বিজ্ঞাপন দিন

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই ঈদ উত্তর সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। ব্যাংক খোলা এবং যথারীতি ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এই গ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। ঢাকার সবুজবাগ থানার রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১:b>ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার

মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৯

এক বছরেই পাচার ৫০ হাজার কোটি টাকা: জিএফআই



আমাদের বাংলাদেশ নিউজ24 ডেস্কঃ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫৯০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০০৬ থেকে এক দশকে পাচারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। আমদানি-রপ্তানির সময়ে পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করার মাধ্যমেই এই অর্থের বড় অংশ পাচার করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) এর বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বিশ্বজুড়ে অর্থপাচার নিয়ে প্রায় এক দশক ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে জিএফআই। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ১৪৮ উন্নয়নশীল দেশের টাকা পাচারের চিত্র। ২০১৫ সালে মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের তুলনায় পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৫ ভাগ।
জিএফআই’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় ৫৯০ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২০ ভাগই পাচার হয়েছে নানা কৌশলে। জিএফআই’র হিসাবে, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০৯ কোটি ডলার বা ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাংলাদেশের মোট বাজেট ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের মোট বাজেটের চেয়েও বেশি টাকা ১০ বছরে পাচার হয়েছে।
মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কত শতাংশ পর্যন্ত অর্থ পাচার হয়েছে, সেই তথ্য প্রকাশ করেছে জিএফআই। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দুটি হিসাবই রয়েছে। পাশাপাশি অবৈধভাবে কী পরিমাণ অর্থ দেশের ভেতরে এসেছে, সেই তথ্যও প্রতিবেদনে দেয়া রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তাদের দেয়া অর্থ পাচারের সব হিসাবই রক্ষণশীল, অর্থ পাচারের প্রকৃত পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৪ সালে দেশ থেকে পাচার হয় ৮৯৭ কোটি ডলার। অঙ্কের হিসাবে ২০১৫ সালে এর পরিমাণ কমলেও জিএফআই বলছে, এটি আনুমানিক হিসাব। প্রকৃত পাচারের পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। পাচারের পাশাপাশি ২০১৫ সালে অবৈধভাবে দেশে এসেছে ২৮০ কোটি ডলার।
সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুসারে, টাকার অঙ্কের দিক দিয়ে ২০১৫ সালে অর্থপাচারে শীর্ষ ৩০ দেশের একটি ছিল বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। এশিয়ার ৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পরেই রয়েছে ফিলিপাইন। দেশটি থেকে পাচার হয়েছে ৫১০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের আগে রয়েছে ভারত। দেশটি থেকে ৯৮০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এর আগে আছে মালয়েশিয়া। দেশটি থেকে পাচার হয়েছে ৩৩.৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনে অবৈধভাবে দেশের বাইরে অর্থ পাচারের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে সাউথ আফ্রিকা। দেশটি থেকে পাচার হয়েছে ১০.২ বিলিয়ন ডলার। এর পর রয়েছে নাইজেরিয়া (৮.৩ বিলিয়ন), তুরস্ক (৮.৪ বিলিয়ন), হাঙ্গেরি (৬.৫ বিলিয়ন), পোলান্ড (৩.১), মেক্সিকো (৪২.৯ বিলিয়ন), ব্রাজিল (১২.২ বিলিয়ন), কলম্বিয়া (৭.৪ বিলিয়ন), চিলি (৪.১ বিলিয়ন)।
মূল প্রতিবেদনে ১৪৮টি দেশের অবৈধ অর্থ প্রবাহের তথ্য দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, তার ২৪ শতাংশই হয় উন্নয়নশীল দেশ থেকে। আর প্রতিবছরই অর্থ পাচারের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। মূলত আর্থিক খাতে স্বচ্ছতার অভাবেই অর্থ পাচার বাড়ছে। জিএফআই বলছে, টাকা পাচারের এ প্রবণতা টেকসই উন্নয়নের বড় বাধা।
জিএফআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ২০১২ সালে অর্থ পাচারের পরিমাণ ৭২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ২০১৩ সালে ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ও ২০১৪ সালে ৭০০ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এ ছাড়া ২০০৫ সালে ৪২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার, ২০০৬ সালে ৩৩৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ২০০৭ সালে ৪০৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ২০০৮ সালে ৬৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২০০৯ সালে ৬১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ২০১০ সালে ৫৪০ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং ২০১১ সালে পাচার হয় ৫৯২ কোটি ১০ লাখ ডলার।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক তদন্তে দেখা গেছে, শিল্পের যন্ত্রপাতি ভর্তি কনটেইনারে পাওয়া গেছে ছাই, ইট, বালি, পাথর ও সিমেন্টের বক। এতে শিল্পের কোনো যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বন্দরে শুল্ক গোয়েন্দাদের তদন্তে খালি কনটেইনার আমদানির ঘটনাও ধরা পড়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যখন আস্থার সংকটে ভোগেন তখনেই মূলধন বিদেশে নিয়ে যান অনৈতিক পন্থায়। দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে যাওয়াও এটি একটি কারণ বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কমে যাওয়ার অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে অর্থ পাচার। এ ছাড়া দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণেও অর্থ পাচার বাড়ছে। তার মতে, অর্থ পাচার রোধ করতে হলে দুর্নীতি কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। নাগরিক জীবনেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, টাকা পাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় কাজ করছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে যেসব আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন রয়েছে, আমরা তা পুরোপুরি মেনে চলছি। আন্তর্জাতিকভাবে যেসব তথ্য আসছে, তা সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরবরাহ করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে চেষ্টায় কোনো ত্রুটি নেই।

সৌদিতে বন্যায় রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে !

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ ভারী বৃষ্টিপাতে সৌদি আরবে বন্যা লেগে গেছে। দেশটির রাজাধানী রিয়াদসহ বিভিন্ন অঞ্চল তুলিয়ে গেছে পানিতে। এছাড়া বেশ কতোগুলো স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বন্যা কবলিতদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। সেইসঙ্গে আবহাওয়া খারাপ বলে সতর্কতাও জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২৭ জানুয়ারি) থেকে উপসাগরীয় এ দেশটিতে ভারী বৃষ্টিপাত এবং ধুলোঝড় শুরু হয়। আর এই পানি জমে রিয়াদের প্রধান প্রধান সড়ক তলিয়ে যায়। বিঘ্ন ঘটে মানুষের চলাফেরায়ও।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, রোববার এবং সোমবার (২৮ জানুয়ারি) সৌদির উত্তরাঞ্চলীয় এবং পশ্চিমাংশে প্রবল বর্ষণ হয়। তখন মরভূমির বালি উড়ে আকাশচুম্বী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাতে এক রকম অন্ধকার হয়ে পড়ে পুরো অঞ্চল।
মরভূমির দেশে আকস্মিক বন্যার কারণে তাবুক, আরার ও আল-জাওয়াফে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসব শহরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও হচ্ছে মাঝে মাঝে।
দেশটির সিভিল ডেফেন্সের মুখপাত্র মুহাম্মদ মেজর আল হাম্মাদি জানিয়েছেন, রিয়াদ, মক্কা, উত্তর সীমান্ত অঞ্চল, হাইল, তাবুক, কাশিম, মদিন, পূ্র্ব প্রদেশ, আসির, জাজান এবং আল-জাওয়াফ বিরূপ আবহাওয়ার কবলে পড়েছে। এসব অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী ঝুঁকি নিরসনের চেষ্টা করছে। বিভিন্ন উপত্যকা এবং বিপজ্জনক এলাকাগুলোতে তাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, তাবুকের বন্যা কবলিত এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই ৬৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে দুবা থেকে ৩৭ জনকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিলম্ব হতে পারে বলে যাত্রীদের নজর রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া ফ্লাইট বাতিলেরও আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৯।
#banglanews24.com

শনিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৯

ইস্তাম্বুলের বিজয় এবং কিছু কথা -প্রফেসর ড. নাজিমুদ্দীন এরবাকান

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ আজ নতুন একটি যুগের এবং নতুন একটি বিজয়ের প্রয়োজন। যার জন্য সমগ্র মানবতা আজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নতুন একটি শান্তিময় দুনিয়া গঠন করার জন্য আমাদের এই মুসলিম জাতি পুনরায় নেতৃত্ব দেবে। সম্মানিত একটি জাতির এবং সম্মানিত একটি ইতিহাসের উত্তরাধিকারীগণ এই বিজয়ের পতাকাবাহী হিসেবে কাজ করবে।
ইস্তাম্বুল বিজয়ের খুব বেশি আগে নয় মাত্র ৫০ বছর পূর্বে ১৪০০ সালের শুরুর দিকে তইমুর লং যখন আনাতলিয়াতে আক্রমণ করছিল তখন সবাই ভেবেছিল যে সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। মুসলিমবিশ্ব সবচেয়ে বড় দুর্দশায় নিপতিত হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে আমাদের এই জাতি সব কিছুকে সাজিয়ে গুছিয়ে, ইস্তাম্বুলের বিজয়ের মধ্য দিয়ে একটি যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন এক সোনালি যুগের সূচনা করেছিল। তেমনিভাবে আজও একটি নতুন যুগের নতুন একটি বিজয়ের প্রয়োজন। কিন্তু এর জন্য ইস্তাম্বুলের বিজয়কে খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
আমাদের প্রিয়নবী মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ সা: এই হাদিসের মাধ্যমে আমাদেরকে ইস্তাম্বুুল বিজয়ের সুসংবাদ দান করেছিলেন।
অর্থাৎ অবশ্য অবশ্যই ইস্তাম্বুল বিজিত হবে। সেই বিজয়ের সেনাপতি কতই না উত্তম সেনাপতি আর সেই বিজয়ের সৈনিকগণ কতই না উত্তম। (মুসনাদে আহমাদ)
এই হাদিস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। কী বলা হয়েছে এই হাদিসে? ‘লাতুফতাহান্নাল কন্সতান্তিনিয়্যাতা’ এই কথা বলা হয়েছে। এখানে লামে তাকিদ এবং নুনে সাকিলা এর দ্বারা বক্তব্যকে জোরালো করা হয়েছে। অর্থাৎ ইস্তাম্বুল অবশ্য অবশ্যই বিজিত হবে। বিজয়ের জন্য মৌলিক শর্ত হলো এমন দৃঢ়বিশ্বাস। অর্থাৎ যদি বিজয় করতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে। দৃঢ়ভাবে এবং সন্দেহাতীতভাবে আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে। মুহাম্মদ সা: “অবশ্যই অবশ্যই বিজয় হবে”- এই কথা বলার কারণে মুসলমানগণ এই সম্মানের অংশীদার হওয়ার জন্য বহুবার বিজয়াভিযান পরিচালনা করেছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের মধ্য থেকে এই মহান সম্মান, সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহকে নসিব করেছেন।
সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ তার বাল্যকাল থেকেই ইস্তাম্বুল বিজয়ের স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। এই হাদিস শরিফে বর্ণিত এই বিরল সম্মানের অংশীদার হওয়ার জন্য তিনি রাতদিন কঠোর সাধনা করেছিলেন। বলতে গেলে, ইস্তাম্বুুল বিজয়ের জন্য সুলতান ফাতিহ পাগলপারা হয়ে গিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও তাঁকে এই মহান সম্মানের ভাগীদার করেছিলেন।
সুতরাং আমরা যে দাওয়াত এবং আন্দোলনকে বিশ্বাস করি সেই আন্দোলনকে তার লক্ষ্যপানে পৌঁছানোর জন্য আমাদেরকেও সেই আন্দোলনের জন্য পাগলপারা হতে হবে।
সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ সিংহাসনে সমাসীন হওয়ার সাথে সাথেই দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে ইস্তাম্বুুলের বিজয়ের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর শহর ইস্তাম্বুলের বিজয়ের জন্য তিনি সকল কিছুকে সুসংহত করেছিলেন। ২ লাখ সৈন্যের অংশগ্রহণে এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন। এর পাশাপাশি তিনি প্রচুর পরিমাণে আগুনের গোলা তৈরি করেন। এগুলো ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি। “ঈমান খাসি ছাগল থেকেও দুধ করতে পারে।” এই কথার ওপর আস্থা রেখে পাহাড়ের ওপর দিয়ে জাহাজ চালিয়েছিলেন।
যদি একটি বিজয় চাই তাহলে ঈমান, আত্মবিশ্বাস, আগ্রহের পাশাপাশি সেই সময়ের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী হতে হবে এবং সবচেয়ে উন্নত পন্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৪৫৪ সালের ৬ এপ্রিল বাইজান্টাইন সম্রাটকে আত্মসমর্পণের আহবান জানান। এটা হলো মুসলমানদের মূলনীতি। রক্তপাত যাতে না হয় এই জন্য তিনি এই আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাইজান্টাইনগণ এটাকে গ্রহণ না করে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সুলতান ফাতিহও আক্রমণের নির্দেশ দান করেন। এর আগে তিনি তার সকল সেনাবাহিনীকে নিয়ে নামাজ আদায় করেন এবং বিজয়ের জন্য মহামহিম সম্রাট আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে দোয়া করেন। দোয়া করার সময় অসহায় এক বান্দার মতো আকুতি মিনতি করে দোয়া করেন।
দোয়া করার পর সেনাবাহিনীকে আক্রমণের নির্দেশ দিয়ে, তিনি তার ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করার সময় পাহাড়সমূহকে কাঁপিয়ে দিচ্ছেন এমন এক নরশার্দূলের ন্যায় তাঁকে দেখা যাচ্ছিল।
ইয়া আল্লাহ! কত বিশাল এক যুদ্ধ, কত বড় উদ্যম, কত মহান এক প্রয়াস। ২৯ মে ফজরের সময় প্রাচীরগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। ইস্তাম্বুুলের বিজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। বাইজান্টাইনের প্রাচীরে সর্বপ্রথম ইসলামের পতাকা উত্তোলন করার ভাগ্য উলুবাতলি হাসানের হয়েছিল। সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহর সেনাবাহিনী ভেঙে ফেলা প্রাচীরের ভেতর দিয়ে তীব্রতার সাথে স্রোতের মত ইস্তাম্বুলে প্রবেশ করেছিল। এইভাবে একটি যুগের পতন হয়ে অন্য যুগের সূচনা হয়েছিল। ইস্তাম্বুল বিজয় হওয়ার পর বিজয়ী সেনাপতি সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ আল্লাহ তালার শুকরিয়া আদায় করার জন্য আয়াসুফিয়াকে (ঐধমরধঝঁভরুধ) মসজিদে রূপান্তরিত করেন এবং ২ রাকাত শুকরানা নামাজ আদায় করেন। এর পর তিনি হজরত আইয়ুব আল আনসারির কবর জিয়ারত করতে যান। এইভাবে সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ এত বড় বিজয়ের পর অত্যন্ত বিনয়ী হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া জ্ঞাপনের এক অনুপম দৃষ্টান্ত পেশ করেন।
আজ আমরা মুসলিম হিসেবে, প্রাচীরের সামনে অবস্থানকারী সেনাবাহিনীর মত। আমরা আজ নতুন এক বিজয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছি। আগামী দিনের বিজয়ের জন্য নতুন উদ্দামে লড়ে যাচ্ছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি তিনি আমাদেরকে এমন মর্যাদাসম্পন্ন একটি জাতির উত্তরাধিকারী করেছেন। ইস্তাম্বুলের বিজয় থেকে আমরা যে সকল শিক্ষা নিতে পারি এর মধ্যে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো হজরত আইয়ুব আল আনসারি রা:।
জিহাদের ঘোষণা শুনার সাথে সাথে হজরত আইয়ুব আল আনসারি রা:, কুরআনে কারিম বন্ধ করে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ান। তার সন্তানগণ তাঁকে এই বলে বাধা দেন, “বাবা তুমি বস, বসে বসে কুরআন পড়, নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিও না।” উত্তরে তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, “হে আমার প্রিয় সন্তানরা, তোমরা আমাকে বলছ তুমি বস বসে কুরআন পড়। কিন্তু আমি যখন কুরআন পড়ি, কুরআন তখন আমাকে বলে উঠে দাঁড়াও জিহাদ কর।
এই মহান সাহাবী ৯০ বছর বয়সে ইস্তাম্বুলের প্রাচীরের কাছে আসেন। তার বয়সের কারণে তার নিরাপত্তার জন্য সৈন্যগণ তাঁকে তাদের পেছনে রাখতে চেয়েছে কিন্তু তারা তাঁকে তা করতে পারেনি। যুদ্ধের সেই কঠিন মুহূর্তে আগুন এবং তীরের নিচে দাঁড়িয়ে তিনি সৈন্যদেরকে “দুনিয়াবি কাজে মশগুল হয়ে জিহাদ থেকে দূরে থেকে নিজেদেরকে হুমকির মুখে ঠেলে দিও না” এই আয়াতটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তরুণ সৈন্যদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিয়েছিলেন। এত ত্যাগ তিতিক্ষার পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বাইজান্টাইনের প্রাচীরের পাদদেশে তাঁকে শাহাদাত নসিব করেন।
“ইসলাম কেমন একটি দ্বীন?” এই বিষয়ে যদি কেহ উৎসাহ বোধ করেন সে যেন ৯০ বছর বয়সে ইস্তাম্বুল বিজয়ের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করতে আসা হযরত আইয়ুব আল আনসারি রা:-এর দিকে তাকায়। ইসলামের মূল রূপ হলো এটা। দ্বীন ইসলাম হলো, জিহাদের দ্বীন। এই জন্য আপনারা শুধুমাত্র নামাজ পড়বেন, তাসবিহ তাহলিল পাঠ করবেন এই কথা বলা হলো মূর্খতা। যদি তাই হতো এই মহান সাহাবী, রাসূল সা: মদিনায় হিযরত করার পর যার ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তিনি মদিনা থেকে পৃথক না হয়ে সেখানে সবচেয়ে সুন্দর পদ্ধতিতে নামাজ পড়তেন এবং তাসবিহ তাহলিলে মশগুল থাকতেন।

ইস্তাম্বুুলের বিজয়ের জন্য হযরত আকশেমসেদ্দিনের ভূমিকাও অনেক বিশাল। তাকেও আমাদেরকে আমাদের আদর্শ হিসেবে স্মরণ করতে হবে। তিনি ছিলেন একজন বড় আলেম। ইস্তাম্বুুলের বিজয়াভিযানে তিনি আমাদের জন্য এক অনুপম দৃষ্টান্ত। ফাতিহর একজন উস্তাদ হিসেবে, প্রতিটি গুহায় গিয়ে গিয়ে তিনি সৈন্যদেরকে উৎসাহ উদ্দীপনা জুগিয়েছিলেন।
সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ যখন ইস্তাম্বুল বিজয় করেছিলেন তখন তিনি ছিলেন ২১ বছরের একজন টগবগে যুবক। ইস্তাম্বুলের বিজয় যেমন অনেক বড় এবং মহান একটি ব্যাপার ঠিক তেমনিভাবে যারা ২১ বছর বয়সে এই বিজয়ের জন্য ঈমানের বলে বলীয়ান কাজ করেছেন তারাও তেমন মহান এবং মর্যাদাবান। একটি দেশের আসল শক্তি ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অর্থবিত্ত নয়। বরং একটি দেশের আসল শক্তি হলো ঈমানের বলে বলীয়ান যুবসমাজ।

শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৯

গুজরাটে মুসলিমদের ওপর গণহত্যা: দণ্ডিত ৪ জনকে জামিনে মুক্তি দিল ভারতের আদালত

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ ডেস্কঃ ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার অন্যতম বড় ঘটনা নারোদা পাটিয়ায় অভিযুক্ত চারজনের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করল সুপ্রিম কোর্ট। চার অভিযুক্ত উমেশভাই ভারওয়াদ, রাজকুমার, হরশাদ ও প্রকাশভাই রাঠোর সন্ত্রাস ও দাঙ্গার অভিযোগে হাইকোর্টে ১০ বছরের কারাদন্ডের দণ্ডিত হয়েছিল।
গত মঙ্গলবার তাদের জামিন দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেন, হাইকোর্ট যেভাবে সাজা দিয়েছিল তাতে কিছু প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। “হাইকোর্টের সাজা বিতর্কিত” বলে উল্লেখ করে তারা সাজা পরিবর্তন করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত বাবু বজরঙ্গিসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের জামিনের আবেদনের শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, গোধরা ট্রেন জ্বালিয়ে ৫৯জন হিন্দু যাত্রীকে খুন করার ঘটনার প্রতিবাদে আমেদাবাদের নিকটবর্তী নারোদা পাটিয়াতে ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে প্রায় ৯৭ জন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ খুন হন।
গত বছর জুন মাসে গুজরাট হাইকোর্ট অভিযুক্তদের অপরাধ বিচার করে ১০ বছরের জেল হেফাজতের সাজা দিয়েছিল।
হাইকোর্ট বাবু বজরঙ্গি সহ ১৬জনের সাজা ঘোষণা করেছিল। বাকি ১৮ জনকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহ করেছে। তাদের মধ্যে বিজেপি নেত্রী মায়া কোদনানির নাম উল্লেখযোগ্য।
“ঘটনায় যারা স্বজন হারিয়েছে তাদের দুঃখ কষ্ট কোর্ট অস্বীকার করছে না এবং একই সঙ্গে এই ঘটনায় যে সামাজিক প্রভাব আছে সেটাও আদালতের নজরে রয়েছে”, ২৫শে জুন জানিয়েছে আদালত।
রায় ঘোষণার সময় হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, “এই মামলার সাজায় যদি নমনীয় মনোভাব দেখানো হয় তাহলে সত্যের অপলাপ হয়। তাই এই ঘটনার কড়া শাস্তিই প্রয়োজন।”
কোর্ট আরও জানিয়েছিল, “এই ধরনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না হলে সমাজের স্বার্থ বিঘ্নিত হবে।”

রোহিঙ্গাদের সেবা দিয়ে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসক 'ফাহাদ, নিহত

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ রোহিঙ্গাদের সেবা দিয়ে ফেরার পথে চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় এক চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। নিহত ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদ (৩৫) পবিত্র কুরআনের হাফেজ ছিলেন। তার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায়। তিনি নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় থাকতেন।
দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের পরিদশর্ক মিজানুর রহমান জানান, বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার সড়কে ওই চিকিৎসকের মোটরসাইকেলে হানিফ পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কা দেয়। সাতকানিয়ার হাসমতের দোকান এলাকায় এ দুঘর্টনা ঘটে। বাসটি আটক করা হলেও চালক পালিয়ে গেছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত জোবাইদুল হক ফাহাদ কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিলেন। তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন শেষে মোটরসাইকেলে করে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন।
ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদের মৃত্যুতে মেডিভয়েস পরিবার শোকাহত।
ডা. ফাহাদ চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আইডিয়াল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫৩তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। এছাড়াও তিনি লাইটার ইয়ূথ ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বপালনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বিয়ের আসরে বসা হলো না ডা. ফাহাদের
তিন ভাইবোনের মধ্যে হাফেজ ডা. ফাহাদ ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। ডা. ফাহাদেরও আকদ সম্পন্ন হয়েছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে পাস করা ডা. জান্নাতুন নাঈমের সঙ্গে। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার প্রস্তুতি ছিল। ঠিক ওই সময়ই আসলো এমন দুঃসংবাদ।
তার জমজ ভাই জিয়াউল হক ফয়সাল আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। তাঁর একমাত্র ছোট বোন ফারহা আয়েশারও বিয়ে হয়েছে।
আল্লাহ প্রিয় ডাক্তার সাহেবকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুক। আমীন
সূত্রঃ স্বাস্থ্য তথ্য-Health Tips এর টাইমলাইন

বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৯

মালয়েশিয়ার নতুন রাজা সুলতান আব্দুল্লাহ।


আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ আকস্মিক ঘোষণায় পঞ্চম সুলতান মোহাম্মদের পদত্যাগের পর মালয়েশিয়ার রাজপরিবার সুলতান আব্দুল্লাহ সুলতান আহমাদ শাহকে নতুন রাজা হিসেবে নির্বাচিত করেছে।
প্যাহাং রাজ্যের শাসক ৫৯ বছর বয়সী সুলতান আব্দুল্লাহ আগামী ৩১ জানুয়ারি পাঁচ বছরের জন্য সিংহাসনের আরোহণ করবেন।
বৃহস্পতিবার তার জিম্মদার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে পাহাংয়ের শাসক হিসেবে অসুস্থ বাবার স্থলাভিষিক্ত হন সুলতান আব্দুল্লাহ
এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রাতিষ্ঠানিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে আরও জোর দেবেন বলেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গত বছরের মে মাসে নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিজয়ী হওয়ার পর দেশটির ক্ষমতায় নজিরবিহীন পরিবর্তন আসে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে রাজতন্ত্রের প্রতীকী গুরুত্ব। কারণ দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়দের কাছে রাজতন্ত্র ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় নৃতাত্ত্বিক চীনা, ভারতীয় আদিবাসীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য কেলান্তানের শাসক হিসেবেই থেকে যাচ্ছেন রাজা পঞ্চম মোহাম্মদ। সিংহাসন ছাড়ার আগ পর্যন্ত দুই মাস তিনি চিকিৎসা ছুটিতে আছেন। পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পদত্যাগ করা কোনো প্রথম রাজা হলেন তিনি।
গত মে মাসে মালয় সরকারের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের তত্ত্বাবধান করেন তিনি। মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আনোয়ার ইব্রাহীমকে ক্ষমা করে দিয়ে তাকে কারামুক্ত করেন পঞ্চম মোহাম্মদ।
১৯৫৭ সালের ব্যবস্থা অনুসারে রাজকীয় পরিবারের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে সিংহাসনের আরোহন করেন। রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে প্রতিটি সুলতান পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকেন।
#insaf24.com

রাশিদ ঘানুশির চিন্তাধারা : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সেকুলার হওয়ার প্রয়োজন নেই

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ তিউনিশিয়ার বিখ্যাত রাজনীতিবিদ দার্শনিক রাশিদ ঘানুশি ছিলেন সমসাময়িক মুসলিম বিশ্বের একজন মেধাবী ও সৃজনশীল চিন্তাবিদ। তিউনিশিয়া মূল ধারার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শীর্ষ নেতা রাশিদ ঘানুশি মনে করেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষকে সেকুলার হওয়ার প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক উন্নয়নের, আইন, শাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সেকুলার, বাম, জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামপন্থীদের সাথে সমন্বয় করা খুবই জরুরী। মুসলিম বিশ্বের অবিসাংবাদিত নেতা এবং তিউনিশিয়া বিরোধীদলীয় ‘আন নাহাদা পার্টির কো প্রতিষ্ঠাতা দার্শনিক মুসলিম চিন্তাবিদ রাশিদ ঘানুশি গণতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্রে ইসলাম ও জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করেন। তাঁর যৌথ প্রতিষ্ঠিত দল ১৯৭২ সালে ‘ইসলামী দল’ (আল জামায়াহ আল ইসলামিয়্যাহ) নাম দিয়ে তিউনিশিয়ায় প্রথম ইসলামী আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর ১৯৮১ সালে এটি ‘ইসলামী ধারার আন্দোলনে’ (হারাকাত আল ইতিজাহ আল ইসলামী) পরিণত হয়। সর্বশেষ, ১৯৮৯ সালে এটি ‘রেনেসাঁ আন্দোলনে’ (হারাকাত আন নাহদা) পরিণত হয়। মোটাদাগে, এই তিনটি সংগঠন ইসলামী আদর্শের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ধরনকে ধারণ করে। প্রথম দলটি ছিল পুরোপুরি একটি ধর্মীয় আন্দোলন। তারা মসজিদগুলোতে ইসলামী আদর্শের প্রচার করতো। ‘আল মারিফা’ (জ্ঞান) নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করতো। পরিবার ও শিক্ষা ইত্যাদি সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়গুলো ছিল এর বিষয়বস্তু। এছাড়া আন্দোলনটি তরুণদেরকে ইসলামী নৈতিকতা শিক্ষা দিতো। এইসব পরিবর্তনে প্রজ্ঞ দার্শনিক রাশিদ ঘান্নুশির সুদূর প্রসারি চিন্তার ছাপ প্রমাণিত হয় আন নাহদা ক্ষমতায় আসার মধ্যে।
১৯৮৯ সালে ‘আন নাহদা মুভমেন্ট পার্টি’ নাম নিয়ে নতুনভাবে কাজ শুরু করে। এর পেছনে একটা প্রেক্ষাপট রয়েছে। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাবিব বুরগিবাকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হটিয়ে ক্ষমতায় আসেন যাইন আল আবেদিন বেন আলী। তার সময়ের গণমুখী রাজনীতির সুযোগ গ্রহণ করা ছিল এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য। বেন আলী শুরুর দিকে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং একটি বহুত্ববাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল নিজের ক্ষমতার বৈধতাকে আরো শক্তপোক্ত করা। পরবর্তীতে তিনি এই প্রতিশ্রুতি আর রক্ষা করেননি। নয়া সরকারকে আশ্বস্ত রাখা এবং রাজনৈতিক দল সংক্রান্ত তিউনিশিয়ার নতুন আইন অনুযায়ী (যে আইনে ধর্মীয় দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে) নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা তখন প্রয়োজনীয় ছিল। তাই দার্শনিক রাজনৈতিক নেতা ঘান্নুশি এবং ইসলামপন্থী অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সংগঠনের নাম পরিবর্তন, নাম থেকে ‘ইসলামী’ শব্দটি বাদ দেয়া এবং সংগঠনের আদর্শের পুনর্মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে নতুন নাম হয় ‘আন নাহদা মুভমেন্ট’। এই প্রেক্ষাপটে দাবি করা হয়েছিল, রাজনৈতিক ইসলাম সম্পর্কে ক্লাসিকাল ইসলামী আন্দোলনগুলোর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে তিউনিশিয়ার ইসলামী আন্দোলনের জন্য আন নাহদা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে।
সর্বশেষ কংগ্রেসে ঘান্নুশি তার বক্তব্যে বলেছেন, “নিছক মতাদর্শ, বড় বড় শ্লোগান আর রাজনৈতিক ঝগড়া-বিবাদ দিয়ে আধুনিক রাষ্ট্র চলে না। বাস্তব কর্মসূচির আলোকেই রাষ্ট্র চালাতে হয়। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক ইসলামী আন্দোলনগুলোর প্রচলিত প্ল্যান-ইসলামিক এজেন্ডা থেকে আন নাহদা সরে এসে শুধু জাতীয় এজেন্ডা অর্থাৎ তিউনিশিয়ার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়োজিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাঠামোগত অর্থে এই সিদ্ধান্তের মানে হলো, আন্দোলনটি একটি গতানুগতিক দলে পরিণত হবে এবং ধর্মীয় দাওয়াতী কার্যক্রম থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেবে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করে ঘান্নশি বলেন, “আমরা ধর্মকে রাজনৈতিক বিবাদ থেকে দূরে রাখতে চাই। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে দূরত্ব বজায় রেখে, দলীয়করণ থেকে মুক্ত রেখে মসজিদগুলোর পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আমরা আহ্বান জানাই।
আজ থেকে তিরিশ বছর পূর্বে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বুরগিবা বিরোধী দলের একজন শীর্ষনেতাকে পুনরায় বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। ওই নেতার যাবজ্জীবন কারাদ-কে বুরগিবা যথেষ্ট মনে করেননি। তাই তিনি তাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিলেন। মৃত্যুদ-ের জন্য অপেক্ষমাণ এই ব্যক্তিটি ছিলেন শায়খ রশিদ ঘানুশী। আরব বসন্তের আধ্যাত্মিক নেতা। বিপ্লবোত্তর তিউনিশিয়ার জনক বলে অনেকে যাকে সম্মান করে থাকেন। বুরগিবারের পর ক্ষমতায় আসেন আরেক স্বৈরশাসক বেন আলী। ১৯৮১ সালের ৬ জুন এটি ‘ইসলামী ধারার আন্দোলন’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। নতুন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন দলিলপত্র অনুযায়ী এর মধ্যে রাজনৈতিক ইসলামী আন্দোলনগুলোর চারটি গতানুগতিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়: এক. সংগঠনটি ধর্ম ও রাজনীতিকে অবিচ্ছেদ্য দুটি সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনা করে। ইসলামের সামগ্রিক রূপকে গ্রহণ করার ঘোষণা দেয়। 
সেক্যুলারিজম এবং প্রাগম্যাটিজম হতে মুক্ত থেকে রাজনীতি করার ব্যাপারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে। ধর্ম ও রাজনীতির পৃথকীকরণের চিন্তাকে তারা খ্রিস্টীয় ধারণার অনুপ্রবেশ এবং ‘আধুনিকতা’র নেতিবাচক প্রবণতা হিসেবে সাব্যস্ত করে। দুই. এই সংগঠন আত্মপরিচয়ের রাজনীতির উপর গুরুত্বারোপ করে। এ জন্য তারা দুটি কাজকে প্রাধান্য দেয়: তিউনিশীয় ইসলামী ব্যক্তিত্বদের যথাযথ মূল্যায়ন এবং ইসলামী চিন্তার সংস্কার। তিন. স্থানীয়, আঞ্চলিক, আরব বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক অর্থাৎ সকল পর্যায়ে ইসলামের রাজনৈতিক ও সামাজিক উপাদানগুলোকে ফিরিয়ে আনার তৎপরতা’য় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা স্পষ্টতই প্যান-ইসলামী ভাবাদর্শকে গ্রহণ করেছে।
চার. লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংগঠনটি ধর্ম ও রাজনীতির এক ধরনের মিশ্র পদ্ধতি ব্যবহার করে। এরমধ্যে রয়েছে ‘ইবাদত ও জনসমাগমের কেন্দ্র হিসেবে’ মসজিদের প্রকৃত ভূমিকা ফিরিয়ে আনা, ইসলামী ভাবধারাসম্পন্ন সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের সূচনা করা, স্বৈরতন্ত্রকে প্রতিরোধ করা, ইসলামী সরকার ব্যবস্থার আধুনিক মডেল উপস্থাপন এবং এর উন্নয়ন সাধন করা, ইসলামের সামাজিক মূলনীতিগুলোর উন্নয়ন ও প্রয়োগ ইত্যাদি।
তিউনিশিয়া হচ্ছে আরব বসন্তের আঁতুড়ঘর। দেশটি আবারো আরব বিশ্বকে এক নতুন পথ দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রচেষ্টা কি সফল হবে? তিউনিশীয় গণতন্ত্র এখনো বেশ নাজুক। পর্যটন শহর সুসা’য় গতবছর সংঘটিত ব্রিটিশ পর্যটকদের উপর আইএসপন্থীদের নির্বিচার গুলিবর্ষণের ঘটনা থেকে এটি স্পষ্ট প্রমাণিত। রাজধানী তিউনিসে ঘান্নুশির সিদ্ধান্তকে বেশ সাদরেই গ্রহণ করা হয়েছে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এ বিষয়টি আমরা বুঝতে পারি, যখন রাজধানী থেকে ২’শ কিলোমিটার দক্ষিণে দেশটির কেন্দ্রে অবস্থিত শহর সিদি বুজিদে পৌঁছি। এখানেই পাঁচ বছর আগে হতাশাগ্রস্ত ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ বুআজিজি নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে মৃত্যুবরণ করার মাধ্যমে আরব বসন্তের সূচনা করে যান। তিউনিশিয়ার জনগণ বার বার জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করেছে যে, তাঁরা কট্টরপন্থা ও সহিংসতাকে সমর্থন করে না। আন-নাহদার রাজনীতিবিদ সাইয়্যেদ ফেরজানিসহ অনেকেই মনে করেন যে, মধ্যপন্থী মালিকি মাজহাবের প্রসারের ফলে ঐতিহাসিকভাবে তাঁরা চরমপন্থাকে পরিহার করেছেন।
উল্লেখ্য, তিউনিশিয়ার ৯৮ শতাংশ মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে মালিকি মাজহাবের অনুসারী। এ ধরনের মধ্যপন্থী জাতীয়-মানস গঠনের পিছনে কেউ কেউ তিউনিশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরগিবার শাসনামল (১৯৫৭-১৯৮৭) এবং তাঁর আধুনিকায়ন প্রকল্পের সাংস্কৃতিক প্রভাবের কথা বলেন। এছাড়া তিউনিশিয়ায় তেমন কোনো জাতিগত, উপজাতীয় কিংবা বিচ্ছিন্নতাবাদী ধর্মীয় বিভেদ নেই বললেই চলে, যা অন্যান্য দেশে অনেক প্রকটভাবে দেখা যায়।
আন-নাহদার নেতৃবৃন্দও বেন আলীর সময় বছরের পর বছর নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন। ১৯৯১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আন-নাহদার নেতা রশিদ আল-ঘানুশি লন্ডনে নির্বাসিত ছিলেন। দলটির অন্যান্য শীর্ষনেতাদের অবস্থাও একই। এইসব অভিজ্ঞতার ফলে আন-নাহদার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার উপর এক ধরনের আধুনিকায়নের প্রভাব পড়ে। ফলে তাঁরা সমন্বয়মূলক আদর্শ ধারণ ও লালন করার সুযোগ পায়। তিউনিশিয়ার সেক্যুলাররা স্থিতিশীল নয় এবং আরব বিশ্বে তারা অতুলনীয়। বরগিবা এবং বেন আলীর অধীনে তিউনিশিয়া ছিল একমাত্র দেশ যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ ছিল। রশিদ আল-ঘানুসীর মতামত ছিল আমরা নিষিদ্ধ বা জোর করার পক্ষে নয় বরং এটা নারীর নিজস্ব স্বাধীনতার ব্যাপার।

মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৯

জামায়াতে ইসলামী কি বিলুপ্ত হতে চলেছে? জামায়াতে ইসলামীর নাম পরিবর্তন দরকার? নতুনদের হাতে জামায়তে ইসলামীর নেতৃত্ব দেয়া উচিৎ?

জামায়াতে ইসলামী কি বিলুপ্ত হতে চলেছে?
জামায়াতে ইসলামীর নাম পরিবর্তন দরকার?
নতুনদের হাতে জামায়তে ইসলামীর নেতৃত্ব দেয়া উচিৎ?
তুরস্কের একে পার্টির আদলে জামায়াতের সংস্কার প্রয়োজন? 
উল্লেখিত পরামর্শ, মন্তব্য প্রতিদিন কারো না কারো টাইমলাইনে দেখি। 
এই বিশ্লেষণ, মতামত, পরামর্শ যারা দিচ্ছেন তারা হয়ত জামায়াতের শুভাকাঙ্ক্ষী, ফ্যান বা জামায়াত সমমনা লেখক, বিশ্লেষক।

#আমি_তো_মনে_করি_জামায়াতের_নামে_কোন_সমস্যা_নাই

সমস্যা তাদের মৌলিক আদর্শ, চেতনা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে মাত্র।
জামায়াতে ইসলামীর মূল চেতনা শরীয়া ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্টা যার মূল ভিত্তি কোরান-হাদীস। পৃথিবীর যে প্রান্তে এই টার্গেট নিয়ে ইকামাতে দ্বীনের সংগঠনিক কার্যক্রম শক্তি অর্জন করেছে, সেখানে পশ্চিমা বিশ্ব এবং তাদের দোসরদের নগ্ন হামলা ও রোষানলে পরতে দেখছি এইসব দলকে। যেমন উদাহারণ হিসাবে ধরেন, মিশরের ব্রাদারহুড।
তারা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল, কিন্তু টিকতে দেয় নাই। এখন মিশরে তাদের অবস্থা বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর মতই। তাদের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী কারাগারে, তাদের কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হয় না! তাদের কি নামে সমস্যা নাকি আদর্শে? ভাবুন.. 
#দ্বিতীয়তঃ ফিলিস্তিনের হামাসের দৃষ্টান্ত দেখুন। জামায়াতকে স্বাধীনতা বিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে দোষ দেয়া হয়, অথচ, হামাস স্বাধীনতাকামীদল যারা মুক্ত ফিলিস্তিনের জন্য যুগের পর যুগ রক্ত দিচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে দাঁড়াতে দিচ্ছেনা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব। হামাসকে অর্থ সাহায্য দেয় কাতার। তাই কাতারকেও আরব বিশ্ব থেকে এক ঘরে করার চেষ্টা চলেছে। হামাসের কি নামে সমস্যা নাকি আদর্শে? ভাবুন.....
#তৃতীয়তঃ পাকিস্তানেও জামায়াতে ইসলামী চলমান। বাংলাদেশে স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল এই অভিযোগে যদি তাদের রোষানলে থাকতে হয়, পাকিস্তানে তো বিপরীতটা হওয়া উচিৎ। অর্থাৎ অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষের দল হিসাবে তাদেরকে মূল্যায়ন জনপ্রিয় হওয়ার কথা। কিন্তু পাকিস্তানে তাদেরকে সেহিসাবে কোন পয়েন্টে কখনো বিবেচনা করেনা। স্রেফ একটি ইসলামী দল হিসাবে দেখে মাত্র। ভাবুন....
আচ্ছা, জামায়াতে ইসলামীর কথা বাদই দিলাম। বাংলাদেশে আরো ইসলামী দল আছে। তাদের অবস্থান কতটা শক্ত?
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কতটা উপযোগী?
তাদের ভিত্তি কতটা মজুবত?
এই কথাগুলো কখনো ভেবেছেন?
হ্যাঁ, অন্য ইসলামীদল গুলো এখনো নিরাপদ, জুলুম, নির্যাতন, মিডিয়া সন্ত্রাসের তেমন শিকার নয়।
কারণ, তাদের শক্তি প্রতিপক্ষরা জানেন। তারা যেদিন জামায়াতে ইসলামীর মত শক্ত অবস্থানে যাবে, সেদিন এমনভাবে চারদিক থেকে ঘিরে ধরা হবে, তখন আপনি বলবেন এই দলের নাম পরিবর্তন দরকার!!
#আমার_মূল_কথা, কোন দলের নামে নয় বরং কাজ আর দলীয় লক্ষ্য, উদ্দেশ্যই আসল সমস্যা। 
আরেকটা ছোট উদাহারণ খেয়াল করেন, আল্লামা শফির কোন বক্তব্যের একটি বাক্য এদিক-ওদিক হলেই চারদিকে ঝড়-তুফান শুরু হয়। অথচ, প্রতিদিন ধর্ষণ, দুর্নীতির মহাসমারোহ, চাঁদাবাজির, টেন্ডারবাজি, চাকরির বৈষম্য ইত্যাদি নিয়ে তেমন একটা নড়াচড়া দেখবেন না।
#আল্লামা_শফি_কেন_সমস্যা?
কারণ, তিনি ইসলামী ব্যাক্তিত্ব। তাঁর শক্তির নমুনা প্রতিপক্ষরা জানেন। এখন কি আল্লামা শফির নাম পরিবর্তন করতে বলবেন?
সমস্যা তার নামে নয় বরং তাঁর চেতনা এবং আদর্শে।
#শেষ_কথাঃ জামায়াতের নামে কোন সমস্যা নাই, নাম পরিবর্তন করলেও সুখে আহ্লাদে থাকবে সেটাও নয়। প্রতিটি শরীয়া ভিত্তিক ইসলামী দল চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। ক্ষমতায় আসুক বা না আসুক, ব্যাক্তি গঠন, দাওয়াতী কাজ, মিশন অব্যাহত থাকবে সেটা যে নামেই হোক।
কপি পোষ্ট :

শনিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৯

দেরীতে বিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে শতাব্দীর এক শ্রেষ্ঠ ষড়যন্ত্র

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ ডেস্কঃ কুফফাররা অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখলো যে, শুধু অস্ত্র দিয়ে মুসলিমদের হত্যা করে পরাজিত করা সম্ভব নয় কেননা মুসলিমরা তো আল্লাহর পথে শহীদ হওয়াকেই তাঁদের চূড়ান্ত সফলতা মনে করে।
তাছাড়া যাদের একমাত্র লক্ষই হচ্ছে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া, আপনি তাঁদেরকে কিভাবে থামাবেন??

তাই কুফফাররা চিন্তা করলো মুসলিম যুবকদের নৈতিকভাবে ধ্বংস করে দিতে হবে, কেননা নৈতিকতাই হচ্ছে মুসলিম যুবকদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এ অস্ত্রের জোরেই তারা আল্লাহর পথে কুফফারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

তাই তারা প্রথমে মুসলিম দেশগুলোতে বিবাহের উপর একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা বেধে দিলো যে, এর আগে বিয়ে করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, যদিও একটি ছেলে এবং মেয়ে এই নির্দিষ্ট সময় সীমার অনেক আগেই বিবাহের উপযুক্ত হয়।

সেই সাথে তারা এমন শিক্ষা ব্যবস্থাও চালু করলো যে, এই শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা ছেলে চাইলেও ২৮-৩০ বছরের আগে উপার্জনক্ষম হতে পারবে না।
যদিও একটা ছেলে ১৫ বছর বয়সেই যৌবনপ্রাপ্ত হয়। তাহলে একটি ছেলে যৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার পরের ১৫ টি বছর কিভাবে পাড়ি দিবে??
এই জন্যে কুফফাররা ব্যাপকহারে পর্ণ ছবি ছড়িয়ে দিলো, বিবাহপূর্ব প্রেম ভালবাসাকে ছড়িয়ে দিলো।
যুবকদের যুবতীদেরকে একটা মেসেজ দিলো যে, “এই নাও পর্ণ ছবি। এগুলো দেখো। এগুলো দেখে উত্তেজিত হও। উত্তেজিত তো হয়েছো কিন্তু এখন কি করবে?? বিয়ে তো করতে পারবে না। তাহলে প্রেম করো, প্রেম করে প্রেমিকার সাথে সেক্স করো, যৌবনের চাহিদা মেটাও।”
আর যে যুবক প্রেম করবে, পর্ণ দেখবে, প্রেমিকার সাথে অবৈধ মেলামেশা করবে সেই যুবক কি কখনো আল্লাহর রাস্তায় কুফফারদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার কথা চিন্তা করবে?? কস্মিনকালেও না।
এভাবেই কুফফাররা মুসলিম যুবকদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, আমাদের যুবকদের জীবনী শক্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
সংগ্রহ

দারসুল কুরআনঃ ড. মুহা: রফিকুল ইসলাম

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24 ডেস্কঃ  “দুনিয়ায় বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই। তাদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অবস্থানস্থল সম্পর্কে তিনি অবহিত। সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে।” (সূরা হুদ : ৬)
উপরোক্ত আয়াত সংশ্লিষ্ট পূর্ণাঙ্গ দারসটি নিম্মে দেয়া হলো-

* নামকরণঃ

সূরা হুদ ৫৩ নং আয়াতে হুদ আ: এবং তার কওমের কথা উল্লেখ আছে। এর ভিত্তিতেই এ নামকরণ করা হয়েছে।

* নাজিলের সময়ঃ

সূরা হুদ মক্কার জীবনের শেষ স্তরে অর্থাৎ ১০-১৩ তম বর্ষে নাজিল হয়। হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে : হযরত আবু বকর (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন : “আমি দেখছি আপনি বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন, এর কারণ কী?” জবাবে তিনি বলেন, “সূরা হুদ ও তারই মতো বিষয়বস্তু সংবলিত সূরাগুলো আমাকে বুড়ো করে দিয়েছে।”
এ থেকে অনুমান করা যাবে, যখন একদিকে কুরাইশ বংশীয় কাফেররা নিজেদের সমস্ত অস্ত্র নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যের দাওয়াতকে স্তব্ধ করে দিতে চাচ্ছিল ।

এ সূরার আলোচ্য বিষয়ঃ

-এ সূরার আলোচ্য বিষয় সূরা ইউনুসের অনুরূপ। অর্থাৎ দাওয়াত, উপদেশ ও সতর্কবাণী। তবে পার্থক্য হচ্ছে, সূরা ইউনূসের তুলনায় দাওয়াতের অংশ এখানে সংক্ষিপ্ত, উপদেশের মধ্যে যুক্তির পরিমাণ কম ও ওয়াজ-নসিহত বেশি এবং সতর্কবাণীগুলো বিস্তারিত ও বলিষ্ঠ।
-এখানে আরও বিশেষ করে বলা হয়েছে নবীর কথা মেনে নাও, শিরক থেকে বিরত হও অন্য সবার বন্দেগি ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও এবং নিজেদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত ব্যবস্থা আখেরাতে জবাবদিহির অনুভূতির ভিত্তিতে গড়ে তোলো।
-এ সূরায় যে উপদেশ হয়েছে তা হলো দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিকের ওপর ভরসা করে যেসব জাতি আল্লাহর নবীদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেছে ইতঃপূর্বেই তারা অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে। এমতাবস্থায় ইতিহাসের ধারাবাহিক অভিজ্ঞতায় যে পথটি ধ্বংসের পথ হিসেবে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে, সেই একই পথে তোমাদেরও চলতেই হবে, এ ধরনের মনোভাব ত্যাগ করতে হবে।
– এ সূরার মাঝে যে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে তা হচ্ছে- আজাব আসতে যে দেরি হচ্ছে, তা আসলে একটা অবকাশ মাত্র। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদের এ অবকাশ দান করছেন। এ অবকাশকালে যদি তোমরা সংযত ও সংশোধিত না হও তাহলে এমন আজাব আসবে যাকে হটিয়ে দেয়ার সাধ্য কারোর নেই এবং যা ঈমানদারদের ক্ষুদ্রতম দলটি ছাড়া বাকি সমগ্র জাতিকে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।
– এ বিষয়বস্তুসমূহ উপলব্ধি করার জন্য সরাসরি সম্বোধন করার তুলনায় নূহের জাতি, আদ, সামুদ, লূতের জাতি, মাদয়ানবাসী ও ফেরাউনের সম্প্রদায়ের ঘটনাবলির সাহায্য গ্রহণ করা হয়েছে বেশি করে।
* আয়াতের ব্যাখ্যাঃ
অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা সকল প্রাণীর রিজিক তার যে তাঁর জিম্মায় রয়েছে সে কথা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন। সমগ্র পৃথিবীর জলে-স্থলে, গাছ-গাছালিতে, গুহায় এবং গর্তে যত স্থান হতে পারে এবং যত স্থানে প্রাণী থাকতে পারে, তাদের সকলের আহার ব্যবস্থা একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। কোন জীব কোথায় থাকে, কোথায় চলাচল করে, কোথায় আশ্রয় গ্রহণ করে, কোথায় মৃত্যুবরণ করে, মায়ের উদরে কী থাকে সব কিছুই মহান আল্লাহর কিতাবে লেখা রয়েছে। (তাফসির ইবন কাসির)
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন-
ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল কোন প্রাণী এবং বাতাসে ডানা বিস্তার করে উড়ে চলা কোন পাখিকেই দেখ না কেন, এরা সবাই তোমাদের মতই বিভিন্ন শ্রেণী। তাদের ভাগ্যলিপিতে কোন কিছু লিখতে আমি বাদ দেইনি। তারপর তাদের সবাইকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে। (সূরা আল আনআম : ৩৮)

মহান আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কিছুই হয় না বা তাঁর অজ্ঞাতসারে কোনো কিছুই ঘটে না সে ব্যাপারে কুরআনুল কারিমে অন্যত্র বলা হয়েছে-
তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের চাবি, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। জলে-স্থলে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন । তাঁর অজ্ঞাতসারে গাছের একটি পাতাও পড়ে না। মৃত্তিকার অন্ধকার প্রদেশে এমন একটি শস্যকণাও নেই যে সম্পর্কে তিনি অবগত নন। শুষ্ক ও আর্দ্র সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিখিত আছে। (সূরা আল আনআম : ৫৯)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফহিমুল কুরআনের প্রণেতা বলেনঃ
যে আল্লাহ এমন সূক্ষ্মজ্ঞানী যে প্রত্যেকটি পাখির বাসা ও প্রত্যেকটি পোকা-মাকড়ের গর্ত তাঁর জানা এবং তাদের প্রত্যেকের কাছে তিনি তাদের জীবনোপাকরণ পাঠিয়ে দিচ্ছেন, আর তা ছাড়া প্রত্যেকটি প্রাণী কোথায় থাকে এবং কোথায় মৃত্যুবরণ করে প্রতি মুহূর্তে যিনি এ খবর রাখেন, তাঁর সম্পর্কে যদি তোমরা এ ধারণা করে থাকো যে, এভাবে মুখ লুকিয়ে অথবা কানে আঙুল চেপে কিংবা চোখ বন্ধ করে তাঁর পাকড়াও থেকে রক্ষা পাবে তাহলে তোমরা বড়ই বোকা। সত্যের আহবায়ককে দেখে তোমরা মুখ লুকালে তাতে লাভ কী?

এর ফলে কি তোমরা আল্লাহর কাছ থেকেও নিজেদের গোপন করতে পেরেছো ? আল্লাহ কি দেখছেন না, এক ব্যক্তি তোমাদের সত্যের সাথে পরিচিত বরাবর দায়িত্ব পালন করছেন আর তোমরা তার কোন কথা যাতে তোমাদের কানে না পড়ে সেজন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছো। (তাফহিম)
প্রাগুক্ত আয়াতের প্রাসঙ্গিকতার আলোকে বলা যায়, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক দানের ব্যাপারে কিছু নিয়ম রয়েছে, তা বিস্তারিত আলোচনার আগে রিজিক কাকে বলে তা স্পষ্ট হওয়া দরকার।
রিজিক এমন জিনিস, যা মহান আল্লাহ প্রাণিকুলের নিকট নিয়ে যান এবং প্রাণীরা তা আহার করে। এ রিজিক অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়, যেমন- স্বাস্থ্য, সম্পদ, খাদ্য, বুদ্ধি, উপায়-উপকরণ, সময় ইত্যাদি। এমনকি আমাদের জীবনটাও রিজিক। এই সবকিছু আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে আল্লাহ হলেন আর-রাজ্জাক তথা রিজিকদাতা।
এখন প্রশ্ন হলো আমরা যদি একবারে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকি, তাহলে আমাদের সামনে রিজিক আসবে না চেষ্টা করতে হবে? অবশ্যই খাবারের সন্ধানে চেষ্টা করতে হবে। শুধু তাই নয়, এ রিজিক বৃদ্ধি জন্য আমল করা, সর্বোপরি মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা একান্ত কর্তব্য।
মহান আল্লাহ রিজিক অন্বেষণের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন : তারপর যখন নামায শেষ হয়ে যায় তখন ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা আল-জুমুআ, ১০)
মহান আল্লাহ আরো বলেন, তোমাদেরকে আমি ক্ষমতা-ইখতিয়ার সহকারে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি। এবং তোমাদের জন্য এখানে জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করেছি। কিন্তু তোমরা খুব কমই শোকর গুজারি করে থাকো। (সূরা আল আরাফ : ১০)
অধিকাংশ কাজ যার মাধ্যমে রিজিক অর্জন করা যায়, তা তিনি সহজ করেছেন, কঠিন করেননি। তিনি এ ব্যাপারে বলেন,
তিনিই তো সেই মহান সত্তা যিনি ভূপৃষ্ঠকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। তোমরা এর বুকের ওপর চলাফেরা করো এবং আল্লাহর দেয়া রিজিক খাও। আবার জীবিত হয়ে তোমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা আল মুলক : ১৫)

আয়াতে একটি কথা স্পষ্ট করা হয়েছে, দুনিয়াতে জীবন পরিচালনার জন্য যত কিছুই করা হোক না কেন, এ দুনিয়া শেষ ঠিকানা নয়। যত উপার্জন হোক না কেন, তা স্থায়ী কোনো সম্পদ নয়। সকলকে অবশ্যই একদিন এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে অবশ্যই তাঁর উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহর সামনে হিসাব দিতে হবে কোন স্থান থেকে থেকে উপার্জন করলে এবং কোথায় ব্যয় করলে।
এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে , ইবনু মাসউদ রা: হতে বর্ণিত আছে, নাবী সা: বলেছেন : কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তা’আলার নিকট হতে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা ব্যয় করেছে; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল, সে মুতাবিক কী কী আমল করেছে। (জামে আত তিরমিজি)
রিজিক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত মূল্যবান যে সকল আমল করা যায় তা হচ্ছেঃ
-মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও খোদাভীতি অবলম্বন করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
জনপদগুলোর লোকেরা যদি ঈমান আনত আর তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান আর জমিনের কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম কিন্তু তারা (সত্যকে) প্রত্যাখ্যান করল। কাজেই তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদেরকে পাকড়াও করলাম। (সূরা আল আরাফ : ৯৬)

তিনি আরো বলেন : যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য কোন না কোন পথ বের করে দেবেন। আর তাকে রিজিক দিবেন (এমন উৎস) থেকে যা সে ধারণাও করতে পারবে না। (সূরা ত্বালাক : ২-৩)
-কৃতকর্মের জন্য তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা।
তাওবা বা ফিরে আসার জন্য মৌলিক কয়েকটি শর্ত রয়েছেঃ
১. যে পাপে লিপ্ত তা তাৎক্ষণিক বর্জন করা
২. উক্ত পাপের জন্য লজ্জিত হওয়া
৩. সমকালীন সময়ে কোনোভাবেই উক্ত পাপ বা অন্যায় কাজে যুক্ত না হওয়া
৪. ভবিষ্যতে পুনরায় পাপে লিপ্ত না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
এ কাজের মাধ্যমেও মহান আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধির ঘোষণা প্রদান করে বলেন
আমি বলেছি ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা নূহ : ১০-১২)

তিনি অন্যত্র আরো বলেন-
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা চাও, আর অনুশোচনাভরে তাঁর দিকেই ফিরে এসো, তাহলে তিনি একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে উত্তম জীবন সামগ্রী ভোগ করতে দিবেন, আর অনুগ্রহ লাভের যোগ্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিনি তাঁর অনুগ্রহ দানে ধন্য করবেন। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আমি তোমাদের ওপর বড় এক কঠিন দিনের আজাবের আশঙ্কা করছি। (সূরা হুদ : ৩)

এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সা. বলেন-
যে ব্যক্তি বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে তার সকল দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ধার করবেন, সকল সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ দিবেন এবং তাকে এমনভাবে রিজিক দিবেন, যা কোন মানুষ ধারণা করতে পারে না। (মুস্তাদরাক হাকেম)

-আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা করা।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর ঘোষণা-
যে কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ নিজের কাজ সম্পূর্ণ করবেনই। আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের জন্য করেছেন একটা সুনির্দিষ্ট মাত্রা। (সূরা ত্বালাক : ৩)

এ ব্যাপারে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
তোমরা যদি আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা কর তাহলে তোমাদেরকে জীবিকা দেয়া হবে ঐভাবে যেভাবে দেয়া হয় পাখিকে। পাখি সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা ত্যাগ করে এবং পেট পুরে ফিরে আসে। (আহমাদ, তিরমিজি, ইবন মাজাহ, ইবন হিব্বান ও হাকেম)

-আল্লাহর ইবাদতে গভীর মনোনিবেশ করা।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লøাহ বলেন : হে ঈমানদারগণ! সবর ও নামাজের দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করো, আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন। (সূরা আল বাকারা : ১৫৩)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেন :
আবু হুরায়রা রা: কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেন, অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য আত্মনিয়োগ কর আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত করব, তোমার অভাবকে মোচন করব, আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার হাতকে কর্মে ব্যস্ত করব এবং তোমার অভাব মোচন করব না। (আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও হাকেম)

অনুরূপ আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে- মাকাল বিন ইয়াসার রা: কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আল্লাহ তাআলা বলেন : হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য আত্মনিয়োগ কর আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত করব এবং তোমার হাতকে জীবিকায় পরিপূর্ণ করে দেব। হে আদম সন্তান! আমা হতে দূরে সরে যেও না (যদি যাও তাহলে) তোমার অন্তরকে সঙ্কীর্ণ ও দরিদ্র করে দেব, আর তোমার দু-হাতকে কর্মে ব্যস্ত করে দেব। (মুস্তাদরাক হাকেম, মুজামুল কাবির)

-আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এসেছে। আলী রা: কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা: বলেছেন : যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার বয়স বৃদ্ধি করা হোক, তার জীবিকা বৃদ্ধি করা হোক এবং জঘন্য মৃত্যু থেকে সে পরিত্রাণ পাক, তাহলে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখে। (আহমাদ)

তিনি আরও বলেন-
যে ব্যক্তি পছন্দ করে তার রিজিক অথবা তার হায়াত বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখে। (বুখারি)
এ ছাড়াও আরো যা করলে রিজিক বেড়ে যাবে তা হচ্ছে.
-আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন : হে নবী! তাদেরকে বলো, “আমার রব তার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান মুক্ত হস্তে রিজিক দান করেন এবং যাকে চান মাপাজোখা দেন। যা কিছু তোমরা ব্যয় করে দাও তার জায়গায় তিনি তোমাদের আরো দেন, তিনি সব রিজিকদাতার চেয়ে ভালো রিজিকদাতা।” (সূরা সাবা : ৩৯)

নবী করিম সা. এ ব্যাপারে বলেন :
আবু হুরায়রা রা: কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন : বান্দাগণ যখন প্রভাত করে তখন দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি তোমার পথে ব্যয় করে তাকে উত্তম প্রতিদান দাও। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণের মাল ধ্বংস কর। (বুখারি)

রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন :
আবু হুরায়রা রাধ থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন : হে আদম সন্তান! খরচ কর। আমি তোমার ওপর খরচ করব। (বুখারি)

-আল্লাহর পথে হিজরত করার মাধ্যমে রিজিক বেড়ে যায়। মহান আল্লাহর ঘোষণা-
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য প্রাপ্ত হবে। (সূরা নিসা : ১০০)
-দুর্বল ও অসহায় মানুষের প্রতি মমতা দেখানো।
-দ্বীনি ইলম অন্বেষণে আত্মনিয়োগকারীর জন্য ব্যয় করা।
-হজ ও উমরাহর পারস্পরিকতা তথা হজ ও উমরাহ পরপর আদায় করা। রাসূলুল্লাহ সা. এ ব্যাপারে বলেন :
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা হজ ও উমরাহ পরস্পর আদায় কর, কেননা উক্ত কাজ দু’টি তেমনভাবে অভাব ও পাপকে মিটিয়ে দেয়, যেমন হাপর সোনা, চাঁদি এবং লোহার মরিচাকে মিটায়। আর কবুল হজের সওয়াব হচ্ছে একমাত্র জান্নাত। (নাসায়ী, তিরমিজি)
রিযিক অন্বেষণের ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকভাবে পরিত্যাজ্য কিছু বিষয় রয়েছে। সেগুলো পরিত্যাগ করতে না পারলে রিজিক হারাম হয়ে যাবে। যেমন :
-কোন রিজিক বা উপার্জন সামান্যতম হারামের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও তা পরিত্যাগ করতে হবে।
এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, নু‘মান ইবনু বাশীর রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। গুনাহসমূহ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা, যে জানোয়ার সংরক্ষিত এলাকার চার পাশে চরতে থাকে, তার ঐ সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। (বুখারী, হাদিস নম্বর ২০৫১)
-ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য পরিধেয় বস্ত্রসহ সবকিছু হালাল উপার্জনের দ্বারা হতে হবে অন্যথায় তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
রাসূল সা: বলেন : “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তু গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণকে।” আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে ইমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রিজিক হিসেবে দান করেছি।”
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধূসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে, হে আমার রব, হে আমার রব অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। সুতরাং তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে?।” (মুসলিম হা/২৭৬০; মিশকাত হা/২৭৬০)
-মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণের মাধ্যমে সম্পদ বা রিজিক অর্জন না করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমরা মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকো, কেননা মিথ্যা নিয়ে যায় পাপ কাজের দিকে, আর পাপকাজ জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।
-সুদের সাথে কোন অবস্থাতেই সম্পৃক্ততা না থাকা। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ খুব শক্তভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন : “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের জুলুম করা হবে না।” (সূরা আল বাকারা : ২৭৮-২৭৯)
-জুলুম একটি সর্বাধিক নিন্দনীয় অপরাধ, যা শক্তিমান মানুষ করে থাকে আর দুর্বল ব্যক্তি নীরবে তা সহ্য করে এবং আল্লাহর নিকট বিচার পেশ করে। জুলুমের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হওয়ার কারণে ইসলামে যেকোনো ধরনের জুলুম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ পন্থায় চলা কোন ব্যক্তি আখিরাতে একেবারে রিক্তহস্ত হয়ে যাবে। সুতরাং এ পথে সম্পদ অর্জন একেবারে চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা কি জান কপর্দকহীন কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নেই সে হলো কপর্দকহীন। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো কপর্দকহীন, যে কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও জাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিকে সেদিন তার নেক আমলনামা দিয়ে দেয়া হবে।
-অপচয় ও অপব্যয় না করা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পদ অর্জন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই যে কোন ধরনের অপচয় ও অপব্যয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন : “আর আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। আর কোনোভাবেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।” (সূরা বনি ইসরাইল : ২৬-২৭)
-ঘুষের সম্পৃক্ততা না থাকা। ঘুষ দেয়া, নেয়া বা এর সাথে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা রাখলে সে উপার্জন সরাসরি হারাম হয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে : “আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহণকারী উভয়কে লানত দিয়েছেন।”
-অন্যের অধিকার নষ্ট না করা। অন্যের হক বঞ্চিত করার মাধ্যমে যে উপার্জন করা হয় তা অবৈধ। তাই সকল প্রকার খেয়ানত থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “নিশ্চয় তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল এবং তোমাদের সম্মান নষ্ট করা তোমাদের জন্য হারাম।’’
আয়াতের শিক্ষা
-মানব মনে যত প্রকার চাহিদার উদয় হয়, সর্বাবস্থায় তা মহান আল্লাহর নিকট পেশ করতে হবে;
-যে কোন ধরনের রিজিক একমাত্র মহান রবের কাছে যাচনা করতে হবে;
-কোন প্রয়োজন পূরণ হতে দেরি হলেও ধৈর্যধারণ করতে হবে। কোন ধরনের শিরক, বিদআতের আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে না;
-সর্বাবস্থায় হালাল রিজিক- যত কঠিন হোক- আহরণ করতে হবে, হারাম রিজিক- যত সহজ হোক পরিত্যাগ করতে হবে;
-সর্বাবস্থায় আহকামুল হাকিমিন, রাব্বুল আলামিন মহান আল্লাহর রহমতের অপেক্ষা করতে হবে এবং তাঁর সাহায্যের মাধ্যমেই সব সমস্যা সমাধানের জন্য দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ হতে হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করুন, সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ

About

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

আমার ব্লগ তালিকা

Translate

Translate

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24

সর্বশেষ

অনুসরণকারী