বিজ্ঞাপন দিন

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই ঈদ উত্তর সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। ব্যাংক খোলা এবং যথারীতি ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এই গ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। ঢাকার সবুজবাগ থানার রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১:b>ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার

বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কন্যা সন্তান; মা-বাবার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ রহমত (আশির্বাদ)।

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ সেদিনটির কথা আমি কখনোই ভুলবো না, যেদিন কোর্টে বাবা মায়ের সেপারেশনের সময় মা কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, "আপনি কাকে চান, ছেলে কে না মেয়েকে?? "
মা তখন ছেলেকে চেয়েছিল, আমাকে চায়নি। বাবাও তখন আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কারণ তিনি আবার বিয়ে করে নতুন সংসার করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, অযথা আমাকে নিয়ে নতুন সংসারে বোঝা বাড়াতে চাননি।

কাঠের বেঞ্চিতে বসে যখন অঝোরে কাঁদছিলাম তখন বুকে আগলে ধরেছিলেন এক লেডি কনস্টেবল। আশ্রয় দিয়েছিলেন তার বাড়িতে। কিন্তু তার মাতাল স্বামীর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল আমার উপর। শিশু বয়সে অত কিছু না বুঝলে ও কেমন যেন খারাপ লাগতো। রাতে যখন আন্টি বাসায় ফিরতেন, আমি তাকে সব বলে দিতাম। মহিলা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। অতঃপর আমার নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি আমাকে একটা এতিমখানায় রেখে আসলেন। যাবার সময় আমাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে যেমন করে কাঁদলেন, আমার মাও আমাকে রেখে যাওয়ার সময় ওভাবে কাঁদেনি।
দিন যায়-মাস যায়, এতিমখানাতেই জীবন কাটতে থাকে আমার। খুব অসহায় লাগতো নিজেকে। বাবা মা বেঁচে থাকতে ও যে শিশুকে এতিমখানায় থাকতে হয় তার থেকে অসহায় বুঝি আর কেউ নেই!!
বছর দু'য়েক পরের কথা। এক নিঃসন্তান ডাক্তার দম্পতি আমাকে দত্তক নেন। জীবনটাই পাল্টে গেল আমার। হেসে খেলে রাজকীয় ভাবে বড় হতে লাগলাম আমি। আমার নতুন বাবা মা আমাকে তাঁদের মতই ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার একগুঁয়ে ইচ্ছে ছিল একটাই, আমি ল'ইয়ার হবো। আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে আজ আমি একজন ডিভোর্স ল' ইয়ার। যারাই আমার কাছে তালাকের জন্য আসে, আগেই আমি বাচ্চার কাস্টোডির জন্য তাদের রাজি করাই। কারণ বাবা মা ছাড়া একটা শিশু যে কতটা অসহায়, তা আমি ছাড়া কেউ জানে না!!
চেম্বারে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। হঠাৎ একটা নিউজে চোখ আটকে গেল। এক বৃদ্ধা মহিলাকে তার ছেলে আর বউ মিলে বস্তায় ভরে রেলস্টেশনে ফেলে রেখে গেছে। পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। নিচে বৃদ্ধা মহিলার ছবি দেয়া। মুখটা খুব চেনা চেনা লাগছিল। কাছে এনে ভালো করে ছবিটা দেখলাম। বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। এ তো সেই মহিলা যে আমাকে অনেক বছর আগে আদালতে ছেড়ে গিয়েছিল, আমার মা। নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে ছুটে গেলাম হাসপাতালে।
সেই মুখটা কিন্তু চেনার উপায় নেই। চামড়াটা কুঁচকে আছে, শরীরটা রোগে শোকে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে খুব মায়া লাগছে, ভেতরটা ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। আচ্ছা, সেদিন কি তার একটু ও কষ্ট লাগেনি, যেদিন তার ১০ বছরের শিশু কন্যাটি মা-মা করে পিছু পিছু কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াচ্ছিল?? হয়তো লাগেনি। নয়তো এভাবে ফেলে যেতে পারতো না।
একবার ভেবেছিলাম চলে যাবো। হঠাৎ দেখি তিনি ঘুম ভেঙে চোখ পিটপিট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বুঝলাম চিনতে পারেন নি, চেনার কথা ও নয়!! আমি আমার পরিচয় দিলাম। কয়েক সেকেন্ড নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। নিজের কৃতকর্মের জন্য বারবার ক্ষমা চাইতে থাকে। নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি মাকে।
মাকে পাওয়ার পর বাবার জন্য ও মনটা উতলা হয়ে উঠে। মায়ের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে বাবার অফিসে যোগাযোগ করি। জানতে পারি, কয়েক বছর আগেই রিটায়ার্ড করেছেন তিনি। বাসার ঠিকানায় গিয়ে দেখি উনি নেই। উনার দ্বিতীয় পক্ষের ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞেস করে জানলাম, রিটায়ার্ড করার কিছু দিনের মধ্যেই তিনি প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়েন। অযথা একটা রুম দখল করে নোংরা করত, তাই বিরক্ত হয়ে ছেলেমেয়েরা তাকে একটা সরকারি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, অযথা ঘরে বোঝা বাড়িয়ে কি লাভ!!!
ওদের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে বৃদ্ধাশ্রম গেলাম। চিনতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো, মনে হলো একটা জীবিত লাশ পড়ে আছে বিছানায়। পাশে বসে হাতটা ধরলাম, পরিচয় দিতেই মুখ ফিরিয়ে কাঁদতে লাগলেন।
বাবা মা এখন আমার সাথে একই বাড়িতে আছেন। একসময় তারা আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমি পারিনি ছাড়তে। হাজার হোক আমার বাবা মা তো!!! 
.
.... কন্যা....
আফরিন শোভা

রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

সীমান্ত খুলে দিতে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের আহ্বান !


আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ সম্প্রতি মিয়ানমারে ফের সহিংসতা শুরু হয়েছে। এর ফলে ওই দেশ থেকে যেসব মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চাইছে তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। 
সংস্থাটি এক বিবৃতির মাধ্যমে শুক্রবার বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরু করলে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। 
সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন প্রদেশে নতুন করে সহিংসতা শুরু হলে গত কয়েক দিনে বান্দরবানের সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারের প্রায় দেড়শ’ নাগরিক বাংলাদেশে এসেছে। নতুন করে আসা এসব মানুষ দেশটির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে।
ইউএনএইচসিআর বিবৃতির মাধ্যমে মিয়ানমারে সম্প্রতি শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে দেশটিতে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা এমন বিপর্যয় পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য গুরুত্বপূর্ণ বলেও জানায়।
জেনেভায় অবস্থিত সদর দফতরে সংস্থাটির মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিস বলেন, ‘মিয়ানমারের ওসব রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সহিংসতার কারণে অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমারে শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে দেশের ভেতরে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে কিংবা ভয়ে দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছেন অনেকে। আর এ কারণে যে মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন।’
সংস্থাটির মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিস বাংলাদেশের উদ্দেশে বলেন, ‘মিয়ানমারে শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে যেসব মানুষ আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছে তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে সব রকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আমরা।’

সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

দেশে শিশু ও নারীর কোনো নিরাপত্তা নেই : জামায়াত।

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ24 ডেস্কঃ সম্প্রতি সারা দেশে নারী-শিশু- কিশোরী ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি সারা দেশে নারী-শিশু ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গোটা দেশের জনগণের সাথে আমরাও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। দেশে আজ নারী ও শিশুর ইজ্জত- আবরুর কোনো নিরাপত্তা নেই। 
গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক মহিলার স্বামীকে বেঁধে রেখে ধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে সুবর্ণচরের পূর্বচরবাটা ইউনিয়নে ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। দেশে নারী-শিশু- কিশোরী অবাধে ধর্ষিতা হচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তরা নারী-শিশু -কিশোরীকে ধর্ষণ করছে। 
তিনি আরো বলেন, তদন্তে দেখা যায় সরকারি দলের লম্পট দুর্বৃত্তরা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় অবাধে ধর্ষণ ও হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা একের পর এক ঘটিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। ফলে ধর্ষকেরা আরো উৎসাহিত হচ্ছে। তারা ধর্ষিতাদের অভিভাবকদের মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে এবং নাজেহাল করছে। ফলে নারী-শিশু- কিশোরী ধর্ষণ ও নির্যাতন মহামারি আকার ধারণ করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ সরকারি দলের ধর্ষণকারীদের সাহায্য- সহযোগিতা করছে এবং ধর্ষকদের বিরুদ্ধে করা মামলা আমলে না নিয়ে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমি তাদের এ ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 
ডা: শফিক এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সালে যৌন সহিংসতায় সারা দেশে ৪২ জন নারী ও শিশু নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ২৮৪ জন। গত জানুয়ারি মাসের ৩৩ দিনে ৪১টি ধর্ষণ ও ধর্ষণ অপচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। তাদের ২৯ জনই শিশু ও কিশোরী। ওপরের তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দেশে কী সাংঘাতিক অবস্থা বিরাজ করছে। বাস্তবে দেশে নারী-শিশু- কিশোরী ধর্ষণের যেসব ঘটনা ঘটছে তার সামান্যই মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। বেশির ভাগ ঘটনাই অজানা থেকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, নারী-শিশু-কিশোরী ধর্ষণকারী দুর্বৃত্তদের বিচার না হওয়ার কারণেই নারী, শিশু-কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই যাচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হলে ধর্ষণকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। সেই সাথে দেশের জনগণকে নারী ধর্ষণ এবং নারী-শিশু- কিশোরীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। নারী-শিশু-কিশোরীদের নির্যাতনকারী দুর্বৃত্তদের কঠোর হস্তে দমন করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। 

মহিলা পরিষদের তথ্য : জানুয়ারিতে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ২৯৮ !

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ চলতি বছরের প্রথম মাসেই ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটেছে মোট ২৯৮টি। আর বিদায়ী ২০১৮ সালে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৩৯১৮টি। যা খুবই উদ্বেগজনক। তাই দেশের চলমান ধর্ষণ আইনের পরিবর্তন ও আইনের মাধ্যমে ধর্ষকের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম। তবে বিচারবহির্ভূত হত্যার পর কাউকে ধর্ষণ মামলার আসামি হিসেবে যেন প্রচার করা না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে বলে জানান তিনি।
গতকাল জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু এবং অব্যাহত নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন, ধর্ষণের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আয়েশা খানম বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি ইতিবাচক দৃশ্য এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান। আজকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে একটি বড় ভূমিকা রাখছে। 
সেই ভূমিকার স্বীকৃতির প্রতিফলন হতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণের ভেতর দিয়ে এবং একটি শক্তিশালী, ভবিষ্যৎমুখী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থায় অর্থ এবং পেশীশক্তির ব্যবহার, নারীর প্রতি সমাজের প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি, নারী হিসেবে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, বিদ্যমান সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে নারীদের অগ্রসর হওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে এই সরকারের যখন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল সেখানে নির্বাচনী এলাকা পুনঃনির্ধারণ করে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করার মতো একটি সহায়ক পরিবেশ ছিল এবং তা করা হলে ২০১৮তে অনেক নারী সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারতেন। 
কিন্তু তা এখনো কারোর দৃষ্টিগোচর হয়নি। তাই আমরা এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবারো বলতে চাই যে, এখনো সময় আছে, সংবিধান সংশোধন করে আগামীর জন্য সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য যাতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা রাষ্ট্র পরিচালনায় জনশক্তি হিসেবে এগিয়ে আসতে পারে। 
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্তের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন বছরের প্রথম মাসেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২৯৮টি। এর মধ্যে ধর্ষণ ৫২টি। আর গণধর্ষণ ২২টি। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৫টি। একইভাবে ২০১৮ সালে ৩৯১৮টি নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬৯৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৮২ জন এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৬৩। এ ছাড়া বাসা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, পরিবহন সব জায়গায় নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রেখা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ, অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ।

রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

দেশের ৮৭টি উপজেলায় ১০ মার্চ ভোট, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ভোট ৪ মার্চ

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ দেশের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ দুই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী সংরক্ষিত মহিলা আসনে ভোট ৪ মার্চ আর উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট ১০ মার্চ।
ইসি সচিব বলেন, পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ৮৭ উপজেলায় ১০ মার্চ ভোটগ্রহণ হবে। প্রথম ধাপের মনোনয়ন জমার শেষ দিন ১১ ফেব্রুয়ারি, বাছাই ১২ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।
প্রথমধাপে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রাজশাহী ও নাটোরের ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে।
ইসি সচিব জানান, উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ভোট ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপ ৩১ মার্চ, পঞ্চম ধাপ সম্ভাব্য ১৮ জুন।
সংরক্ষিত মহিলা আসনে ভোট ৪ মার্চ
একাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের মনোনয়ন জমার শেষ দিন ১১ ফেব্রুয়ারি, বাছাই ১২ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে ১৬ ফেব্রুয়ারি। সংরক্ষিত মহিলা আসনের ভোট হবে ৪ মার্চ। ভোট না হলে মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ হয়ে যাবে সংরক্ষিত মহিলা আসনে কারা সাংসদ হচ্ছেন।

আইনানুযায়ী, উপজেলার তিনটি পদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদ ছাড়া বাকি দুই পদে তদের দলীয় প্রতীক কোনো প্রার্থীর অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হবে না। অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর পাশাপাশি বাম গণতান্ত্রিক জোট এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে তারা বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চ-মে মাসে ছয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইনে মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোটের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে একদিনেই ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে ছয় ধাপে ভোট হয়েছিল। এবারের উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। জেলার সদর উপজেলায় পুরোপুরি ইভিএম ব্যবহার করা হবে।

৭১-এ জামায়াতের ভূমিকাঃ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ ইসলামের নামে পাকিস্তান কায়েম হলেও পাকিস্তানের কোন সরকারই ইসলামের ভিত্তিতে দেশকে গড়ে তুলবার কোন চেষ্টা করেনি। জামায়াতে ইসলামী যেহেতু ইসলামকে বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে একটি বিজ্ঞানসম্মত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল, সেহেতু কোন সরকারই জামায়াতকে সুনজরে দেখেনি।

তদুপরি ইসলামেরই নীতি অনুযায়ী গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করার জন্য জামায়াতে ইসলামী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে এসেছে। ১৯৬২ সারে আইয়ুব খানের সামরিক আইন তুলে নেবার পর আইয়ুবের তথাকথিথ মৌলিক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলেছিল, তাতে জামায়াত কোন দলের পেছনে ছিল না।

এভাবেই জামায়াতে ইসলামী আইন ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শাসনের জন্য নিষ্ঠার সাথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। ১৯৬২ সাল থেকে ৬৯ পর্যন্ত আইয়ুব আমলের আট বছরের মধ্যে জামায়াত ইসলামী ছাড়া আর কোন দলকে বে-আইনী ঘোষণা করা হয়নি। ১৯৬৪ সালের জানুয়ারিতে জামায়াতকে বে-আইনী ঘোষণা করে ৯ মাস পর্যন্ত ৬০ জন নেতাকে বিনা বিচারে জেলে আটক রাখা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে সরকারের বে-আইনী ঘোষণাটি বাতিল হয়ে যায়।

জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস ইসলামী আদর্শ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির পক্ষে একনিষ্ঠ ও বলিষ্ঠ সংগ্রামের গোরবময় ইতিহাস। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির ময়দানে যে ভূমিকা পালন করছে, তা সবার সামনেই আছে। জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা পাকিস্তান আমলে যেমন স্বীকৃত ছিল, তেমনি বর্তমানে সর্ব মহলে প্রশংসিত।

৭১-এ #জামায়াতের #ভূমিকা

জামায়াতে ইসলামীর অতীত ও বর্তমানের ভূমিকা থেকে একথা সুস্পষ্ট যে, আদর্শ ও নীতির প্রশ্নে জামায়াত আপোসহীন। দুনিয়ার কোন স্বার্থে জামায়াত কখনও আদর্শ বা নীতির সামন্যও বিসর্জন দেয়নি। এটুকু মূলকথা যারা উপলব্ধি করে, তাদের পক্ষে ৭১-এ জামায়াতের ভূমিকা বুঝতে কোন অসুবিধা হবার কথা নয়।

প্রথমত, আদর্শগত কারণেই জামায়াতের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে ধারক ও বাহকগণের সহযোগী হওয়া সম্ভব ছিল না। যারা ইসলামকে একটি পূর্ণাংগ জীবন বিধান বলে সচেতনভাবে বিশ্বাস করে, তারা এ দুটো মতবাদকে তাদের ঈমানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী মনে করতে বাধ্য। অবিভক্ত ভারতে কংগ্রেস দলের আদর্শ ছিল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। জামায়াতে ইসলামী তখন থেকেই এ মতবাদের অসারতা বলিষ্ঠ যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছে। আর সমাজতন্ত্রের ভিত্তিই হলো ধর্মহীনতা।

দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের প্রতি ভারত সরকারের অতীত আচরণ থেকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ইন্দিরা গান্ধীকে এদেশের এবং মুসলিম জনগণের বন্ধু মনে করাও কঠিন ছিল। ভারতের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে সংগত কারণেই তাদের যে আধিপত্য সৃষ্টি হবে এর পরিণাম মংগলজনক হতে পারে না বলেই জামায়াতের প্রবল আশাংকা ছিল।

তৃতীয়ত, জামায়াত একথা বিশ্বাস করত যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় বেশি হওয়ার কারণে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হলে গোটা পাকিস্তানে এ অঞ্চলের প্রাধান্য সৃষ্টি হওয়া সম্ভব হবে। তাই জনগণের হাতে ক্ষমতা বহাল করার আন্দোলনের মাধ্যমেই জামায়াত এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার অর্জন করতে চেয়েছিল।

চতুর্থত, জামায়াত বিশ্বাস করত যে, প্রতিবেশি সম্প্রসারণবাদী দেশটির বাড়াবাড়ি থেকে বাঁচতে হলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে এক রাষ্ট্রভুক্ত থাকাই সুবিধাজনক। আলাদা হয়ে গেলে ভারত সরকারের আধিপত্য রোধ করা পূর্বাঞ্চলের একার পক্ষে বেশি কঠিন হবে। মুসলিম বিশ্ব থেকে ভৌগলিক দিক দিয়ে বিচ্ছন্ন এবং ভারত দ্বারা বেষ্টিত অবস্থায় এ অঞ্চলের নিরপত্তা প্রশ্নটি জামায়াতের নিকট উদ্বেগের বিষয় ছিল।

পঞ্চমত, পাকিস্তান সরকারের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক পলিসির কারণে এ অঞ্চলে স্থানীয় পুঁজির বিকাশ আশানুরূপ হতে পারেনি। এ অবস্থায় এদেশটি ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খপ্পরে পড়লে আমরা অধিকতর শোষণ ও বঞ্চনার শিকার পরিণত হব বরে জামায়াত আশাংকা পোষণ করত।

জামায়াত একথা মনে করত যে, বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাপারে ভারতের সাথে সমমর্যাদায় লেনদেন সম্ভব হবে না। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যে সব জিনিস এখানে আমদানি করা হতো, আলাদা হবার পর সে সব ভারত থেকে নিতে হবে। কিন্তু এর বদলে ভারত আমাদের জিনিস সমপরিমাণে নিতে পারবে না। কারণ রফতানির ক্ষেত্রে ভারত আমাদের প্রয়োজন নেই। ফলে আমরা অসম বাণিজ্যের সমস্যায় পড়ব এবং এদেশ কার্যত ভারতের বাজারে পরিণত হবে।

ষষ্ঠত, জামায়াত পূর্ণাংগ ইসলামী সমাজ কায়েমের মাধ্যমেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সমাজিক ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা এবং সকল বৈষম্যের অবসান করতে চেয়েছিল। জামায়াতের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে,আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন কায়েম হলে বে-ইনসাফী, যুলুম ও বৈষম্যের অবসান ঘটবে এবং অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের সত্যিকার মুক্তি আসবে।

এসব কারণে জামায়াতে ইসলামী তখন আলাদা হবার পক্ষে ছিল না। কিন্তু ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে এদেশে যারাই জামায়াতের সাথে জড়িত ছিল, তারা বাস্তত সত্য হিসাবে বাংলাদেশকে একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র বলে মেনে নিয়েছে। আজ পর্যন্ত জামায়াতের লোকেরা এমন কোন আন্দোলন বা প্রচেষ্টার সাথে শরীক হয়নি যা বাংলাদেশর আনুগত্যের সামান্য বিরোধী বলেও বিবেচিত হতে পারে। বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তারা বাস্তব কারণেই যোগ্য ভূমিকা পালন করছে। তারা কোন প্রতিবেশী দেশের আশ্রয় পাবে না। তাই এ দেশকে বাঁচাবার জন্য জীবন দেয়া ছাড়া তাদের কোন বিকল্প পথ নেই।

বইঃ- পলাশী থেকে বাংলাদেশ
অধ্যাপক গোলাম আযম
অধ্যায় ৭

রুমানা থেকে মিতু, সাঈদ থেকে আকাশ ।। আমাদের শিক্ষা কি?

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ মিতু আর ডাক্তার আকাশের সাম্প্রতিক ঘটনা দেখে আমার রুমানা মঞ্জুর আর হাসান সাইদের কথা মনে পড়ে গেলে। আজ থেকে ৮ বছর আগের কথা। রুমানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআর এর শিক্ষক আর সাইদ বুয়েট থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার। মিতু যেমন প্যাটেল নামক এক বিদেশী ছেলের সাথে পরকীয়া করতো, ঠিক তেমনি রুমানাও ইরানি বয়ফ্রেন্ড তারেক বিন নাভেদের সাথে পরকীয়া করতো। তবে দুটো ঘটনাই স্বামী-স্ত্রীর মারামারি পর্যন্ত এসে দুইদিকে ডায়ভার্ট হয়ে গেছে। আকাশ যেমন মিতুকে মেরে মুখে সেলাই ফেলে দিয়েছে, সাইদও রুমানাকে মেরে তাকে অন্ধ করে দেয়। তবে আকাশ আর সাঈদের মধ্যে তফাৎ হলো- আকাশ আত্মহত্যা করে, আর সাইদকে সমাজের প্রচণ্ড চাপে গ্রেফতার করা হয়, কিন্তু সামান্য কয়েকদিন পর জেলের ভেতরে রহস্যজনকভাবে সাইদের লাশ পাওয়া যায়। তবে কোন কোন পুরুষবাদী এমনও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, আকাশ তখন আত্মহত্যা না করলে এবং আহত মিতু মিডিয়ার সামনে আসলে হয়ত নারীদেরবাদীদের চাপে আকাশকে গ্রেফতার করা হতো এবং হয়ত সাইদের মত আকাশকেও মৃত্যুকে বরণ করতে হতো।
গত কয়েকদিন ধরে দেখেছি সাধারণ মানুষ ফেসবুকে আকাশের পক্ষ নিয়েছে, আর নারীবাদীরা মিতুর পক্ষ নিয়ে তুমুল দ্বন্দ্ব করছে। কোন কোন নারীবাদী তো আকাশকে হিটলার বলে উপাধি দিয়েছে। হিটলার যেমন আত্মহত্যা করেছে, তেমনি আকাশও নাকি আত্মহত্যা করেছে। কেউ বলেছে, আকাশের আত্মহত্যা ছিলো নারীর প্রতি পুরুষতন্ত্রের প্রতিশোধ।
নারী ও পুরুষবাদীরা যাই বলুক, আসলে আমরা সাধারণ মানুষ যেমন চাই না- সাইদ-আকাশরা মারা যাক, ঠিক তেমনি মিতু-রুমানারা আহত হোক, এটাও কাম্য নয়। প্রত্যেকটা মানুষ সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর হয়ে বেচে থাকুক এটাই আমাদের কাম্য। কিন্তু এটা তখন সম্ভব হবে, যখন সমাজে একটা ভারসাম্য বজায় থাকবে। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”। নারী-পুরুষ মিলিয়েই সমাজ। একটা ছাড়া অন্যটা চলতে পারবে না, একজন অন্যজনের সহযোগী, কখনই প্রতিযোগী নয়। কিন্তু একটা গোষ্ঠী আছে, যারা সমাজে নারী-পুরুষের লাগিয়ে দিয়ে, উপর থেকে ফায়দা নিতে চায়। সমাজে কিছু কিছু পুরুষ আছে যারা তাদের স্ত্রী/নারীদের নির্যাতন করে, যার উদহারণগুলো টেনে নারীবাদ সৃষ্টি করা হয়। এরপর সেই নারীবাদীরা নারীদের উস্কানি দেয়, বাধন ছিড়ে ফেলার আহবান জানায়। এরপর সেই সব বাধণ ছেড়া নারীদের দেখিয়ে ফের পুরুষবাদ তৈরী করা হয়, ব্যস নারী-পুরুষ তখন হয়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বী, সমাজে তৈরী হয় কলহ। কিন্তু বাস্তবতা হলো আপনি কলহ করে সাময়িক জয়লাভ করতে পারেন, কিন্তু দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতে কখনই সমাজের জন্য তা ভালো ফল বয়ে আনবে না।
এই তো কিছুদিন আগে দেখলাম, বাংলাদেশে নারী নির্যাতন হ্রাস করতে নাকি নারীদের কুংফু-ক্যারাতের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। কি আশ্চর্য ! নারী ধর্ষণের অন্যতম একটা বড় কারণ হচ্ছে প্রতিহিংসা বা শত্রুতা। এই যে আপনি নারীদের কুংফু প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তার আলটিমেট রেজাল্ট কি বুঝতে পারছেন ? একজন নারী কোন পুরুষকে হয়ত কুংফু দিয়ে সাময়িক পরাজিত করতে পারলো, কিন্তু এতে ঐ পুরুষটা কিন্তু ঐ নারীর উপর ক্ষেপে গেলো, পরে প্রতিশোধ নিতে হলেও সে মেয়েটির উপর আক্রমণ করতে পারে। আসলে যে ইস্যুগুলো সমাজের গণমানুষের সাইকোলোজির সাথে সংযুক্ত সেগুলো সফটলি হ্যান্ডেল করতে হয়। দ্রুতকোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে সমাজে বরং বিশৃঙ্খলতা হতে পারে। আর নারীবাদীদের কথা কখনই পাত্তা দেয়া যাবে না, কারণ নারীবাদীরা হলো লেজকাটা শেয়াল। তারা নিজেরা উচ্ছন্নে গেছে, তারা চায় সমাজের অন্য নারীরাও উচ্ছন্নে যাক।
আমি আগেও বলেছি, আমাদেরকে এখন যে সমাজ ব্যবস্থার দিকে ঢেলে দেয়া হচ্ছে, তাতে সামনে আরও কঠিন পরিবেশ আসছে। রুমানা-সাইদ আর মিতু-আকাশের ঘটনা সামনে আরো অসংখ্য দেখা যাবে। তাই শুধু আইন-শালিস করে নয়, কি কি কারণে সমাজে পরকীয়া/নারী নির্যাতন বাড়ছে, সেগুলো আগে চিহ্নিত করে বন্ধ করতে হবে বা আপডেট করতে হবে। যেমন:
১) যেসব মিডিয়া পরকীয়া/নারী নির্যাতনের শিক্ষা দেয়া হয় বা উস্কানি দেয়া হয় সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
২) বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ করা যাবে না। যার প্রয়োজন সে করবে। বিয়ের বিষয়গুলো আরো সহজ করতে হবে। বাল্যবিয়ে নিষেধ থাকায় অনেক নারী/পুরুষ বিয়ের আগে কম বয়সে অবৈধ মেলামেশা করে অভ্যস্থ হয়ে যায়, যার কারণে বিয়ের পরও বহুগামীতা ছাড়তে পারে না।
৩) ঢাকা শহরে জীবননির্বাহ ব্যয় কমাতে হবে। ঢাকাতে জীবন নির্বাহ ব্যয় বিশেষ করে বাড়িভাড়া বেশি থাকায় অনেক বিবাহিত পুরুষ কর্মক্ষেত্রে ঢাকায় আসলেও স্ত্রীকে গ্রামে রেখে আসে। এতে তার স্ত্রী যেমন স্বামীহীনতা ভুগে ঠিক তেমনি শহরে স্ত্রীহীন পুরুষটির দ্বারাও অনেক অপকর্ম ঘটতে পারে।
৪) বিদেশে শ্রমিক রফতানির সময় একদম প্রশিক্ষণহীন শ্রমিক না পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে শ্রমিক পাঠানো উচিত। আরো ভালো হয় যদি শ্রমিক রফতানি না করে দেশী লোক দিয়েকোম্পানি করে সার্ভিস রফতানি করা যায়। এতে বেতন বেশি পাওয়া যাবে। তখন অনেক প্রবাসী চাইলে তার স্ত্রীকে বিদেশ নিয়ে যেতে পারবে। এতে সমস্যা অনেকটা দূর হবে।
৫) অনেক নারী কম বয়সে বিধবা হয়ে যায়। কিন্তু দেখা যায় সমাজের কথা চিন্তা করে, বাচ্চাদের কথা বলে তাকে আর বিয়ে দেয়া হয় না। বিধবা নারীদের বিয়ে নিয়ে সমাজের কুসংস্কার বন্ধ করতে হবে, তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) নেশা জাতীয় দ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে। নেশার কারণে পুরুষত্বহীনতা তৈরী হয়। পর্নোগ্রাফীও নিষিদ্ধ করতে হবে।
৭) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, এবরেশনসহ যাবতীয় সিস্টেম যা পশ্চিমারা বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়েছে এগুলো সাইডএফেক্ট হলো সমাজে ব্যাভিচার বৃদ্ধি পাওয়া। এগুলো অবাধ ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
৮) কোন পুরুষের প্রয়োজন লাগলে এবং সামর্থ থাকলে সে বহুবিবাহ করবে, এ বিষয়টি সমাজে সহজ করতে হবে। অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে ডিভোর্সের বিষয়টিও সহজ করতে হবে।
৯) ধর্মীয় পর্দা বাধ্যতামূলক করতে হবে। নারী পুরুষের জন্য পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিং কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, যাতায়াত ব্যবস্থা করতে হবে। নারীদের প্রতিষ্ঠানগুলো নারীরাই পরিচালনা করবে, সেখানে কোন পুরুষ থাকতে পারবে না।
১০) সমাজের সর্বত্র ধর্মীয় চর্চা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে ধর্ম নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে শুধু আইন-শালিস করে মানুষের মন নিয়ন্ত্রণ করা করা যায় না। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ যত বাড়বে, স্বামী-স্ত্রী তত সুখী হবে। সেক্যুলার-নারীবাদীরা সব সময় ধর্মীয় বিধানকে নারীবিদ্বেষী বলে অপপ্রচার করেছে। কিন্তু তারা ধর্মহীন যে সমাজ আনতে চাইছে তাতে নারীরা অনেক বেশি অনিরাপদ ও নির্যাতিত। সুতরাং তাদের সকল নীতি বর্জন করতে হবে, এর কোন বিকল্প নাই।
লেখক:নয়ন দাদা

শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসীল রবিবার।

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ডামাডোল। নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৫ ধাপের এই নির্বাচনের প্রথম ধাপের তফসিল আগামীকাল রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করতে যাচ্ছে। নির্বাচন উপযোগী ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে ৫ বিভাগের শতাধিক উপজেলায় ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিএনপি এই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলীয় প্রতীকের বিধান যুক্ত হওয়ার পর এটাই হবে ব্যাপক আকারের প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য রবিবার বিকালে কমিশনের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এই সভার এজেন্ডায় দুটি বিষয় রাখা হয়েছে। এক. একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন এবং দুই. পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা সংক্রান্ত। এ বৈঠকে প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা ছাড়াও অন্যান্য ধাপের তফসিলের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এ ছাড়া রবিবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা হবে। জানা গেছে, নির্ধারিত দুই এজেন্ডার বাইরে রবিবারের সভায় নবগঠিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন আগামী ৮ বা ৯ মার্চ প্রথম দফায় ভোটগ্রহণের কথা বললেও এটি ১০ মার্চ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, যেসব উপজেলা পরিষদের প্রথম সভা ২০১৪ সালের ২২ মার্চ অথবা তার আগে হয়েছে, অর্থাৎ ২০১৯ সালের ২১ মার্চের মধ্যে যেসব উপজেলা মেয়াদোত্তীর্ণ হবে— সেগুলোতে প্রথম ধাপে ভোট হবে। এভাবে সভা অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপ, ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপ, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপ এবং রোজার পরে পঞ্চম ধাপের ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠানের বিধান যুক্ত হওয়ার পর এবারই ব্যাপক আকারে এই ভোট হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৫ সালের শেষদিকে উপজেলা পরিষদ দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠানের বিধান চালু হলে গত ৩ বছরে নবগঠিত কয়েকটি উপজেলায় সাধারণ নির্বাচন ও পরিষদের উপনির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকে হয়েছে।
আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কেবল শীর্ষ পদটি দলীয় প্রতীককে অনুষ্ঠিত হলেও উপজেলা পরিষদের সবগুলো পদেই দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নে ভোট হবে। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান— এ তিন পদে যেকোনও নিবন্ধিত দল প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে।
দলগুলোর থেকে তিনটি পদেই মনোনয়নের সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেবল পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এক্ষেত্রে প্রতি উপজেলা থেকে তিনজনের প্যানেল করে কেন্দ্রের কাছে পাঠানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
মনোনয়ন দেওয়ার বিধান থাকলেও আওয়ামী লীগ পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ দুটি উন্মুক্ত রাখবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। বিএনপি ও তাদের মিত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে বর্তমান কমিশনের অধীনে কোওন ভোট করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য তাদের কেউ নিজ উদ্যোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কেন্দ্রীয়ভাবে আটকানো হবে না বলেও জানিয়েছে তারা।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট করলেও উপজেলা পরিষদে এককভাবে ভোট করবে আওয়ামী লীগ।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেশের জেলাগুলোর সদর উপজেলার প্রত্যেকটিতে পরিপূর্ণভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই লক্ষ্যে কমিশন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধিমালার খসড়া প্রস্তত করেছে। ভেটিংয়ের জন্য রবিবার এই বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল বিষয়ে কমিশন সভা আহ্বান করা হয়েছে। নির্বাচন উপযোগী উপজেলাগুলোতে তারা ৫ ধাপে ভোট করবে। রবিবার প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণার হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য ধাপের ভোট কত তারিখে হবে, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রবিবারের বৈঠকের কার্যপত্রে প্রথম ধাপে ১১০টির মতো উপজেলায় ১০ মার্চ ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। এসব উপজেলার মধ্যে ডজন খানেকে ইভিএম ব্যবহারের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮০টিতে এবার ভোট হবে। এছাড়া মেয়াদ শেষ না হওয়ায় ভোটের উপযুক্ত না হওয়া ও মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় ১২টি উপজেলায় এ বছর ভোট হবে না।
উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী কোনও পরিষদের মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিষদ গঠনের পর প্রথম সভা থেকে মেয়াদের হিসাব শুরু হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। ওই বছর ৪৬০টি উপজেলায় এই নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই বছরও ৪৬০টি উপজেলায় এই নির্বাচন হয়। ২০০৯ সালে দেশে তৃতীয়বারের মতো ৪৭৫টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ছয় ধাপে দেশের ৪৮৭টি উপজেলায় এই ভোট হয়।

বাংলা ট্রিবিউন

শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

চট্টগ্রাম ওমরগণি এমই এস কলেজের অধ্যাপনা থেকে অবসর নিলেন ড. আ. ফ. ম খালিদ হোসেন

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ24 ডেস্কঃ চট্টগ্রাম ওমরগণি এমই.এস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অবসর গ্রহন করলেন বিদগ্ধ আলিম, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক, মাসিক আত- তাওহীদ সম্পাদক ড. আ. ফ. ম খালিদ হোসেন। বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ ওই কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দীর্ঘ ২৭ শিক্ষকতার পর আজ তিনি ওই কলেজটির শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানলেন।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, আজ ৩১ জানুয়ারী’১৯ প্রথম বর্ষের অনার্সের ক্লাশ নেয়ার মাধ্যমে আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান ওমরগণি এমই.এস কলেজ থেকে বিদায় নিলাম। চেষ্টা করেও অশ্রুজল ধরে রাখা গেলো না। দেখতে দেখতেই ২৭টি বছর চলে গেল।টেরই পেলাম না। এরই নাম জীবনপরিক্রমা। কাল থেকে আর চিরচেনা ক্যাম্পাসে আসতে হবে না। সার্টিফিকেট মতে ৬০বছর পূর্ণ হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিঅনুযায়ী অধ্যাপনার আর সুযোগ থাকে না। স্মৃতিকাতরতায় আমি বিমুঢ় ও বিদায়ে বেদনাপ্লুত। পেছনে রয়ে গেল অনেক স্মৃতি, অনেক কথা, অনেক ভালবাসা। ৬জন অধ্যক্ষের বাৎসল্য ও সহযোগিতা পেয়েছি। আমার সহকর্মী অধ্যাপকবৃন্দ ও কর্মচারীরা ছিলেন সবাই আমার প্রতি আন্তরিক। সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতৃবৃন্দ আমাকে সর্বদা সমীহ ও শ্রদ্ধার চোখে দেখেছে। নতুন বিভাগীয় প্রধানকে দায়িত্ব ও একাউন্ট বুঝিয়ে দিয়েছি। ১৯৯২ সালের ২২ জুলাই অধ্যক্ষ আবদুল হাই সাহেবের সহযোগিতায় আমি এ কলেজে এসেছিলাম। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আলহামদুলিল্লাহ ২৭ বছরে আমার অর্জন অনেক। ছোট বড় বেশ ক’টি গ্রন্থ রচনা করি। কয়েকটা অনুবাদ গ্রন্থের কাজও শেষ করি। এ কলেজে শিক্ষকতাকালীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী নিয়েছি ২০০৬ সালে। কলেজে যোগ দেয়ার অব্যাবহিত পরে সারা বাংলাদেশে বক্তা ও ওয়ায়েয হিসেবে আমার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। বিদেশের সেমিনারের ব্যানারে আমার নামের সাথে কলেজের নাম লেখা থাকতো। কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে বসে আমার শিক্ষক ড. ইনাম উল হক সাহেব ও ড. শব্বির আহমদ সাহেবকে নিয়ে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের ইসলামী বিশ্বকোষ ২য় সংস্করণের ৩য় থেকে ১০ম খণ্ড সম্পাদনা করেছি। আজ তাঁরা জান্নাতবাসী।
বহু অধ্যক্ষ, সহকর্মী শিক্ষক ও কর্মচারীকে হারিয়েছি। আজ তাঁদের কথা বেশি করে মনে পড়ছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন অধ্যক্ষ এ এ রেজাউল করিম চৌধুরী, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান, অধ্যক্ষ আজিজুল বারি, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম (অর্থনীতি), অধ্যাপক আওরঙ্গজেব চৌধুরী (ব্যবস্থাপনা), অধ্যাপক গোলাম নবী (ইংরেজী), অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুছ (দর্শন), অধ্যাপক ইস্কান্দার (হিসাব বিজ্ঞান), অধ্যাপক আনোয়ারুল হক কাদেরী (ইতিহাস), অধ্যাপক আযিয উদ্দিন আহমদ (বাংলা), অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন (বাংলা), প্রদর্শক কামরুল হাসান ও প্রদর্শক মুর্শিদ কুলি। অনেকে অবসরের পর আবার অনেকে চাকুরিরত অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা তাঁদের জান্নাতবাসী করুন।
আগামী মাসে বিভিন্ন বিভাগে ১১জন নতুন শিক্ষক স্থায়ীপদে যোগ দেবেন। তালিকা এসেছে। আমরা পুরনোরা চলি যাচ্ছি, নতুনদের জন্য আসন খালি করে দিচ্ছি। এটাই পৃথিবীর চিরন্তন রীতি।এটা না মানার সুযোগ নেই। দোয়া চাই অবসর জীবন সুন্দর ও প্রীতিময় হোক, ভরে উঠুক বাকিদিন সুস্থতার স্নিগ্ধতায়।সুস্থতা সাপেক্ষে অবশিষ্ট সময় ধর্মর্চচা, ওয়ায-নসীহত, দেশভ্রমণ, অনুবাদ ও সাহিত্যচর্চায় মগ্ন থাকতে চাই। বাকি আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে।
-হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর, কক্সবাজার নিউজ ডটকম

বুধবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৯

বিয়ের পর অলীমা ওয়াজিব,,,,,,,,

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ ডেস্কঃ
অলীমা’র দাওয়াত
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা) নবী করীম (স)-এর নিকট উপস্থিত হইলেন। তাঁহার দেহে সোনালী হলূদের চিহ্ন লাগানো ছিল। ইহা দেখিয়া নবী করীম (স) তাঁহাকে ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। জবাবে তিনি জানাইলেন যে, তিনি সম্প্রতি আপনার বংশের একটি মেয়ে বিবাহ করিয়াছেন। রাসূলে করীম (স) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তাহাকে কত মহরানা দিলে? তিনি বলিলেনঃ এক দানা পরিমাণ স্বর্ণ। রাসূলে করীম (স) বলিলেনঃ অলীমা’র দাওয়াত কর- একটি ছাগী দিয়া হইলেও।
(বুখারী, তিরমিযী, নাসায়ী)

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি মোটামুটি তিনটি কথা আলোচনা সাপেক্ষ। প্রথম সোনালী হলুদের চিহ্ন গায়ে, থাকা। দুই মহরানার পরিমাণ এবং তিন, অলীমা করার নির্দেশ।

এই হাদীসটির মূল ভাষা হইলঃ তাহার দেহে হলুদের চিহ্ন ছিল। অপর এক বর্ণনায় এই স্থলের শব্দ হইলঃ অর্থাৎ তাঁহার গায়ের জাফরানের রঙ মাখা ছিল। অন্য একটি বর্ণনায় এখানকার ভাষা হইল অর্থাৎ এক প্রকার সুগন্ধি মাখা ছিল। আর একটি বর্ণনার ভাষা এইঃ নবী করীম (স) তাঁহার চোখে-মুখে নব বিবাহের হাসি-খুশী ও উৎফুল্লতা দেখিতে পাইলেন। আর তিরমিযীর ভাষা হইলঃ ‘নবী করীম (স) আবদুর রহমান ইবনে আউফের (দেহে বা কাপড়ে) হলুদ চিহ্ন দেখিতে পাইলেন। হলুদ চিহ্ন বা জাফরান মাখা দেখার তাৎপর্য হইল, তাহার শরীরে জাফরান মাখা কাপড়-যাহা সাধারণত নব বিবাহিত ব্যক্তিরা পরিয়া থাকে-পরিহিত ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলিয়াছেনঃ
যে মুসলমানই বিবাহ করিবে সে যেন সোনালী হলুদ বর্ণ মাখা কাপড় পড়ে। ইহা নব বিবাহ ও তজ্জনিত আনন্দ উৎফুল্লতার বাহ্য লক্ষণ হইবে। তোমরা কি হাদীসের এই বাক্যটি দেখিতে পাওনা, যাহাতে বলা হইয়াছেঃ তাঁহার চোখে-মুখে নববিবাহের উৎফুল্লতা প্রতিভাত ছিল।

কেহ কেহ বলিয়াছেনঃ ‘নব বিবাহিত ব্যক্তি এই ধরনের কাপড় পরিবে এই উদ্দেশ্যে, যেন লোকেরা তাহার অলীমা’র অনুষ্ঠান করায় ও নব গঠিত পরিবারের ব্যয় বহনে সাহায্য করে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলিয়াছেনঃ
সমস্ত রঙের মধ্যে সর্বোত্তম রঙ হইল সোনালী হলুদ বর্ণ। কেনা কুরআন মজীদেই আল্লাহ তা’আলা বলিয়াছেনঃ হলুদবর্ণ- উহার রঙ অত্যুজ্জল। উহা দ্রষ্টা ও দর্শককে আনন্দিত ও উৎফুল্ল করিয়া দেয়।

কুরআনের ও আয়াতটি সূরা আল-বাকারা’র ৬৯ আয়াতাংশ। ইহাতে বলা কথার ভঙ্গী হইতে জানা যায়, মানসিক আনন্দ লাভ হয় হলূদ বা ঘিয়ের রঙে। এই কারণে নবী করীম (স) ও এই রঙটি খুবই পছন্দ করিতেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) কে নবী করীম (স)-এর পছন্দনীয় রঙ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল। জবাবে তিনি বলিয়াছিলেনঃ

নবী করীম (স) সোনালী হলুদ রঙ মাখিতেন। আমিও উহা মাখি এবং এই রঙ আমি ভালবাসি, পছন্দ করি।

ইবনে আবদুল বার জুহরী হইতে উদ্ধৃত করিয়াছেনঃ
সাহাবায়ে কিরাম (রা) সোনালী হলুদ রঙ মাখিতেন এবং তাহাতে তাঁহারা কোন দোষ দেখিতে পাইতেন না।

ইহা হইতে বুঝিতে পারা যায় যে, বর্তমানকালে বিবাহের প্রক্কালে বর-কনের গাত্রে হলূদ মাখার যে সাধারণ ও ব্যাপক রেওয়াজ রহিয়াছ তাহা বহু প্রাচীনকাল হইতে চলিয়া আসা রীতি এবং তাহাতে শরীয়াতের দৃষ্টিতে কোন দোষ নাই।

দায়ূদী বর্ণনা করিয়াছেনঃ হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তাঁহার শ্বশ্রু সোনালী হলুদ বর্ণে রঙীন করিয়া রাখিতেন। ফলে তাঁহার কাপড়-পোষাক এই রঙে রঙীন হইয়া যাইত।
হযরত উমর (রা) বলিয়াছেনঃ
আমি নবী করীম (স)-কে দেখিয়াছি, তিনি এই রঙ মাখিতেন এবং ইহার অপেক্ষা অন্য কোন রঙ তাঁহার অধিক প্রিয় ও পছন্দ ছিল না। তিনি তাঁহার সমস্ত কাপড়-এমন কি তাঁহার পাগড়ীও এই রঙে রঙীন করিয়া রাখিতেন।

আসলে ইহা জাফরানী রঙ সম্পর্কে কথা। উহা ছাড়া আর যে রঙে কোন গন্ধ নাই তাহা মাখা জায়েয হওয়ায় কোন মত-বিরোধ নাই।

অবশ্য ইবনে সুফিয়ান বলিয়াছেনঃ সোনালী হলুদ বর্ণ কাপড়ে লাগানো জায়েয, দেহে লাগানো জায়েয নয়। ইমাম আবূ হানীফা, শাফেয়ী ও তাঁহাদের সঙ্গী-সাগরিদগণ কাপড়ে বা দাড়িতে জাফরানী রঙ ব্যবহার মকরুহ মনে করিতেন। তাঁহাদের দলীল হইল হযরত আনাস বর্ণিত হাদীসঃ
পুরুষ মানুষকে জাফরানী রঙ লাগাইতে নবী করীম (স) নিষেধ করিয়াছেন।

প্রখ্যাত হাদীস ব্যাখ্যাকারী আল্লামা আবদুর রহমান মুবারকপুরী লিখিয়াছেনঃ হাদীসের এই বাক্যটির অর্থ হইলঃ

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফের (রা) অবয়বে নব বিবাহ সংক্রান্ত সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহৃত জাফরানের চিহ্ন লাগিয়া ছিল।

অর্থাৎ তিনি এই জাফরানী রঙ নিজে ইচ্ছা করিয়া লাগান নাই। কেননা পুরুষদের এই রঙ ব্যবহার সম্পর্কে রাসূলে করীম (স)-এর স্পষ্ট নিষেধ সহীহ বর্ণনা সূত্রে বর্ণিত হইয়াছে। অনুরূপভাবে হলুদবর্ণ সম্বলিত সুগদ্ধি ব্যবহারও পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ। কেননা ইহা মেয়েদের ভূষণ। আর পুরুষদিগকে মেয়েদের সহিত সাদৃশ্য করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। তাঁহার মতে ইহাই আলোচ্য হাদীসের সঠিক তাৎপর্য। কাযী ইয়ায ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ হাদীসের এই অর্থই গ্রহণ করিয়াছেন। কিন্তু আল্লমা বদরুদ্দীন আইনী এইরূপ অর্থ গ্রহণে একমত নহেন।

কাযী ইয়ায বলিয়াছেন, বলা হইয়াছে, বরের জন্য এই রঙ ব্যবহার করা জায়েয। আবূ উবাইদ উল্লেখ করিয়াছেনঃ

সাহাবায়ে কিরাম (রা) যুবকদের বিবাহ উৎসব কালে এই রঙ ব্যবহার করা জায়েয বলিয়া ঘোষণা করিতেন।

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা) আনসার বংশের যে মেয়েটি বিবাহ করিয়াছিলেন, জুবাইর উল্লেখ করিয়াছেন, সে মেয়েটি আবুল হাসান ইবনে রাফে’র কন্যা। রাসূলে করীম (স) জিজ্ঞাসা করিলেন ইহার অর্থঃ ‘তাহাকে মহরানা বাবদ কত দিয়াছ’? জওয়াবে তিনি বলিয়াছিলেনঃ ‘একদানা ওজনের স্বর্ণ’। মূল কথা একই, ভাষা ও শব্দ প্রয়োগের পার্থক্য মাত্র। ‘একদানা পরিমাণ’ বা ‘একদানা ওজনের স্বর্ণ’ কতটুকু? ইমাম খাত্তাবী বলিয়াছেনঃ এমন একটা ওজন বা পরিমাণ বুঝায় যাহা তদানীন্তন সমাজের সকলেরই জানা ছিল এবং ইহা কাহারও নিকট অপরিচিত ছিলনা। উহার মূল্য পরিমাণ ছিল পাঁচ দিরহাম। ইহাই অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মত। তবে ইমাম তিরমিযীর বর্ণনা মতে একদানা পরিমাণ স্বর্ণের ওজন হইল তিন দিরহাম ও এক দিরহামের এক তৃতীয়াংশ। আর ইসহাক বাহওয়াই বলিয়াছেন, ইহার ওজন পাঁচ দিরহাম ও এক দিরহামের এক তৃতীয়াংশ। বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণের মূলে যে পার্থক্য হইয়াছে, তাহারই প্রতিফলন ঘটিয়াছে এই সব কথায়।

এই আলোচনা হইতে জানা গেল, বিবাহে মহরানা একটা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং কে কত মহরানা ধার্য করিয়াছে বা দিয়াছে তাহাই পারস্পরিক জিজ্ঞাসা বিষয়। সমাজ প্রধান হিসাবে রাসূলে করীম (স)-এরও ইহা একটি দায়িত্ব ছিল।

রাসূলে করীম (স) হযরত আবদুর রহমান (রা)-এর বিবাহ অনুষ্ঠিত হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর তাঁহাকে নির্দেশ দিলেনঃ অলীমা কর- অলীমার জিয়াফতের ব্যবস্থা কর একটি ছাগী দ্বারা হইলেও।

‘অলীমা’ কাহাকে বলে? আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখিয়াছেনঃ

বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় যে খাবার বা জিয়াফতের আয়োজন ও অনুষ্ঠান করা হয়, তাহারই নাম ‘অলীমা’।

ইবনুল আসীর বলিয়াছেনঃ
বিবাহ উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ খাবার ও জিয়াফতকেই অলীমা বলা হয়।

আল্লামা আজহারী বলিয়াছেন- ‘কেননা স্বামী-স্ত্রী দুইজন একত্রিত হয়’- এই উপলক্ষেই এই জিয়াফতের ব্যবস্থা করা হয়। এই জন্যই ইহার নাম ‘অলীমা’।

বস্তুত বিবাহ উৎসবকে কেন্দ্র করিয়া কিংবা বিবাহন্তে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদিগকে দাওয়াত করিয়া খাওয়ানোর জন্য রাসূলে করীম (স) এই নির্দেশ দিয়াছেন। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসে বলা হইয়াছে, রাসূলে করীম (স) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ ‘তুমি কি বিবাহ করিয়াছ’? বলিলেনঃ হ্যাঁ’। জিজ্ঞাসা করিলেনঃ ‘তুমি কি অলীমা করিয়াছ’? বলিলেনঃ ‘না’।
তখন রাসূলে করীম (স) একদানা পরিমাণ স্বর্ণ তাঁহার দিকে নিক্ষেপ করিলেন এবং বলিলেনঃ অলীমা কর- যদি একটি ছাগী দ্বারাও তাহা হয়।

কথার ধরন হইতেই স্পষ্ট হয় যে, একটি ছাগী দ্বারা অলীমার জিয়াফত খাওয়ানো কমসে-কম নিয়ম। অর্থাৎ বেশী কিছু করিতে না পারিলেও অন্তত একটি ছাগী যবেহ করিয়া অলীমা খাওয়াইতে হইবে। আর নবী করীম (স) যে একটি স্বর্ণ দানা তাহাকে দিলেন, ইহার তাৎপর্য এই যে, বর বা তাহার অভিভাবক নিজস্ব ব্যয়ে যদি অলীমার জিয়াফতের ব্যবস্থা করিতে অসমর্থ হয়, তাহা হইলে সমাজের লোকদের- অন্ততঃ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, মুরব্বী, সমাজপতি সর্বশেষ অবস্থায় সরকারের কর্তব্য হইল তাহার সাহায্য করা। নবী করীম (স) ইহারই পথ-নির্দেশ করিয়াছেন বাস্তব আদর্শ সংস্থাপন করিয়া।

হযরত আনাস (রা) বলিয়াছেনঃ

রাসূলে করীম (স) তাঁহার স্ত্রীগণের মধ্যে জয়নবের বিবাহে যে অলীমা করিয়াছেন সেইরূপ অলীমা অন্য কোন স্ত্রীর বিবাহে করেন নাই। তখন তিনি একটি ছাগী যবেহ করিয়া অলীমা করিয়াছেন।

অপর একটি বর্ণনায় বলা হইয়াছে, হযরত আনাস (রা) বলিয়াছেনঃ লোকদেরকে আহবান করার জন্য রাসূলে করম (স) আমাকে পাঠাইয়াছিলেন। পরে তিনি তাহাদিগকে পেট ভরিয়া গোশত রুটি খাওয়াইয়াছিলেন।

বুখারী গ্রন্হে উদ্ধৃত হইয়াছেঃ

নবী করীম (স) তাঁহার কোন কোন স্ত্রীকে অধিক মর্যাদা দেওয়ার জন্যই অলীমা খাওয়ানোর এইরূপ পার্থক্য করিয়াছেন, তাহা নয়। বরং বিভিন্ন সময়ের বিবাহ কালে রাসূলে করীম (স)-এর আর্থিক সামর্থ্য কখনও সংকীর্ণ ছিল এবং কখনও প্রশস্ত ছিল, এই কারণেই এই রূপ হইয়াছে।

হযরত বুরাইদা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ

হযরত আলী (রা) যখন হযরত ফাতিমা (রা)-কে বিবাহ করার প্রস্তাব দিয়াছিলেন, তখন নবী করীম (স) বলিয়াছিলেনঃ বিবাহে অলীমা করা একান্ত আবশ্যক।

ইবনে হাজার আল আসকালানী বলিয়াছেনঃ প্রথমে উদ্ধৃত মূল হাদীসটির সনদে কোন দোষ নাই। আর এই হাদীসটি একথাও প্রমাণ করে যে, অলীমা করা ওয়াজিব। অবশ্য ইবনে বাত্তাল বলিয়াছেন, অলীমা করাকে কেহ ওয়াজিব বলিয়াছেন, তাহা আমার জানা নাই। কিন্তু তিনি জানেন না বলিয়াই তাহা ওয়াজিব হইবে না, এমন কথা নয়। কাহারও অজ্ঞতা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মতবিরোধ প্রমাণ করে না। অহশী ইবনে হারব-এর মরফু’ হাদীসের ভাষা এইরূপ অলীমা সত্য-সপ্রমাণিত। ইহার সহিত বিভিন্ন লোকের হক জড়িত। বস্তুত বিবাহ একটা সামাজিক আনন্দ অনুষ্ঠান। এই সময় বর পক্ষের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এবং কনে পক্ষের নিকটাত্মীয় ও আপনজনের হক বা অধিকার হয় বর পক্ষের নিকট হইতে জিয়াফত খাওয়ার আহবান পাওয়ার। এই হক বা অধিকার অবশ্যই পূরনীয়, পালনীয়। 

কিন্তু ইবনে বাত্তাল এই হাদীসেরও ভিন্ন অর্থ করিয়াছেন। তাঁহার মতে হাদীসের শব্দ ও অর্থ ‘বাতিল নয়- ভিত্তিহীন নয়’। আর যাহা বাতিল বা ভিত্তিহীন নয়, তাহা বড়জোড় ‘মুস্তাহাব’ হইতে পারে। তাই উহাকে ‘একটি মর্যাদাশীল সুন্নাত’ বা ‘রাসূলের একটি সম্মানযোগ্য রীতি’ বলা যাইতে পারে, ওয়াজিব নয়।

উপরন্তু উহা সম্প্রতি সৃষ্ট একটি আনন্দমূলক ঘটনা সংশ্লিষ্ট জিয়াফত। ফলে ইহা অন্যান্য সাধারণ দাওয়াত-জিয়াফতের মতই একটি কাজ। (আল মুগনী-ইবনে কুদামাহ( আর ইহা করার জন্য যে আদেশ দেওয়া হইয়াছে, তাহা পালন করা ‘মুস্তাহাব’ মাত্র- ওয়াজিব নয়। আর রাসূলে করীম (স)-এর কথা ‘একটি ছাগী দিয়া হইলেও’- ছাগী জবেহ করিয়া অলীমা করা যে ওয়াজিব নয়, ইহা তো সর্ববাদী সম্মত কথা। তবে জমহুর আলেমের মতে ইহা ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদা’।

কিন্তু ইহাও সর্বশেষ কথা নয়, কেননা আল্লাম বদরুদ্দীন আইনীর উদ্ধৃতি অনুযায়ী, শাফেয়ী মাযহাবের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতে ইহা ওয়াজিব। কেননা নবী করীম (স) হযরত আবদুর রহমানকে ইহা করার জন্য আদেশ করিয়াছেন। আর হযরত আবদুর রহমানকে একটি ছাগী যবেহ করিয়া হইলেও অলীমা করার নির্দেশ দিয়াছেন, তাহার অর্থ এই নয় যে, অলীমার দাওয়াতে ইহার অধিক কিছু করা যাইবে না। হযরত আবদুর রহমানের আর্থিক অবস্থার বিচারে ইহা ছিল তাঁহার সামর্থ্যের সর্বনিম্ন পরিমাণ ব্যয়। অবশ্য কাহারও কাহারও মতে সদ্য হিজরতকারী সাহাবীদের আর্থিক অস্বচ্চলতা বরং সংকটের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়াই এইরূপ বলা হইয়াছে। উত্তরকালে সাহাবীদের আর্থিক অবস্থায় যখন প্রশস্ততা আসে, তখন অলীমা’র ব্যয়-পরিমাণেও প্রশস্ততা আসে।

উপসংহারঃ-

আজকে আমাদের সমাজ উল্টো পথে যাত্রা করছে! বিয়ে মানেই হলো চাওয়া আর পাওয়া। কনের পিতা মহা মুসিবতে পড়ছে মেয়ে জন্ম দিয়ে। দীর্ঘদিন একটি মেয়ের ভরণপোষণ ও লেখাপড়ার মতো গুরুদায়িত্ব পালন করে যখন পাত্রস্থ করবে তখন বর পক্ষের যাবতীয় চাহিদা মেটানো এবং গোটা এলাকার মানুষকে আপ্যায়ন করে মেয়ে উঠিয়ে দিতে হয়! যা একটি পরিবারের প্রতি জুলুম এবং অমানবিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়। আসুন আমরা আকদ অনুষ্ঠানকে ছোট করে সামর্থ্য অনুযায়ী অলীমাকে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদানের প্রচেষ্টা করি। 

বইঃ- হাদিস শরীফ ৩য় খন্ড
মাওলানা আব্দুর রহিম (রহঃ)।

About

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

আমার ব্লগ তালিকা

Translate

Translate

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24

সর্বশেষ

অনুসরণকারী