বিজ্ঞাপন দিন

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই ঈদ উত্তর সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। ব্যাংক খোলা এবং যথারীতি ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এই গ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। ঢাকার সবুজবাগ থানার রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১:b>ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার

বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬

কাশ্মির আবার উত্তপ্ত : সঙ্কট নিরসনে উপায় কী?

‘ভূস্বর্গ’ নামে খ্যাত কাশ্মির উপত্যকা এখন জ্বলছে। বিগত মাসাধিককাল প্রতিদিন সেখানে ভারতীয় পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত হচ্ছেন স্বাধীনতাকমী কাশ্মিরিরা। গত ৮ জুলাই ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরের অনন্তনাগের কোকেরনাগ এলাকায় সেনা ও পুলিশের বিশেষ বাহিনীর হাতে স্বাধীনতাকামী সংগঠনের কমান্ডার বুরহান ওয়ানিসহ তিনজন নিহত হন। বুরহানের খবর ছড়িয়ে পড়লে কাশ্মিরজুড়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বিক্ষুব্ধ জনতা ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের মাত্রা বেড়ে গেলে কাশ্মিরের দশটি জেলা, এমনকি দূরবর্তী গ্রামেও কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ ভঙ্গ করে বিভিন্ন স্থানে জনতা রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে নিরাপত্তাবাহিনী ও পুলিশের গুলিতে অন্তত অর্ধশত নিহত ও বহু আহত হয়েছেন।
তরুণ বুরহান ওয়ানি জনপ্রিয় ছিলেন। তার বড় ভাই খালিদ ওয়ানিকেও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছিল। এ দিকে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর ‘জুলুম-নিপীড়নের শিকার’ হওয়া মানুষের চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আহতদের সহায়তার জন্য কাশ্মিরে প্রবেশের যাতে অনুমতি দেয়া হয়, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে দেশটি। কাশ্মির প্রশ্নে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাকযুদ্ধের দুই দিনের মাথায় এই প্রস্তাব দেয়া হলো।
কাশ্মিরের অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করেছেন। এর আগে মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মিত্র জম্মু ও কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে বলেছেন, ‘আশা করি, প্রধানমন্ত্রী জম্মু ও কাশ্মিরের সমস্যা নিরসনের জন্য সেখানকার লোকদের সংলাপ আয়োজনের সুযোগ গ্রহণ করবেন।’ মোদির বৈঠককে ‘স্বাধীনতাকামী’রা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলেন, সঙ্ঘাতে লিপ্ত পক্ষগুলোর সাথে আলোচনা ছাড়া বৈঠক ফলপ্রসূ হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং কাশ্মিরের চলমান অচলাবস্থা নিরসনে পাকিস্তানের সাথে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেছেন। কিছু দিন আগে নওয়াজ শরিফ ‘কাশ্মির একদিন পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হবে’ এমন আশা ব্যক্ত করলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এটাকে ‘পাক প্রধানমন্ত্রীর কল্পনাবিলাস’ বলে মন্তব্য করেন।
স্বাধীনচেতা কাশ্মিরিরা বিভিন্ন সময় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ৯০ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত উপত্যকাটি এখন তিনভাগে বিভক্ত। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের জন্য দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যে বাউন্ডারি লাইন টানার কথা ছিল, তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে, কাশ্মির পাকিস্তানের মধ্যে যাওয়ার কথা।
১৯৪৭-এ ভারত বিভক্তির সময় কাশ্মির ছিল স্বাধীন রাজার শাসনাধীন একটি বৃহৎ দেশীয় রাজ্য। এর রাজা ছিলেন হিন্দু-মহারাজা হরি সিং। ব্রিটিশরা স্বাধীন রাজা শাসিত অঞ্চলগুলোর ব্যাপারে এই নীতি ঘোষণা করেনÑ ইচ্ছা করলে তারা ভারত বা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত না হয়েও স্বাধীন সত্তা নিয়ে থাকতে পারেন। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছানুসারে যেকোনো অংশে যুক্ত হতে পারবেন।
১৯৪৭-এ ভারত বিভক্তির সময় ক্রিপস মিশনের মূলনীতিগুলো উপেক্ষা করা হয়। এই ফর্মুলা অনুসরণ করা হলে বাংলা, পাঞ্জাব ও আসাম অবিভক্ত থাকত। দেশীয় রাজ্য হিসেবে কাশ্মিরও সরাসরি ব্রিটিশ রাজার অধীনে স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদার একটি রাজ্য হিসেবে থাকার অধিকার পেত। মহারাজা হরি সিং নিজেও এমনটি চেয়েছিলেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে পাকিস্তানের সাথে যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্নটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে পারত। হরি সিং প্রথমে ভারতভুক্তির ছিলেন বিরোধী। এমন সময় কাশ্মিরে দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়া হয়। হরি সিং ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ১৯৪৭-এর ২২ সেপ্টেম্বর হুঞ্জা, নগর ও গিলগিটের জনগণ রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিরে আসা এবং কাশ্মিরি সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত সৈনিকদের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পুঞ্চ ও মিরপুরের জনগণ। ১৫ সেপ্টেম্বর বিদ্রোহ করে মুজাফফরাবাদ। ২২ তারিখে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ সংলগ্ন ডোমেল চেকপোস্ট দিয়ে প্রবেশ করল পার্বত্য উপজাতি যোদ্ধা আফ্রিদি ও মাহসুদরা। সাথে যোগ দিলো বিদ্রোহী গিলগিট স্কাউটস, হুঞ্জা, নগর ইয়াসিনের বিদ্রোহীরা এবং মিরপুর, মুজাফফরাবাদ ও পুঞ্চের বিদ্রোহী সেনাদল। ২৪ সেপ্টেম্বর অগ্রসরমান বাহিনী হাজির হলো বারামুল্লায়-শ্রীনগর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে। তখন ভারতীয় সেনাদের সাহায্য চাইলেন রাজা হরি সিং। কিন্তু কাশ্মিরের ভারতভুক্তির আগে কোনো সেনা পাঠাতে রাজি হলো না ভারত সরকার। ২৫ তারিখ রাতের অন্ধকারে শহর খালি করে দিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে পালালেন রাজা হরি সিং। ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতভুক্তির ঘোষণা নিয়ে দিল্লি গেলেন রাজার প্রধানমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা শেখ আব্দুল্লাহ। ২৭ সেপ্টেম্বর এই ঘোষণা গ্রহণের সাথে সাথে কাশ্মির ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়। ২৭ অক্টোবর রাজা জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। এ দিনই রাজা হরি সিংয়ের আহ্বানে ভারত ‘শ্রীনগর শহরকে রক্ষার কথা বলে এক ব্যাটেলিয়ন শিখ সৈন্য প্রেরণ করে। তবে অভিযোগ আছে, এর অনেক আগেই পাঞ্জাবের পাতিয়ালা রাজ্য থেকে কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রেরণ করা হয়েছিল। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কাশ্মিরে ভারতভুক্তিকে অবৈধ এবং কাশ্মিরের ভারতীয় সৈন্য প্রেরণকে আগ্রাসন বলে আখ্যায়িত করেন। তিনিই প্রথম কাশ্মিরের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে গণভোটের কথা বলেছিলেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান কাশ্মিরকে তার ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ বলে দাবি করে ওই অঞ্চল দখলের জন্য সৈন্য পাঠায়। ফলে ভারতীয় বাহিনীর সাথে যুদ্ধ বেধে যায়। এ যুদ্ধে পাকিস্তান কাশ্মিরের এক-তৃতীয়াংশ নিজ নিয়ন্ত্রণে নেয়, যার নামকরণ করা হয় ‘আজাদ কাশ্মির’।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এ অঞ্চলটি নিয়ে চরম বিরোধ ও উত্তেজনা চলতেই থাকে দশকের পর দশক। কাশ্মিরকে নিয়ে দু’টি দেশের মধ্যে দু’টি বড় যুদ্ধও সংঘটিত হয়েছে। ছোটখাটো যুদ্ধ ও গুলিবিনিময় প্রায়ই ঘটে আসছে।
কাশ্মির ইস্যু মীমাংসার জন্য জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছিল। ভারতই কাশ্মির সমস্যাটি জাতিসঙ্ঘের কাছে উপস্থাপন করেছিল। এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকদের অভিমত হলোÑ ভারতের জাতিসঙ্ঘের শরণাপন্ন হওয়ার পেছনে একটা কূটরাজনীতি ছিল। জম্মু ও কাশ্মিরে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক, তা ভারত আসলে চায়নি। ভারত চেয়েছিল, জাতিসঙ্ঘের সহায়তায় কাশ্মিরি ‘স্বাধীনতাকামী’দের যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো। এ উদ্দেশ্য ভালোভাবে হাসিল হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ আলাপ-আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, কলম্বিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া ও আর্জেন্টিনা সমন্বয়ে পাকিস্তান ও ভারতবিষয়ক একটি কমিশন গঠন করেছিল। ১৯৪৮ সালের ১৩ আগস্ট কমিশন শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। শর্ত ছিলÑ যুদ্ধবিরতি, উপজাতীয় পাঠানদের কাশ্মির উপত্যকা থেকে প্রত্যাহার এবং কমিশনের তত্ত্বাবধানে গণভোট। এ গণভোট ৬৮ বছরেও অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি ভারতের বিরোধিতার কারণে। প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণকে স্বাধীনভাবে রায় প্রদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ দিকে চালানো হচ্ছে অব্যাহত দমনপীড়ন।
সম্প্রতি বিবিসি জানায়, ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে কিছু হিন্দু পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ কলোনি স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ’৯০-এর দশকের গোড়া থেকেই নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে পণ্ডিতসহ হিন্দু পরিবারগুলো উপত্যকা ছেড়ে জম্মু কিংবা ভারতের দিল্লি ও অন্যান্য এলাকায় চলে যায়। এখন তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কলোনি তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হলে মুসালিম নেতারা এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাদের আশঙ্কা, ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যে যা ঘটেছে অর্থাৎ ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে যেভাবে ইহুদি জনবসতি গড়ে তোলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটতে পারে।
নিরাপত্তা পরিষদের শান্তি কমিশন যুদ্ধবিরতি রেখা টেনে কাশ্মিরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। ৩৪ হাজার ২৪৪ বর্গমাইল এলাকা পড়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অংশে এবং ৮৬ হাজার ২৪ বর্গমাইলের বাকি অংশ পড়ে ভারতের অংশে। জম্মুর সামান্য অংশ, মিরপুর, মুজাফফরাবাদ, গিলগিট ও কারগিল ‘আজাদ’ কাশ্মিরের অন্তর্গত। রাজধানী শ্রীনগর, জম্মু, পুঞ্চ-এর অংশবিশেষ নিয়ে বিশাল উপত্যকা ভারতের জম্মু ও কাশ্মির প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৬২ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ভারত চীনের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। যুদ্ধে ভারতের হারানো অংশবিশেষ চীন অধিকৃত (১৪৩৮০ বর্গমাইল) আকসাই চীন হিসেবে পরিচিত। এটি মূল কাশ্মির ভূখণ্ডের অংশ ছিল। এটা এখন চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল জিনজিয়াংয়ের অন্তর্ভুক্ত। ভারত আকসাই চীনের অস্তিত্ব স্বীকার করতে চায় না। এখানে ভারত-চীনের সীমান্তে উভয়ের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলিবিনিময় লেগেই থাকে। কিন্তু ১৯৬৩ ও ১৯৯৬ সালে দু’টি দেশ একটি চুক্তি এই মর্মে স্বাক্ষর করেছে, উভয় দেশ ১৯৬২-এর যুদ্ধের পরপর যে অংশ যে নিয়ন্ত্রণ করছে, সে সেটি সীমান্তরেখা হিসেবে মেনে চলবে। তবুও ভারত ও চীন কেউই তা মেনে চলতে আগ্রহী নয়। চীন মনে করে, অরুণাচল প্রদেশটি তার দেশের অংশ প্রাকৃতিকভাবেই।
কাশ্মির সঙ্কট এখন আর দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই। যথাসময়ে যদি কাশ্মিরি জনগণকে গণভোটের সুযোগ দেয়া হতো, তাহলে অনেক আগেই ওই অঞ্চলের মানুষ খুঁজে পেত তাদের মর্যাদাকর অবস্থান। শান্তি ও স্থিতি প্রতিষ্ঠিত হতো জাতীয় জীবনে। এখন তিনটি দেশের স্বার্থ যুক্ত হওয়ায় এবং ছাড় না দেয়ার মানসিকতা প্রত্যেকে পোষণ করায় বলা খুব কঠিন, কাশ্মিরের ভবিষ্যৎ কী হবে। কিভাবে এ সঙ্কটের সুরাহা হবে, যুদ্ধে না আলোচনায়? 
সোলায়মান আহসান
উৎসঃ   nayadiganta

মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬

মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী আটক


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্ক ২৩ আগষ্ট’১৬ঃ  জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতা মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমের মেঝো ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (সাবেক) আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে আটক করা হয়েছে। সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজার কাজী অফিস লেনের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইন শৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত একটার কিছু আগে আবদুল্লাহিল আমান আযমীর ভাই, প্রবাসী সালমান আল-আযমী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, ডিবি পুলিশের অন্তত ৩০-৩৫ জন তার ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে।

বাড়ির কেয়ারটেকার আযাদ জানান, ‘আমি রাত নয়টার দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ির সামনে আসি। তখন গোয়েন্দা পুলিশ এসে আমার কাছে জানতে চান, আব্দুল্লাহিল আমান আযমী কোথায়? আমি কিছু জানি না বলাতে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে।'তিনি জানান, গলির ভেতর প্রায় ২০টি মাইক্রোবাসে ৩০ জনের মত ডিবি পুলিশ এসেছিল। তারা গভীর রাতে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে আটক করে নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, 'চলে যাওয়ার সময় গোয়েন্দা পুলিশেরা আমাকে দেখিয়ে দিতে বলে এই ভবনের আশেপাশে কোথায় কোথায় সিসি ক্যামরা আছে'। আযাদ জানান, বাড়িতে ক্যামেরা ছিল না। কিন্তু মহল্লার নিরাপত্তার ক্যামেরা ছিল গলিতে। সেগুলো তারা খুলে নিয়ে গেছে।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, রাত ১১টার কিছু আগে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বড় মগবাজার কাজী অফিস গলিতে মরহুম গোলাম আযমের বাড়ি ঘিরে ফেলে। এসময় ওই গলিতে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে রাত সোয়া ১১টার দিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কিছু লোক বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।

আশপাশের বাসিন্দারা জানান, ওই বাসার ভেতর থেকে তারা চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান। পরে আমান আযমীকে নিয়ে দ্রুত বাসার ভেতর থেকে বের করে এনে গাড়িতে তোলা হয়। এর পর একটি গাড়ির বহর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

ওই গাড়ি বহরের সঙ্গে একটি মোবাইল জ্যামারবাহী গাড়িও ছিল।
মেঝো ভাইয়ের গ্রেফতার নিয়ে রাত ১টার কিছু আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে অধ্যাপক সালমান আযমী। যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা সালমান লিখেছেন, “আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তিনি রাজনীতিতেও জড়িত না। কখনো আইন ভঙের কোনো ঘটনা ঘটাননি। অথচ আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের অবিচার একটি ঘৃণ্য ও ভয়ংকর কাজ এবং এটি মানবাধিকারের চরমতম লংঘন।”

গ্রেফতার বিষয়ে সালমান জানান, তাদের মগবাজারের বাসায় ৩০/৩৫ জনের মতো লোক সাদা পোশাকে হাজির হয়ে আমান আযমীকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়। এসময় তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানরা কাঁদছিলেন। চার বছরের নিচে তার দুটি সন্তান রয়েছে।”

অধ্যাপক সালমান আরো লিখেছেন “আমার ভাইদের মধ্যে তিনিই শুধু দেশে আছেন ৮৩ বছর বয়সী মাকে দেখাশোনার জন্য।” তিনি দেশের সবার কাছে ভাইয়ের জন্য দোয়ার আহবান জানিয়েছেন।

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬

সাদা পোশাকে তুলে নেয়া ১৮৮ জনের মধ্যে ৩২ জনের লাশ মিলেছে এখনো নিখোঁজ ১৫৬ জনের স্বজনদের দিন কাটছে আতঙ্ক-উদ্বেগে - নাছির উদ্দিন শোয়েব


আমাদের বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ  সাদা পোশাকে ধরে নেয়ার পর নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের দিন কাটছে আতঙ্কে-উদ্বেগে। বাসা-বাড়ি বা ঘরের বাইরে স্বজনদের সামনে থেকে প্রকাশ্যে ধরে নেয়ার পর দীর্ঘদিনেও বহু মানুষের খোঁজ মিলছে না। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের ব্যাপারে তথ্য দিতে পারছে না। থানা পুলিশ, ডিবি, র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সন্ধান পেতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোথাও সন্ধান না পেয়ে এসব ব্যক্তিদের পরিবারে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবদেন উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি অনুযায়ী গত ৬ মাসে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকে ৫০ জনকে আটক করার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পরবর্তীতে ৬জনের লাশ পাওয়া গেছে। ২জন ফেরত এসেছে, ৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করে আসক। 

আসকের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে (২০১৩-১৫) সারা দেশে ১৮৮ জন অপহরণের পর নিখোঁজ হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩২ জনের লাশ পাওয়া গেছে। বাকি ১৫৬ জনের হদিস নেই। সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে; যাদের কাউকে আটকের কথাই স্বীকার করেনি প্রশাসন। 

এদিকে গত ১২ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম আলী। ১৭ দিন ধরে নিখোঁজ আছেন বিএনপি নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরী। 

নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবার থেকে বলা হয়েছে, তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তারা জানেন না তাদের স্বজনেরা কেমন আছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিরা কোথায় আছেন, কী অবস্থায় আছেন তা কেউ জানতে পারছে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ওই দু’জন তাদের কাছে নেই। পুলিশ তাদেরকে আটক বা গ্রেফতার করেনি। এমনকি এ ব্যাপারে থানায় জিডিও নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। 

এই দুই জনের আটকের অবসানের বিষয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ। গত ১৩ আগস্ট নিউ ইয়র্ক থেকে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। মীর আহমেদকে ৯ আগস্ট ও হুম্মামকে ৪ আগস্ট আটক করা হয়। এই দুইজনকে কোন ধরনের পরওয়ানা বা চার্জ ছাড়াই আটক করা হয়েছে এবং তাদেরকে কোন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয়নি, পরিবার কিংবা আইনজীবীদেরও তাদের সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি। 

এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক চম্মা পাটেল বলেন, ‘এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই যে, মীর আহমেদ ও হুম্মামকে আইন শৃংখলা বাহিনীর হেফাজতে জোর পূর্বক আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু সরকার অব্যাহতভাবে তা অস্বীকার করে চলছে। দুই জনের সাথেই পরিবার বা আইনজীবীদের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেও হাজির করা হয়নি। দুঃখজনকভাবে এটাই বাংলাদেশের বর্তমান প্র্যাকটিস এবং এর শেষ হচ্ছে না।’ বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপির সদস্য হুম্মামকে ৪ আগস্ট আদালতে হাজিরা দেয়ার জন্য তার মায়ের সাথে যাওয়ার সময় আটক করা হয়। তার মায়ের ভাষ্যমতে, সাদা পোষাকের মানুষ, যাদের কয়েকজনের কাছে অস্ত্র ছিল, তারা জোর করে হুম্মামকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তাদের সাথে নিয়ে যায়। মীর আহমেদ সুপ্রীমকোর্টের একজন আইনজীবী। তাকে ৯ আগস্ট একইভাবে সাদা পোশাকের মানুষ আটক করে নিয়ে যায়। তাকে গ্রেফতারের সময় তার স্ত্রী ও কাজিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই দুইজনকে গ্রেফতারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। যদিও বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, তাদের দু’জনকেই ১২ আগস্ট সকালে ঢাকায় র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান-র‌্যাব হেড কোয়ার্টারে দেখা গেছে। মীর আহমেদ ও হুম্মাম, দুইজনই বিরোধী দলের দুই সিনিয়র নেতার সন্তান।

জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভা শিবিরের সভাপতি আবুজার গিফারীকে (২২) জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসার সামনে থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে চার ব্যক্তি মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। একই দিনে দুপুরের পর শিবিরের নেতা কেসি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শামীমকে (২০) কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের পাশ থেকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাক পরিহিত চার ব্যক্তি। ঘটনার প্রায় চার সপ্তাহ পর গত ১৪ এপ্রিল যশোরের বিরামপুর শ্মশান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে যশোর কোতোয়ালি থানার পুলিশ তাদের গুলীবিদ্ধ দুটি লাশ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে নিহত আবুজর গিফারীর চাচাতো ভাই পাননু মিয়া ও শামিমের ভাই তাজনিম হুসাইন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ দুটি আবুজার ও শামিমের বলে শনাক্ত করেন। 

১২ মে সাদা মাইক্রোবাসে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় খালিশপুরের বয়রা সিএসবি গোডাউনের নিরাপত্তা কর্মী মাকসুদুর রহমানের ছেলে মোঃ মনিরুল ইসলাম (২৮) এবং হরিণটানার থানা এলাকার বিসমিল্লাহ নগর মাদরাসার এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের শিক্ষক মোঃ আব্দুল্লাহ আল সায়েম তুর্য (২৫) ও একই মাদ্রাসার শিক্ষক সোয়াইবুর রহমানকে (২৬)। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহেও সন্ধান মেলেনি। ফলে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজন। 

এর আগে ২০১৫ সালের ৩ মার্চ সোহানের হত্যার স্থানে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া ঝিনাইদহের যুবদল নেতা মেরাজুল ইসলামের গুলীবিদ্ধ লাশ পড়ে ছিল। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রাম থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া কলেজ ছাত্র সোহানুর রহমান সোহানকে। সোহানের মা পারভিনা খাতুন জানান, গত ১০ এপ্রিল, বিকাল ৫টার দিকে কালীগঞ্জ নুর আলী কলেজের ছাত্র সোহান ঈশ্বরবা জামতলা নামক স্থানে অপেক্ষা করছিল। এ সময় নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চারজন লোক ইজিবাইকে করে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, তার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। 

র‌্যাবের সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৯৬টি অভিযান চালিয়ে ১৫৪ অপহৃতকে উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় গ্রেফতার করা হয় ১১০ জনকে। অপহরণের ১৪০টি মামলা নিয়ে কাজ করেছে র‌্যাব। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, অপহরণ এবং নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা প্রশাসন যে হিসাব দিচ্ছে তার চেয়েও অনেক বেশি। বছরে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ অপহরণের শিকার হচ্ছে। বছরের পর বছর নিখোঁজ তারা। পুলিশ সদর দফতরের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে চার হাজার ৩৯৭টি অপহরণের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৮০৬, ২০১৪ সালে ৯২০, ২০১৩ সালে ৮৭৯ এবং ২০১২ সালে ৮০৬টি মামলা হয়েছে। 

ইউনিফর্ম ছাড়া সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারকে ভয়াবহ অপরাধ বলে অভিহিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা অনুযায়ী আটক ও রিমান্ডের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনার বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল শুনানি চলাকালে গত ১৭ মে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ মন্তব্য করেন। শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচরাপতি এস কে সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্দেশে বলেন, বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল। ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও আপনারা একটি নির্দেশনাও (সরকার) প্রতিপালন করেননি। প্রধান বিচারপতি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি একটি কলোনিয়াল (ঔপনিবেশিক) আইন। ১৯৭০ সালে মালয়েশিয়া এই আইনের সংশোধনী এনেছে। মালয়েশিয়াকে অনুসরণ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও তাদের ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করেছে। কিন্তু আমরা এখনো এটি করতে পারছি না। প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, যথাযথ চিন্তা-ভাবনা না করেই আইন প্রণয়ন না করার কারণেই বিচার বিভাগের ওপর মামলার চাপ আছে। 

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেফতার করেই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করছে, এটি গ্রহণযোগ্য নয়। হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা আছে, আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না। কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃতকে এর কারণ জানাতে হবে। বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতারকৃতর নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে। গ্রেফতারকৃতকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের অভ্যন্তরে কাচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দন্ড-বিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন।

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

পাবনায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী পরিচয়ে ৭ শিবির নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ: আটকের বিষয় অস্বীকার

