আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24ঃ বিএনপি-জামায়াত জোট নিয়ে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মন্জু’র মতামত নিচে তুলে ধরা হলোঃ
(১) এমন প্রসঙ্গে লিখতে বসেছি যা এ মুহুর্তে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। অনেকের কাছে এ লেখা অপছন্দনীয় হবে তা হলফ করে বলতে পারি। দ্বিমত থাকতে পারে কারও কারও।
তবুও এ প্রসঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত কেন করলাম?
এর জবাব লেখার মাধ্যমে পরিস্কার হবে আশাকরি।
যদি তা না হয় তাহলে উপসংহারে স্পষ্ট করার প্রতিশ্রুতি রইলো-
প্রথমে একটা গল্প বলি।
এটাকে অবশ্য গল্প বলা ঠিক হবেনা। এটা একটা বাস্তব ঘটনা। যা গুরুত্বপূর্ণ লোকদের কাছ থেকে শোনা। ঘটনার তথ্য সম্পর্কে কারও যদি ভিন্নমত থাকে তাহলে জানিয়ে দেবেন, আমি আপনার ভিন্নমত হুবুহু তুলে ধরবো। ঘটনা বা গল্পটা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়, প্রাসঙ্গিক কারণে এটা উল্লেখ করছি। যদি কেউ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার উদ্দেশ্য-বিধেয় নিয়ে টানাটানি করেন, গালাগাল করে চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করেন তাতেও আপত্তি নেই। আপনি যে কষ্ট করে পড়লেন, মতামত দিলেন তাতেই আমি অশেষ কৃতজ্ঞ।
ঘটনাটা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় থাকা কালীন সময়কার। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারে জামায়াত প্রধান শরীক হিসেবে যোগ দেয়। সংসদে জামায়াতের ১৭ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। এটা সকলের জানা যে নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা তার এলাকার ভোটারদের নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। এসকল প্রতিশ্রুতির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি হলো নিজ নিজ এলাকার থানা সদর বা উল্লেখযোগ্য কোন ইউনিয়ন পরিষদ কে পৌরসভায় রুপান্তর করা। তাই নির্বাচনের পর পর এমপিরা তাদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দৌঁড় ঝাপ শুরু করেন।
তখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ছিলেন বিএনপি সেক্রেটারী আব্দুল মান্নান ভূইয়া। এমপিদের প্রতিশ্রুতি, এলাকার বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা, সর্বাপরি চেষ্টা তদবীর কে সমন্বয় করে অবশেষে সরকার অনেকগুলো নতুন পৌরসভা গঠনের ঘোষনা দেয়। এসকল নতুন পৌরসভার মধ্যে বেশীরভাগ (প্রায় ৪০ টি) ছিল বিএনপি এমপি দের এলাকায়, কিছু ছিল আওয়ামীলীগ এমপি দের এলাকার এবং ৭ টি ছিল জামায়াত এমপিদের এলাকার। (সংখ্যা কম বেশী হতে পারে)।
জামায়াতের যে সাতজন এমপি নিজ এলাকায় পৌরসভা পেলেন, তাঁরা একদিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মান্নান ভূঁইয়া কর্তৃক তাঁর মিন্টু রোডস্থ বাসভবনে চা পানের আমন্ত্রণ পেলেন। এমপি গণ সানন্দে সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। কারণ মন্ত্রীকে তাদের পক্ষ থেকে একটু ধন্যবাদ জানানোর কাজটাও তাঁরা এই সুযোগে সেরে নিতে পারবেন।
সে সময়কার কোন এক বিকেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও বিএনপি মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়ার আহুত চা চক্রে জামায়াতের সিনিয়র নেতা মাওলানা আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে ৭ জন এমপি যোগদান করলেন।
চা-পান ও সৌজন্যমূলক নানা আলোচনার পর জনাব মান্নান ভূইয়া জামায়াতের এমপিদের উদ্দেশ্য করে বললেন- একটি বিশেষ বিষয়ে অনুরোধ করার জন্য আমি মূলত: আপনাদের কষ্ট দিয়েছি। আপনারা আপনাদের ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পৌরসভা করবেন। আপনাদের সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হলো- এটা আপনাদের বিরাট একটা এচিভমেন্ট। এই কৃতিত্ব যেমনি আপনার তেমনি এটা আমাদের সরকারেরও সাফল্য।
আমরা যেহেতু জোটবদ্ধ সরকার তাই আমাদের একটা চিন্তা হলো আপনারাতো জামায়াতের এমপি আছেনই। আপনাদের পৌরসভায় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রথম যে প্রশাসক সরকার নিয়োগ করবে তা হবে বিএনপি-র। আপনাদের কোন আপত্তি না থাকলে আমরা বিএনপি’র পক্ষ থেকে আপনাদের পৌরসভা গুলোর জন্য ৭ জন প্রশাসক নিয়োগ পূর্বক এ চিন্তাটা বাস্তবায়ন করতে চাই।
চা চক্রে এতক্ষণ যে প্রাণেচ্ছল আনন্দময় পরিবেশ ছিল তা হঠাৎ থমকে গেল। এরকম একটা সিরিয়াস প্রস্তাব মান্নান ভূইয়া সাহেব চায়ের টেবিলে দিয়ে দিবেন তা তাঁরা ভাবতে পারেননি।
এমপি গণ পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন। নীতি নির্ধারণী টেবিলে আলোচনা না করে এ বিষয়ে মতামত দেয়া মোটেও সম্ভব নয়। একবার যদি তাঁরা এই প্রস্তাবে হ্যাঁ বলেন তাহলে স্থানীয় ভাবে কঠিন পরিস্থিতি তাদের মোকাবিলা করতে হবে। আবার মন্ত্রী যে যুক্তি দিয়ে প্রস্তাব তুলেছেন মুখের উপর তা না করাও মুশকিল। সকলের মুরুব্বী মাওলানা সোবহান সাহেব তারপরও সংকোচ ত্যাগ করে মন্ত্রীর মুখের ওপর বললেন- মান্নান ভাই আমরা তো এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আজকে প্রস্তুত নই। এটা যদি আপনার অফিসিয়াল প্রস্তাব হয় তাহলে আমরা আমাদের নীতি নির্ধারণী সভায় আলাপ করে এ বিষয়ে পরে আমাদের মতামত জানাবো।
কিন্তু জামায়াতের (অপেক্ষাকৃত) তরুণ এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সবাইকে অবাক করে দিয়ে চট্ করে প্রস্তাবটিকে সমর্থন জানিয়ে বসলেন। তিনি বললেন মান্নান ভাই আপনার প্রস্তাবটি খুবই উত্তম ও যুক্তিপূর্ণ। তাঁর কথা শুনে মান্নান ভূইয়ার মুখ উজ্বল হয়ে উঠলো পক্ষান্তরে জামায়াতের অন্যান্য সতীর্থদের কপালে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ পড়লো।
ডা: তাহের বললেন, আপনার চিন্তাটি যথার্থ এবং এটি একটি আদর্শ প্রস্তাব। আপনি বলেছেন এই সরকার জোট সরকার। আপনার প্রস্তাব অনুযায়ী যেখানে জামায়াতের এমপি সেখানে পৌরসভায় প্রশাসক হবে বিএনপি’র আর যেখানে বিএনপি’র এমপি সেখানে পৌরপ্রশাসক হবে জামায়াতের। আমিতো মনেকরি জামায়াতের নীতি নির্ধারণী ফোরামে এই প্রস্তাব অনায়াসে পাশ হবে। কারণ এই প্রস্তাব গৃহীত হলে বিএনপি পাবে ৭ জন পৌরপ্রশাসক আর জামায়াত পাবে ৪০ জন পৌরপ্রশাসক।
মূহুর্তে সবাই তাহের সাহেবের কথার অর্থ বুঝতে পারলেন। এবার জামায়াতের সবাই সহাস্যে তাঁকে সমর্থন জানালেন। মান্নান ভূইয়া’র মুখাবয়বয়বে বিব্রত ভাব তবুও ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে তিনি ডা: তাহের কে উদ্দেশ্য করে বললেন- এমপি সাহেব আপনি খুব বুদ্ধিমান।
মন্ত্রী এরপর আর সে প্রসঙ্গে না গিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। অত:পর আরেক পশলা খাওয়া-দাওয়ার পর সেদিনকার চা-চক্র শেষ হল।
আলোচনার প্রারম্ভিক হিসেবে বাস্তব ঘটনার এই গল্পটি এখানে উল্লেখ করলাম, শ্রেণীমত যার যা বোঝার বুঝে নেবেন।
২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর নেতৃত্ব যারা দিচ্ছেন তাদের কাছে বিনীত প্রশ্ন- কোন অবস্থা, পরিস্থিতি ও উপলব্ধি থেকে এই জোট গঠিত হয়েছিল তা কী আপনাদের স্মরণে আছে?
কী ছিল এই জোট গঠনের উদ্দেশ্য?
প্রায়শ:ই একটি কথা শোনা যায় ২০ দলীয় জোট হলো নির্বাচনী জোট। আসলেই কী তাই?
কোথায় লেখা আছে এটা?
কী ইসলাম কী গায়রে ইসলাম ভিন্ন মতাদর্শের দলগুলো যখন ঐক্যবদ্ধ হয় তখন তাদের মাঝে একটা সমঝোতা স্মারক হয়। আছে কী আপনাদের সেরকম কোন সন্ধিপত্র?
(২)
২০ দলীয় জোটের ভাই-বোনেরা
আসুন আজ লেখার শুরুতেই কোমর বেঁধে তর্ক করার জন্য প্রস্তুতি নিই। যুক্তি, বুদ্ধি ও বিবেক খাটিয়ে বিতর্কের সুবিধার্থে সংক্ষেপে কিছু জানা তথ্য পূণ: আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—
৯০ এর গণ অভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি পায় ১৪০ সীট এবং জামায়াত পায় ১৮ সীট। জামায়াতের নি:শর্ত সমর্থনে বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৯১-৯৬ এই শাসনকালে বিএনপি-জামায়াতের চরম দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বিএনপি কেয়ারটেকার পদ্ধতি কে অস্বীকার করে, ফলে বিএনপি-র বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ-জামায়াত সমন্বিত আন্দোলনে নামে।
তারই কাউন্টার ইফেক্ট হিসেবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতার মসনদে আসীন হয় আওয়ামী লীগ।
সেই নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত ৩০০ আসনে আলাদা আলাদা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। বিএনপি পায় ১১৬ আসন আর জামায়াত পায় ৩ আসন।
বিএনপি হারায় পূর্বেকার ২৪ সীট এবং ক্ষমতা, জামায়াত হারায় ১৫ সীট। মাত্র ৩ সীট পেয়ে জামায়াত একটি বড় রাজনৈতিক ধাক্কা খায়।
তারপরের হিসাব-নিকাশ খুবই সহজ। ফিরে আসে আওয়ামী দূ:শাসন। বিএনপি জামায়াত বুঝতে পারে ক্ষমতার গরম এবং রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির অভাবে তাদের মধ্যকার সম্পর্কের যে তিক্ততা তা তাদের কোথায় নিয়ে এসেছে এবং যাচ্ছে।
জানিনা উভয় রাজনৈতিক দল এর জন্য যথার্থ পর্যালাচনা ও আত্মসমলোচনা করে নিজ নিজ ভুল উপলব্ধি করতে পেরেছিল কিনা! কিন্তু জনগণ বুঝতে পারে এই ভুলের মাশুল শুধরিয়ে এর যথার্থ প্রায়শ্চিত্য করতে হলে উভয় দলকে তাদের দূরত্ব ঘুঁচিয়ে আবার এক হতে হবে।
এরই ফলশ্রুতিতে বহু চেষ্টা, প্রচেষ্টা, ত্যাগ-তিতক্ষার ধাপ পেরিয়ে সেসময় প্রথমে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য এবং তার পথ ধরে পরবর্তীতে ৪ দলীয় রাজনৈতিক জোট গঠিত হয়। যা আজকের রুপান্তরিত ২০ দলীয় জোট।
রাজপথে তখন ঘোষনা করা হয়- স্বৈর আওয়ামী সরকার পতনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন এবং সম্মিলিত সরকার গঠনের লক্ষেই ৪ দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়েছে।
এর ফলাফল কী হয়েছে তা সকলেরই জানা। উভয় দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে ভালো ফলাফল করে জয়লাভ করেছে এবং একসাথে সরকারও গঠন করেছে। এই নির্বাচনে বিএনপি জেতে ১৯৩ আসন এবং জামায়াত জেতে ১৭ আসন।
বিএনপি-জামায়াতের এই জোট আন্দোলন-নির্বাচন ও একসাথে সরকার গঠনের জোট হলেও সাধারণ জনগণ এটাকে গ্রহণ করেছে আধিপত্যবাদ ও স্বৈরতন্ত্র থেকে বাংলাদেশের মুক্তির জোট হিসেবে। ফলে এই ঐক্যবদ্ধতা শুধু রাজনৈতিক নির্বাচনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আইনজীবী সমিতি, ডক্টরস এসোসিয়েশন, শিক্ষক সমিতি, সাংবাদিক ফোরাম, স্থানীয় নির্বাচন এমনকি ক্লাব, মহল্লা, স্কুল, মসজিদ কমিটি পর্যন্ত এই ঐক্য বিস্তৃত হয়েছে।
এখন যাদের মনে প্রশ্ন আসে এ ঐক্যে কে বেশী লাভবান হয়েছে? তাদের কে আমি বলবো যৌথ ব্যবসায় যিনি চেয়ারে বসেন, যিনি বেশীরভাগ শেয়ার হোল্ড করেন লাভ তো তারই বেশী হবার কথা।
আমি বলবো, বিএনপি-জামায়াতের এই ঐক্যে কে বেশী লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই হিসাব মিলাতে গিয়ে
একে অপরের দিকে আঙ্গুল না দেখিয়ে চলুন আঙ্গুলটা নিজের দিকে ঘুরাই। অর্থাৎ আমরা নিজেরা নিজেদের প্রয়োজনেই একজোট হয়েছিলাম এবং এর লাভ ক্ষতির দায়ভার একান্তভাবে আমাদের নিজেদের।
১৯৮০ থেকে আজ ২০১৮ পর্যন্ত দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় বিএনপি বুঝেছে জামায়াত কী জিনিষ, জামায়াত ও বুঝেছে বিএনপি কোন ধরনের দল। উভয় দল বুঝে শুনে একে অপরের সম্পর্কে জেনেই একসাথে জোট করেছে। এমনতো নয় যে বিএনপি দাবী করেছে তারা খুব সুসংগঠিত দল! তাদের নেতা-কর্মীরা খুব আনুগত্য পরায়ন, ত্যাগী! বরং বিএনপি নেতাদের সবসময় বলতে শোনা যায় তাদের দল গণ মানুষের দল এখানে নিয়ম নীতি, শৃংখলা, আনুগত্য পরায়নতা বেশ শিথিল।
পক্ষান্তরে জামায়াত কখনো বলেনি যে তারা বৃহত্তর জনসমর্থিত দল। তারা বিএনপি-র নেতৃত্ব মেনে নিয়ে সবচাইতে বেশী ত্যাগ শিকারের নজীর রাখার চেষ্টা করেছে।
তাহলে সমস্যা টা কোথায়?
সমস্যা হলো আওয়ামীলীগ বুঝতে পেরেছে বিএনপি-জামায়াতের এই ঐক্য যতদিন থাকবে ততদিন জনরায়ে তাদের কোন স্তরেই ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। তাই তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ভন্ডুল করে দিয়েছে। পাশাপাশি সবচেয়ে নাজুক যুদ্ধপরাধ ইস্যু কে সামনে এনে জামায়াত কে দমন এবং বিএনপি কে এই ইস্যুতে বিব্রত করে বিএনপি-জামায়াত এর দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।
জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের তীব্র মনোকষ্ট হলো তাদের উপর ভয়াবহতম জুলুম নিপীড়নে তারা রাজপথে বিএনপি কে সাথে পায়নি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি-র বক্তব্য হলো তাদের বুদ্ধিজীবীরা লিখে, টক-শো তে বক্তব্য দিয়ে, আইনজীবীরা আদালতে আইনী সাহায্য করে, রাজনীতিকরা বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে জামায়াত কে এই জুলুম নিপীড়নে নৈতিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদান করেছে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু হবার কারণে এর বেশী বিএনপি-র পক্ষে করা সম্ভব নয়।
প্রায় সময়ই বিএনপি-জামায়াতের একদল নিষ্ঠাবান কর্মীকে বলতে শোনা যায় এ ঐক্যের আর দরকার নাই। বিএনপি-র কিছু লোক মনেকরেন জামায়াত তাদের জন্য বোঝা। জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হবার কারণে দেশের সুশীল প্রগতিশীলরা তাদের মৌলবাদের সহায়ক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বলে গালি দেয়। আন্তর্জাতিক মহল তাদের একসেপ্ট করতে চায়না।
একইভাবে জামায়াতের কেউ কেউ মনেকরে বিএনপি-র সাথে জোট করার কারণে তাদের উপর এত জুলুম নিপীড়ন হচ্ছে। বিএনপি জামায়াত কে ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে কিন্তু যথাযথ গুরুত্ব ও মর্যাদা দেয়না। আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াত রক্ত দেয় জীবন দেয় কিন্তু বিএনপি-র লোকেরা রাস্তায় নামেনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি মনেকরি বিএনপি জামায়াতের এই পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং অনাস্থা বর্তমান সরকার কে স্বৈরতান্ত্রিক রূপে জেঁকে বসতে সহায়তা করেছে। সরকার বিরোধী আন্দোলন সফল না হওয়ার এটাই অন্যতম কারণ।
বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের মাঝে আজ যে অভিমান ও দূরত্ব এটা প্রশমনের দায়িত্ব কার! উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যদি কার্যকর ভূমিকা না রাখেন তাহলে কী হবে?
উত্তরটা যার যার মত করে ইতিহাস থেকে খুঁজে নিন।
একবার ভাবুন আমরা কী কেবল পেছন দিকে হাঁটবো আর বার বার একই ভুলের পূণরাবৃত্তি করবো! নাকি বাস্তবতা, পরিস্থিতি ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে চিন্তা ও দূরদৃষ্টির সমন্বয়ে নতুন কৌশলে ভিন্ন মাত্রার জাতীয় ঐক্য তৈরী করবো......!(সমাপ্ত)