সরকারি দলের দুর্বৃত্তদের ব্যাপক সন্ত্রাস ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে দেশে এক দু:সহাবস্থা বিরাজ করায় ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া সন্ত্রাস, খুন, চাঁদাবাজি ও লুটতরাজ এবং তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দেশে এক ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খুন, নারী ধর্ষণ, অন্যের জমি দখল, শিশু হত্যা, শিশু ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, চাঁদা না দেয়ায় স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মারপিট, শিশুদের পিটিয়ে হত্যা, আধিপত্য বিস্তারের জন্য সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গোলা -গুলীর মত জঘন্যতম অপরাধের ঘটনা ঘটছে।
তিনি বলেন, বিরোধী রাজনীতি দমনের হীন উদ্দেশ্য নিয়ে বিরোধী দলের নিরপরাধ নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। বিরোধী দলের প্রবীণ রাজনীতিবিদদের মাসের পর মাস জেলখানায় আটকিয়ে রাখায় দেশে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঘরে-বাইরে কোথাও মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। সরকার তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বিনাবিচারে ক্রসফায়ার দিয়ে তাদের দলীয় কয়েকজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। এই হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা সাংবাদিক সম্মেলন করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। অথচ এই সরকারের সাড়ে ছয় বছরের শাসনামলে বিরোধী দলের শত শত নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে পায়ে গুলী করে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। আবার কাউকে কাউকে গুম করে দুনিয়া থেকে গায়েব করা হয়েছে। বিরোধী দল থেকে এ ব্যাপারে বার বার প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও তা বন্ধ করা হয়নি। এখনো তা চলছে। আমরা বরাবরই বিনাবিচারে মানুষ হত্যার বিপক্ষে।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ ও র্যাব কর্তৃক ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের কয়েকজনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অথচ এরাই বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে বহু মায়ের বুক খালি করেছে, অসংখ্য মা-বোনকে বিধবা বানিয়েছে এবং নিষ্পাপ শিশু সন্তানদেরকে এতিম বানিয়ে ক্ষমার অযোগ্য জঘন্য অপরাধ করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসীরা পারস্পরিক যোগসাজস ও ভাগাভাগি করে মানবতাবিরোধী এ সমস্ত অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সরকারি দলের নেতা ও কর্মীদের মায়াকান্না জাতিকে আরো বেশী উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আওয়ামী লীগের এক নেতা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ছাত্রলীগের হাজারীবাগের সভাপতিকে টাকার বিনিময় র্যাব হত্যা করেছে। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে বুঝা যায় দেশের আইনÑশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে? তাই এ বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করা দরকার।
তিনি সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়া ও বন্দুক যুদ্ধের মত বেআইনী এবং মানবতাবিরোধী এ কার্যকলাপ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের যে কোন নাগরিকের আইনের আশ্রয় পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। কেউ কোন অপরাধ করে থাকলে তাকে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু ও যথাযথ বিচারের মাধ্যমে শাস্তির বিধান না করে এভাবে বিনাবিচারে হত্যা করার কোন অধিকার বাংলাদেশের সংবিধান, রাষ্ট্র এবং জনগণ সরকারকে দেয়নি। মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া ভোগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট অপকর্মকারীদের তৈরি থাকতে হবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের কবর রচনা করে কার্যত দেশে একদলীয় শাসন চালু করার কারণে দেশে এক ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাই সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি প্রদান এবং এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার জন্য তিনি জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন