ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় কারাগার থেকেই চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন জামায়াতের দুই নেতা। তাদের জনসমর্থন দেখে বিরোধী পক্ষ দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। তারা ভোটারদেরকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইতোমধ্যে তাদের পক্ষে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
প্রার্থীদ্বয় হলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ গ্রামের মাওলানা মো মিজানুর রহমান ও দহবন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ ধুমাইটারী গ্রামের মো গোলাম মোস্তফা প্রামাণিক রাজু।
এর মধ্যে আলহাজ্ব মাওলানা মো মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যাসহ একাধিক নাশকতার মিথ্যা মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি কোর্টে আত্মসমর্পণ করে বেশ কিছুদিন ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন।
এছাড়া গোলাম মোস্তফা প্রামাণিক রাজু। সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জামায়াত নেতা মো নুরুন্নবী প্রামাণিক সাজুর ছোট ভাইও ঝিনিয়া এমএ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় নাশকতা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একাধিক মিথ্যা মামলা রয়েছে। গত ১০ মার্চ নির্বাচনী প্রচারণার সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে তিনি বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে, কারাগারে থেকে দুই জামায়াত নেতা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করায় তাদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, পরিবারের সদস্য, দলীয় নেতাকর্মী ও কর্মী-সমর্থকরা ভোট প্রার্থনা করছেন। শেষ মুহূর্তে এসে তারা এখন দিন-রাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মিজান কারাগারে বন্দী থাকায় তার পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। এ সময় তিনি অন্যায়ভাবে তার স্বামীকে জেলে আটকে রাখার বিষয়টি ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন। ফলে ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সহানুভূতির সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকার সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চশমা প্রতীকের প্রার্থী হাজী মিজান এলাকায় একজন ভালো মানুষ হিসেবে সুপরিচিত। তিনি পেশায় মাদরাসা শিক্ষক হওয়ায় এলাকায় অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের পরিবারের লোকজনের কাছে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার। এছাড়াও সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় হাজী মিজানের কর্মদক্ষতা সম্পর্কেও সবাই পরিচিত।
অপর প্রার্থী গোলাম মোস্তফা রাজু এলাকার একজন সুপরিচিত নাম। স্কুলের একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে এলাকায় যথেষ্ঠ প্রভাব রয়েছে। মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করায় এলাকাবাসী খুবই ক্ষুব্ধ। জামায়াতের সাথে সম্পর্কের কারণে তার উপর এই জুলুম। জেলে থাকায় এলাকায় ব্যাপক সাড়া পরেছে। তার স্ত্রী মোছাঃ শিউলি বেগম দিন রাত চশমা মার্কায় ভোটের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের কাছে। তিনি জানালেন সুষ্ঠু ভোট হলে তার স্বামী বিপুল ভোটের ব্যাবধানে অবশ্যই জয়ী হবেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে আরও জানা গেছে দেহবন্ধ রামজীবনসহ গোটা উপজেলার ভোটারদের মাঝে জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে হাজী মিজানসহ জামায়াতের প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত বলেই তারা মনে করছেন।
এদিকে, কারাবন্দী জামায়াত নেতা হাজী মিজান রাজুর সুনিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিতে সরকারি দল ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী, আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। জামায়াত নেতাকে ভোট দিলে মামলা-হামলারও ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অনেক ভোটার অভিযোগ করেছেন। এসব কারণে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মিজানের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। গোটা উপজেলার সবকটি ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। একই সাথে রামজীবন ইউনিয়নের ৪টি ভোটকেন্দ্র যথাক্রমে- কাশদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কে-কৈ কাশদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজপাড়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা এবং রামজীবন মাদরাসা ভোট কেন্দ্রকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দাবি করে নির্বাচন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে আ’লীগ প্রার্থী, আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীর লোকজন জোরপূর্বক ভোট কেটে নিতে পারে বলে আশংকা রয়েছে। সুন্দরগঞ্জ এলাকায় অতীতে প্রতিটি নির্বাচনেই জামায়াত সমর্থিত প্রাথীরা বিজয়ী হয়েছেন। বর্তমান সরকারের আমলে সীমাহীন জুুলুম-নির্যাতন-নীপিড়নের ফলে সাধারণ ভোটারদের মাঝে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মিজানের চশমা প্রতীকের প্রতি ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, রামজীবন ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ দখলের লড়াইয়ে নেমেছেন ১০ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত একজন এবং আ’লীগের বিদ্রোহী রয়েছেন একজন। জাতীয় পার্টি থেকে লড়ছেন একজন। অন্যরা সবাই স্বতন্ত্র। বিএনপি এই ইউনিয়নে কোন প্রার্থী দেয়নি। জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব মিজানুর রহমানকেই সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। ফলে দলমত নির্বিশেষে সবার মাঝেই ব্যাপক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন হাজী মিজান।
উল্লেখ্য, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে ১৩ ইউনিয়নে ভোট হচ্ছে আগামী ৩১ মার্চ। ১৩ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৯২ জন ও সংরক্ষিত নারী এবং সাধারণ সদস্য পদে ৫৩৪ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এর মধ্যে ৪৯ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা, নাশকতা, সন্ত্রাস, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নারী ও শিশু নির্যাতনহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় মামলা রয়েছে। তারা জামিনে এসে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো আবদুল মালেক জানান, মিজানুর রহমান জেলা কারাগারে থাকায় তার পক্ষে স্ত্রী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এছাড়া গোলাম মোস্তফা প্রামাণিক মনোনয়নপত্র দাখিল করে প্রচারণার সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। দু’জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তারা দুজনই চশমা প্রতীক পেয়েছেন।