বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ইসলামী সভ্যতার পতন লগ্নে মুসলমানদের মধ্যে একটি প্রশ্ন প্রকট আকার ধারণ করে। আর সেই প্রশ্নটি হল, 'ইসলাম কি জ্ঞান বিজ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশের পথে বাঁধা নাকি সহায়ক?' এই প্রশ্নে উসমানী খিলাফতের শেষের দিকের সুলতানগণ ইউরোপীয় ধ্যান ধারণাকে গ্রহণ করে নেন এবং তাঞ্জিমাত ফরমানের মাধ্যমে এই ধারণাকে সাংবিধানিক রূপ দান করেন। এই অবস্থা চলতে থেকে ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত। ১৮৭৬ সালে উসমানী খিলাফতের দায়িত্ত্ব গ্রহণ করেন সুলতান আব্দুল হামিদ হান। তিনি তার পূর্ববর্তী সুলতানদের এই সকল অনুকরণকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেন। তিনি প্যান ইসলামীজম বা ইসলামী ঐক্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে ইসলামী সভ্যতাকে বেগবান করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তার এই কাজে সবচেয়ে বেশী প্রেরণা ও শক্তি যোগান প্রখ্যাত আলেম ও বহু ভাষাবিদ আহমেদ জাওদাত পাশা।
উসমানী খিলাফতের সুলতানদের এই পাশ্চাত্যের অনুকরণ প্রিয়তা শুধুমাত্র উসমানী শাসনাধীন অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এই চিন্তা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বিশ্বে। সমগ্র বিশ্বে চালু হয় ২ টি ধারা।
এদের মধ্যে এক শ্রেনী হল, পাশ্চাত্যে অন্ধ অনুকরণ ও অনুসরণ করে পাশ্চাত্য সভ্যতার (!) আলোকে নিজেদেরকে গড়ে তোলা। এই ধারনার লোকেরা পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণকে আধুনিকতা গণ্য করে থাকে। নিজদেরকে যত ইসলামী চিন্তা দর্শন থেকে দূরে রাখতে পারবে ততটাই এলিট হবে বলে চিন্তা করে থাকে।
আর দ্বিতীয় শ্রেনী হল, আমরা আমাদের সভ্যতাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আমাদের পতনের মূল কারণ ইসলাম নয়, বরং ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলেই আমাদের পতন হয়েছে।
দ্বিতীয় ধারণাকে শক্তিশালী ভাবে প্রতিষ্ঠা করেন, আল্লামা ইকবাল, সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী, হাসান আল বান্না, আল্লামা শিবলী নোমানী, আলিয়া ইজ্জেত বেগভিচ সহ আরও অনেক মহান মনিষী।
অপরদিকে প্রথম ধারাকে জনপ্রিয় করে তুলে ওরিয়েন্টালিস্টরা এবং পাশ্চাত্যের জীবন দর্শনের আলোকে গড়ে তোলা বুদ্ধিজীবীদের বিশাল একটি অংশ।
উসমানী খিলাফতের সময়ে প্রথম ধারার পক্ষে ছিল, তানজিমাত ও ইসলাহাত ফরমানের পক্ষের লোকেরা এবং ইত্তেহাদ ও তারাক্কী আন্দোলন। এই আন্দোলন সমূহ মূলত পরিচালিত হত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস এবং লন্ডন থেকে। উসমানী খিলাফতের পতনের পর এই ধারাকে ধরে রাখে আতাতুর্ক পন্থী বামরা এবং ইত্তিহাদ ও তারাক্কী ঘরনার লেখক ও কবি শ্রেনী।
অপরদিকে দ্বিতীয় ধারার পক্ষে উসমানী আমলে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সুলতান আব্দুল হামিদ হান, জাওদাদ সাঈদ, প্রখ্যাত আলেম জাহিদ আল কাওসারী, মুস্তাফা সাবরী এফেন্দী, সাঈদ হালিম পাশা, প্রখ্যাত কবি ও দার্শনিক মেহমেদ আকীফ এরসয় সহ আরও অনেকে। উসমানী খিলাফতের পতনের পর এই পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, বদীঊজ্জামান সাঈদ নুরসী, প্রখ্যাত মুফাসসির এলমালী হামদী ইয়াজার, , জেমিল মেরিচ, নাজিপ ফাযিল কিসাকুরেক এবং সেজাই কারাকোচ সহ আরও অনেকে।
আর এই দ্বিতীয় ধারাকে বিজয় করার জন্য সবচেয়ে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান এবং তার প্রতিষ্ঠিত মিল্লি গরুশ আন্দোলন, মাওলানা মওদুদী ও তার প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী ও ইমাম শহীদ হসান আল বান্না ও তার প্রতিষ্ঠিত ইখওয়ানুল মুসলিমিন।
Copyright
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন