বিজ্ঞাপন দিন

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই ঈদ উত্তর সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। ব্যাংক খোলা এবং যথারীতি ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এই গ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। ঢাকার সবুজবাগ থানার রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১:b>ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার

শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৫

আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাতিল না করলে ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে না : আবুল মকসুদ


বিশিষ্ঠ কলামিস্ট সাংবাদিক বাপা’র সহসভাপতি সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্কের সার্থেই ভারতকে অবশ্যই আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাতিল করতে হবে। নয়তো কোনোভাবে বাংলাদেশের সাথে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে না। কারণ এই প্রকল্প নিশ্চিতভাবেই ধবংস করবে বাংলাদেশের প্রকৃতি,কৃষি অর্থনীতি ও অস্তিত্ব। এইসাথে তিনি সকল দেশের জন্য জাতিসংঘ পানি প্রবাহ কনভেনশন ভিত্তিক আঞ্চলিক পানি সম্পদ ব্যবহারের আহবান জানান। 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) ও পিপলস্ সার্ক ওয়াটার ফোরাম, বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে আজ এক সংবাদ সম্মেললে সৈয়দ আবুল মকসুদ এসব কথা বলেন। 
ভারত যেনো কোনোভাবেই আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত না করতে পারে সেজন্য সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহবান জানান। কেবল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতে চিঠি দিয়ে বসে থাকলেই চলবে না বলেও সরকারকে সর্তক করে দেন। 
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির হল কক্ষে (সেগুনবাগিচা, ঢাকা) “ভারতীয় আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প ধ্বংস করবে বাংলাদেশ! এই প্রকল্প বাতিল কর, আঞ্চলিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত কর!’’ দাবীতে এক এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মুলবক্তব্য রাখেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখবেন বিশিষ্ট নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হকসহ মিহির বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


শ্রমিক নেতা মাওলানা নেছার আহমদের ইন্তিকালে সিলেট নগর জামায়াতের শোক


সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন নেতা ও সিলেট জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি চট্র: ১৬৬৯) এর সভাপতি মাওলানা নেছার আহমদ আর নেই (ইন্না নিল্লাহী ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)।৩  তিনি দিবাগত রাত ৩টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেন। উল্লেখ্য যে, নগরীর বাগবাড়ী কানিশাইল ঈদগাহ মসজিদের সাবেক ইমাম মাওলানা নেছার আহমদ কয়েকদিন থেকে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে ভুগে ওসমানী হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান-এর পুত্র। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪০ বছর। তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে, ১ মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে মারা যান। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর নগরীর বাগবাড়ী কানিশাইল ঈদগাহ মসজিদ প্রাঙ্গনে জানাযা শেষে তাকে মানিক পীর (র.) মাজার সংলগ্ন কবর স্থানে সমাহিত করা হয়।
জানাযায় উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরীর আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা দক্ষিণের আমীর মাওলানা হাবীবুর রহমান, জেলা দক্ষিণের নায়েবে আমীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, সিলেট মহানগর নায়েবে আমীর হাফিজ আব্দুল হাই হারুন ও মো: ফখরুল ইসলাম, মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা সোহেল আহমদ, সহকারী সেক্রেটারি মো: আব্দুর রব, অফিস সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা আব্দুস সালাম আল-মাদানী প্রমুখ। জানাযায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন।
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও শ্রমিক নেতা মাওলানা নেছার আহমদের অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সিলেট মহানগর জামায়াত নেতৃবৃন্দ। গত বৃহস্পতিবার এক শোকবার্তায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, মাওলানা নেছার আহমদের ইন্তিকালে সিলেটবাসী ইসলামী আন্দোলনের একজন খাঁটি সৈনিককে হারাল যা সহজে পুরণ হওয়ার নয়। বাংলাদেশের সবুজ ভু-খণ্ডে ইনসাফভিত্তিক কুরআনের সমাজ বিনির্মাণ ও অবহেলিত শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা সিলেটবাসী চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন ও পরিবাবরবর্গকে এই শোক সইবার শক্তি দিন। আমীন।
শোক প্রকাশ করে বিবৃতি প্রদান করেছেন- সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নায়েবে আমীর হাফিজ আব্দুল হাই হারুন ও মো: ফখরুল ইসলাম এবং মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা সোহেল আহমদ প্রমুখ।


শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০১৫

সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন জামায়াত


আমাদের বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ: দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার দলটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান।
বিবৃতি তিনি বলেন, “ঈদুল ফিতরের পরের দিন ১৯ জুলাই সিরাজগঞ্জ জেলার মুলিবাড়িতে দুটি বাসের মুখোমুখি  সংঘর্ষে বাস দু’টির চালকসহ ১৭ জন যাত্রী নিহত ও অর্ধশত যাত্রী আহত হয়েছে। গত ২৩ জুলাই গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও অন্যান্য স্থানে মোট ৩১ জন যাত্রী নিহত হয়েছে। একদিনেই ৩১ জন যাত্রী নিহত হবার ঘটনা পরিস্থিতির ভয়াবহতাই প্রমাণ করে। বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার এক সপ্তাহ আগে এবং পরে দুর্ঘটনার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, গত ২০১৪ সালের ঈদুল ফিতরের পূর্বের ১ সপ্তাহে ৮৫টি ও পরের ১ সপ্তাহে ১০৪টি সড়ক দুর্ঘনায় ২৫৬ জন লোক হতাহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, ২০১৪ সালে প্রায় ছয় হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে এর কয়েকগুণ বেশী লোক। অনেকে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হওয়ায় তাদের পরিবারে বিপর্যয়ে নেমে এসেছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য বর্তমান সরকার যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী প্রতিনিয়তই মিডিয়ার সামনে যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রদানের কথা বলছেন।”
“যানবাহন চলাচল আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ না করার কারণেই এভাবে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় হাজার হাজার লোক নিহত হচ্ছে এবং অসংখ্য লোক আহত ও পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। কোথাও কোন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেই তার দায়িত্ব শেষ করে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির বিচার ও দুর্ঘটনা রোধের কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।”
“বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) হিসেব মতে, সারা দেশে ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৫৪টি ফিটনেসবিহীন যানবাহন রয়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আযহার সময় এ ফিটনেসবিহীন গাড়ীগুলো রাস্তায় নামানোর কারণেই দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়।”
“ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন পুরোনো যানবাহন চলাচল বন্ধ এবং অনভিজ্ঞ গাড়ী চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করে গাড়ী চালকদের যান চলাচল আইন কঠোরভাবে মেনে চলতে বাধ্য করা এবং প্রত্যেকটি সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও সেই সাথে সড়ক এবং মহাসড়কের ভাঙ্গাচুরা রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামত করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার নিয়োগ - আবেদন করুন এখনই

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার নেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় (বিপিএসসি) তাঁদের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে। এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিটি www.bpsc.gov.bd ঠিকানায় পাওয়া যাবে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এ পদে ১৪৪ জন নেওয়া হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রার্থী বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ৫০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকবে। আর বাকি ৫০ শতাংশ থাকবে সাধারণ প্রার্থীদের। চলছে আবেদনের প্রক্রিয়া। অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন 
করতে হবে ২৮ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে। তাই এ কাজের সহযোগী হতে চাইলে আপনিও আবেদন করতে পারেন।
আবেদনের যোগ্যতা: এ পদে আবেদন করতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রিসহ দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার্স ডিগ্রি অথবা চার বছর মেয়াদি দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি পাস হতে হবে। বয়স হতে হবে ১ জুন ২০১৫ তারিখে সাধারণ প্রার্থীদের জন্য ১৮ থেকে ৩০ বছর। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স সর্বোচ্চ ৪৫ বছর হলেও আবেদন করা যাবে। আর মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র ও কন্যাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩২ বছর।

আবেদন প্রক্রিয়া: প্রার্থীদের টেলিটকের ওয়েবসাইট http://bpsc.teletalk.com.bd অথবা বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের ওয়েবসাইট www.bpsc.gov.bd -এর মাধ্যমে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত আবেদন বিপিএসসি ফরম-৫ পূরণ করে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম এবং ফি জমা দিতে হবে। উল্লিখিত ওয়েবসাইট ওপেন করে Non-Cadre অপশন সিলেক্ট করে ক্লিক করলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও আবেদনপত্র পূরণের যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে। বিপিএসসি ফরম-৫ পূরণ সম্পন্ন হলে Application Preview দেখা যাবে। Preview-এর নির্ধারিত স্থানে প্রার্থীকে১০০ কেবি সাইজের ছবি জেপিজি ফরম্যাটে আপলোড করতে হবে এবং প্রার্থীর স্বাক্ষর ৬০ কেবির বেশি নয়, এ রকম মাপের স্বাক্ষর স্ক্যান করে জেপিজি ফরম্যাটে আপলোড করতে হবে। অনলাইনে আবেদনপত্র যথাযথভাবে পূরণ করে প্রার্থী কর্তৃক আবেদনপত্র সাবমিশন সম্পন্ন হলে কম্পিউটারে ছবিসহ Application Preview দেখা যাবে। নির্ভুলভাবে আবেদনপত্র সাবমিট করা সম্পন্ন হলে প্রার্থী একটি ইউজার আইডিসহ ছবি এবং স্বাক্ষরযুক্ত একটি Applicant’s Copy পাবেন। এই Applicant’s Copy প্রার্থীকে প্রিন্ট অথবা ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে হবে। Applicant’s Copy-তে একটি ইউজার আইডি নম্বর দেওয়া থাকবে এবং এই ইউজার আইডি ব্যবহার করে যেকোনো টেলিটক প্রি-প্রেইড মোবাইল নম্বর থেকে এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষার ফি বাবদ ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে। ফি অবশ্যই আবেদন জমা দেওয়ার তিন দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে। প্রার্থীকে তখন ফিরতি এসএমএসে একটি গোপন নম্বর দেওয়া হবে। এই ইউজার আইডি এবং গোপন নম্বর ব্যবহার করে প্রার্থিত ছবি ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর-সংবলিত প্রবেশপত্র প্রিন্ট ও ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

নিয়োগ প্রক্রিয়া: বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি বা বাছাই পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। তবে এ পদে আবেদনকারীর সংখ্যা দুই হাজারের বেশি হলেই কেবল প্রিলিমিনারি টেস্ট নেওয়া হবে। বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের www.bpsc.gov.bd বিপিএসি ফরম-৩ সংগ্রহ ও পূরণ করে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অন্য কাগজপত্র নির্ধারিত ঠিকানায় জমা দিতে হবে। এরপর প্রার্থীদের ২০০ নম্বরের লিখিত ও ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় বিষয় থাকবে চারটি। বাংলা ৫০, ইংরেজি ৫০, গণিত ও মানসিক দক্ষতা ৬০ এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে ৪০ নম্বর থাকবে। উত্তীর্ণ হতে হলে প্রার্থীকে লিখিত ৪৫ শতাংশ ও মৌখিক পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় আলাদাভাবে পাস করতে হবে।
পরীক্ষার প্রস্তুতি: ২০০৬ সালে দিনাজপুর সদরের বড়ইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন জয়ন্ত কুমার মণ্ডল। এই পদে থাকা অবস্থায় তিনি বিভাগীয় নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। পরীক্ষার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলা বিষয়ে ভালো করতে হলে সাহিত্য ও ব্যাকরণ অংশে বেশি জোর দিতে হবে। কারণ, এখান থেকেই বেশি প্রশ্ন পাওয়া যাবে। ব্যাকরণ অংশে কারক, বিভক্তি, শব্দ, ভাষা, সন্ধি বিচ্ছেদ, সমাস, সমার্থক শব্দ, এক কথায় প্রকাশ, অনুবাদ, বানান শুদ্ধি, বাগধারা—এসব অধ্যায় ভালোভাবে পড়তে হবে। আর সাহিত্য অংশে কবি সাহিত্যিকদের জন্ম-মৃত্যু সাল, কবির নাম, কবিতার পঙ্‌ক্তি, বিভিন্ন বইয়ের রচয়িতা—এসব বিষয় আয়ত্তে থাকলে বাংলা অংশে ভালো করা যাবে। আর ইংরেজিতে ভালো করতে হলে পড়তে হবে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির গ্রামার বইগুলো। Tense, Voice, Article, Parts of speech, Correct spelling, Antonym, Narration, Translation, Noun—এই অধ্যায়গুলো চর্চা করলে ইংরেজিতে ভালো করা যাবে।
গণিতে ভালো করতে হলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বইগুলো বারবার চর্চা করতে হবে বলে জানান নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার মো. বেলাল হোসেন। পাটিগণিত থেকে লসাগু, গসাগু, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি, অনুপাত-সমানুপাত—এসব অধ্যায় ভালো করে চর্চা করলে ফল পাওয়া যাবে। আর বীজগণিতের জন্য করতে হবে উৎপাদক, বর্গ সূত্র ও প্রয়োগ, গসাগু, সূচক, লগারিদম ইত্যাদি অধ্যায়। জ্যামিতির জন্য রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ক্ষেত্রফল ও বৃত্ত অধ্যায়গুলো আয়ত্তে রাখা দরকার। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা হবে। তাই প্রতিটি উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রশ্ন থাকে। এ অংশে ভালো করতে হলে নিয়মিত পত্রিকা পড়া, দেশি-বিদেশি সমসাময়িক খবরগুলো আয়ত্ত করে নেওয়া। বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, জলবায়ু, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, বিভিন্ন জেলার আয়তন, অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত থাকা। আর আন্তর্জাতিক অংশের জন্য বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, সাম্প্রতিক ঘটনা—এসব সম্পর্কে জানা থাকলে ভালো করা যাবে। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোর সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার নিয়োগের প্রশ্নগুলো সমাধান করলেও কাজে দেবে।
কাজের ধরন ও বেতন: জয়ন্ত মণ্ডল জানান, একজন সহকারী থানা শিক্ষা অফিসারকে উপজেলা বা থানায় অবস্থিত বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তদারকির দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাঁরা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। শিক্ষার্থীদের পাঠদান পদ্ধতির উন্নতি ও সমস্যা সমাধানে কাজ করেন।
এ ছাড়া তাঁদের এসব বিদ্যালয়ের যাবতীয় বিষয়ে থানা শিক্ষা অফিসারের কাছে প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন দেওয়াসহ নানা কাজ করতে হয়।
 অন্যান্য পদের চাকরির মতো এই পদেও পদোন্নতির সুযোগ আছে। চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ১৬ হাজার ৫৪০ টাকা বেতন পাবেন।

বৃদ্ধাশ্রমেই আশ্রয় হলো জাবি অধ্যাপকের!

দীর্ঘ ১৭ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন সুনামের সঙ্গে। ২০০৬ সালে অবসর নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক (অব.) ড. এম আব্দুল আউয়ালের (৭০)শিক্ষকতার আগে ১৯৬৫-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এটমিক এনার্জিতে চাকরি করেছি। এরপর শিক্ষকতা। জীবনে অনেক টাকা-পয়সা উপার্জন করেছি। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার সময়ও আমার ২ কোটির বেশি টাকা ছিল। সেসব টাকার মধ্যে কিছু একটি এমএলএম কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ধরা খাই। এরপর আবার অপরিচিত একজনের আশ্বাসে আফ্রিকা যাওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ধরা খাই। তারপর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ছেলে-মেয়েরা আমার খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেয়।
কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেটে নিজের ফ্ল্যাট ছিল আব্দুল আউয়ালের। এছাড়া পল্লবীতেও বেশ কিছু জমি ছিল। কিন্তু এসব বড় ছেলে কৌশলে বিক্রি করে টাকা পয়সা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন, আক্ষেপ করেই বলেন অধ্যাপক আউয়াল। তিনি বলেন, ওরা আমাকে এতো কষ্ট দেয় কেনো। আমাকে নিয়ে এতো ছলচাতুরি করে কেনো? বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠেন অধ্যাপক। তিনি বলেন, আমি কি এই জন্য এতো কষ্ট করে ওদের মানুষ করেছিলাম? অধ্যাপক আউয়াল বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কিছু দিন বড় ছেলের সঙ্গেই থাকতাম। ছেলের সংসারে থাকার সময় জানতে পারি ছেলে ও বউয়ের মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। একদিন বাসায় থাকা অবস্থায় বউয়ের মুখে গালি শুনে বাসা থেকে নেমে আসি। আর ফিরে যাই নি। ওরাও কেউ খোঁজ নেয়নি।
ছোট ছেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে আসে ২০১৪ সালে। এসে মিরপুর-১ নম্বরে একটি দোকানে আমার সঙ্গে দেখা করে কথা বলে । সেখানে গেলে আমাকে জানায় তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি ওর বাবা অথচ আমাকে জানালোও না যে বিয়ে করতে যাচ্ছে। বিয়ে করে আবার চলে যাবে, একথা শুনে ছেলের বউকে দেখতে চান তিনি। কিন্তু তার সাথে দেখা করা যাবে না বলে জানায় ছেলে।
এ অধ্যাপক আফসোসের সুরে বলছিলেন, অথচ এই ছেলের পড়ালেখার জন্যও পেনশনের টাকা থেকে ২৬ লাখ পাঠিয়েছি। সেই ছেলেও আমাকে কোনোদিন ফোন করে না। মাঝে মাঝে ইমেইলে চিঠি লেখে।

'মুসলিম হওয়ার কারণেই মেমনকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে'


ভারতের মুম্বাইয়ে ১৯৯৩ সালে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির সাজার বিরোধিতা করল অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন। দলটির প্রেসিডেন্ট আসাদউদ্দিন ওয়াইসি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘সরকার ধর্মের ভিত্তিতে তাকে ফাঁসি দিতে চাচ্ছে। ইয়াকুব মেমন মুসলিম হওয়ার জন্যই তাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। যদি ফাঁসি দিতে হয় তাহলে সমস্ত অপরাধীদের দেয়া উচিত, শুধু একজনকেই কেন?’
আসাদউদ্দিন ওয়াইসি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘মুম্বাই দাঙ্গার ঘটনায় জড়িত অপরাধী, রাজীব গান্ধী হত্যাকারী এবং বিয়ন্ত সিংয়ের হত্যাকারীকে ফাঁসি দেয়া হয়নি কেন?’  
এদিকে, ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির সাজা হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং ‘র’-এর  সাবেক কর্মকর্তা বি রমন। এ ঘটনা এতদিন পরে প্রকাশ্যে আসায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
নিউজ পোর্টাল রেডিফ ডটকমের জন্য ২০০৭ সালে একটি নিবন্ধ লেখেন ‘র’-এর সাবেক কর্মকর্তা বি রমন। এতে তিনি ‘ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির সাজা হওয়া উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করার পাশাপাশি নানা বিষয় তুলে ধরেছেন। ইয়াকুব মেমন তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা ছাড়াও তার পরিবারের অন্যদের আত্মসমর্পণের জন্য রাজি করিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেছেন বি রমন।
রেডিফের জন্য লেখা ওই নিবন্ধ ৮ বছর ধরে ছাপা হয়নি। কিন্তু ফাঁসি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় তার অবসরপ্রাপ্ত আইএএস কর্মকর্তা ভাই বি এস রাঘবনের অনুমতি নিয়ে রেডিফ ওই নিবন্ধ ছেপেছে। রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) পাকিস্তান ডেস্কের প্রধান ছিলেন বি রমন। ২০১৩ সালে তার মৃত্যু হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে মুম্বাইতে ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় টাডা আদালত ২০০৭ সালের ২৭ জুলাই ইয়াকুব মেমনকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করে। বম্বে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রেসিডেন্টের কাছেও তার সাজা মওকুফের আবেদন বাতিল হয়ে গেছে।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ হওয়ার পরে আবারো সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছেন ইয়াকুব মেমন। মেমনের আইনজীবী দাবি করেছেন, অভিযুক্তের পক্ষে সমস্ত আইনি বিকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা যায় না। কিন্তু মেমন সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করার আগেই দায়রা আদালত এই পরোয়ানা জারি করে দেয়। উত্তর প্রদেশে এক দম্পতির বিরুদ্ধে চলতি বছরের মে মাসে মৃত্যু পরোয়ানা খারিজের উদাহরণ দিয়ে মেমনের আইনজীবী দাবি করেছেন তার ক্ষেত্রেও একই ছাড় দেয়া হোক।
বুধবার মহারাষ্ট্রের গভর্নর বিদ্যাধর রাওয়ের কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদনও জানিয়েছেন মেমন। সব মিলিয়ে আগামী ৩০ জুলাই নির্ধারিত দিনেই তার ফাঁসি হবে কি না তা নিয়ে কিছুটা সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। 
রেডিও তেহরান 

অমিত সম্ভাবনার পার্বত্য চট্টগ্রাম : শান্তি, সম্প্রীতি এবং উন্নয়নের স্বপ্ন ও বাস্তবতা- ব্রি. জে. মো. তোফায়েল আহমেদ, পিএসসি

ব্রি. জে. মো. তোফায়েল আহমেদ, পিএসসি
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
সুপ্রাচীন কাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহাসিক এবং ভৌগলিক অবস্থানজনিত কারণে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানকার জীবনযাত্রা সমতল এলাকার তুলনায় কঠিন ছিল বিধায় অতীতে খুব বেশিসংখ্যক লোকজন এই এলাকায় বাস করতে উৎসাহী হয়নি। বর্তমানে যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আছেন তারা ইদানীং নিজেদের আদিবাসী বলে দাবী করেন এবং এদেশের কিছু মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবিগণ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন না করে, জেনে অথবা না জেনে বিভিন্ন সময়ে এ শব্দের প্রতিধ্বনি করে যাচ্ছে। আদিবাসী হচ্ছে অষ্ট্রেলিয়ার এ্যাবোরেজিনিয়াস, নেটিভ আমেরিকান রেড ইন্ডিয়ান, ফ্রান্স ও স্পেন এর বাসকু, দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা ও মায়া, জাপানের আইনু, আরব বেদুইন সম্প্রদায় ইত্যাদি যারা সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডে আদিকাল থেকে বসবাস করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের একদশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় (১৩,২৯৫ বর্গ কিঃমিঃ/৫,১৩৩ বর্গ মাইল) যে মাত্র এক শতাংশ জনসংখ্যা (২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ১৫,৯৮,২৯১ জন) বাস করছে তার ৪৭% বাঙালী, ২৬% চাকমা, ১২% মারমা এবং ১৫% অন্যান্য পাহাড়ী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা সিনলুন, চিন, আরাকান, ত্রিপুরা, বার্মা এবং অন্যান্য এলাকা থেকে আনুমানিক মাত্র তিনশ থেকে পাঁচশ বছর পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে আবাস স্থাপন করেছে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় প্রথম আসে কুকীরা। পরবর্তীতে ত্রিপুরাগণ এবং ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে আসে আরাকানী গোত্রভুক্ত চাকমা ও মার্মা সম্প্রদায়। অথচ এদেশে বাঙালী বা তাদের পূর্বপুরুষগণ বসবাস করতে শুরু করেছে প্রায় চার হাজার বছর আগে থেকে। কাজেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আদিবাসী হবার দাবীর প্রশ্নটি এখানে অবান্তর এবং আবাসপত্তনের সময় হিসেব করলে বাঙালীরাই বাংলাদেশের আদিবাসী । আর পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত অবাঙালীরা এদেশের সংবিধানের স্বীকৃতি অনুযায়ী ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী।
দেশ বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমিকা
কালের পরিক্রমায় পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা দুইবার বড় ধরনের ভুল করে। প্রথমবার ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময় তারা ভারতের অংশ হবার চেষ্টা করে এবং চাকমা নেতা কামিনী মোহন দেওয়ান ও স্নেহকুমার চাকমা রাঙ্গামাটিতে ভারতীয় এবং বোমাং রাজা বান্দরবনে বার্মার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় এবং বোমাং রাজা মংশৈ প্রু চৌধুরী পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করে রাজাকার এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এর মধ্যে রাজা ত্রিদিব রায় যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন এবং ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে পাকিস্তানে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে কখনোই আর তিনি বাংলাদেশে ফেরৎ আসেননি। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ছিলেন মং সার্কেলের রাজা মং প্রু সাইন। তিনিই একমাত্র রাজা যিনি মুক্তিযুদ্ধে আখাউড়া ও ভৈরব এলাকায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সেনাবাহিনীর কর্ণেল পদমর্যাদা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। রাজা মং প্রু সাইন নিজস্ব ৩৩টি অস্ত্র, ৪টি গাড়ী এবং অনেক অর্থ মুক্তিযুদ্ধের জন্য ব্যয় করেছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা মং রাজার ৮টি হাতি, ৭টি ঘোড়া, ১৭০টি মহিষ, ১৬৬৩টি গরু, গুদাম ঘরে রক্ষিত ৯০,০০০ আড়ি ধান, ২৭০০টি চেয়ারসহ অনেক মূল্যবান ফার্নিচার, দশহাজার অতিথিকে আপ্যায়ন করার মত সরঞ্জামাদি, ১৮টি পাওয়ারটিলার, ১০টি জেনারেটর, রাজ পরিবারের শত বছরের স্মৃতি বিজড়িত অজস্ত্র স্বর্ণালংকার ও কয়েক কোটি টাকার ধনসম্পত্তি লুণ্ঠন করে। উল্লেখ্য যে, মুক্তিযুদ্ধে এতবড় ত্যাগ এবং অবদান রাখার পরও তাঁকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক যথাযথ সম্মান প্রদর্শন এখনও পর্যন্ত করা হয়নি। আশা করা যায়, মুক্তিযুদ্ধে তার এবং এই রাজপরিবারের অবদান যথাসময়ে মূল্যায়ন করা হবে।
কাপ্তাই ড্যাম ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল
১৯৬২ সালের কাপ্তাই ড্যাম অধ্যায় যে ন্যাক্কারজনকভাবে সমাধান করা হয়েছে তা মানব সভ্যতার ইতিহাসে সত্যিই বিরল। হাজার হাজার মানুষ (তার মধ্যে অনেক বাঙালীও ছিল) যারা তাদের বসতবাড়ি হারালো অথচ তাদের যথাযথভাবে ক্ষতিপুরণ প্রদান এবং পূর্নবাসন করলো না তদানিন্তন পাকিস্তানি সরকার। ১৯৭০ সালে থেগামুখ, শুভলং এবং রাইনখিয়াং থেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল সৃষ্টির জন্য অনেক পরিবারকে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক একইভাবে যথাযথ পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা হয়েছিল। অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সেই পাকিস্তান সরকারের পক্ষেই অস্ত্র ধরলো ঐ পাহাড়ী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির বেশীর ভাগ  এবং হত্যা করলো ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের এই ভূমিকার কথা এদেশের আপামর জনসাধারণের ক’জনই বা জানে? এখন দেশে মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য রাজাকারদের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একই অপরাধে তারা অপরাধী কিনা সময়ই তা বলে দিবে।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কার্যক্রম
মুক্তিযুদ্ধের ধকল কাটতে না কাটতেই এই অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৯৭৬ সালের ১৮ জুলাই বিলাইছড়ি থানার তক্তানালার কাছে মালু মিয়া পাহাড়ের নিকটে সকাল ১১টায় রাঙ্গামাটি থেকে আগত পুলিশ পেট্রোলের উপর আক্রমণ পরিচালনার মধ্য দিয়ে আরেকটি অসম যুদ্ধের সূচনা হয়। এর পরবর্তী ইতিহাস রক্তের হোলি খেলার ইতিহাস। শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছিল অসংখ্য নিরীহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বাঙালী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। বর্তমানে একই ধরনের কার্যক্রম ইউপিডিএফ, জেএসএস এবং সংস্কারবাদী দলের সন্ত্রাসীরা সবাই মিলে করছে। তথ্য মতে, ৩০ জুন ২০১৫ পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০৯৬ জনকে হত্যা, ১৮৮৭ জনকে আহত এবং ২১৮৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। এর প্রায় এক তৃতীয়াংশ পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য। নিরাপত্তা বাহিনীকেও সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির ভৌগলিক অখন্ডতা রক্ষার জন্য বেশ চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। শুরু থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৫৩ জন প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪৫২ জন এবং ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ২৫৫ জন।
শান্তিচুক্তি ও পরবর্তী অধ্যায়
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির মাধ্যমে হত্যা, লুণ্ঠন, জ্বালাও, পোড়াও, নারী নির্যাতনসহ অসংখ্য সন্ত্রাসী কার্য়ক্রমের অবসান হবে বলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জনসাধারণ ধারণা করেছিল। কিন্তু বর্তমানে কি দেখা যাচ্ছে? শুধু বাঙ্গালী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাও অত্যাচারিত, নিপীড়িত এবং ভয়ংকর জিঘাংসার শিকার। জেএসএস, ইউপিডিএফ এবং সংস্কারবাদী নামে গড়ে উঠা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মানুষদের কাছ থেকে নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে জোর জবরদস্তি করে চাঁদা আদায় করে, আদায়কৃত চাঁদার টাকা দিয়ে অস্ত্র কিনে এবং সেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আরো বেশি চাঁদা আদায় করে। এ যেন এক সীমাহীন চলমান গোলক ধাঁধার বৃত্ত। এখানকার বিত্তহীন নিরীহ মানুষদের হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, ফসল ধ্বংস, বাগান ধ্বংস, জ্বালাও-পোড়াও, ভয়ভীতি এবং নির্যাতন এখনও চলছে। ইদানীং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সংগঠিত সকল বিষয়ে তারা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, আদেশ নির্দেশ ও মিমাংসা না মানার জন্য ভয় ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করছে যা সংবিধান বিরোধী এবং দেশদ্রোহীতার নামান্তর। তারা পার্বত্য জনপদে সরকার ও প্রশাসনের একটি বিকল্প সরকার ও ছায়া প্রশাসন জোর করে এখানকার মানুষদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। আর প্রশাসন কখনো কখনো নিরুপায় হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নির্যাতন ও অত্যাচারের ভয়ে এই সব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এত অমিত সম্ভবনাময় এই অঞ্চল অথচ এখানে সকলে আসতে ভয় পায় কেন? কেন সকল উন্নয়ন কার্যক্রমে তাদের চাঁদা দিতে হয়? কেন কলা, কচু, মুরগি, ছাগল, শুকর, গরু বিক্রি থেকে শুরু করে ধানিজমি, বাগান সব কিছুর জন্য চাঁদা দিতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে ?
শান্তিচুক্তি বাস্ততবায়নের অগ্রগতি
একটি অর্ধেক পানি ভর্তি গ্লাসকে অর্ধেক পুর্ণ বা অর্ধেক খালি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। শান্তি চুক্তির সর্বমোট ৭২টি ধারার মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ, ১৫টি ধারার বেশীর ভাগ অংশ এবং অবশিষ্ট ৯টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি করেছিলেন এবং অবশ্যই তিনি তা বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর। চুক্তি অনুযায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক ক্যাম্প ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে অথচ সন্ত্রাসীরা তাদের সকল অস্ত্র এখনও পর্যন্ত সমর্পন করেনি। কিন্তু পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত সাধারণ জনগন দাবী করেছে যে নিরাপত্তা বাহিনী এখান থেকে চলে গেলে তারা আরও বেশী নিরপত্তা ঝুকিতে আবর্তিত হবে। শান্তিচুক্তির সবচেয়ে জটিল যে বিষয়টি তা হচ্ছে ভুমি ব্যবস্থাপনা। এ বিষয়ে ভুমি কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং সেই কমিশন কাজ করছে। ভুমি কমিশনের প্রধান ছাড়া বাকী সকল সদস্যই পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর। বিষয়টির ব্যপকতা এবং জটিলতার কারণেই একটু বেশী সময় লাগছে সমাধান করতে। তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। এ পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙ্গালী উভয় পক্ষ খাগড়াছড়িতে ৩১০৫টি, রাঙ্গামাটিতে ৯৬৯টি এবং বান্দরবনে ৩৮৪টিসহ সর্বমোট ৪৪০৮টি ভুমি সংক্রান্ত মামলা করেছে। অগ্রগতি হিসেবে ইতোমধ্যে কমবেশী ৪০০০টি মামলার ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে, ৩৩টি মামলার শুনানী শেষ হয়েছে এবং বাকী মামলাগুলোর ব্যাপারে কার্যক্রম চলছে। দেখা গেছে, এখানকার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ভুমি সমস্যা সমাধান কার্যক্রমে সর্বদা বাধা প্রদান করে থাকে, কারণ ভূমি সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে তাদের হাতে কোন ইস্যু থাকবেনা যা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ট্রাম কার্ড। একইভাবে যে সকল বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ অবৈধভাবে প্রাপ্যের চেয়ে অনেক বেশী জমি দখল করে আছেন তারাও চান না ভূমি সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক। এছাড়া আর একটি জটিলতা হলো, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ব্যক্তিবর্গের ভূমির মালিকানার যথাযথ কাগজপত্র না থাকা। কারণ অতীতে তারা কোন প্রকার কাগজপত্র ব্যতিরেকেই জমি ভোগদখল করতো। এছাড়া শান্তিচুক্তির কিছু ধারা আমাদের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। সেগুলোর সমাধানের বিষয়ে কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এখানে ভুলে গেলে চলবে না যে পৃথিবীর অনেক দেশে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হবার পরও তা নানান কারণে কার্যকর করা যায়নি বা সম্ভব হয়নি। উদাহরণ স্বরূপ সুদান (১৯৭২), সোমালিয়া (১৯৯০), এঙ্গোলা (১৯৯১ ও ১৯৯৪), রুয়ান্ডা (১৯৯৩), নর্দান আয়ারল্যান্ড ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কাজেই শান্তি চুক্তির অনিষ্পন্ন বিষয়াবলির সামধানের জন্য ধৈর্য্যচ্যুতি কারও জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মনে হয় না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়নে ও মানবতার কল্যাণে নিরাপত্তাবাহিনীর ভূমিকা  অনেকেই অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম সম্বন্ধে তেমনটা ওয়াকিবহাল নন। সন্ত্রাস দমন ও দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখন্ডতা নিশ্চিত করার সাথে সাথে নিরাপত্তা বাহিনী এই অশান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জনগনের জন্য আবাসন স্থাপনে সহযোগীতা, স্থানীয় জনগনকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান এবং প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সরাসরি ভুমিকা রাখা; শিল্প ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কুটির শিল্প স্থাপন; নিরাপদ হাইজিন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা; কৃষি, পশুপালন, মাছ চাষ, হাঁস-মুরগী পালন, বৃক্ষ রোপন; ধর্মীয় ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান পালন, চিত্তবিনোদন, খেলাধুলা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে নিরাপত্তাবাহিনীর সাফল্যের কথা কোন এক অজানা কারণে এদেশের মানুষ জানতে পারে না বা জানানো হয় না। আমাদের মিডিয়াগুলো এ ব্যাপারে তেমন কার্যকরী ভূমিকা নেয় না বলেই অভিযোগ রয়েছে। একটি বিষয় এখানে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, পক্ষপাতহীন কার্যক্রমের জন্যই পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া বাকী সকলের কাছে এখনও নিরাপত্তাবাহিনীই সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য।
সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের স্বপ্ন
পার্বত্য চট্টগ্রামের অঞ্চলিক দল ও তাদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চাওয়া এবং স্বপ্নগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা জরুরী। অবস্থাদৃষ্টে তাদের চাহিদাগুলো নিম্নরূপ বলে প্রতীয়মান হয়:
শিক্ষার উন্নয়নে বাধা প্রদান
তাদের প্রথম স্বপ্ন সম্ভবতঃ এই এলাকার পশ্চাৎপদ মানুষদের মূর্খ করে রাখা। রাঙ্গামটিতে মেডিক্যাল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বাধা প্রদান তার প্রমাণ। না হলে এখানকার নিরীহ জনগণ, যারা তাদের ভয়ে নিয়মিত চাঁদা দেয়, তাদের ছেলেমেয়রা স্কুল/কলেজে যেতে পারে না; অথচ তাদের দেয়া চাঁদার টাকায় সেই সব নেতানেত্রীদের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করে শহরের নামী দামী স্কুল/কলেজে এবং বিদেশে। সেসব নেতানেত্রীদের সন্তানেরা ইংরেজী মাধ্যমে লেখাপড়া করলেও তারা চান সাধারণ জনগণের সন্ত্রানেরা শুধুমাত্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষা শিখে এবং বাংলা ও ইংরেজী না শিখে জংগলের আরও গভীরে চলে যাক। এখানে মায়ের ভাষা ভুলে যাবার কথা বলা হচ্ছে না, প্রগতি ও অগ্রগতির কথা বলা হচ্ছে। ভারতে সবাইকে কমপক্ষে ৩টি ভাষা শিখতে হয়। পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের ইচ্ছা, এখানকার জনগণ মূর্খ থাকলে তাদের পক্ষে শোষণ করা সহজ; যেমনটি তারা এতকাল ধরে করে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার এই এলাকার শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করেছে। ১৯৭০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাত্র ৬টি উচ্চ বিদ্যালয়/কলেজ ছিল যার বর্তমান সংখ্যা ৪৭৯টি। প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন প্রতি পাড়ায় পাড়ায়। এছাড়া ইতোমধ্যে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় (ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়েছে), একটি মেডিক্যাল কলেজ, ৫টি স্টেডিয়াম, ২৫টি হাসপাতাল এবং বর্তমানে ১৩৮২টি বিভিন্ন কটেজ ইন্ডাষ্ট্রি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার হার ১৯৭০ সালে মাত্র ২% শতাংশ ছিল যা বেড়ে এখন ৪৪.৬% হয়েছে। অবশ্য এই তথ্যে সন্তুষ্ট হবার কিছু নেই। এখানে বসবাসরত মানুষদের জন্য আরও অনেক কিছু করার দরকার ছিল এবং আরও অনেক কিছু করা সম্ভব ছিল। অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়নি এখানকার তথাকথিত সেইসব কল্যাণকামী (?) নেতানেত্রী এবং তাদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বাঁধার কারণে।
জনগণের থেকে জোর করে আদায় করা চাঁদার টাকায় আরাম আয়েশে দিনযাপন করা
এটি তাদের দ্বিতীয় স্বপ্ন এবং বর্তমানে নিষ্ঠুর বাস্তবতা। জানা গেছে, যে শুধুমাত্র মাটিরাঙ্গা থেকে বছরে ৩২ কোটি টাকার মত এবং সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বছরে কমবেশী ৪০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়। কোথায় ব্যয় হয় সেই টাকা? কয়টা স্কুল, কয়টা কলেজ, কয়টা হাসপাতাল তৈরি করে দিয়েছে জেএসএস, ইউপিডিএফ এবং সংষ্কারবাদীরা? কত ফিট রাস্তা তারা এ পর্যন্ত নির্মাণ করে দিয়েছে? কি করেছে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা জবরদস্তী করে লুট করে নিয়ে? এখন সময় এসেছে এখানকার সন্ত্রাসী নেতাদের সম্পত্তির হিসাব নেয়ার কারণ জানা গেছে যে, নেতাদের অনেকেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, করেছেন বাড়ী/গাড়ী, ব্যাংক ব্যালেন্স ইত্যাদি। পাহাড়ে বসবারত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা সরকারকে কর প্রদান করে না। পক্ষান্তরে করের থেকে কয়েকগুণ বেশী চাঁদা দিতে বাধ্য হয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের। এত কিছুর পরেও বাংলাদেশ সরকার সমতল ভূমির জনগণের কর থেকে অর্জিত অর্থ পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যয় করছে । পার্বত্য অঞ্চলে ১৯৭০ সালে মাত্র ৪৮ কিঃমিঃ রাস্তা ছিল। বাংলাদেশ সরকার নির্মাণ করেছে প্রায় ১,৫০০ কিঃমিঃ রাস্তা, অসংখ্য ব্রিজ ও কালভার্টসহ সম্পন্ন করেছে অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম। কিন্তু রাস্তাঘাট ও ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণে এবং সকল প্রকার উন্নয়ন কার্যক্রমে তারা সবসময়ে বাঁধা দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে। সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজী এবং শ্রমিক অপহরণ ও বাঁধার সৃষ্টি না করলে উন্নয়ন কাজ আরও সহজে সম্পন্ন করা যেত। জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল নির্মাণ কাজে জেএসএস, ইউপিডিএফ এবং সংস্কারবাদী সন্ত্রাসীদের যথাক্রমে ১০%, ৫% ও ৩% অথবা আরোও বেশী হারে চাঁদা দিতে হয়। এখানে কোন বিত্তশালী কিংবা দেশী বিদেশী কোম্পানী পুঁজি বিনিয়োগ করতে চান না কেন ? লক্ষীছড়ি থেকে বার্মাছড়ি পর্যন্ত রাস্তার কাজ বন্ধ করে ঠিকাদার কেন পালিয়ে গেলেন? এই অত্যাচার থেকে এখানে বসবাসরত নিরীহ মানুষদের কবে মুক্তি মিলবে?
স্বায়ত্বশাসন তথা পৃথক জম্মুল্যান্ড গঠন  
পার্বত্য সন্ত্রাসীদের তৃতীয় দিবা কিংবা অলীক স্বপ্ন হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্বশাসিত প্রকারান্তরে স্বাধীন একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করা যার নাম হবে ‘জম্মুল্যান্ড’। বর্তমান বিশ্বে দুই জার্মানী এক হলো, দুই কোরিয়া এক হতে চেষ্টা করেছে, ইন্ডিয়া সিকিমকে যুক্ত করে আরও বড় হয়েছে, সমগ্র ইউরোপ অভিন্ন মুদ্রা ব্যবহার করছে এবং পাসপোর্টবিহীনভাবে ইউরোপের সব দেশে চলাচল করছে, হংকং চীনের সাথে অঙ্গীভুত হয়েছে, স্কটল্যান্ডের জনগন পৃথক দেশ গঠনের বিরুদ্ধে গণভোট প্রয়োগ করেছে; অর্থাৎ সবাই যখন যুক্তভাবে শক্তিশালী হতে চেষ্টা করেছে তখন পার্বত্য সন্ত্রাসীরা চেষ্টা করছে এদেশ ভেঙ্গে ছোট করতে; প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিকে টুকরো টুকরো করতে। তাদের স্বায়ত্বশাসন বা স্বাধীন ভূ-খন্ডের এই অলীক ও অবাস্তব স্বপ্ন কখনই পূরণ হবে না, হতে পারে না। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে প্রায় সব দেশ স্বাধীন হয়েছে। পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। কিন্তু লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই ভূখণ্ডে নতুন করে আরেকটি দেশ তৈরী করা কখনোই সম্ভব হবে না। এখানে আরোও দুটি বিষয়ে আলোকপাত করা দরকারঃ
বর্তমান চাহিদামত নতুন ভূখণ্ড তথা ‘জম্মুল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের আরও এক বা একাধিকবার যুদ্ধ করতে হবে স্বতন্ত্র চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমা ল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কারণ সবাই জানে যে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমাদের মধ্যে শিক্ষা, সুযোগ সুবিধা, জীবনযাত্রার মানের বিভিন্ন সূচকে রয়েছে বিশাল বৈষম্য। অপর বিষয়টি হলো: ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, এক সাগর রক্তের দামে কেনা এদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা রাজাকারদের কোন প্রচেষ্টা, এদেশের ১৬ কোটি মানুষ এবং এদেশের চৌকষ নিরাপত্তা বাহিনী সফল হতে দেবে কিনা তা বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর থাকলো।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্ধেক জনগোষ্ঠিকে বিতাড়িত করা
এখানকার সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আরেকটি স্বপ্ন এখানে বসবাসরত অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অর্থাৎ বাঙালী সম্প্রদায়কে এখান থেকে বিতাড়িত করা। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ আমেরিকাকে বলা হয় ইমিগ্রান্ট বা অভিবাসীদের দেশ। আমেরিকাতে নেটিভদের বাদ দিলে শতকরা ৯৯% জনেরও বেশী মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে গিয়ে সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা ও ইউরোপে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠি একত্রে বসবাস করছে। এখানকার অনেক নেতা নেত্রীদের সন্তান ও আত্বীয়/স্বজনেরা আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন এর স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন কিংবা নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। তারা বাংলাদেশের যে কোন স্থানে বসতি স্থাপন করতে পারে এবং করছে। কিন্তু সমতলের বাংলাদেশীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করাতেই তাদের যত আপত্তি। তাদের এক অদ্ভুত দাবী। এখানে যার জন্ম হয়েছে, এই মাটির ধূলা মাখিয়ে যে বড় হয়েছে, এখানের বাতাসে যে নিশ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করে বেঁচে আছে, তাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। কি অদ্ভুত এবং অবাস্তব আবদার। শান্তিচুক্তিতেও কিন্তু একথা লেখা নেই যে এখানে বসবাসরত বাঙালীদের এখান থেকে চলে যেতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দাবী মোটেই বাস্তব সম্মত নয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাসবাসরত জনসাধারনের করণীয় কি
একটু আগেই বলা হয়েছে যে এখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরাও মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসীদের ভয়ংকর জীঘাংসার শিকার। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাসরত সাধারণ মানুষদের ইচ্ছা অনিচ্ছায় কিছু যায় আসে না। তাদের পালন করতে হয় এখানকার নেতৃত্ব ও সন্ত্রাসীদের নির্দেশ। এই প্রসঙ্গে নিম্নের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব আরোপ করা যেতে পারে যেমন:
নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদের নিশ্চিত করতে হবে
পৃথিবীর এমন কোন শক্তিশালী নিরাপত্তা বাহিনী নেই যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে নিরাপত্তা দিতে পারে। তাই এখানকার জনসাধারণের নিরাপত্তা নিজেদেরকে সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য নিজ নিজ এলাকায়, প্রতিটি বাজারে এবং পাড়ায় পাড়ায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যথার্থ তথ্য দিলে যে সব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও দুস্কৃতিকারীরা এলাকায় শান্তি বিনষ্ট করছে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নিরাপত্তা বাহিনী সদা প্রস্তুত রয়েছে।
চাঁদা প্রদান বন্ধ করতে হবে
যেকোন ভাবে সকলকে নিয়মিত ও অনিয়মিত চাঁদা প্রদান বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে এখানকার উন্নয়ন কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, মোবাইল কোম্পানী, আন্তঃজেলা বাসমালিক ও ব্যবসায়ীদেরকে সন্ত্রাসীদের চাঁদা প্রদান বন্ধ করতে হবে। তাহলেই তারা অস্ত্র কেনা এবং অন্যান্য দলীয় কার্যক্রম সম্পাদনে অর্থ যোগানের জটিলতায় ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে পরবে। তাই নিজ নিজ পাড়া ও বাজার এলাকাকে চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাস মুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে। চাঁদাবাজদের পাকড়াও করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। কারো একার পক্ষে এই কাজ সম্ভব না হলেও সম্মিলিত ভাবে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করা সম্ভব।
টেকসই আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে
টেকসই আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা বজায় এবং আত্মনিয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা শুধু “পাশের হার” এবং “জিপিএ”র হলে চলবে না। সত্যিকার অর্থে আত্মকর্মসংস্থান সম্ভব হবে এমন শিক্ষাগ্রহণ করতে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা ও উৎসাহিত করতে হবে। আর এজন্য যা দরকার তা হচ্ছে নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। কৃষি, বৃক্ষরোপণ, পশুপালন, মাছ চাষ, একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে সকলকে স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করতে হবে এবং জীবনযাত্রার মান এগিয়ে নিয়ে যেতে সচেষ্ট থাকতে হবে। বর্তমান প্রজন্ম যে অবস্থায় আছে তার চেয়ে পরবর্তী প্রজন্ম যেন আরও ভালো থাকতে পারে এই চেষ্টা বজায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, সৃষ্টিকর্তা তাকেই সহযোগিতা করেন যিনি নিজেকে সাহায্য করতে সচেষ্ট থাকেন।
শান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে হবে                                                                 
সকলকে শান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বাংলাদেশের প্রধান শক্তিই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। বাঙালী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ সকল ধর্মালম্বী ও সকল জাতি গোষ্ঠীদের পরস্পরের প্রতি সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে হবে। কেউ যেন কখনই অন্য কারো কৃষ্টি, সভ্যতা, সামাজিকতা, ধর্মীয় অনুভূতি ইত্যাদিতে আঘাত না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
উপসংহার
স্বাধীনতার পর ৪২ বছরে বাংলাদেশের অর্জন প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক ভালো। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য সমাধানে সময় নষ্ট করা কারও কাম্য হতে পারে না। অতীতের হানাহানী ও বিবাদভূলে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অগ্রসর হতে হবে। এখানকার ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর অধিকার, তাদের উত্তরাধিকারীদের অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নতির অধিকার সুষমভাবে নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই। একই সাথে এখানে বসবাসরত অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাঙালীরাও নিষ্ঠুর বাস্তবতার শিকার। এই সমস্যার সমাধান তাদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়ার মধ্যে নয় বরং উভয় পক্ষের স্বার্থ ও সম্প্রীতি রক্ষা করার মাধ্যমেই সম্ভব। এদেশের জনগণ কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত অর্থ নিজের পরিবারের জন্য ব্যয় করতে চায়। দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পরে শান্তিতে জীবন যাপন করতে চায়। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুশিক্ষা এবং উন্নত জীবন চায়। অসুস্থ্য হলে সুচিকিৎসা চায়। এই অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য অঞ্চলে মুষ্টিমেয় কিছু সন্ত্রাসী কর্তৃক সৃষ্ট অশান্তি ও অস্ত্রের ঝনঝনানী সমূলে উৎপাটন করে সকলে মিলে একটি শান্তিপূর্ণ ও উন্নত জীবন যাপন করা এবং পরবর্তী বংশধরদের জন্য বসবাসযোগ্য বাংলাদেশ রেখে যাওয়াই সকলের স্বপ্ন। এদেশের অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য এলাকায় সকলে মিলে শান্তি ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে পারলে উন্নয়ন এবং উন্নত জীবনযাপন নিশ্চিত হতে বাধ্য।
লেখক: কমান্ডার, ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেড ও গুইমারা রিজিয়ন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
সুত্র: পার্বত্যনিউজ

মুসলমান হওয়ায় বাড়ি ভাড়া পাননি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক !

স্রেফ মুসলমান হওয়ায় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিম শামসউদ্দিন ইউটিউবে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় খোদ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে এ অভিযোগ জানিয়েছেন। রিমের ভিডিওটি ইতোমধ্যে অনলাইনে সাড়ে তিন হাজার দর্শক দেখেছেন। তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারও শুরু হয়েছে।
কেরালা থেকে আসা ৩০ বছরের রিম ভিডিওতে কেজরিওয়ালের উদ্দেশে বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যখন আমি দিল্লিতে আসি, পুরো রাজ্যে তখন আপনি মুখ্যমন্ত্রী হলে দিল্লির কেমন পরিবর্তন হবে, এএপি কিভাবে বৈষম্যসহ বিভিন্ন বিষয়গুলি মোকাবেলা করবে সেই প্রতিশ্রুতির আলোচনা চলছিল।  এবার আমি আপনাকে একটি বৈষম্যের কথা জানাতে চাচ্ছি যা, সম্প্রতি আমার সঙ্গে ঘটেছে।
গ্রীষ্মের ছুটি শেষে যখন আমি কলেজে যোগ দিলাম, সেসময় আমি ও আমার মা’র থাকার জন্য একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করলাম এবং অ্যাডভান্সও দিলাম। যেদিন আমি আমার জিনিসপত্র নিয়ে ফ্ল্যাটে উঠতে যাবে সেদিন বাড়ির মালিক আমাকে জানালেন, তিনি কোন মুসলমানকে তার ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে পারবেন না। যেখানে দিল্লি সবসময় অসাম্প্রদায়িকতা লালন করে আসছে সেখানে ধরণের অভিজ্ঞতা দুর্ভাগ্যজনক। রিম আরও বলেন, ‘ আমাকে যদি এ ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়,
তাহলে যে সব হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে আসছে তাদের কী হবে? আমার বিশ্বাস যে রাজ্যটি আপনি পরিচালনা করেন, যে দিল্লির প্রতিশ্রুতি আপনি দিয়েছেন সেখানে বিহারি, বাঙ্গালি, মালয়ি, মনিপুরি, কাশ্মীরি, গোয়ার, কালো,সাদা, নারী, পুরুষ, সমকামি, অন্ধ, গৃহহীন সবার জায়গা হবে।’ লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এমএইচ

ডায়াবেটিস আর ক্যান্সার : মুক্তির দূত আমলকি


রাস্তায়, বাসে, ট্রেনে এখন আমলকির রমরমা বাজার। ছোট্ট ফল, তবে ভেষজ গুণ রয়েছে অনেক। রোজ সকালে উঠে যদি একটা গোটা আমলকি খাওয়া যায়, তাহলে শরীরের পক্ষে খুবই ভালো। শুধুই ফলই না, পাতাও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন 'সি' থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে আমলকিতে তিন গুণ ও দশ গুণ বেশি ভিটামিন 'সি' রয়েছে। এই আমলকি বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতে দারুণ সাহায্য করে। আমলকির গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধেও এর নির্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। উপকারিতা ১. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। ২. আমলকি রস ত্বক, চুল ও চোখ ভালো রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িতও ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ৩. হজমে সাহায্য করে ও স্টমাকে আসিডের ভারসাম্য বজায় রাখে। ৪. আমলকি লিভার ভালো রাখে, মাথায় রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। ৫. আমলকি ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে। ৬. হার্ট সুস্থ রাখে, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে তোলে। ৭. শরীর ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে আর পেশি মজবুত করে। ৮. লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভালো রাখে। জ্বর, বদহজম, সানবার্ন, সানস্ট্রোক থেকে রক্ষা করে। ৯. যাদের কোষ্ঠকাটিন্যের সমস্যা রয়েছে, তারা প্রতিদিন সকালে একটি করে গোটা আমলকি খেতে পারেন। ১০. শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় মেদ ঝরাতেও আমলকি অপরিহার্য। ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমার জন্য আমলকির জুস দারুণ উপকারী। ১১. আমলকি গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন। এতে খিদে বেড়ে যায়।। ১২. এক গ্লাস দুধ বা পানির সঙ্গে আমলকি গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু'বার খেতে পারেন। অ্যাসিডিটির সমস্যা কম রাখবে অনেক। ১৩. আমলকিতে সামান্য নুন আর লেবুর রস মাখিয়ে রোদে শুকোতে দিন। শুকনো আমলকি রোজ খান। খাবারের সঙ্গে আমলকির আচারও খেতে পারেন। হজমে দারুন সাহায্য করে। ১৪. আমলকি মাঝারি আকারে টুকরো করে ফুটন্ত পানির মধ্যে দিয়ে নরম করতে দিন। পানি ঝরিয়ে টান্ডা করতে দিন। এরপর নুন, আদা কুচি, লেবুর রস মাখিয়ে রোদে শুকোতে দিন। একটি এয়ারটাইট পরিস্কার জারের মধ্যে রেখে দিন। নষ্ট হবে না। ১৫. এছাড়া প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের পরে ক্ষতিগ্রস্ত প্যানক্রিয়াস (অগ্ন্যাশয়)-এর ক্ষত সারাতে আমলকি খুবই কার্যকর। ১৬. ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, প্রদাহ এবং কিডনি রোগ সারাতে আমলকির বিশেষ গুণ রয়েছে। আমলকির ফল, পাতা ও ছাল থেকে তৈরি পরীক্ষামূলক ওষুধে এইসব রোগ নিরাময়ের প্রমাণ মিলেছে। ১৭. আমলকি মানুষের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে পারে বলে প্রমাণ রয়েছে। ১৮. রিপোর্ট বলছে, ডায়াবেটিক ইঁদুরের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকির রস রক্তের চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। লিভারের কর্মক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারে।  নয়া দিগন্ত অনলাইন

সামিউল ক্ষমা করিস বাপ, আমরা পারিনি তোদের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে দিতে- এম.এম. ওবায়দুর রহমান


সিলেঠে ১৩ বছর বয়েসি সামিউল কে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে, খুচিয়ে মারা হয়েছে। সেই পৈচাশিক ঘটনা আবার আরেক খুনি ভিডিও করেছে ! কি নির্মম! 
মনে পড়ে গেল ১৯৭৪ সালে আমার বড় চাচা যিনি পেশায় একজন ডাক্তার এবং মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাকে রক্ষী বাহিনীর খুনিরা এভাবেই প্রকাশ্য দিনে দুপুরে ব্যনেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করেছিল। সামিউলের মত তাকেও সেদিন মৃত্যুর মুখে পানি খেতে দেওয়া হয়নি। 
স্বাধীনতার ৪৪ বছর তো কেটে গেলো, কেন আমরা সভ্য হতে পারলাম না ?? সভ্য হবার সেই চেষ্টাও আমাদের নেই । নৈতিকতা খুইয়ে পশুত্বের দিকেই বরং ছুটে চলছি । বছর দুয়েক আগে শাহবাগে আমাদের প্রায় সকল সুশীলজনতা উপস্থিত হয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচার নয় ফাসি দাবী করলাম! 
নিজের ছোট্র অবুঝ শিশুর মাথায় ব্যানার লাগিয়ে দিলাম “ফাসী চাই‍’’ ! বিচারের বদলে ফাসী চাওয়ার বিরল বর্বর জাতী আমরা। 
বিশ্বজিতকে যখন ছাত্রলীগের ছেলেরা কুপিয়ে হত্যা করছিল আমজনতা পুলিশ সাংবাদিক সেই দৃশ্য উপভোগ করছিল। বেসরকারী চ্যানেলে খুনের লাইভ কভারেজ দিচ্ছিল। বিশ্বজিতকে হাসপাতালে নেবার মত কেউ ছিলনা ! একজন রিকশাওয়ালা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তার যর্থাপুযুক্ত চিকিতসা করা হয়নি। আজও বিচার হয়নি। খুনিরা আমাদের পাশেই আছে।
বই মেলায় ব্লগার অভিজিতকে হত্যার সময়েও একই দৃশ্য । পুলিশ জনতা নিরব দর্শক। রক্তাত্ব দম্পতীর ছবি তুলছিল অনেকেই। কেউ এগিয়ে আসেনি। পল্টনেও লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল যার খুনিরা এখন মুক্ত চিন্তার ধারক বাহক হয়েছে। নৈতিকতার অধ:পতন কতটা হয়েছে আমাদের তা আমরা হয়ত বুঝতেও পারছি না।
গনতন্ত্র স্বাধীনতা আর সকল নাগরিকের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়ে যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল আজ সেই মুক্তিযোদ্ধাকেই ঘুস দিতে হয় রাষ্ট্রকে। তারপর নাগরিকের পয়সায় বেতন নেওয়া চাকরের গলা ধাক্কা খেয়ে আত্মহত্যা করতে হয়।
গনতন্ত্রহীন ১৯৭৪ এর সেই বাকশালেই যেন আমরা আটকে আছি।
সামিউল ক্ষমা করিস বাপ। আমার ছেলেও তোর বয়েসি। আমরা পারিনি তোদের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে দিতে। এই দায় নিয়েই আমাদের কবরে যেতে হবে। তোর লাশের কাছে তাই নতজানু মস্তকে দাড়িয়ে আছি।

About

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

আমার ব্লগ তালিকা

Translate

Translate

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24

সর্বশেষ

অনুসরণকারী