আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ উমার (রাঃ) এর খিলাফত। খীলফা হওয়ারা পূর্বে তিনি ব্যবসা করে, পরিবার পরিজন চালাতেন।
যখন খলীফা নিযুক্ত হলেন, তখন জনসাধারণের ধনাগার (বাইতুলমাল) থেকে, অতি সাধারণভাবে জীবন ধাণের উপযুক্ত অর্থ তাঁকে ও তাঁর পরিবারের জন্য দেয়া হলো। বছরে মাত্র দু‘প্রস্থ পোশাক।
পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যের শক্তি যাঁর কাছে নত,ভয়ে প্রকম্পমান, সেই দোর্দন্ড প্রতাপ খলীফা উমার সামান্য অর্থ পান জীবনধারণের জন্য!
হযরত আলী, উসমান ও তালহা (রাঃ) ঠিক করলেন খলীফার এ মাসোহারা যথোপযুক্ত নয়, আরও কিছু অর্থ বাড়িয়ে দেয়া হোক।
কিন্তু কে এই প্রস্তাপব খলীফা উমারের কাছে পেশ করবে! অবশেষে উমারের কন্যা ও রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রী হাফসা (রাঃ) কে তাঁর কাছে এই প্রস্তাব উত্থাপন করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
হাফসা (রাঃ) পিতার নিকট এই প্রস্তাব তুলতেই, খলীফা উমার (রাঃ) তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। রুক্ষস্বরে তিনি প্রশ্ন করলেন, “কারা এই প্রস্তাব করেছে?” হাফসা নিরুত্তর বাকরুদ্ধ।
পিতাকে তিনি কি উত্তর দেবেন? সাহস হলোনা।খলীফা বললেন, “যদি জানতাম কারা এই প্রস্তাব তোমার মারফতে পাঠিয়েছে। তবে তাদের পিটিয়ে আমি নীল সাগরে ভাসিয়ে দিতাম।
বেটি, তুমি তো জান! কী পোশাক রাসুল (সাঃ) পরিধান করতেন! কীরূপ খাদ্য তিনি গ্রহণ করতেন! কী শয্যায় তিনি শয়ন করতেন! বলতো, আমার পোশাক, আমার খাদ্য, আমার শয্যা কী তার চাইতে নিকৃষ্ট?”
হাফসা উত্তর দিলেন, “না”।
খলীফা বললেন, “তবে যারা এই প্রস্তাব করে পাঠিয়েছে, তাদের বলো - আমাদের নবী জীবনের যে আদর্শ স্থাপন করে গেছেন তা থেকে আমি এক চুল পরিমান ও বিচ্যুত হবো না।” যে আগুন ছড়িয়ে দিয়েছেন এ ধরায়।
সহজ অনাড়ম্বর ও নিঃস্বার্থ জীবন যাপন সত্যিকাকর মানুষের আদর্শ—সংযত ও সুনিয়ন্ত্রিত যার জীবন নয়, সে কি করে শহীদের রক্তাক্ষরে লেখা সত্যের জীবনকে গ্রহণ করতে পরে?
সেই খলীফা উমার ও এক দিন আততায়ীর হাতে নিহত হন।
খলীফা উমার শহীদ হয়েছেন কবে! কিন্তু সত্যের নির্ভীক সাধক শহীদ উমার (রাঃ) আজও বেঁচে আছেন, দেশ ও জাতির দিগদর্শন রূপে।
একদিন উমার (রাঃ) এর ছেলে,মক্তব থেকে ফিরে এসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।
উমার (রাঃ) তাকে টেনে কোলে নিলেন, জিজ্ঞাসা করলেন, কাঁদছ কেন বাবা?
ছেলে উত্তর দিলেন, “সবাই আমাকে টিটকারী করে, হাসি তামাসা করে” বলে, “দেখ তোমার জামার ছিরি, চৌদ্দ জায়গায় তালি।"
"তোমার বাবা তো মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা” এই বলে ছেলেটি তার কান্নার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিল।
ছেলে কথা শুনে উমার (রাঃ) ভাবলেন কিছুক্ষন।
তারপর বাইতুল মা’লের কোষাধ্যক্ষকে চিটি লিখে পাঠালেন, “আমাকে আগামী মাসের ভাতার সাথে চার দিরহাম ধার দেবেন।”
কিন্তু একি উত্তর! উত্তরে কোষাধ্যক্ষ তাঁকে লিখে জানালেন,
“আপনি ধার নিতে পারেন। কিন্তু আগমী কালের পর আপনি বেঁচে থাকবেন এটার গ্রান্টি কী! কাল যদি আপনি মারা যান তাহলে কে আপনার ধার শোধ করবে?”
উমার (রাঃ) ছেলের গা-মাথা মুছে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, “যাও বাবা, যা আছে তা পরেই মক্তবে যাও।
আমাদের তো আর অনেক টাকা পয়সা নেই।
আমি খলীফা সত্য, কিন্তু ধন সম্পদ তো সবই জন সাধারণের।
অধ্যাপক শামছুদ্দিন আহমেদ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন