আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ : ২৩ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা। তিনি গতকাল রোববার তার অনুসারীদের নিয়ে নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ মহানগর জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে পৃথক পৃথক সভা-সমাবেশ করেছেন।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত জামায়াতে ইসলামী দুই প্রার্থী খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মনোয়ন দেয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করা হলে ধানের শীষ প্রতীক নেয়া প্রার্থীদেরকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবেন বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
খুলনা জেলা বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমের ই-মেইল বার্তায় উল্লেখ করা হয়, খুলনা-৬ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনাকে দাবি করেছেন স্থানীয় কয়রা-পাইকগাছা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
তাদের দাবি, এখানে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি শক্ত ভিত্তির ওপর দাড়িয়ে আছে। উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচনের ফলাফলে বিএনপির প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। অপরদিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা অভিযুক্ত এবং নাশকতাসহ নানা অভিযোগে দলটির তৃণমূল বিপর্যন্ত হয়ে পড়ায় সাংগঠনিকভাবে তারা দূর্বল হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া অসম্ভব। একই সাথে খুলনা-৫ আসনেও জামায়াত নয়, বিএনপির প্রার্থী দাবি করেছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিমত, বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কৌশলের অবলম্বন নিয়ে একবারমাত্র এই আসনে জামায়াত প্রার্থী নির্বাচিত হলেও তারা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করেছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর। এরপর জামায়াত প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হয়ে বিএনপির উপকারের পরিবর্তে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। চার দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকলেও বিএনপির ২৩ নেতাকর্মী খুন, দুই শতাধিক আহত ও পঙ্গু, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পক্ষান্তরে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে নানানভাবে আর্থিক ক্ষেত্রে লাভবান হয়েছে জামায়াত। যে কারণে এবারের ভোটে তারা ধানের শীষ প্রতীক জামায়াতের হাতে তুলে দিতে নারাজ। তাদের দাবি বিএনপির টিকিট পাওয়া এই আসনের সাবেক এমপি ডাঃ গাজী আব্দুল হক কিংবা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমানকে বিএনপির প্রার্থী করতে হবে।
রোববার দুপুরে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে বিএনপি কার্যালয়ে ডুমুুরিয়া উপজেলা বিএনপির এবং পরে একই স্থানে অনুষ্ঠিত কয়রা উপজেলা বিএনপির পৃথক দুই সভা থেকে এই দাবি ওঠে। কেন্দ্র থেকে দাবি মানা না হলে বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা কঠোরতর কর্মসূচি, এমনকি ধানের শীষ প্রতীক নেয়া বহিরাগতদেরকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবেন বলে জানান।
ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভায় সভাপতিত্ব করেন খান আলী মুনসুর। ওহিদুজ্জামান রানার পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন গাজী তফসির আহমেদ, মনিরুল হাসান বাপ্পী, মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ, মুর্শিদুর রহমান লিটন, শামীম কবির, তৈয়েবুর রহমান, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি, শেখ হাফিজুর রহমান, আবুল বাশার, জহুরুল হক, হারুনর রশিদ, ইসমাইল হোসেন, নাদিমুজ্জামান জনি, সরোয়ার হোসেন, ওয়াহিদুজ্জামান নান্না, কবির হোসেন, জহুর আকুঞ্জী, ফজলুল করিম সেলিম, মোল্লা আইযুব হোসেন, শফিকুর রহমান, এম এম জাফর, হালিম শেখ, মোল্লা মশিউর রহমান, শফিক আহমেদ মেজবা, নজরুল মোল্লা, আল শাকিল, আহাদ আলী শেখ। সভা থেকে ইঞ্জিনিয়ার মনির হাসান টিটোর ওপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা এবং হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এদিকে কয়রা উপজেলা বিএনপির নির্বাহী সভায় সভাপতিত্ব করেন এডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম। নুরুল আমিন বাবুলের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন এডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা। বক্তব্য রাখেন মনিরুজ্জামান মন্টু, কামরুজ্জামান টুকু, এডভোকেট কে এম শহিদুল আলম, মুর্শিদুর রহমান লিটন, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি, মশিউর রহমান যাদু, জাফরী নেওয়াজ চন্দন, মনিরুজ্জামান বেল্টু, সরদার মতিয়ার রহমান, জসিমউদ্দিন লাবু, জাবির আলী, ডি এম নুরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি, মঞ্জুরুল আলম নান্নু, মনিরুজ্জামান মনি, রফিকুল ইসলাম মিস্ত্রি, জি এম রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, জি এম সিরাজুল ইসলাম, লিটন মোল্লা, রেজাউল ইসলাম রেজা, আব্দুর রহমান, ফয়জুল করিম মোল্লা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ২০০১ সালের নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে তৎকালীন চারদলীয় জোটের ব্যানারে খুলনা মহানগরী জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতাত্তোর ওই বারই ছিল আওয়ামী লীগের বাইরে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার এই আসনে প্রার্থী ছিলেন।
অপরদিকে খুলনা-৬ আসনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস নির্বাচিত হন। এছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোটের ব্যানারে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় এ দু’টি আসনে বিএনপির নেতারা প্রার্থী হওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। তবে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত জামায়াতে ইসলামীর এই দুই প্রার্থীর চিঠি দেখে বিএনপির মধ্যে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তারা তাদের প্রার্থী বাতিল করে দলীয় প্রার্থী দেয়ার আন্দোলন শুরু করেছে।
২৩ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জামায়াতে ইসলামীকে ২৫টি আসন ছেড়ে দেয়ার মধ্যে খুলনার এ দু’টি আসন থাকায় প্রার্থীদের পক্ষে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে।