হুবহু পোস্ট। জাস্ট চেপে যা
ভারতের সরকারী দল বিজেপির সাবেক নেতা।
অনেকেই জানেন, আমি ছিলাম বিজেপি'র একজন একনিষ্ঠ কর্মী। বিজেপি'র হয়ে এলাকার বুথ কমিটির সেক্রেটারির পদও সামলেছি। না, বিজেপি আমায় দল থেকে বের করেনি, পদ থেকে সরিয়ে দেয়নি। আমিই নিজেই বেরিয়েছি, ইস্তফা দিয়েছি, পদ থেকে নিজেই সরে দাঁড়িয়েছি।
যাইহোক, সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করার সময় থেকেই জানতাম, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামিক সংগঠন হল- জামাত শিবির। এও জানতাম, জামায়াত শিবির একটি ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। এরা রক্তের রাজনীতি করে, নির্মমভাবে মানুষ খুন করে, মানুষের শিরা কেটে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি। না, এগুলি যে শুধু আমি আমার রাজনৈতিক সূত্রেই জেনেছিলাম তা নয়। অন্যান্য তথাকথিত সেক্যুলার দল, প্রথমসারীর পত্র-পত্রিকা, বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্য আর সোশ্যাল মিডিয়া মারফৎ প্রচারণায় বিশ্বাস করতে বাধ্যই হয়েছিলাম যে, বাংলাদেশের জামায়াত শিবির একটি ভয়ানক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। কিন্তু এখন! ৭১ আমি দেখিনি, ইতিহাস কতটা অবিকৃত তাও জানিনা। কিন্তু বর্তমানের জামাত শিবিরের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণের পরে, আমার ভাবনার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ একটি আদর্শের সমর্থক না হলেও বিরুদ্ধ আদর্শের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ এবং মিথ্যাচার সমর্থনযোগ্যও নয়।
ঘটনার চার দশক পরে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠন করে, প্রহসনের বিচারে জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ফাঁসীতে ঝোলানো হচ্ছে। ট্রাবুনালের বিচারিক প্রক্রিয়া যে অস্বচ্ছ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যগত- একথা আমি নয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবধিকার সংগঠন প্রত্যেকেই একই কথা বলছে। এমন অস্বচ্ছ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী জামায়াত নেতাদের বক্তব্য এবং কর্মীদের কর্মকান্ড আমায় বেশ ভাবিয়ে তুলেছে! ফাঁসীর আগের মুহুর্তে কাদের মোল্লা থেকে মীর কাশেম আলী কেউই রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে প্রত্যেকেই বলেছেন, 'আমরা কোনও অন্যায় করিনি, মিথ্যা অভিযোগ এবং সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক কারণে আমাদের ফাঁসী দেওয়া হচ্ছে। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই।' ফাঁসীর আগে পরিবার মারফৎ দেশবাসী এবং সংগঠনের কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া তাঁদের ভাষণও আমায় বেশ আলোড়িত করেছে। তাঁদের কন্ঠে সশস্ত্র জিহাদের ডাক শোনা যায়নি। জ্বালিয়ে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া বা বদলা নেওয়ার কথাও বলতে শোনা যায়নি। বরং তাঁরা প্রত্যেকেই দেশবাসী এবং কর্মীদের ধৈর্যধারণ করতে বলেছেন। সেই সাথে শান্ত থাকার এবং প্রার্থনা(দোয়া) করার আহবান জানিয়েছেন। তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো উস্কানিমূলক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর অন্যান্য নেতা-কর্মীদের কার্যকলাপ! প্রিয় নেতাদের ফাঁসীতে ঝোলানোর পরেও তারা শুধু শান্তি বজায় রেখে ধর্মঘট পালন করেছেন। কোনও রকেট লঞ্চার হামলা করেননি, বোমা হামলা করে থানা-কোর্ট উড়িয়ে দেননি, কোনও আইইডি হামলা করে বাজার-মল ধ্বংস করে দেননি, মানুষের হাত-পায়ের শিরা কেটে দেননি, নির্বিচারে নারীদের ধর্ষণ করেননি। আমি বাংলাদেশের জামায়াত ইসলামী এবং ছাত্র শিবিরের ওয়েবিসাইটগুলিও ভিজিট করেছি। লক্ষ্য করেছি, সেখানে শুধুমাত্র বিচারের সমালোচনা করা হয়েছে, বিচারিক প্রক্রিয়ার লু ফলস-গুলি দেখিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মঘটের ঘোষণা করা হয়েছে।
তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমি জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলব? আরে, গান্ধীজীর অহিংস আন্দোলনও তো এক সময় সহিংসতার পথ নিয়ছিল। আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠায় গান্ধীজী আন্দোলন পরিত্যাগ করেছিলেন, সে প্রসঙ্গ ভিন্ন। কিন্তু যাদের আমরা চিনহিত সন্ত্রাসবাদী বলছি, তাদের কার্যকলাপ এবং বক্তব্যের কোথাও তো সহিংসতা বা সন্ত্রাসবাদের ছিটেফোঁটা লক্ষ্য করছিনা। শুধু আনন্দবাজার, অর্ধ প্যারালাইজড বুদ্ধিজীবী আর কমরেডদের গালগল্প শুনে আমায় বিশ্বাস করতে হবে- জামায়াত শিবির সন্ত্রাসবাদী সংগঠন?
শুনেছি জামায়াত শিবিরের নাকি অনেক টাকা। সদ্য ফাঁসীর সাজাপ্রাপ্ত মীর কাশেম আলী নাকি হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। যে সংগঠনে যথেষ্ট পরিমানে কর্মী ('জেহাদি') রয়েছে, অফুরন্ত টাকা রয়েছে- সেই সংগঠনটি কোনও পালটা আঘাত না হেনে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মঘট পালনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে? আমি জানিনা, ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্রে অংশগ্রহণকারী কোনও রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ নেতাদের প্রহসনের বিচারে এভাবে ফাঁসীতে ঝোলানো হলে, তাদের নেতা-কর্মীরা জামায়াত শিবিরের মত অহিংস এবং সংযমী থাকতে পারতেন কিনা!
---সুতীর্থ মুখার্জীভারতের সরকারী দল বিজেপির সাবেক নেতা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন