আমাদের বাংলাদেশ
নিউজ 24 ডেস্কঃ বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন ইতিহাসের একমাত্র নবী ও রাসুল (সা.), যিনি সমগ্র বিশ্বমানবতার জন্য প্রেরিত হয়েছেন। প্রাচ্য-প্রতীচ্য, সাদা-কালো আর জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানবজাতির কল্যাণেই তার আবির্ভাব। যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন ‘হে মানবমণ্ডলী, আমি তোমাদের সবার জন্য রাসুল হিসেবে প্রেরিত করেছি।’ তাই তিনি কোনো অঞ্চলভিত্তিক অথবা কোনো নির্দিষ্ট ভাষাগোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত হননি বরং মহান সত্তার পক্ষ থেকে সমগ্র বিশ্বমানবতার জন্য দয়ার প্রতীক হিসেবে তাকে ঘোষণা করা হয়েছে।
সেই মহান রাসুলের বিরুদ্ধে কেউ যদি বিকৃতভাবে কিছু উপস্থাপন করে সে ক্ষেত্রে তাকে উন্মাদ বলা ছাড়া আর কি-বা বলা যেতে পারে। কেননা এই উন্মাদদের এমন হীন আচরণে বিশ্বনবির সম্মানে কি সামান্যতম ঘাটতি দেখা দিতে পারে? অবশ্যই না, বরং এতে মুসলিম উম্মাহ মহানবির (সা.) অতুলনীয় জীবনাদর্শ সবার কাছে আরো ভালো করে তুলে ধরার চেষ্টা করবে। অধিক হারে তার প্রতি দরুদ প্রেরণ করবে।
সম্প্রতি ফ্রান্সে বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটাক্ষ করে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। এরপূর্বে মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা স্যাম বাসিল ও তার কলাকুশলীরা ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামক চলচ্চিত্রে মহানবি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)-কে অত্যন্ত অশালীন ও বিকৃতভাবে বিদ্রুপ করেছিল। এসব ঘটনায় একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে আর এমনটা প্রত্যেক মুসলমানেরই হওয়ার কথা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
তাই যারা এমন গর্হিত কাজে জড়িত তারা ইসলামের কোন ক্ষতি করতে পারবে না বরং তারা নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের দেখা উচিৎ, মহানবিকে (সা.) যারা কটাক্ষ করার চেষ্টা করে এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তারা কোন পর্যায়ের ব্যক্তি। আমরা যদি ক্ষতিয়ে দেখি তাহলে দেখব এই ধরনের লোকদের কোন ধর্ম নেই এবং তাদের চরিত্রও ঠিক নেই। কেননা কোন ভাল চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি, সে যে ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন তারা এমন কাজ করতে পারে না।
দেখা যায় মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা স্যাম বাসিল ও তার কলাকুশলীরা মূলত অশ্লিল ও নগ্ন ছবি নির্মাণ করে থাকে, এদের মত লম্পটদের কথায় কি ইসলাম কলঙ্কিত হয়ে যাবে? মহানবির (সা.) সম্মানের হানি হবে? অবশ্যই তা কখনো হতে পারে না। কেননা ইসলামই কেবল একমাত্র পরিপূর্ণ ধর্ম। তবে আমরা এ ধরনের গর্হিত কাজের তীব্র নিন্দা জানাই এবং আল্লাহপাকের দরবারে তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করি। যখন কেউ ইসলামের অবমাননা, কুরআনের অবমাননা এবং রাসুলের (সা.) অবমাননা করবে এর প্রতিবাদ আমরা অবশ্যই করব। তবে আমাদের প্রতিবাদের ধরন হবে শ্রেষ্ঠনবীর অনুপম আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়ে। কোন দেশের পতাকা পুড়িয়ে বা কোন দেশের রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা চালিয়ে বা কাউকে হত্যা করে অথবা অগ্নিসংযোগ ও অপহরণ করে এর প্রতিবাদ আমরা করব না। কারণ এগুলোর কোনটাই ইসলাম ও বিশ্বনবি আমাদেরকে অনুমতি দেয় না।
আমাদের প্রতিবাদের ধরন হবে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য, কুরআনের অনিন্দ্য সুন্দর শিক্ষা এবং বিশ্বনবির (সা.) অতুলনীয় আদর্শ সারা বিশ্বের মাঝে ফুটিয়ে তোলা। প্রতিটি দেশে বড় বড় সভা-সেমিনার করা, কোরআন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা এবং সকল ধর্মের লোকদের ডেকে ইসলামের শান্তির শিক্ষা সম্পর্কে অবগত করা। আর এ কাজের জন্য যে বিষয়েটি সবচেয়ে প্রথমে প্রয়োজন তাহল সারা বিশ্বের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আজকে সারা বিশ্বের মুসলমানদের যদি এক ঐশী নেতা থাকত তাহলে এধরনের গর্হিত কাজের কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না।
আমরা যদি প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইসলামের আদর্শ ভুলে জুলুম নির্যাতনের রাস্তা অবলম্বন করি তাহলে বিধর্মীরা এটা বলতে আরো সাহস পাবে যে, মুসলমানরা সন্ত্রাসী আর এরাই পৃথিবীতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ। তাই বিধর্মীদেরকে কোনভাবেই অভিযোগের সুযোগ দেয়া ঠিক হবে না। আমরা যদি প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেশের রাস্তা বন্ধ করে রেখে জনগণের কষ্ট দেই তা কিন্তু শ্রেষ্ঠনবির আদর্শের বিপরিত হবে।