের রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।
ধর্মীয় অবমাননা সংক্রান্ত ব্যঙ্গচিত্র আপলোডের বিষয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ সভার মধ্য দিয়েই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নাসিরনগরে। ইউএনও চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদ ওইদিনই নাসিরনগর সদরে দুটি প্রতিবাদ সভা আয়োজনের অনুমতি দেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত প্রতিবাদ সভা করে কলেজ মোড়ে। আর নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। এ দুটি সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই হিন্দুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়। দুই সমাবেশের অনুমতি দেয়ার পর তাতে বক্তব্য দেন ইউএনও। দুটিতেই উপস্থিত ছিলেন নাসিরনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এটিএম মনিরুজ্জামান সরকারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
রসরাজের আইডি থেকে ব্যঙ্গচিত্র ২৯ অক্টোবর রাত ১১টা ২৮ মিনিটে শেয়ার করেন ফারুক। এ সময় তিনি তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘নাসিরনগর হরিণবেড় গ্রামের একটি ছেলে পবিত্র কাবাঘরে শিবমন্দির বসিয়ে ব্যঙ্গ করে। ছেলেটির নাম রসরাজ দাস। তার বাবার নাম জগন্নাথ দাস। আজ শনিবার বেলা ১১টায় ফেসবুকে রসরাজ দাসের টাইমলাইনে এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু লোক দেখতে পেলে ফেসবুকেই ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। আমি এ খবর পেয়ে নাসিরনগর থানার এসআই আশরাফুল ভাইকে বিষয়টি অবগত করি। আমি এবং খালেদ মোবারক এলাকার আরও জনগণ নিয়ে রসরাজকে ধরে ফেলি। তারপর প্রশাসন হরিণবেড় আসে। রসরাজকে এসআই আশরাফের কাছে হ্যান্ডওভার করেছি। আমি এই কুলাঙ্গারের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই এবং ফাঁসি চাই।’ ৩০ অক্টোবর এলাকার বেশ কিছু মানুষকে নিয়ে ছবি তুলে আরেকটি প্রতিবাদী স্ট্যাটাস দেন ফারুক। এতে তিনি লেখেন, ‘সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইয়েরা সেই কুলাঙ্গারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করে। এতে আমরা সমর্থন করি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুকের ভাই কাপ্তান মিয়া রোববার সকালে এলাকার মাদ্রাসাছাত্রসহ দুই শতাধিক লোক নিয়ে ১৪টি ট্রাকে করে উপজেলা সদরে আসেন।’
বুধবার রাতে ভাদুঘরে জামিয়া সিরাজিয়া দারুল উলুম ভাদুঘর মাদ্রাসার গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল কে বা কারা। মাদ্রাসার গেটে আপত্তিকর পোস্টারও সেঁটে দেয়। শনিবার কুণ্ডা ইউনিয়নের বিটুই গ্রামের মসজিদে সকালে কে বা কারা একটি লক্ষ্মী মূর্তি রেখে যায়। পরে সকালে পুলিশ গিয়ে তা বের করে আনে।
তিন নেতাকে বহিষ্কারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী ছায়েদুল হক। তিনি জানিয়েছেন, তাকে না জানিয়েই বা তার সঙ্গে কথা না বলেই তাদের বহিষ্কার করা হয়। তারা দোষী নয় বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। তিনি নাসিরনগর উপজেলা ডাকবাংলোতে আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বলে তথ্য অধিদফতর জানিয়েছে। শনিবার অধিদফতর থেকে পাঠানো মন্ত্রীর দিনের কর্মসূচিতে দুপুর ১টায় সংবাদ সম্মেলনের উল্লেখ রয়েছে।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার দাবি : নাসিরনগরে তাণ্ডব-অগ্নিসংযোগ, ঠাকুরগাঁও ও নেত্রকোনায় প্রতিমা ভাংচুর এবং নওগাঁয় মন্দির দখলের চেষ্টায় জড়িতদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানিয়েছেন সাংবিধানিক অধিকার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জন ঘোষ। শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিচার করার জন্য নতুন আইন দরকার। সে আইনে এ অপরাধের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। পাশাপাশি দোষীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে।