বিজ্ঞাপন দিন

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই ঈদ উত্তর সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। ব্যাংক খোলা এবং যথারীতি ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এই গ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। ঢাকার সবুজবাগ থানার রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১:b>ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার

শনিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৯

দারসুল কুরআনঃ ড. মুহা: রফিকুল ইসলাম

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ  “দুনিয়ায় বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই। তাদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অবস্থানস্থল সম্পর্কে তিনি অবহিত। সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে।” (সূরা হুদ : ৬)
উপরোক্ত আয়াত সংশ্লিষ্ট পূর্ণাঙ্গ দারসটি নিম্মে দেয়া হলো-

* নামকরণঃ

সূরা হুদ ৫৩ নং আয়াতে হুদ আ: এবং তার কওমের কথা উল্লেখ আছে। এর ভিত্তিতেই এ নামকরণ করা হয়েছে।

* নাজিলের সময়ঃ

সূরা হুদ মক্কার জীবনের শেষ স্তরে অর্থাৎ ১০-১৩ তম বর্ষে নাজিল হয়। হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে : হযরত আবু বকর (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন : “আমি দেখছি আপনি বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন, এর কারণ কী?” জবাবে তিনি বলেন, “সূরা হুদ ও তারই মতো বিষয়বস্তু সংবলিত সূরাগুলো আমাকে বুড়ো করে দিয়েছে।”
এ থেকে অনুমান করা যাবে, যখন একদিকে কুরাইশ বংশীয় কাফেররা নিজেদের সমস্ত অস্ত্র নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যের দাওয়াতকে স্তব্ধ করে দিতে চাচ্ছিল ।

এ সূরার আলোচ্য বিষয়ঃ

-এ সূরার আলোচ্য বিষয় সূরা ইউনুসের অনুরূপ। অর্থাৎ দাওয়াত, উপদেশ ও সতর্কবাণী। তবে পার্থক্য হচ্ছে, সূরা ইউনূসের তুলনায় দাওয়াতের অংশ এখানে সংক্ষিপ্ত, উপদেশের মধ্যে যুক্তির পরিমাণ কম ও ওয়াজ-নসিহত বেশি এবং সতর্কবাণীগুলো বিস্তারিত ও বলিষ্ঠ।
-এখানে আরও বিশেষ করে বলা হয়েছে নবীর কথা মেনে নাও, শিরক থেকে বিরত হও অন্য সবার বন্দেগি ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও এবং নিজেদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত ব্যবস্থা আখেরাতে জবাবদিহির অনুভূতির ভিত্তিতে গড়ে তোলো।
-এ সূরায় যে উপদেশ হয়েছে তা হলো দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিকের ওপর ভরসা করে যেসব জাতি আল্লাহর নবীদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেছে ইতঃপূর্বেই তারা অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে। এমতাবস্থায় ইতিহাসের ধারাবাহিক অভিজ্ঞতায় যে পথটি ধ্বংসের পথ হিসেবে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে, সেই একই পথে তোমাদেরও চলতেই হবে, এ ধরনের মনোভাব ত্যাগ করতে হবে।
– এ সূরার মাঝে যে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে তা হচ্ছে- আজাব আসতে যে দেরি হচ্ছে, তা আসলে একটা অবকাশ মাত্র। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদের এ অবকাশ দান করছেন। এ অবকাশকালে যদি তোমরা সংযত ও সংশোধিত না হও তাহলে এমন আজাব আসবে যাকে হটিয়ে দেয়ার সাধ্য কারোর নেই এবং যা ঈমানদারদের ক্ষুদ্রতম দলটি ছাড়া বাকি সমগ্র জাতিকে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।
– এ বিষয়বস্তুসমূহ উপলব্ধি করার জন্য সরাসরি সম্বোধন করার তুলনায় নূহের জাতি, আদ, সামুদ, লূতের জাতি, মাদয়ানবাসী ও ফেরাউনের সম্প্রদায়ের ঘটনাবলির সাহায্য গ্রহণ করা হয়েছে বেশি করে।
* আয়াতের ব্যাখ্যাঃ
অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা সকল প্রাণীর রিজিক তার যে তাঁর জিম্মায় রয়েছে সে কথা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন। সমগ্র পৃথিবীর জলে-স্থলে, গাছ-গাছালিতে, গুহায় এবং গর্তে যত স্থান হতে পারে এবং যত স্থানে প্রাণী থাকতে পারে, তাদের সকলের আহার ব্যবস্থা একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। কোন জীব কোথায় থাকে, কোথায় চলাচল করে, কোথায় আশ্রয় গ্রহণ করে, কোথায় মৃত্যুবরণ করে, মায়ের উদরে কী থাকে সব কিছুই মহান আল্লাহর কিতাবে লেখা রয়েছে। (তাফসির ইবন কাসির)
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন-
ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল কোন প্রাণী এবং বাতাসে ডানা বিস্তার করে উড়ে চলা কোন পাখিকেই দেখ না কেন, এরা সবাই তোমাদের মতই বিভিন্ন শ্রেণী। তাদের ভাগ্যলিপিতে কোন কিছু লিখতে আমি বাদ দেইনি। তারপর তাদের সবাইকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে। (সূরা আল আনআম : ৩৮)

মহান আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কিছুই হয় না বা তাঁর অজ্ঞাতসারে কোনো কিছুই ঘটে না সে ব্যাপারে কুরআনুল কারিমে অন্যত্র বলা হয়েছে-
তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের চাবি, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। জলে-স্থলে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন । তাঁর অজ্ঞাতসারে গাছের একটি পাতাও পড়ে না। মৃত্তিকার অন্ধকার প্রদেশে এমন একটি শস্যকণাও নেই যে সম্পর্কে তিনি অবগত নন। শুষ্ক ও আর্দ্র সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিখিত আছে। (সূরা আল আনআম : ৫৯)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফহিমুল কুরআনের প্রণেতা বলেনঃ
যে আল্লাহ এমন সূক্ষ্মজ্ঞানী যে প্রত্যেকটি পাখির বাসা ও প্রত্যেকটি পোকা-মাকড়ের গর্ত তাঁর জানা এবং তাদের প্রত্যেকের কাছে তিনি তাদের জীবনোপাকরণ পাঠিয়ে দিচ্ছেন, আর তা ছাড়া প্রত্যেকটি প্রাণী কোথায় থাকে এবং কোথায় মৃত্যুবরণ করে প্রতি মুহূর্তে যিনি এ খবর রাখেন, তাঁর সম্পর্কে যদি তোমরা এ ধারণা করে থাকো যে, এভাবে মুখ লুকিয়ে অথবা কানে আঙুল চেপে কিংবা চোখ বন্ধ করে তাঁর পাকড়াও থেকে রক্ষা পাবে তাহলে তোমরা বড়ই বোকা। সত্যের আহবায়ককে দেখে তোমরা মুখ লুকালে তাতে লাভ কী?

এর ফলে কি তোমরা আল্লাহর কাছ থেকেও নিজেদের গোপন করতে পেরেছো ? আল্লাহ কি দেখছেন না, এক ব্যক্তি তোমাদের সত্যের সাথে পরিচিত বরাবর দায়িত্ব পালন করছেন আর তোমরা তার কোন কথা যাতে তোমাদের কানে না পড়ে সেজন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছো। (তাফহিম)
প্রাগুক্ত আয়াতের প্রাসঙ্গিকতার আলোকে বলা যায়, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক দানের ব্যাপারে কিছু নিয়ম রয়েছে, তা বিস্তারিত আলোচনার আগে রিজিক কাকে বলে তা স্পষ্ট হওয়া দরকার।
রিজিক এমন জিনিস, যা মহান আল্লাহ প্রাণিকুলের নিকট নিয়ে যান এবং প্রাণীরা তা আহার করে। এ রিজিক অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়, যেমন- স্বাস্থ্য, সম্পদ, খাদ্য, বুদ্ধি, উপায়-উপকরণ, সময় ইত্যাদি। এমনকি আমাদের জীবনটাও রিজিক। এই সবকিছু আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে আল্লাহ হলেন আর-রাজ্জাক তথা রিজিকদাতা।
এখন প্রশ্ন হলো আমরা যদি একবারে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকি, তাহলে আমাদের সামনে রিজিক আসবে না চেষ্টা করতে হবে? অবশ্যই খাবারের সন্ধানে চেষ্টা করতে হবে। শুধু তাই নয়, এ রিজিক বৃদ্ধি জন্য আমল করা, সর্বোপরি মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা একান্ত কর্তব্য।
মহান আল্লাহ রিজিক অন্বেষণের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন : তারপর যখন নামায শেষ হয়ে যায় তখন ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা আল-জুমুআ, ১০)
মহান আল্লাহ আরো বলেন, তোমাদেরকে আমি ক্ষমতা-ইখতিয়ার সহকারে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি। এবং তোমাদের জন্য এখানে জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করেছি। কিন্তু তোমরা খুব কমই শোকর গুজারি করে থাকো। (সূরা আল আরাফ : ১০)
অধিকাংশ কাজ যার মাধ্যমে রিজিক অর্জন করা যায়, তা তিনি সহজ করেছেন, কঠিন করেননি। তিনি এ ব্যাপারে বলেন,
তিনিই তো সেই মহান সত্তা যিনি ভূপৃষ্ঠকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। তোমরা এর বুকের ওপর চলাফেরা করো এবং আল্লাহর দেয়া রিজিক খাও। আবার জীবিত হয়ে তোমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা আল মুলক : ১৫)

আয়াতে একটি কথা স্পষ্ট করা হয়েছে, দুনিয়াতে জীবন পরিচালনার জন্য যত কিছুই করা হোক না কেন, এ দুনিয়া শেষ ঠিকানা নয়। যত উপার্জন হোক না কেন, তা স্থায়ী কোনো সম্পদ নয়। সকলকে অবশ্যই একদিন এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে অবশ্যই তাঁর উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহর সামনে হিসাব দিতে হবে কোন স্থান থেকে থেকে উপার্জন করলে এবং কোথায় ব্যয় করলে।
এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে , ইবনু মাসউদ রা: হতে বর্ণিত আছে, নাবী সা: বলেছেন : কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তা’আলার নিকট হতে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা ব্যয় করেছে; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল, সে মুতাবিক কী কী আমল করেছে। (জামে আত তিরমিজি)
রিজিক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত মূল্যবান যে সকল আমল করা যায় তা হচ্ছেঃ
-মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও খোদাভীতি অবলম্বন করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
জনপদগুলোর লোকেরা যদি ঈমান আনত আর তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান আর জমিনের কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম কিন্তু তারা (সত্যকে) প্রত্যাখ্যান করল। কাজেই তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদেরকে পাকড়াও করলাম। (সূরা আল আরাফ : ৯৬)

তিনি আরো বলেন : যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য কোন না কোন পথ বের করে দেবেন। আর তাকে রিজিক দিবেন (এমন উৎস) থেকে যা সে ধারণাও করতে পারবে না। (সূরা ত্বালাক : ২-৩)
-কৃতকর্মের জন্য তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা।
তাওবা বা ফিরে আসার জন্য মৌলিক কয়েকটি শর্ত রয়েছেঃ
১. যে পাপে লিপ্ত তা তাৎক্ষণিক বর্জন করা
২. উক্ত পাপের জন্য লজ্জিত হওয়া
৩. সমকালীন সময়ে কোনোভাবেই উক্ত পাপ বা অন্যায় কাজে যুক্ত না হওয়া
৪. ভবিষ্যতে পুনরায় পাপে লিপ্ত না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
এ কাজের মাধ্যমেও মহান আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধির ঘোষণা প্রদান করে বলেন
আমি বলেছি ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা নূহ : ১০-১২)

তিনি অন্যত্র আরো বলেন-
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা চাও, আর অনুশোচনাভরে তাঁর দিকেই ফিরে এসো, তাহলে তিনি একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে উত্তম জীবন সামগ্রী ভোগ করতে দিবেন, আর অনুগ্রহ লাভের যোগ্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিনি তাঁর অনুগ্রহ দানে ধন্য করবেন। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আমি তোমাদের ওপর বড় এক কঠিন দিনের আজাবের আশঙ্কা করছি। (সূরা হুদ : ৩)

এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সা. বলেন-
যে ব্যক্তি বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে তার সকল দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ধার করবেন, সকল সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ দিবেন এবং তাকে এমনভাবে রিজিক দিবেন, যা কোন মানুষ ধারণা করতে পারে না। (মুস্তাদরাক হাকেম)

-আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা করা।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর ঘোষণা-
যে কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ নিজের কাজ সম্পূর্ণ করবেনই। আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের জন্য করেছেন একটা সুনির্দিষ্ট মাত্রা। (সূরা ত্বালাক : ৩)

এ ব্যাপারে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
তোমরা যদি আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা কর তাহলে তোমাদেরকে জীবিকা দেয়া হবে ঐভাবে যেভাবে দেয়া হয় পাখিকে। পাখি সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা ত্যাগ করে এবং পেট পুরে ফিরে আসে। (আহমাদ, তিরমিজি, ইবন মাজাহ, ইবন হিব্বান ও হাকেম)

-আল্লাহর ইবাদতে গভীর মনোনিবেশ করা।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লøাহ বলেন : হে ঈমানদারগণ! সবর ও নামাজের দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করো, আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন। (সূরা আল বাকারা : ১৫৩)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেন :
আবু হুরায়রা রা: কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেন, অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য আত্মনিয়োগ কর আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত করব, তোমার অভাবকে মোচন করব, আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার হাতকে কর্মে ব্যস্ত করব এবং তোমার অভাব মোচন করব না। (আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও হাকেম)

অনুরূপ আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে- মাকাল বিন ইয়াসার রা: কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আল্লাহ তাআলা বলেন : হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য আত্মনিয়োগ কর আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত করব এবং তোমার হাতকে জীবিকায় পরিপূর্ণ করে দেব। হে আদম সন্তান! আমা হতে দূরে সরে যেও না (যদি যাও তাহলে) তোমার অন্তরকে সঙ্কীর্ণ ও দরিদ্র করে দেব, আর তোমার দু-হাতকে কর্মে ব্যস্ত করে দেব। (মুস্তাদরাক হাকেম, মুজামুল কাবির)

-আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এসেছে। আলী রা: কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা: বলেছেন : যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার বয়স বৃদ্ধি করা হোক, তার জীবিকা বৃদ্ধি করা হোক এবং জঘন্য মৃত্যু থেকে সে পরিত্রাণ পাক, তাহলে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখে। (আহমাদ)

তিনি আরও বলেন-
যে ব্যক্তি পছন্দ করে তার রিজিক অথবা তার হায়াত বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখে। (বুখারি)
এ ছাড়াও আরো যা করলে রিজিক বেড়ে যাবে তা হচ্ছে.
-আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন : হে নবী! তাদেরকে বলো, “আমার রব তার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান মুক্ত হস্তে রিজিক দান করেন এবং যাকে চান মাপাজোখা দেন। যা কিছু তোমরা ব্যয় করে দাও তার জায়গায় তিনি তোমাদের আরো দেন, তিনি সব রিজিকদাতার চেয়ে ভালো রিজিকদাতা।” (সূরা সাবা : ৩৯)

নবী করিম সা. এ ব্যাপারে বলেন :
আবু হুরায়রা রা: কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন : বান্দাগণ যখন প্রভাত করে তখন দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি তোমার পথে ব্যয় করে তাকে উত্তম প্রতিদান দাও। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণের মাল ধ্বংস কর। (বুখারি)

রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন :
আবু হুরায়রা রাধ থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন : হে আদম সন্তান! খরচ কর। আমি তোমার ওপর খরচ করব। (বুখারি)

-আল্লাহর পথে হিজরত করার মাধ্যমে রিজিক বেড়ে যায়। মহান আল্লাহর ঘোষণা-
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য প্রাপ্ত হবে। (সূরা নিসা : ১০০)
-দুর্বল ও অসহায় মানুষের প্রতি মমতা দেখানো।
-দ্বীনি ইলম অন্বেষণে আত্মনিয়োগকারীর জন্য ব্যয় করা।
-হজ ও উমরাহর পারস্পরিকতা তথা হজ ও উমরাহ পরপর আদায় করা। রাসূলুল্লাহ সা. এ ব্যাপারে বলেন :
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা হজ ও উমরাহ পরস্পর আদায় কর, কেননা উক্ত কাজ দু’টি তেমনভাবে অভাব ও পাপকে মিটিয়ে দেয়, যেমন হাপর সোনা, চাঁদি এবং লোহার মরিচাকে মিটায়। আর কবুল হজের সওয়াব হচ্ছে একমাত্র জান্নাত। (নাসায়ী, তিরমিজি)
রিযিক অন্বেষণের ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকভাবে পরিত্যাজ্য কিছু বিষয় রয়েছে। সেগুলো পরিত্যাগ করতে না পারলে রিজিক হারাম হয়ে যাবে। যেমন :
-কোন রিজিক বা উপার্জন সামান্যতম হারামের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও তা পরিত্যাগ করতে হবে।
এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, নু‘মান ইবনু বাশীর রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। গুনাহসমূহ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা, যে জানোয়ার সংরক্ষিত এলাকার চার পাশে চরতে থাকে, তার ঐ সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। (বুখারী, হাদিস নম্বর ২০৫১)
-ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য পরিধেয় বস্ত্রসহ সবকিছু হালাল উপার্জনের দ্বারা হতে হবে অন্যথায় তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
রাসূল সা: বলেন : “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তু গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণকে।” আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে ইমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রিজিক হিসেবে দান করেছি।”
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধূসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে, হে আমার রব, হে আমার রব অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। সুতরাং তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে?।” (মুসলিম হা/২৭৬০; মিশকাত হা/২৭৬০)
-মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণের মাধ্যমে সম্পদ বা রিজিক অর্জন না করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমরা মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকো, কেননা মিথ্যা নিয়ে যায় পাপ কাজের দিকে, আর পাপকাজ জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।
-সুদের সাথে কোন অবস্থাতেই সম্পৃক্ততা না থাকা। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ খুব শক্তভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন : “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের জুলুম করা হবে না।” (সূরা আল বাকারা : ২৭৮-২৭৯)
-জুলুম একটি সর্বাধিক নিন্দনীয় অপরাধ, যা শক্তিমান মানুষ করে থাকে আর দুর্বল ব্যক্তি নীরবে তা সহ্য করে এবং আল্লাহর নিকট বিচার পেশ করে। জুলুমের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হওয়ার কারণে ইসলামে যেকোনো ধরনের জুলুম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ পন্থায় চলা কোন ব্যক্তি আখিরাতে একেবারে রিক্তহস্ত হয়ে যাবে। সুতরাং এ পথে সম্পদ অর্জন একেবারে চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা কি জান কপর্দকহীন কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নেই সে হলো কপর্দকহীন। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো কপর্দকহীন, যে কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও জাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিকে সেদিন তার নেক আমলনামা দিয়ে দেয়া হবে।
-অপচয় ও অপব্যয় না করা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পদ অর্জন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই যে কোন ধরনের অপচয় ও অপব্যয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন : “আর আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। আর কোনোভাবেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।” (সূরা বনি ইসরাইল : ২৬-২৭)
-ঘুষের সম্পৃক্ততা না থাকা। ঘুষ দেয়া, নেয়া বা এর সাথে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা রাখলে সে উপার্জন সরাসরি হারাম হয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে : “আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহণকারী উভয়কে লানত দিয়েছেন।”
-অন্যের অধিকার নষ্ট না করা। অন্যের হক বঞ্চিত করার মাধ্যমে যে উপার্জন করা হয় তা অবৈধ। তাই সকল প্রকার খেয়ানত থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “নিশ্চয় তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল এবং তোমাদের সম্মান নষ্ট করা তোমাদের জন্য হারাম।’’
আয়াতের শিক্ষা
-মানব মনে যত প্রকার চাহিদার উদয় হয়, সর্বাবস্থায় তা মহান আল্লাহর নিকট পেশ করতে হবে;
-যে কোন ধরনের রিজিক একমাত্র মহান রবের কাছে যাচনা করতে হবে;
-কোন প্রয়োজন পূরণ হতে দেরি হলেও ধৈর্যধারণ করতে হবে। কোন ধরনের শিরক, বিদআতের আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে না;
-সর্বাবস্থায় হালাল রিজিক- যত কঠিন হোক- আহরণ করতে হবে, হারাম রিজিক- যত সহজ হোক পরিত্যাগ করতে হবে;
-সর্বাবস্থায় আহকামুল হাকিমিন, রাব্বুল আলামিন মহান আল্লাহর রহমতের অপেক্ষা করতে হবে এবং তাঁর সাহায্যের মাধ্যমেই সব সমস্যা সমাধানের জন্য দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ হতে হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করুন, সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ

বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৯

স্কুলে ছাত্রীদের বোরকা পরার অধিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের


আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহম্মদ আহাসান ও শেখ ওমর শরীফ।

তিনি দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সম্পাদক মুহম্মদ মাহবুব আলম এবং মোহাম্মদপুরের তাজ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবুল খায়ের মুহম্মদ আজিজুল্লাহর পক্ষে রিটটি দায়ের করেন।
রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা      অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
রিট দায়েরকারী আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, বোরকা পরাকে কেন্দ্র করে ছাত্রীরা বিভিন্নভাবে নিগ্রহের শিকার হন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমরা গত ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে একটি আইনি নোটিশ পাঠাই। কিন্তু সেই নোটিশের কোনও জবাব না পাওয়ায় আমরা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছি।
সূত্রঃ insaf24.com

বুধবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৯

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাওয়াতের হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতি - ড. মোবারক হোসাইন


“তার কথার চাইতে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে ও সৎকর্ম করে এবং বলে আমি মুসলমান ”( আল কুরআন, সুরা- হামীম আস সাজদা, আয়াত -৩৩)
প্রকৃত দাওয়াত দানকারী তিনিই-যিনি মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার আগে নিজেকে আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দেন, অর্থাৎ “First you sell yourself”. বাইবেল গ্রন্থে বলা হয়েছে “to do good and communicate, forget not”. আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজে সফলতা লাভ করতে হলে দাওয়াতের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।
সাধারণত প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের চিন্তা ও চেতনা দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। আজকের যুগে দাওয়াতী কাজ করা মানে হাতের তালুতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ রাখা যেমন কঠিন তার চেয়েও বেশি কঠিন বর্তমান মানুষের কাছে, কারণ যুগের পরিবর্তনে মানুষের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, মানুষ তার বয়সের তুলনায় অনেক বেশি অগ্রসর হচ্ছে।

দাওয়াতের অর্থ কি ?
দাওয়াত শব্দটি আরবি ‘দাওয়াতুন’ থেকে। অর্থ – আহবান, ডাকা, নিমন্ত্রণ ইত্যাদি। The Hanswehr Dictionary of Modern Written Arabic- এ দাওয়াহ শব্দটির অর্থে বলা হয়েছে : Missionary activity, Missionary work, Propaganda. অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের দিকে আহবান করা, অনুপ্রাণিত করা বা ডাকাকে বলা হয় দাওয়াত।
দাওয়াত দুই ধরণের হতে পারেঃ
১. নেতিবাচকঃ হাদিসঃ রাসূল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দিকে মানুষদেরকে ডাকে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের একটি অংশ। প্রশ্ন করা হলো সে যদি নামাজ পড়ে এবং রোজা রাখে। জবাবে রাসূল বলেন যদি সে নামাজ পড়ে রোজা রাখে এবং বলে আমি একজন মুসলমান তবুও তার জন্য জাহান্নামের অংশ রয়েছে। – মুসলিম
২. ইতিবাচকঃ
দাওয়াতের দুটি দিক রয়েছে।
প্রকাশ্য দাওয়াত বা মৌখিক দাওয়াত
অপ্রকাশ্য দাওয়াত বা চারিত্রিক দাওয়াত
-মানব সৃষ্টির পর তার সামনের দুটো দিক খুলে দেয়া হয়েছে- ইন্না হাদাইনাহুস সাবিলা ইম্মা শাকিরাও ওয়া ইম্মা কাফুরা। অর্থ- আমরা পথ দেখিয়ে দিলাম মানুষকে এজন্য যে তাদের কারা কৃতজ্ঞ ও কারা অস্বীকারকারী ।
আমি মানুষকে দেখিয়েছি- ১)কৃতজ্ঞতা বা আনুগত্যের পথ ২) কুফরীর পথ
আমরা আশরাফুল মাখলুকাত। অর্থাৎ সব সৃষ্টির সেরা জীব। আবার মুসলমান হচ্ছে শ্রেষ্ঠ উম্মত বা শ্রেষ্ঠ জাতি। কুরআনে সুরা আলে ইমরানের ১১০ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন-
كنتم خير أمة أخرجت للناس
অর্থাৎ ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম জাতি, মানব জাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আর মুসলমান অর্থ আত্মসমর্পণকারী ।

দাওয়াত দানের গুরুত্বঃ
সাহাবীদের সংখ্যা ছিল সোয়া লক্ষের মত। কিন্তু মক্কা ও মদীনায় সাহাবীদের কবরের সংখ্যা প্রায় বিশ হাজার। বাকী লক্ষাধিক সাহাবী কোথায়? তারা মসজিদুল হারাম কিংবা মসজিদে নববীতে কেবল নামায আদায় করে নেকি বা সোয়াব হাসিলের পরিবর্তে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছেন মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকার জন্য। ঘর-বাড়ী, ধন-সম্পদ ও আত্মীয়-স্বজনের মমতার বন্ধন ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন কুফুরী থেকে আনুগত্যের দিকে এবং অন্ধকার থেকে আলোর দিকে দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে। তারা মক্কা-মদীনায় পড়ে থাকা অপেক্ষা মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়াকে শ্রেষ্ঠ মনে করেছেন- যে কাজের দায়িত্ব ছিল আল্লাহর প্রেরিত সব নবী রাসূলদের।
ইউনুস (আঃ) সারাদিন অপেক্ষা করে দাওয়াতী কাজ করে কোনো ফলাফল না পেয়ে চলে যাচ্ছিলেন। নদীতে মাঝামাঝি পর্যায়ে নৌকা আটকে গেল। স্থায়ী লটারি করা হল, লটারিতে ইউনুস (আঃ) এর নাম উঠল, আবারও লটারি করা হল আবারও নাম উঠল, তারপর আবারও লটারি করা হল, আবারও ইউনুস (আঃ) এর নাম উঠল। তিনি বললেন আমাকেই ফেলে দাও। তাকে নদীতে ফেলে দেয়া হলো। তিমি ইউনুস (আঃ) কে খেয়ে ফেলল-তিমির পেটে ইউনুস (আঃ) দোয়া করলেন :-(লা ইলাহা ইল্লা আনতা———-)
-দ্বীন অর্থ জীবন ব্যবস্থা, আনুগত্য, কর্তৃত্ব, প্রতিদান।
দাওয়াতী দ্বীনের কাজ আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরজ। যেমন- আল্লাহর বাণী:
১. হামীম আস-সাজদা-৩৩-দাওয়াতের কাজ হচ্ছে সর্বোত্তম কাজ।
২. জিহাদের ১ম কাজ দাওয়াত
৩. নাহল-১২৫, ৩৬, সরাসরি দাওয়াতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আলে-ইমরান-১১০, ১০৪
আহযাব-৪৫-৪৬, শুরা-১৫
আরাফ-৫৯, ৭৩, ৮৫, ৬৫
ফাতির-২৪
ইউসুফ-১৫৮, ইব্রাহীম-৫
মুদ্দাচ্ছির-১-৩, বনি-ইসরাঈল-৫৩

-রাসুলের (স.) মিশন ছিল দাওয়াত:
-রাসুলের দায়িত্বের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা:
-নিজেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ রাখা যায়:
-সত্যের সাক্ষ্য হিসেবে দাওয়াত দিতে হবে:
-আল্লাহ দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য:
-আখেরাতের নাজাতের জন্য:
-আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ
-আল্লাহ রসুল (সঃ) এর সর্বশেষ নির্দেশ ছিল দাওয়াত দান।
-দাওয়াত দান করা ফরজে আইন।
-সাহাবায়ে আজমাঈন আনুগত্য করে দিখিয়ে গেছেন

আমরা দাওয়াত কেন দেব?
১.দাওয়াত দেয়া মৌলিক দায়িত্ব:
يَاأَيُّهَاالرَّسُولُبَلِّغْمَاأُنْزِلَإِلَيْكَمِنْرَبِّكَوَإِنْلَمْتَفْعَلْفَمَابَلَّغْتَرِسَالَتَهُوَاللَّهُيَعْصِمُكَمِنَالنَّاسِإِنَّاللَّهَلَايَهْدِيالْقَوْمَالْكَافِرِينَ
হে রাসূল (স.)! আপনার উপর আপনার প্রতিপালক যা অবর্তীণ করেছেন তা পৌঁছে দিন । যদি এ কাজ না করেন তবে রিসালতের দায়িত্বই পালন করা হয়নি। সুরা মায়েদা :৬৭
يَاأَيُّهَاالْمُدَّثِّرُ (১) قُمْفَأَنْذِرْ (২) وَرَبَّكَفَكَبِّرْ (৩)
হে চাদর আবৃত ব্যাক্তি! উঠুন ও ভয় প্রদর্শন করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আল-মুদ্দাসসির:১-৩

هُوَالَّذِيأَرْسَلَرَسُولَهُبِالْهُدَىوَدِينِالْحَقِّلِيُظْهِرَهُعَلَىالدِّينِكُلِّهِوَلَوْكَرِهَالْمُشْرِكُونَ
নিশ্চয়ই আমি হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে রাসূলকে (সা:) পাঠিয়েছি অন্য সকল দ্বীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য। সফ:৯
২.প্রকাশ্য ও গোপনে দাওয়াত:
ثُمَّإِنِّيدَعَوْتُهُمْجِهَارًا (৮) ثُمَّإِنِّيأَعْلَنْتُلَهُمْوَأَسْرَرْتُلَهُمْإِسْرَارًا
অর্থাৎ আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছি। অতঃপর আমি ঘোষণা সহকারে প্রচার করেছি এবং তাদেরকে গোপনে চুপিসারে ও দাওয়াত দিয়েছি। সুরা নুহ :৮-৯

৩.দাওয়াত হবে সর্বাবস্থায় :
قَالَرَبِّإِنِّيدَعَوْتُقَوْمِيلَيْلًاوَنَهَارًا
অর্থাৎ “তিনি বলেন, হে প্রভু আমি আমার জাতিকে রাতে দিনে সর্বাবস্থায় দ্বীনের দিকে আহবান করছি। সুরা নুহ -৫
দাওয়াতের কেন্দ্রবিন্দু হবে- (ক) তাওহীদ (খ) রিসালাত (গ) আখেরাত

দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও রাসূল (সা:) এর ভূমিকাঃ
আম্বিয়া আলাইহিস সালামদের দাওয়াতি কর্মকান্ডের বর্ণনা করেই শেষ করা হয়নি বরং রাসূল (সা) এর প্রতি দাওয়াতি কাজের গুরুত্ব এভাবে নাযিল করা হয়েছে যে, অর্থ: হে রাসূল আপনার প্রতি যা কিছু অবর্তীণ করা হয়েছে তা যথাযথভাবে পৌছে দিন। (অর্থাৎ পরিপূর্ণ দাওয়াত পৌঁছে দিন) যদি আপনি না করতে পারেন তা হলে আপনি রেসালাতের সঠিক দায়িত্ব পালন করলেন না। সূরা মায়েদা, আয়াত ৬৭।
হাদীস :অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল (সা:) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার একটি হাদিস শুনেছে এবং যে ভাবে শুনেছে ঠিক সে ভাবেই তা অপরের নিকট পৌঁছিয়েছেন। কেননা অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয়েছে সে ব্যক্তি শ্রোতা অপেক্ষা অধিক রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে থাকে। তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ।

নবী ও রাসুলগণের দাওয়াতঃ
১. হযরত নূহ (আঃ) এর দাওয়াতঃ
لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَقَوِْم اعْبُدُوا اللَّهَ ماَ لَكُمْ مِنْ اِلَهٍ غَيْرُهُ- اِنِّى اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ০
“আমরা নূহ্কে তার জাতির লোকদের প্রতি প্রেরণ করেছি; তিনি বলেন, হে জাতির লোকেরা তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর। কেননা তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নাই। আমি তোমাদের জন্য একটি বড় আজাবের ভয় পোষণ করি।” (সুরা আ’রাফ- ৫৯)
২. হযরত হুদ (আঃ) এর দাওয়াতঃ
وَ اِلَى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًا- قَالَ يَاقَوْمِ اعْبَدُوا اللَّهَ مَالَكُمْ مِنْ اِلَه ٍ غَيْرُهُ- اَفَلَا تَتَّقُوْنَ০
এবং ‘আদ’ জাতির প্রতি আমরা তাদের ভাই ‘হুদ’ কে পাঠিয়েছি। তিনি বললেন, হে জাতির লোকেরা, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নাই। এর পরেও কি তোমরা ভয় করে চলবে না।” (সুরা আ’রাফ- ৬৫)
৩. হযরত সালেহ (আঃ) এর দাওয়াতঃ
وَ اِلَى عَادٍ اَخَاهُمْ صَالِحًا- قَالَ يَاقَوْمِ اعْبَدُوا اللَّهَ مَالَكُمْ مِنْ اِلَهٍ غَيْرُهُ
এবং ‘সামুদ’ জাতির প্রতি আমরা তাদের ভাই ‘সালেহ’ কে পাঠিয়েছি। তিনি বললেন, হে জাতির লোকেরা, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নাই। (সুরা আ’রাফ- ৭৩)
৪. হযরত লুত (আঃ) এর দাওয়াতঃ
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِينَ ০ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُونِ النِّسَاءِ ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُون َ০
“এবং লুত যখন নিজ জাতির লোকদের বললেন, তোমরা এমন সব নির্লজ্জ কাজ করছো যে, তোমাদের পূর্বে দুনিয়ায় কেউ এ কাজ করেনি। তোমরা নারীদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষদের সাথে কাম বাসনা চরিতার্থ করছো; বরং তোমরা সীমালংঘনকারী একটি জাতি।” (সূরা আ’রাফ- ৮০)
৫. হযরত শোয়াইব (আঃ) এর দাওয়াতঃ
وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَ هُمْ وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ০
“আর মাদিয়ানবাসিদের প্রতি আমরা তাদের ভাই শোয়াইবকে পাঠিয়েছি। তিনি বল্লেন; হে জাতির লোকেরা, আল্লাহর দাসত্ব কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট দলিল এসে গেছে। অতএব ওজন ও পরিমাপ পূর্ণমাত্রায় কর, লোকদের তাদের দ্রব্যে ক্ষতিগ্রস্থ করে দিওনা এবং পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না, যখন তা সংশোধন ও সংস্কার হয়েছে। এর মধ্যে তোমাদের কল্যাণ নিহিত, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।” (সুরা আ’রাফ- ৮৫)
৬. হযরত ইউসুফ (আঃ) এর দাওয়াতঃ
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّار- ُمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنتُمْ وَآبَاؤُكُم مَّا أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَانٍ ۚ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ০
“হে কারা বন্ধুগণ! বিভিন্ন বর কি উত্তম না মহাপ্রাক্রমশালী এক আল্লাহ? তোমরা তো আল্লাহকে ছেড়ে অবাস্তব নামের পুজা করছো- যাদেরকে তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষেরা সাব্যস্ত করে নিয়েছে, আল্লাহ তো সেগুলি সমন্ধে কোন প্রমাণ পাঠান নাই। নিশ্চয়ই হুকুম দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর, তোমাদেরকে এই মর্মে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, একনিষ্টভাবে কেবলমাত্র তারই ইবাদত করবে। এটিই হচ্ছে তোমাদের জন্য স্থায়ী বিধান। (সুরা ইউসুফ- ৩৯,৪০)
৭. হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর দাওয়াতঃ وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ آزَرَ أَتَتَّخِذُ أَصْنَامًا آلِهَةً ۖ إِنِّي أَرَاكَ وَقَوْمَكَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ ০
“স্মরণ কর ইব্রাহিমের ঘটনা, যখন তিনি তার পিতা আজরকে বলেছিলেন, তুমিতো মূর্তি গুলোকেই ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছ। আমিতো তোমাকে এবং তোমার জাতিকে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত দেখতে পাচ্ছি। (সুরা আন‘আম- ৭৪)
৮. হযরত মুসা (আঃ) এর দাওয়াতঃ
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنكُمْ وَأَنتُم مُّعْرِضُونَ ০
“স্মরণ কর যখন আমরা বনি ইসরাইলদের নিকট থেকে এই প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম যে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবে না। মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও মিসকীনের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। মানুষের সাথে সুন্দর সুন্দর কথাবার্তা বলবে, নামাজ কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। মুষ্টিমেয় লোক ছাড়া তোমরা সকলেই এই প্রতিশ্রুতি ভংগ করেছ এবং শেষ পর্যন্ত ঐ অবস্থায় রয়ে গেছ।” (সুরা বাকারাহ- ৮৩)
৯. হযরত ঈসা (আঃ) এর দাওয়াতঃ
وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ ۖ إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّه ِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَار ০ٍ
“এবং মসীহ তো বলেছিল; হে বনী ইসরাইলের লোকেরা, আল্লাহর দাসত্ব কর, যিনি আমারও রব তোমাদেরও রব। বস্তুতঃ আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে যে শরীক করেছে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। আর তাদের পরিণতি হবে জাহান্নাম। এই যালেমদের কোন সাহায্যকারী নাই।” (সুরা মায়েদা- ৭২)

আমাদের দাওয়াতের ক্ষেত্রঃ
১)সকল ছাত্র, ২)প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারী, ৩) আত্মীয় স্বজন, ৪) নিজ পরিবার, ৫) প্রতিবেশীর মাঝে, ৬) সাধারণ জনগণের মাঝে, ৭) কর্মক্ষেত্রে, ৮) পেশাজীবিদের মাঝে, ৯) সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মাঝে

দাওয়াত দানের উপকারিতাঃ
১)নিজের পরিশুদ্ধি ঘটে, ২) জ্ঞান বৃদ্ধি পায়, ৩) দুনিয়া ও আখেরাতে মর্যাদাবান হবেন, ৪) সদকায়ে জারিয়া

রাসূল (সঃ)-এর ৬টি বৈশিষ্ট্য ইমাম মুসলিমঃ
১)বাগ্মীতা (কথার যাদু), ২) Personality (ব্যক্তিত্ব), ৩) গণীমাত হারাম, ৪) সকল স্থানকে মসজিদ বানানো হয়েছে, ৫) সমগ্র সৃষ্টির জন্য নবী, ৬) খাতামুন নাবিয়্যিন।

দাওয়াত দানকারীর বৈশিষ্ট্য:
১. দায়ীকে হেকমাত অবলম্বন করা
– স্বাভাবিক সময়ে
– অস্বাভাবিক সময়ে
২. উত্তম উপদেশ বর্ণনার অধিকারী হওয়া
৩. দায়ীকে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে দাওয়াত উপস্থাপনের যোগ্য হওয়া। (এ ক্ষেত্রে কোরআন ও হাদিসের বক্তব্য গুলি উপস্থাপন করতে পারলে ফলাফল বেশী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।)
৪. দায়ীকে চরম ধৈর্যশীল হওয়া। অর্থ: “আর ধৈর্য ধারণ দায়ীকে বিরাগ ও ক্ষমার মানসিকতার অধিকারী হওয়া। (অর্থ: আর তারা রাগকে সংবরণকারি এবং মানুষদের প্রতি ক্ষমাশীল। আল কোরআন)
৫. দায়ীকে কথা ও কাজের মিল রাখা (অর্থ: হে ঈমানদার লোকেরা তোমরা এমন কথা কেন বল যে কাজ তোমরা কর না। সূরা সফ, আয়াত ২)
৬. দায়ীকে জ্ঞানগত দিকে শ্রেষ্ঠ হওয়া।
৭. দায়ীকে টার্গেটকৃত ব্যক্তির মন মানসিকতা ও অবস্থার প্রতি নজর রাখা।
৮. দাওয়াতকে সহজ রূপে দাওয়াত পেশকারী হওয়া।
৯. আদর্শের পুর্নাঙ্গ জ্ঞান এবং সে অনুযায়ী চরিত্র ও কর্ম থাকা ।
১০. দাওয়াতী কাজের টার্গেট থাকবে একটাই-‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন’।
১১. কঠোর পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল হবেন।
১২. উদার মনের তথা বিশাল হৃদয়ের অধিকারী হবেন।
১৩. সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা।
১৪. চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলা, কম কথা বলা ও কৃত্রিমতা পরিহার করা।
১৫. ভাষা সহজ সরল, যুক্তি ভিত্তিক ও সুন্দর হওয়া। যেমন- মূসা (আঃ) এর দোয়া।
১৬. দায়ীর কথা ইতিবাচক হবে; নেতিবাচক নয়।
১৭. কারো বিরুদ্ধে কথা না বলা।
১৮. মন-মানসিকতা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলা।
১৯. তাড়া-হুড়ো পরিহার করা।

দাওয়াত উপস্থাপনের ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়ঃ
* চ্যালেঞ্জ তিন ধরনেরঃ
1. Fighting challenge
2. Technical challenge
3. Intellectual challenge

* নিজেদের প্রচার করার ক্ষেত্রে “প্রান্তিক ” শব্দ পরিহার করা।
* দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে Extreme word ব্যবহার না করা।
* কোন মানুষকেই স্থায়ী শত্রু মনে না করা।
* কোন মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন না করা।
* দাওয়াতী কাজে কৃত্রিমতা পরিহার করা।
* মানুষের ইতিবাচক দিকের প্রসংশা করা।
* কাজের এখনই সময়, এইতো করছি/করবো এধরনের মানসিকতা পরিহার করা।
লক্ষ্য ঠিক করার জন্য SMART টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে তার ব্যাখ্যা দেয়া হল:
S = Specific বা সুনির্দিষ্ট
M = Measurable বা পরিমাপযোগ্য
A = Achievable বা অর্জনযোগ্য
R = Realistic বা বাস্তবধর্মী
T = Timeframe বা সময়কাঠামো
সাফল্যের জন্য আরো যা জানতে হবে:
SEE Factors
S = Smile বা হাস্যময়
E = Eye Contact বা মনযোগ
E = Enthusiasm বা উদ্যোগ
আরও ৮টি নির্দেশনা হল :
১)ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ২) ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা ৩)সময়ানুবর্তী হওয়া ৪) প্রস্তুত থাকা ৪) নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা ৫) নিয়ন্ত্রণে রাখা ৬) সঠিকভাবে কাজ করা ৭) পরিপূর্ণভাবে কাজ সম্পন্ন করা

আমরা দাওয়াত কিভাবে দিব/ দাওয়াত দানের কৌশল
১.বিনয়ের মাধ্যমে দাওয়াত
اذْهَبَاإِلَىفِرْعَوْنَإِنَّهُطَغَى (৪৩) فَقُولَالَهُقَوْلًالَيِّنًالَعَلَّهُيَتَذَكَّرُأَوْيَخْشَى (৪৪)
অর্থাৎ : আপনারা দুইজন ফিরআউনের কাছে যান। নিশ্চয় সে বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছে। তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবেন। হয়তো সে উপদেশ কবুল করবে অথবা ভয় পাবে। সূরা ত্বাহা: আয়াত-৪৩-৪৪
২.বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে দাওয়াত
ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
অর্থাৎ : আপনি পালনকর্তার পথের দিকে আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও শুনিয়ে উত্তম রুপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালন কর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তার পথ থেকে বিচ্যুতি হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে যারা সঠিক পথে আছে। সূরা নাহল আয়াত ১২৫
৩.মন্দের মোকাবেলায় ভাল দিয়ে দাওয়াত
وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ
অর্থাৎ ভাল ও মন্দ সমান নয়। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। সূরা হামিম সিজদাহ আয়াত- ৩৪

দাওয়াত দানকারীর যা লক্ষণীয়ঃ
১. মর্যাদাবান ব্যক্তির মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে দাওয়াত দান
اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ ০ فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ০ “ তোমরা ফেরাউনের কাছে যাও, কেননা সে সীমা লংঘন কারী হয়ে গেছে। তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবে; সম্ভবতঃ সে উপদেশ গ্রহণ করবে কিংবা ভয় পেয়ে যাবে।” (ত্বাহা- ৪৩,৪৪)
২. মন-মেজাজ লক্ষ্য করে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ গ্রহণ
৩. প্রতিবাদী পরিবেশে নয়, অনুকুল পরিবেশে দাওয়াত দান
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ َ
“তুমি যখন দেখবে যে, লোকেরা আমার আয়াত সমুহের দোষ সন্ধান করতেছে তখন তাদের নিকট হতে সরে যাও যতক্ষণ না তারা এ প্রসংগের কথা-বার্তা বন্ধ করে অপর কোন কাজে মগ্ন হয়।” (সুরা আন‘আম- ৬৮)
৪. অন্যমনস্ক ব্যক্তির কাছে দাওয়াত না দেয়া
৫. যুক্তি প্রমাণ পেশ করার সময় ব্যক্তির যোগ্যতার দিকে খেয়াল রাখা

দাওয়াতে দ্বীনের পদ্ধতিঃ
১. জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে দাওয়াতের পদ্ধতির উন্নতি করা ঃ
اقْرَأْ و َرَبُّكَ الْأَكْرَمُ ০ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ০ عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ ০
“পড়, তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে এমন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানতো না।” (সুরা আলাক- ৩,৪,৫)
২. নিম্নলিখিত পন্থাগুলি অবলম্বন করার মাধ্যমে দাওয়াতঃ
১. সাধারণ দাওয়াত ২. চিঠি-পত্রের মাধ্যমে দাওয়াত ৩. বই পড়ানোর মাধ্যমে দাওয়াত ৪. সমস্যার সমাধান দেখিয়ে দাওয়াত ৫. মিডিয়ার মাধ্যমে দাওয়াত (প্রিন্টিং ও ইলেক্ট্রনিক্স) ৬. ‘ইন্টারনেট’, ‘ফেসবুক’ ইত্যাদির মাধ্যমে দাওয়াত ৭. আল্লাহর ক্ষমতা মাহাত্ম্য প্রমাণের মাধ্যমে দাওয়াত
৩. সামাজিক কাজে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে দাওয়াতঃ
৪. মর্যাদার পরিপন্থি পদ্ধতি পরিত্যাগের মাধ্যমে দাওয়াতঃ
১. আত্ম-মর্যাদা রক্ষা করা ২. ইসলামকে হেয় না করা ৩. শরিয়তের পরিপন্থি কাজ না করা ৪. ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ না করা ৫. পরিবেশ পরিস্থিতি বোঝা
৫. জনগণের ভাষায় দাওয়াত দান করাঃ
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ০
“এবং আমরা যখন যেখানেই কোন রাসুল প্রেরণ করেছি, তিনি তার জাতির জনগণের ভাষায়ই সে পয়গাম পৌঁছিয়েছেন, যেন তিনি তাদেরকে খুব ভালো ভাবেই কথা প্রকাশ করে বলতে পারেন, অতঃপর আল্লাহ যাকে চান গোমরাহ করেন আর যাকে চান হেদায়াত দান করেন, তিনি মহা পরাক্রমশালী ও কৌশলী।” (সুরা ইবরাহীম- ৪)
৬. সহজভাবে দাওয়াত প্রদানঃ
عَنْ اَنَسٍ (رض) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّه ِ (ص) يَسِّرُوْا وَ لَا تُعَسِّرُوْا وَ بَشِّرُوْا وَ لَا تُنَفَّرُوْا
“হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, তোমরা (দ্বীনের দাওয়াত) সহজ করো, কঠিন করো না। সুসংবাদ দাও, বীতশ্রদ্ধ করো না।” (বুখারী ও মুসলিম)
৭. উদ্দেশ্যের পরিপন্থি পদ্ধতি পরিত্যাগ করাঃ
১. বাড়াবাড়ি ২. অহেতুক তর্ক -বিতর্ক ৩. ফতোয়াবাজী

ইতিহাসের পাতায় দাওয়াত গ্রহণের ভিন্ন ভিন্ন উপায়/কৌশলের দৃষ্টান্ত:
১. খাদিজাতুল কুবরার (রা.) প্রথম দাওয়াত গ্রহণকারীনী : তাকে তো আনুষ্ঠানিক দাওয়াত দিতে হয়ই নাই, বরং তিনি ভীত সন্ত্রস্ত নবীকে সান্তনা প্রদান করেন এবং ওয়ারাকা বিন নওফেলের কাছে নিয়ে যান।
২. হযরত আবু বকর (রা:) এর ইসলাম গ্রহণ: নবীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
৩. হযরত উমর ফারুক (রা:) এর ইসলাম গ্রহণ : যখন তিনি ছিলেন বোন ও ভগ্নিপতিকে আঘাতকারী।
৪. হযরত আমীর হামযা (রা:) এর ইসলাম গ্রহণ: যখন তিনি বংশীয় অহমিকায় খোঁচা খান।
৫. হযরত আলী (রা:) বনাম ইয়াহুদী: যখন ইয়াহুদীটি ছিল যুদ্ধে পরাভূত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখী ।
৬. বাদশাহ নাজ্জাশী : একজন আশ্রয় প্রার্থী জাফর ইবনে আবু তালিবের (রা:) সত্য বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে বাদশাহ থাকা অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেন।
৭. হযরত বেলাল ও হযরত খাব্বাব (রা:) : গোলাম থাকা অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেন।
৮. হযরত আবু সুফিয়ান : বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন।
৯. Armstrong মুসলিম হন- চাঁদের ফাটল দেখে
১০. ড. ইসলামূল হক- তুলনামূলক ধর্মচর্চা করতে গিয়ে
১১. ড. মরিস বুকাইলী – কুরআনের ত্রুটি খুঁজতে গিয়ে
১২. মোহা: আলী ক্লে- ইসলামে সাম্যতা দেখে
১৩. মরিয়ম জামিলা- পত্রের মাধ্যমে প্রশ্নোত্তরে
১৪. গায়ক Ket Stiven ও ক্রিকেটার ইউসুফ ইউহানা- বন্ধুদের সান্নিধ্যে

দাওয়াত গ্রহণকারীর মন জয় করার ৬টি বিশেষ পদ্ধতি:
১. দাওয়াত গ্রহণকারীর সামনে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলুন বা ভালভাবে উপস্থাপন করুন।
২. মানুষের নাম তার নিজের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তাই যথাসম্ভব মানুষের নাম মনে রাখার চেষ্টা করুন।
৩. আপনি যাকে দাওয়াত দিবেন তাকে গুরুত্ব দিন ও এটা মন থেকেই করুন।
৪. দাওয়াত গ্রহণকারী যে বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী, সে বিষয়ে আলোচনা করুন।
৫. ভাল শ্রোতা হন, দাওয়াত গ্রহণ কারীকে কথা বলতে দিন।
৬. বিজয়ী তিনিই যিনি কখনও হাল ছাড়েন না।

সফল দাওয়াত দান কারীর ব্যক্তিত্ব গঠনের কৌশল:
১. সুন্দরভাবে কথা বলা।
২. নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা।
৩. বিশ্বাসী হতে হবে।
৪. দাওয়াত দানকারীর মুলধন কঠোর পরিশ্রম।
৫. সহিষ্ণু হতে হবে সহিষ্ণু ব্যক্তিরাই শেষ পযর্ন্ত টিকে থাকে, tough time does not last but only tough people do. .
৬. সময়ানুবর্তিতা

দাওয়াতী কাজে সফল হওয়ার নয়টি বিশেষ কৌশল:
১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। যে জানে তার জীবনের লক্ষ্য-পৃথিবী তাকে সেখানে পৌঁছানোর পথ তৈরী করে দেয়।
২. লক্ষ্য অর্জনে সদা সচেষ্ট থাকুন।
৩. কৌশলী হন; কারণ যোগ্যতম ব্যক্তিরাই শেষ পযর্ন্ত টিকে থাকে।
৪. কোন কিছুই অসম্ভব নয়, যদি আপনি মনে করেন পারবেন, নিশ্চয়ই পারবেন।
৫. চিন্তা করুন, অবশ্যই ভালো উপায় খুঁজে পাবেন।
৬. আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী, আচার ও আচরণ যেন ইতিবাচক হয়।
৭. সবসময় হাসুন, তাহলে সমগ্র পৃথিবী আপনাকে দেখে হাসবে।
৮. সৃজনশীল ও উদ্যমী হোন।
৯. অন্যকে ভালবাসুন, আপনিও ভালবাসা পাবেন।
দাওয়াতী কাজে কার্যকরী যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা:
১. কখনোই আশা করবেন না যে, দাওয়াত গ্রহণকারী আপনার কাছে এসে ধরণা দিবে।
২. ভাববেন না প্রথম সাক্ষাতেই দাওয়াত গ্রহণ করে ফেলবে।
৩. সুসংগঠিতভাবে নিয়মিত ফলোআপ করুন।
৪. প্রতি সপ্তাহে নতুন কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করুন।
৫. যাদের সাথে পরিচিত হচ্ছেন, তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব আপনারই।
৬. মনে রাখবেন, কিছু পেতে হলে, কিছু দিতে হবে। কেননা দিন আপনার আমার সবার জন্যই ২৪ ঘন্টা। শুধু লক্ষ্য রাখবেন, ত্যাগের চাইতে প্রাপ্তি যেন সবসময় ভারি থাকে।

জীবনে চলার পথে ধ্রুব সত্যঃ
স্বার্থবাদী এক অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ I এড়িয়ে চলুন
সন্তোষজনক দুই শব্দ We সর্বদা ব্যবহার করুন
তিন অক্ষর বিশিষ্ট দূষিত শব্দ Ego ধ্বংস করুন
বহুল ব্যবহৃত চার অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Love মুল্যায়ন করুন
আনন্দদায়ক পাঁচ অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Smile সর্বদা ধারণ করুন
দ্রুতবেগে ছড়ানো ছয় অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Rumour অবজ্ঞা করুন
শ্রমসাধ্য সাত অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Succes অর্জন করুন
ঈর্ষা উদ্রেককারী আট অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Jealousy দূরে থাকুন
সবচেয়ে শক্তিশালী নয় অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Knowledge অধিকার করুন
সবচেয়ে দরকারী দশ অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Confidence বিশ্বাস করুন

দাওয়াতী কাজ সহজ কাজ নয় বা দাওয়াত হল যুদ্ধ ক্ষেত্র, এখানে যে যত বেশি কৌশলী হবেন, তিনি তত সফলকাম হবেন। এক বালতি পানি পাহাড়ের উপর থেকে নিচে ফেলে দেওয়া সহজ কিন্তু এক বালতি পানি পাহাড়ের উপর উঠান সহজ কাজ নয়।
দাওয়াতী কাজে বাধা আসবেঃ
(ক) রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার এবং নিজের নফস এর পক্ষ থেকে বাধা আসবে।
(খ) জীবন, স্বাস্থ্য ও সম্পদ ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
(গ) কখনো কখনো অপ্রাপ্তি কাংখিত ফলাফল না পাওয়া অধৈর্যের কারণ হতে পারে।
– অসৎ কাজের পরিবেশ তৈরী করে তা করতে বাধ্য করে (সংস্কৃতি)।
– সৎ জীবন যাপনের প্রতি অনিহা ও নিুমান বোধ সৃষ্টির চেষ্টা করে।

সুতরাং আগামী দিনে ইসলামী বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করতে হলে মানুষের মেজাজ বুঝে দাওয়াতী কাজ করতে হবে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অনেক ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে।

Dunia is a class room
Quran is a syllabus
Muhammad (sm) is a teacher
Life is an exam
Allah is an examiner
So try to pass the exam……..

লেখক: কেন্দ্রীয় সভাপতি,
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

অগ্নি পরীক্ষার পরেই আসে আল্লাহর পুরস্কার" -এ কে এম নাজির আহমদ

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ ডেস্কঃ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন-
১৫৩.‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবর অবলম্বনকারীদের সঙ্গে আছেন।
১৫৪. আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা ‘মৃত’ বলো না। তারা তো আসলে জীবিত। কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করতে পার না।
১৫৫. এবং আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জান ও আয়-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে পরীক্ষা করবো। এমতাবস্থায় যারা সবর অবলম্বন করবে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও।’
আয়াত সমূহের ব্যাখ্যাঃ
১৫৩ নাম্বার আয়াত-
“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। অবশ্যই আল্লাহ সবর অবলম্বনকারীদের সঙ্গে আছেন।”

মাদীনা রাষ্ট্রে উত্তরণের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন মুমিনদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে দেন। এর মাধ্যমে তাঁদেরকে যে বিরাট রকমের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে ইংগিতে সেই কথা তাঁদেরকে জানিয়ে দেন। সমাজ-সভ্যতার ইসলাহ করতে অগ্রসর হলে তাঁদেরকে যে বড়ো রকমের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে সেই কথা তাঁদেরকে জানিয়ে দেন।
আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তাঁদেরকে সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার আহ্বান জানান।
সবর অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। মুমিনদেরকে এই গুণে গুণান্বিত হওয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বারবার তাকিদ করেছেন। আল হাদিসেও এই বিষয়ে তাকিদ রয়েছে।

সবরের যে সকল অর্থ রয়েছে--
১. রোগ-ব্যাধির কষ্ট বরদাশত করার নাম সবর।
২. দুঃখ-বেদনায় ভেঙে না পড়ার নাম সবর।
৩. অনভিপ্রেত কথা ও আচরণে উত্তেজিত না হওয়ার নাম সবর।
৪. পাপের পথে গিয়ে লাভবান হওয়ার চেয়ে পুণ্যের পথে থেকে তিক্ততাকে মেনে নেয়ার নাম সবর।
৫. মিথ্যা প্রচারণার মুখে অবিচলিত থাকার নাম সবর।
৬. ভীতিপ্রদ পরিস্থিতিতেও সঠিক পথে দৃঢ়পদ থাকার নাম সবর।
৭. কল্যাণ হাসিলের জন্য দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার নাম সবর।
৮. কল্যাণ অর্জন বিলম্বিত হচ্ছে দেখে হতাশ বা নিরাশ না হওয়ার নাম সবর।
৯. বিরোধিতার বীরোচিত মোকাবেলার নাম সবর। ইত্যাদি।
সূরা আল মুদ্দাস্সিরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবী হিসেবে তাঁর কর্তব্য কী তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ময়দানে তিনি তখনো নামেননি। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন এই সূরারই সপ্তম আয়াতে এই কথাও তাঁকে অগ্রিম জানিয়ে দিলেন যে এই কর্তব্য পালন করতে গেলে তাঁকে বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হবে। সেই অবস্থার সম্মুখীন হয়ে তাঁকে কর্তব্য কর্মে দৃঢ়পদ থাকতে হবে।
وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ ০
(এবং তোমার রবের খাতিরে সবর অবলম্বন কর।)
সবর অবলম্বনের তাকিদ দিয়ে সূরা আল মুয্যাম্মিলের ১০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
وَاصْبِرْ عَلى مَا يَقُولُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلاً ০
‘ওরা যেইসব কথা বলে বেড়াচ্ছে তার মোকাবেলায় সবর অবলম্বন কর এবং ভদ্রভাবে তাদেরকে এড়িয়ে চল।’
সূরা আল মা‘আরিজের ৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيْلاً ০
‘অতএব তুমি সবর অবলম্বন কর, সুন্দর সবর।’
সূরা ইউনুসের ১০৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
وَاتَّبِعْ مَا يُوْحى إِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتّى يَحْكُمَ اللهُ ج وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ০
‘এবং তোমার প্রতি যা ওহি করা হয় তা মেনে চল এবং আল্লাহ ফায়সালা না করে দেয়া পর্যন্ত সবর অবলম্বন কর। আর তিনিই তো সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।’
একই রূপ তাকিদ দিয়ে সূরা তা-হা-এর ১৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
‘অতএব ওরা যা কিছু বলে বেড়াচ্ছে তার মোকাবেলায় তুমি সবর অবলম্বন কর, আর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার রবের প্রশংসাসহ তাসবিহ কর, রাতের বেলায়ও তাসবিহ কর এবং দিনের প্রান্তে। আশা করা যায় তুমি খুশি হবে।

সূরা আল আহকাফের ৩৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُوْلُوْا الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلاَ تَسْتَعْجِلْ لَّهُمْ ০
এ হচ্ছে সবর অবলম্বনের তাকিদ সংবলিত বহুসংখ্যক আয়াতের মাত্র কয়েকটি।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সবরের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত আর কিছু কাউকে দেয়া হয়নি।” (আবু সায়িদ আল খুদরী (রা) সাহীহ মুসলিম, সহীহ আল বুখারী।)

সূরা আয্যুমারের ১০ নম্বর আয়াতে সবর অবলম্বনকারীদের প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, “সবর অবলম্বনকারীদেরকে অগণিত পুরস্কার পূর্ণভাবে দেয়া হবে।” এই আয়াতের শেষাংশে-
اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَِ ০
কথাটি জুড়ে দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সবর নামক গুণটির মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন। অন্য দিকে এই বাক্যাংশের মাধ্যমে তিনি মুমিনদের মনে নিশ্চিন্ততার আমেজ সৃষ্টি করেছেন।

আরেকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সালাত। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যার অনুশীলন মুমিনদের মাঝে অনুপম নৈতিক শক্তি সৃষ্টি করে। সেই জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুওয়াত প্রদানের সঙ্গে সঙ্গেই জিবরিল (আ) কে পাঠিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন তাঁকে সালাত আদায়ের পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। মাক্কী ও মাদানী যুগে নাজিলকৃত বহু আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সালাতের তাকিদ দিয়েছেন। আলোচ্য আয়াতটিতেও আমরা একই রূপ তাকিদ দেখতে পাই।
১৫৪ নম্বর আয়াতঃ
“আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা ‘মৃত’ বলো না। তারা তো আসলে জীবিত। কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করতে পার না।”
আল্লাহর পথে নিহত হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় শাহাদাত বলা হয়। যিনি আল্লাহর পথে নিহত হন, তাঁকে বলা হয় শহীদ।

শাহাদাতবরণ মৃত্যু বটে, কিন্তু অসাধারণ মৃত্যু, মহিমান্বিত মৃত্যু। সেই জন্য আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন শহীদদেরকে ‘মৃত’ বলে আখ্যায়িত করতে নিষেধ করেছেন।
সূরা আলে ইমরানের ১৬৯ থেকে ১৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন শহীদদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না। বরং তারা জীবিত। তাদের রবের কাছ থেকে তারা রিজিক পাচ্ছে। আল্লাহ তাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা কিছু দিয়েছেন, তাতে তারা খুশি ও তৃপ্ত। আর তারা এই বিষয়েও নিশ্চিত, যেই সব মুমিন তাদের পেছনে এখনো দুনিয়ায় রয়ে গেছে, তাদের জন্য কোন ভয় ও দুঃখের কারণ নেই। তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ লাভ করে আনন্দিত এবং তারা জানতে পেরেছে, অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের পুরস্কার নষ্ট করেন না।”
শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “জান্নাতে প্রবেশ করার পর দুনিয়ার সমস্ত সামগ্রী তার জন্য নির্ধারিত হলেও কোন ব্যক্তি পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে না। কিন্তু শহীদ এর ব্যতিক্রম। তাকে যেই মর্যাদা দেয়া হবে তা দেখে সে দশবার পৃথিবীতে এসে শহীদ হওয়ার আকাঙ্কা ব্যক্ত করবে।”
শাহাদাত লাভের পর পরই যাঁরা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের সান্নিধ্যে এমনভাবে সমাদৃত হন, তাঁদেরকে ‘মৃত’ বলা আসলেই শোভনীয় নয়।

১৫৫ নম্বর আয়াতঃ
“এবং আমি অবশ্যই ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জান ও আয়-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো। এমতাবস্থায় যারা সবর অবলম্বন করবে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও।”

এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন তাঁর একটি শাশ্বত বিধানের কথা মুমিনদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর সেটি হচ্ছে : যাঁরা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের প্রতি নিখাদ ঈমান আনার ঘোষণা দেবেন, তাঁদেরকে তিনি অবশ্যই পরীাক্ষার সম্মুখীন করবেন।
সূরা আল ‘আনকাবুতের ২ ও ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْآ اَنْ يَّقُوْلُوْآ امَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ ০ وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ০
‘লোকেরা কি মনে করেছে যে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এই কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে পরীাক্ষা করা হবে না? অথচ তাদের পূর্ববর্তীদেরকে আমি পরীাক্ষা করেছি। আল্লাহকে তো জানতে হবে- ঈমানের দাবিতে কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।’

পরবর্তীকালে অবতীর্ণ সূরা মুহাম্মাদের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, “আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীাক্ষা করবো যাতে আমি জেনে নিতে পারি তোমাদের মধ্যে কারা ‘মুজাহিদীন’ এবং কারা ‘সাবেরিন’।”
সূরা আলে ইমরানের ১৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, “তোমরা কি ভেবেছো এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবে, অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্য থেকে কারা জিহাদ করে এবং কারা সবর অবলম্বনকারী?”
সূরা আত্ তাওবা-র ১৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تُتْرَكُوْا وَلَمَّا يَعْلَمَ اللهُ الَّذِيْنَ جهَدُوْا مِِنْكُمْ وَلَمْ يَتَّخِذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلاَ رَسُوْلِه وَلاَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَلِيْجَةٌ ج وَاللهُ خَبِِيْرٌم بِمَا تَعْمَلُوْنَ ০
‘তোমরা কি ভেবেছো যে তোমাদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দেয়া হবে অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি যে তোমাদের মধ্য থেকে কারা জিহাদে নিবেদিত হয় এবং আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদেরকে ছাড়া আর কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেন না। আর তোমরা যা কিছু কর সেই সম্পর্কে আল্লাহ খবর রাখেন।’

সূরা আল বাকারার ২১৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, “তোমরা কি ভেবেছো যে এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনো তোমাদের ঐরূপ অবস্থা আসেনি যেমনটি এসেছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর।”
তাদের ওপর কঠিন অবস্থা আপতিত হয়েছে, মুসিবত এসেছে এবং তাদেরকে কাঁপিয়ে দেয়া হয়েছে যেই পর্যন্ত না রাসূল ও তাঁর সঙ্গীরা বলে উঠেছে, ‘কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য!’ তখন তাদেরকে বলা হয়েছে, ‘ওহে, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটেই।’
সূরা আলে ইমরানের ১৪৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, “কত নবী গত হয়ে গেছে যারা লড়াই করেছে, তাদের সাথে মিলে লড়াই করেছে বহু আল্লাহওয়ালা লোক। আল্লাহর পথে যতো মুসিবাতই তাদের ওপর আপতিত হয়েছে তারা হতাশ হয়নি, দুর্বলতা দেখায়নি এবং বাতিলের নিকট মাথা নত করেনি। এমন সবর অবলম্বনকারীদেরকেই আল্লাহ ভালোবাসেন।”
ঈমানের দাবি হচ্ছে, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিবেদিত হওয়া এবং এই সংগ্রাম চালাতে গিয়ে যত প্রকারের বাধাই আসুক না কেন তার মোকাবেলায় দৃঢ়পদ থাকা।
এই সংগ্রাম চালাতে গিয়ে মুমিনদেরকে অনিবার্যভাবে ভীতিপ্রদ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, কখনো কখনো অবস্থা এমন সঙ্গিন হতে পারে যে অনাহারে থাকতে হবে, কখনো কখনো বাগ-বাগিচা, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, ঘরদোরের ওপর হামলা হতে পারে, কখনো কখনো ইসলাম বিদ্বেষীদের হাতে আপনজন ও সহকর্মীদের কেউ কেউ প্রাণ হারাতে পারেন এবং কখনো কখনো আয়-উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এমন সব কঠিন পরিস্থিতিতেও যাঁরা সবর অবলম্বন করতে পারবেন, তাঁদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন।
আয়াতে কারীমাগুলোর শিক্ষাঃ
১.সমাজ ও সভ্যতার ইসলাহ বা পরিশুদ্ধি করতে গেলে মুমিনদেরকে অবশ্যই বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হবে।
২.এমতাবস্থায় তাঁদেরকে সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতে থাকতে হবে।
৩.আল্লাহর পথে যাঁরা শহীদ হন তাঁদেরকে ‘মৃত’ বলে আখ্যায়িত করা যাবে না।
৪.আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জান ও আয়-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে মুমিনদেরকে পরীাক্ষা করবেন।
৫.যাঁরা দৃঢ়তা-অটলতা-অবিচলতা অবলম্বন করবেন, তাঁদের জন্যই রয়েছে আল্লাহর বিপুল অনুগ্রহ ও রাহমাত।

মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৯

ইসলামী আদর্শের কর্মীদের করণীয় -মুহাম্মদ আবদুল জব্বার


Amader Bangladesh News Desk: আল-ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবনব্যবস্থার নাম। যারা এই আদর্শের ছায়াতলে নিজেদেরকে সর্বতোভাবে সমর্পণ করে তারাই মুসলমান। মুসলমান হওয়ার সুযোগ দুনিয়ার জীবনে সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যের।
আবার জাহেলিয়াতের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সেই মুসলমানিত্ব যথাযথভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য সংগঠিত জীবনের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রুজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (আল কুরআন) 
হাদিসেও এর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, “তোমরা তিনজন সফরে বের হলেও তোমাদের মধ্যে একজনকে নেতা বানাও।” অনত্র বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি সংগঠন থেকে দূরে সরে গেল সে ব্যক্তি ইসলাম থেকে তার গর্দান সরিয়ে ফেলল।”
সঙ্ঘবদ্ধভাবে যারা ইসলামের সৌন্দর্য প্রচার-প্রসার ও আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় এর প্রতিষ্ঠার জন্য সাধ্যাতীত চেষ্টার কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে তারাই ইসলামী আদর্শের কর্মী। আদর্শিক আন্দোলনের কর্মী মানেই আন্দোলনের পক্ষ থেকে ব্যক্তির ওপর আন্দোলনের যে দায়িত্ব অর্পিত হবে তা যথাযথভাবে পালন করবে। কর্মীর সকল দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যের মূলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোথাও যদি দুনিয়ার সম্মান মর্যাদা অর্জিত হয় এতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গিয়ে মুষড়ে পড়ে যাওয়ারও জো নেই। আবার পরিস্থিতির শিকার হয়ে বা কাজের চাপে জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য উদ্দেশ্য বেমালুম ভুলে গেলেও চলবে না। জীবনের প্রকৃত সার্থকতা লাভ করাই হবে একজন আদর্শ কর্মীর অন্যতম কাজ। ইসলামী আদর্শের কর্মীদের কিছু মৌলিক বিষয় সার্বক্ষণিক স্মরণ রাখা জরুরি। 
আন্দোলনের কর্মীদের মৌলিক বিষয়ে যদি বোঝার বা চিন্তার ঘাটতি থাকে, তা আন্দোলনের প্রকৃত সফলতার ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করে। সাময়িক আদর্শের বিজয়ার্জন হলেও আদর্শিক কর্মীদের সঠিক বোধ ও চিন্তার লালনের অভাবে বিজয়ার্জন টেকসই হয়ে ওঠে না। ইসলামী আদর্শের কর্মীদের নিম্নের বিষয়গুলোতে সঠিক চিন্তার লালন জরুরি।
(১) আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জনই জীবনের মূল লক্ষ্যঃ
যেকোনো সচেতন ব্যক্তি মাত্রই কোনো কাজ করার আগে সে কাজের ফলাফল কী হতে পারে তা ভেবেচিন্তে কাজ শুরু করেন। যেমন একজন ব্যক্তি তার সন্তানের পড়াশুনার জন্য ভালো স্কুলে ভর্তি করেন, দক্ষ হাউজ টিউটর রাখেন। কারণ তার ছেলে ভালো পড়াশুনা করে দুনিয়ার বাজারে নিজেকে সুদক্ষ করে তুলবে। তেমনি একজন ব্যবসায়ী তার ব্যবসায় ভালো করার জন্য সব পুঁজি ও শ্রম বিনিয়োগ করেন।
কারণ ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়ো ভালো করতে চান। ঠিক এমনিভাবে একজন বুদ্ধিমান মুমিন মাত্রই স্থায়ী লাভের চিন্তায় জীবনের সকল কাজের কেন্দ্রবিন্দুকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে স্থির করেন। ইহজাগতিক অর্জিত সকল যোগ্যতা অর্জনও দ্বীনের কাজে সঁপে দেন। একজন মুসলমান ছাত্র ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্জন করে সেই পেশায় আত্মনিয়োগ করলেও সেই পেশার মাধ্যমে মানবতার কল্যাণ সাধন করে আল্লাহর রাজি-খুশি অর্জন করাই হবে মূল টার্গেট।
তাই একজন মুসলমান দুনিয়ার ভোগ বিলাসের কাছে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে আল্লাহকে ভুলে যাবে তা কখনো হতে পারে না। তাই মুমিন মাত্রই জীবনের প্রতিটি কাজ কত সুন্দর করে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাঁর সন্তুষ্টির উপযোগী করা যায় সে ব্যাপারে সচেতন ও যত্নবান হবেন।
(২) আদর্শের প্রতি অবিচলতাঃ
যেকোনো আদর্শিক আন্দোলনের কর্মীদের সে আদর্শের প্রতি অবিচল বিশ্বাস লালন করতে হয়। বিরোধী পক্ষের শত জুলুম নির্যাতন, অপপ্রচার তাদেরকে তাদের পথ চলা থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। আদর্শের কর্মীরা যদি সে আদর্শকে কথায় ও কাজে রূপান্তরিত করতে পারে তাহলে স্বল্প সময়ে এর প্রভাব সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের আদর্শ হচ্ছে আল ইসলাম, ইসলামের আদর্শের ওপর আমৃত্যু টিকে থাকাই হবে ইসলামী আদর্শের কর্মীদের অন্যতম কাজ। ইসলামবিদ্বেষী চক্রের নানাবিধ ষড়যন্ত্র, অত্যাচার-নিপীড়ন ও বর্তমান সময়ে ইসলামী আদর্শের কর্মীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ যত কঠিন হয় আন্দোলনের জনশক্তির মাঝে তত নতুন নতুন প্রশ্ন ও ভাবনার জন্ম নেয়। নিজেদের ভবিষ্যৎ ও আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বা হতাশ হয়ে পড়ে। তাই এর সঠিক জবাব জনশক্তিদের সামনে স্পষ্ট করার পাশাপাশি বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সচেতন করতে হবে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে সময়ে সময়ে যারা নিজেদের চিন্তার পরিবর্তন করে, সেই দোদুল্যমান আদর্শবাদী কর্মীদের নিয়ে প্রকৃত সফলতা দেখার কোনো যৌক্তিক কারণ আছে বলে আমার হয় না। রাসূল (সা:) ও সাহাবীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মাত্রাতিরিক্ততা ছিল অবর্ণনীয়, মুনাফিকরা সর্বত্র ষড়যন্ত্রের জাল পেতে রেখেছিল, পারস্পরিক সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি করা তাদের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছিল। এরপরও রাসূলের (সা:) সাহাবীরা ইসলামের আদর্শের প্রতি ছিলেন ঠায় অবিচল।
কোনো কিছুই (লোভ-লালসা, জুলুম-নির্যাতন) তাদেরকে তাদের আদর্শ থেকে চুল পরিমাণ টলাতে পারেনি। তেমনি ইসলামী আদর্শের কর্মীদের সামনে যত চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান আছে তা চারিত্রিক দৃঢ়তা ও আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেই মোকাবেলা করতে হবে।
(৩) আদর্শের ভিত্তিতে সমাজ গঠন করাঃ
যেকোনো রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠিত হয় কোনো একটি আদর্শের ওপর। রাষ্ট্রে যে আদর্শের প্রভাব বেশি থাকবে সে আদর্শের ধারকরাই স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। বর্তমান সময়ে জোর করে আদর্শিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পৃথিবীতে কায়েমের নজির কমে গেছে। কারণ সেই জনপদের মানুষের ভেতর গঠিত রাষ্ট্রের আদর্শের ব্যাপারে যদি প্রশ্ন থাকে, সেই প্রতিষ্ঠিত আদর্শিক রাষ্ট্র টেকসই হয় না।
যার ফলে কালান্তরে সে আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের শোচনীয় পরাজয়ের প্রহর গুনতে হয়। তাই একটি সফল কল্যাণমূলক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সে দেশের মানুষের মাঝে আদর্শের প্রচার প্রসার ঘটাতে হবে। বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত সকল মতাদর্শের ওপর নিজের মতাদর্শকে সেরা আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে এবং তা বাস্তবে রূপ দেয়ার সাধ্যাতীত চেষ্টা করবে। আদর্শের লালনকারীরা জনগণের জন্য কী করতে চায় তার প্রচার করতে হবে।
সকল অপপ্রচারের যৌক্তিক জবাবও তাদের দিতে হবে। ইসলামী আদর্শের সাথে মানুষের পরিচয় ঘটাতে হবে। যেহেতু ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসীরা ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র কায়েম করতে চায়, তাই দেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে ইসলামে পক্ষে জনমত গঠনের মাধ্যমে ইসলামের পক্ষে মানুষের অবস্থান তৈরি করা এবং এর মাধ্যমেই চূড়ান্ত টেকসই আদর্শিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
সাধারণত রাষ্ট্রের সবাই আদর্শিক আন্দোলনের কর্মী নাও হতে পার। কিন্তু সে ব্যক্তি চিন্তা চেতনা যদি আদর্শের পক্ষে তৈরি হয় তাহলেই একটি আদর্শিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
(৪) জনশক্তির চিন্তার ঐকমত্যঃ
একটি আন্দোলনের সফলতার জন্য সেই আন্দোলনের জনশক্তিদের চিন্তার ঐকমত্য অত্যন্ত জরুরি। চিন্তার ঐকমত্য ব্যতীত সম্মিলিত কাজে মতদ্বৈধতা ও মতবিরোধ সৃষ্টি হবে। পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্ট হবে, যা একটি আন্দোলনের স্বপ্নসাধ অঙ্কুরেই নষ্ট করে ফেলে। তাই সংগঠনের মূল ব্যক্তি থেকে শুরু করে শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত সংগঠনের চিন্তার ভিত্তির ওপর ঐকমত্যের কোনো বিকল্প নেই।
যেখানে সবার উদ্দেশ্য একই সুতোয় গাঁথা, স্মরণ রাখতে হবে আন্দোলনকে গতিশীল ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য সবার মতামত ব্যক্ত করার মতো সুযোগ থাকতে হবে। যাতে সবার চিন্তা একই ¯্রােতে প্রবাহিত হয়। মতপ্রকাশ করতে না পারার কারণে যেন ভিন্ন কোন ধারা-উপধারা বা পরিবেশ দূষিত না হয় সে ব্যাপারে তীক্ষè দৃষ্টি রাখা।
যারা আন্দোলনের পরিচালক তাদেরও স্মরণ রাখতে হবে হাউজে জনশক্তিদের কথা বলার অবারিত সুযোগ থাকতে হবে। উত্থিত বিষয়ে সার্বিক বিশ্লেষণ পূর্বক সবচেয়ে বাস্তবভিত্তিক ও কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব সচেষ্ট হবেন। জোরপূর্বক কোনো সিদ্ধান্ত ময়দানে চাপিয়ে দেয়া যাবে না। যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো সে বিষয়ে যৌক্তিক বিষয়গুলো হাউজে পুনরায় আলোকপাত করা।
যাতে সর্বপর্যায়ে একই চিন্তার নিরিখে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার দ্বিধা না থাকে। আন্দোলনের জনশক্তির টপটু-বটম সংগঠনের চিন্তাই আমার চিন্তা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়াকেই চিন্তার ঐকমত্য বলা হয়।
(৫) সাধ্যমাফিক নিজের ওপর অর্পিত কর্তব্য পালন করাঃ
প্রবাদ প্রবচনে প্রচলিত আছে- ‘মানুষ অসাধ্যকে সাধন করে।’ এ কথা মোটেও ঠিক নয়, কারণ সাধ্যাতীত কাজ কেউ করতে পারে না, মানুষের যা সাধ্য কেবল তাই সে করতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায় প্রত্যেক মানুষের যে মেধাশক্তি থাকে মানুষ তার কিয়াদংশও ব্যবহার করে না। যারা চেষ্টা করে তাদের ব্যতিক্রমধর্মী কর্ম আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কিছু করেছে বলে মনে হলেও মূলত সেই কৃতকাজ মানুষের দ্বারাই সাধ্য। আমরা বিপদ মুসিবতে মুষড়ে পড়ি, কোন কাজে প্রত্যাশিত ফল না পেলে থমকে যাই, হীনমন্যতায় ভোগী, চিন্তার অনৈক্য দেখা দেয়।
মনে হয় আমরা বা আমি পারলাম না; যারা ইসলামী আদর্শ লালন করে তারা এমন ধারণা পোষণ করতে পারে না। কারণ প্রত্যেক ঈমানদার মানেই বিশ্বাস করে, “ভালো-মন্দ সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে” এটি ঈমানের অংশ। রাসূল (সা:) হাদিস শরিফ থেকে এর চমৎকার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “তোমরা ঘোড় সাওয়ারকে বেঁধে রেখে আল্লাহর ওপর ভরসা কর।” 
আরো একটি হাদিসে রাসূল (সা:) নির্দেশ করেছেন, “তোমরা যখন ছাদে ঘুমাবে তখন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আল্লাহর দরবারে ভরসা করবে।” এতে বোঝা যায় একজন মানুষ হিসেবে শক্তি-সামর্থ্যর যতটুকু পারা যায় ততটুকু দায়দায়িত্ব মানুষকে পালন করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা ফরমান, “আল্লাহ কারোর ওপর তার সামর্থ্যর অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপান না। প্রত্যেক ব্যক্তি যে নেকি উপার্জন করেছে তার ফল তার নিজেরই জন্য এবং যে গোনাহ সে অর্জন করেছে, তার প্রতিফলও তারই ওপর বর্তাবে। (হে ঈমানদারগণ, তোমরা এভাবে দোয়া চাও:) হে আমাদের রব! ভুল-ভ্রান্তিতে আমরা যেসব গোনাহ করে বসি, তুমি সেগুলোর জন্য পাকড়াও করো না। হে প্রভু! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না, যা তুমি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলে। হে আমাদের প্রতিপালক! যে বোঝা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই, তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের প্রতি কোমল হও, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি করুণা করো। তুমি আমাদের অভিভাবক। কাফেরদের মোকাবেলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো। (সূরা বাকারা : ২৮৬)
রাসূল (সা:) যখন তাবুক অভিযানে বের হলেন তিনি তার সাহাবীদের অভিযানে বের হওয়ার জন্য আহবান জানান। কিছু সাহাবী মনের নানা দুর্বলতার (ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা) কারণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চাননি। তারা মানসিকভাবে এমন কষ্টদায়ক সফরে বের হতে চাইছেন না অথচ আল্লাহ তায়ালা তাদের সফর করতে বলেছেন।
এতে বোঝা যায় আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নির্দেশিত হয়েছে তা তার বান্দাদের সাধ্যের মধ্যেই। সাধ্যের মধ্যে থাকার পরও যদি অভিযানে বের হবে না তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কড়াভাবে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা যদি না বের হও তাহলে আল্লাহ তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের জায়গায় আর একটি দলকে উঠাবেন, আর তোমরা আল্লাহর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী।” (সূরা তওবা : ৩৯) আল্লাহর গোলাম সাধ্যমোতাবেক চেষ্টা না করার কী কারণ থাকতে পারে?
সেই কারণকে সামনে উপস্থাপন করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হলো? যখনই তোমাদের আল্লাহর পথে বের হতে বলা হলো, অমনি তোমরা মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে? তোমরা কি আখেরাতের মোকাবেলায় দুনিয়ার জীবন পছন্দ করে নিয়েছো? যদি তাই হয় তাহলে তোমরা মনে রেখো, দুনিয়ার জীবনের এমন সাজ সরঞ্জাম আখেরাতে খুব সামান্য বলে প্রমাণিত হবে।” (সূরা তওবা : ৩৮) সুতরাং ইসলামী আদর্শের ধারকদের উচিত হবে নিজের সামর্থ্যরে সবটুকু উজাড় করে দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করা এবং বাকি অপারগতার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। নিজেকে আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তির উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।
(৬) বিপদে মুষড়ে না পড়াঃ
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে এমনি বিপদ মুসিবতে ঠেলে দেন না। বরং অনেক পরীক্ষা ঈমানদারদেরকে যাচাই করার জন্য একটি মাধ্যম মাত্র। আল্লাহর পথে চলতে গেলে আল্লাহদ্রোহীদের নানামুখী অপতৎপরতার কারণে বিপদ মুসিবতে পড়তে হয়, যে বিপদগুলো মানুষ সৃষ্টি করে আবার কিছু বিপদ আছে যেখানে মানুষের হাত নেই। এমন বিপদসঙ্কুল অবস্থায় আদর্শিক কর্মীদের কাজ হবে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। বিপদগুলোর ধরন “আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানি হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো।
এ অবস্থায় যারা সবর করে তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও এবং যখনই কোনো বিপদ আসে বলে, “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে।” (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৬৫)
ঈমানদাররা যেকোনো পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে না গিয়ে দ্বিধাহীনচিত্তে আল্লাহর পথেই তাদের সকল চেষ্টা ও তৎপরতা অব্যাহত রাখবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, প্রকৃত ঈমানদার তারাই যারা আল্লাৎহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান এনেছে এবং এ ব্যাপারে পরে আর কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি। তারপর প্রাণ ও অর্থসম্পদ দিয়ে জিহাদ করেছে। তারাই সত্যবাদী। (সূরা হুজুরাত ১৫)
আমরা যারা ইসলামী আদর্শের অনুসারী আমাদের জীবনচলার পথে জাহেলিয়াতের নানামুখী অপঘাতে থমকে দাঁড়াই বোধ করি এই মনে হয় জীবন গেল, এই মনে হয় সর্বস্ব খোয়ালাম! কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে কি চলবে? এসব অপঘাতে যদি আদর্শবাদী দলের কর্মীরা থমকে যায় জীবনের মায়ায় ও দুনিয়ার লোভ-লালসায় জড়িয়ে পড়ে, আল্লাহপ্রদত্ত দায়িত্বের চাইতে দুনিয়ার সাময়িক প্রাপ্তিতে নিজেকে বিকিয়ে দেয়, হার মেনে নেয় তাহলে তারা কী করে আদর্শের কর্মীরা কী করে জাহেলিয়াতের ওপর ইসলামের বিজয়ের স্বপ্ন দেখে?
(৭) বিজয় আনন্দে অতিমাত্রায় উল্লসিত না হওয়াঃ
ইসলামী আদর্শের অনুসারীরা সমগ্র বিশ্বমানবতাকে আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণের আহবান জানাবে। সামগ্রিকভাবে আল্লাহর জমিনে তার প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে হুকুমাতে ইলাহি বা ইসলামী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্রে সবার অধিকার সুনিশ্চিত হবে। অর্থাৎ আল্লাহপ্রদত্ত ও রাসূল (সা:) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানবজীবনের কল্যাণ সাধনের চেষ্টায় ব্রত থাকাই ইসলামী আদর্শের অনুসারীদের অন্যতম কাজ।
এর মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই মূল লক্ষ্য। আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ করতে গিয়ে যদি চূড়ান্ত বিজয় চলে আসে তখন বিজয় আনন্দে অতিমাত্রায় উল্লসিত হয়ে পড়া ইসলামী আদর্শের অনুসারীদের জন্য শোভা পায় না। বরং ইসলামী খেলাফতের বিজয়ের পর দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। দুনিয়া ও আখেরাতে দায়িত্বের জবাবদিহিতার পেরেশানি বেড়ে যাওয়ায় নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে।
এ কারণেই হজরত ওমর (রা:)-এর ওপর যখন খেলাফতের দায়িত্ব অর্পিত হলো তখন নিজের প্রতি আফসোস করে বলেছিলেন, “হে ওমর! তুমি যদি আজ ওমর না হয়ে সামান্য খড়কুটা হয়ে জন্ম নিতে তাহলে আল্লাহর কঠিন জবাবদিহি থেকে বেঁচে যেতে।” তিনি একইভাবে দায়িত্বানুভূতির পেরেশানি থেকে বলেছিলেন, “ফারাত নদীর তীরে একটি কুকুরও যদি অভুক্ত হয়ে মারা যায় এ জন্য আমাকে আল্লাহর দরবারে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।” বিজয় অনেক সময় নিজেদের আত্মভোলা করে ফেলে, অহঙ্কারী করে তোলে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা ও আমানতের সুরক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা
করা। যেমন রাসূল (সা:) মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহ অহি প্রেরণ করলেন, “যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যায় এবং বিজয় লাভ হয়। আর (হে নবী!) তুমি (যদি) দেখ যে লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করছে, তখন তুমি তোমার রবের হামদসহকারে তাঁর তাসবিহ পড়ো এবং তাঁর কাছে মাগফিরাত চাও। অবশ্য তিনি বড়ই তওবা কবুলকারী (সূরা নাসর)
(৮) প্রকৃত সফলতার মানদন্ড কী?
ইসলামী আদর্শের ঝান্ডাধারীদের প্রকৃত সফলতার মানদন্ড কী? জাগতিক জগতে নেতৃত্ব-কর্তত্ব, যশ-খ্যাতি, অর্থ-বিত্ত-বৈভব সফলতার মানদন্ড বলে বিবেচিত হলেও ইসলামী আদর্শের অনুসারীদের প্রকৃত সফলতার মানদন্ড হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমেই কেবলমাত্র দুনিয়া ও আখেরাতে প্রকৃত সফলতা লাভ করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করে ইসলামী আদর্শের কর্মীরা। ইসলামী খেলাফাত প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ইসলামী আদর্শের কর্মীদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা ফরজ।
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করলে সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের জনগণ রাষ্ট্রের কল্যাণ লাভ করে। একদল আদর্শিক কর্মী যদি আদর্শিক আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ হয় তাহলে তারা ইসলামী কল্যাণমূলক রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার কাজ করে ক্ষমতাপ্রাপ্তির লোভে নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই এই প্রচেষ্টা। অব্যাহত প্রচেষ্টার পর যদি ইসলামী রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা হয়ে যায়, আলহামদুলিল্লাহ! তা হবে খুব খুশির খবর। কিন্তু যদি ব্যক্তি হিসেবে যদি পরওয়ারদিগারের সন্তুষ্টি অর্জিত না হয় তাহলে ইসলামী আদর্শের কর্মী প্রকৃতভাবে সফল হয় না।
ইসলামী আদর্শের কর্মীর চেষ্টার ফলে ইসলামী কল্যাণমূলক রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা না হলেও একজন মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলেই প্রকৃত সফলতা অর্জিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা, অবয়বের দিকে তাকান না বরং তিনি তাকান তোমাদের মনের দিকে। (আল কুরআন)
সুতরাং আমরা যারা আদর্শিক আন্দোলনের কর্মী হিসেবে কাজ করছি ইসলামী রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় যদি সফল হয়ে যাই তা হবে বেজায় খুশির খবর আর আখেরাতের সফলতা যদি অর্জন করতে না পারি তা হবে প্রকৃত ব্যর্থতা। তাই আমাদের জীবনের চাকাটা সে পথেই পরিচালিত করা প্রয়োজন, যে পথে লৌকিকতা নেই, নেই আত্মতুষ্টি, যেখানে সব কাজের মূলে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
দুনিয়া প্রত্যেক মানুষের জন্য একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। পরীক্ষার কথা জেনেও যারা দিব্যি প্রস্তুতি না নিয়ে হেলায় খেলায় সময় ক্ষেপণ করে, দুনিয়ার জাহেলিয়াতের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেয়, তাদেরকে ইসলামী আদর্শের কর্মী বলা যায় না।
যারা আল্লাহর গোলামি কাছে পৃথিবীর সকল চাওয়া পাওয়াকে উৎসর্গ করে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য জানপ্রাণ বিলিয়ে দিয়ে তাঁরই নির্দেশিত পথে চলতে স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করে সেই মর্দে মুমিন, সেই ইসলামী আদর্শের জিন্দাদিল মুজাহিদ। তাঁর কাছেই দুনিয়া পদানত হয়, দুনিয়ার কাছে সে পদানত হয় না। তখন সে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় আর আল্লাহ হয়ে যান সেই বান্দার।
আজ বড়ই প্রয়োজন সেই আদর্শিক কর্মী মূসা, খালিদ, তারিক, কাশিম, তিতুমীর ও হাজী শরীয়তুল্লাহর। যারা মরেও মরেনি। যাদের ঈমানী দীপ্ততায় এখনো তেজোদীপ্ত হয় লক্ষ কোটি তরুণ, খোঁজে ফেরে হেরার আলোক দ্যুতি। সেই আদর্শিক আলোয় উদীপ্ত আগামীর বিশ্ব। যে আদর্শ নিশ্চিত করবে বিশ্বমানবতার প্রকৃত কল্যাণ।

সোমবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৯

জামায়াত নিয়ে ড. কামালের বক্তব্যের জবাব দিলেন ফখরুল।


আমাদের বাংলাদেশ নিউজ ডেস্কঃ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা করবে বিএনপি। আমরা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে এখনও কোনো আলাপ-আলোচনা করিনি। তবে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
সোমবার দুপুরে সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।জামায়াতকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে করা এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, জামায়াত নিয়ে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য গণফোরামের দলীয় বক্তব্য। এটি ঐক্যফ্রন্টের বক্তব্য নয়। এ বক্তব্য সামগ্রিকভাবে ওনার দলের।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অত্যন্ত কলঙ্কিত অধ্যায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দখলদারি সরকার দেশের জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে নিয়ে গেছে এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। জনগণের রায়কে ডাকাতি করে নিয়ে গেছে তারা। সারাদেশে সবার চোখে-মুখে একটা শোকের চিত্র ফুটে উঠেছে। এর কারণ জনগণ তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।
#newsbyte24.com

পূবালী ব্যাংকের ১২ কোটি টাকা উধাও, ৩ জন গ্রেফ্তার।

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ ডেস্কঃ চট্টগ্রামে চকবাজার শাখার পূবালী ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে ১২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, পূবালী ব্যাংক চকবাজার শাখার ম্যানেজার এনামুল করিম চৌধুরী, জুনিয়র অফিসার একরামুল রেজা ও কম্পিউটার কর্মী চন্দ গ্রাহকদের যোগসাজশে ৪টি চেকের মাধ্যমে ৭ জানুয়ারি ব্যাংক থেকে ১২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ট্রান্সফার করে।
পরে রোববার রাতে ব্যাংকের উপব্যবস্থাপক মনজুরু ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করে। পরে মামলার ভিত্তিতে তিন কর্মকর্তাকে ব্যাংক থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করে তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামাটি তদন্ত করছে দুদক। এদিকে তিন গ্রাহক মো. ইলিয়াস, আবু ছৈয়দ ও মো ওবায়েদ উল্লাহ পলাতক রয়েছে।
সিএমপি চকবাজার থানা ওসি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘পূবালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপক আমাদের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন, ওনার ব্যাংকের ম্যানেজার, জুনিয়র কর্মকর্তা ও কম্পিউটার কর্মীরা তাদের গ্রাহকদের সহায়তায় ১২ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই এজহারের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা রুজু করি। মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়েছে।’ 
এছাড়া যে তিন কর্মকতা এ কাজ করেছে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
#somoynews.tv

দেশকে ধর্ষণের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা -শিবির সভাপতি

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোবারক হোসাইন বলেছেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের একের পর নৃশংস ও লোমহর্ষক অপকর্মে দেশের মানুষ আতঙ্কিত। ধর্ষণ যেন এক মহামারিতে পরিণত হয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জনপদ কোথাও আওয়ামী ধর্ষকদের হাতে নারীরা নিরাপদ নয়। যার ঘৃন্য নজির সুবর্ণচরে চার সন্তানের জননীকে ধর্ষণ। সরকারের প্রশ্রয়ে দেশকে ধর্ষণের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ।

তিনি আজ নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ৩০তারিখে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে ধর্ষিত চার সন্তানের জননীকে দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন। এসময় তিনি ধর্ষিত জননীর হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কলেজ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য জাকির হোসেন ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান মজুমদারসহ জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

শিবির সভাপতি বলেন, অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধর্ষণ বেড়ে গিয়েছে। বর্তমানে ধর্ষণ ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। সরকারের সরাসরি প্রশ্রয়ে ধর্ষণের মত ঘৃন্য কাজ নির্বিঘ্নে করে যাচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। শুধু সুবর্ণচরে নয় বরং সারাদেশেই ধর্ষণকে মহামারিতে রুপ দিয়েছে তারা। এর আগে শরিয়তপুরে ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদার ছয় নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে বরিশালে ছাত্রলীগ নেতা সুমন হোসেন মোল্লা স্বামীকে আটকে রেখে নববধূকে ধর্ষণ করেছে এবং এই ধর্ষণের কথা সে আদালতে স্বীকারও করেছে। বরগুনায় তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা ও লাশ গুম করেছে পাথঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিসহ চার নেতা। আর রাজশাহীতে শিশু ও চুয়াডাঙ্গায় মদ্যপ অবস্থায় তরণীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে গণধোলাই খেয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা। দেশের বেশির ভাগ ধর্ষণ ও খুনের সাথে সরকার দলীয় লোকজন জড়িত তা বার বার গণমাধ্যমের কল্যাণে জনগন দেখছে। এর আগেও জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরী পালন করে ছাত্রলীগ নেতা জাতির জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছিল। তাদের ধর্ষণ ও খুনের ধরণ এবং মাত্রা আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানাচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত তার কোনটিরই সুষ্ঠ বিচার হয়নি। ফলে উৎসাহ পেয়ে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের লোমহর্ষক অপকর্ম বেড়েই চলেছে। যা গোটা জাতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। তরুণী,শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা শঙ্কায় দিন যাপন করছে।

তিনি বলেন, ধর্ষণের মত জঘন্য অপকর্ম ধারাবাহিক ভাবে করলেও সরকার ও প্রশাসনের অবহেলার কারণে এসব ঘটনায় সম্পৃক্ত দলীয় সন্ত্রাসীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। পুলিশের পাশ কাটানো ভূমিকায় মনে হয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কাছে মা-বোনদের সম্ভ্রমহানীর লাইসেন্স দিয়েছে সরকার। কিন্তু এদেশের ছাত্রজনতা এই তাদের জান-মাল ইজ্জত জঙ্গিবাদী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিতে মোটেও প্রস্তুত নয়। সরকার ও পুলিশ প্রশাসন যদি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অনৈতিক মদদ অব্যাহত রাখে তাহলে অভিশপ্ত অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে ছাত্রসমাজ দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। আমরা সরকারে প্রতি আহবান রেখে বলতে চাই, নোয়াখালী সূবর্ণচরসহ সারাদেশে ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত ও চিহ্নিতদের খুঁজে কঠিন বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

About

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

আমার ব্লগ তালিকা

Translate

Translate

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24

সর্বশেষ

অনুসরণকারী