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ পাবনায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী পরিচয়ে গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় ইসলামী ছাত্রশিবির পাবনার সুজানগর উপজেলা শাখার সভাপতি মনিরুল ইসলামসহ ৭ কর্মীকে আইন শৃংখলাবাহিনী পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার দুই দিনেও তাদের কোন সন্ধান না পেয়ে পরিবারের লোকজন মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। তবে আইন শৃংখলাবাহিনী তাদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। 
শনিবার ছাত্রশিবিরের পাবনা জেলা শাখা পূর্বের সভাপতি আবুল কালাম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, সুজানগর উপজেলার খয়রান নামক নৌঘাট থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় র‌্যাব পরিচয়ে তাদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রত্যেক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে তিনি দাবি করেন এই ৭ জন শুক্রবার ছুটির দিনে নৌকা ভ্রমন করে ফেরার পথে পূর্ব থেকেই অপেক্ষমাণ র‌্যাবের একটি গাড়িতে তাদেরকে তুলে নেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবারের পক্ষ থেকে সুজানগর থানা ও পাবনা র‌্যাব-১২ তে যোগাযোগ করা হলে তারা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন। 

বিবৃতিতে তারা দেশের চলমান হত্যা, গুম ও খুনের ধারাবাহিকতায় পরিবার চরম শঙ্কার মধ্যে আছে। এই অন্যায় ভাবে আটক করে অস্বীকার করায় তীব্র নিন্দা জানানো হয় বিবৃতিতে। অবিলম্বে ৭ নেতা কর্মীর নি:শ্বর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। অথবা তাদের সন্ধান দিতে প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহবান জানানো হয়। 
এব্যাপারে পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এ বিষয়টি তাদের জানা নেই।

শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬

জাতীয় সেনাবাহিনীকে কি তাহলে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে !!! --মেজর (অব) আখকতারুজ্জামানঃ

  আমাদের বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ  হেটে মহাখালী যাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখটা আটকে গেল। এ কি করে সম্ভব? মহাখালী রেলগেটের প্রায় উপরে এবং ফ্লাই ওভার ঘেসে কি করে উঁচু টাওয়ার বিল্ডিং নির্মান হতে পারে???? এত বড় টাওয়ার বিল্ডিং এ মানুষ প্রবেশ করবে কোন দিক দিয়ে? গাড়ী যাতায়াত করবে কি ভাবে?? এখানেতো মহা যানজট সৃষ্টি করবে। এত বড় একটি টাওয়ার এখানে কি ভাবে নির্মান হতে পারে তা জনগণের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না।
আরো খটকা লাগলো যখন দেখলাম টাওয়ারটির মালিক সেনা কল্যান সংস্থা যা সেনাবাহিনীর একটি কল্যান প্রতিষ্টান। জানিনা এই টাওয়ার নির্মানে অনুমোধন আছে কিনা??? এস কে এসের বিশাল সাইনবোর্ড দেখলাম - ১৩ তলা মেগা শপিংমল কিন্তু রাজুকের কোন অনুমোদন দেখলাম না। তবে নিশ্চয় এই মেগা প্রজেক্টে সেনা কতৃপক্ষের অনুমোদন আছে।
ভাবতে কষ্ট হচ্ছে দেশপ্রেমিক সেনা কতৃপক্ষ কি করে এরকম যানজট সৃষ্টি ও জনভোগান্তির কারন হতে পারে এমন একটি প্রকল্প শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সার্থ চিন্তা করে সেনা কল্যান সংস্হাকে দিতে পারে??
ব্যবসা কোন মহত কাজ নয়। ব্যবসায় দুর্নীতি, মুনাফা, কালাবাজারী, চোরাকারবারী ইত্যাদি অহরহ হয়ে থাকে। যেখানে মুনাফা থাকে সেখানে দেশপ্রেম ও সততা থাকে না। থাকতে পারে না। দোকানদারী মানেই মুনাফা, কালোবাজারী, ভেজাল মিশানো, ফাকীবাজী ইত্যাদি থাকবেই। ব্যবসা করলে ট্যাক্স ফাকী, চোরা কারবারী, মিথ্যা বলা ও দুর্নীতি করতেই হবে।
ঠিকাদারী করলে চুরি, নিম্নমানের কাজ, হিসাবে গরমিল, অতিরিক্ত বিল ইত্যাদি দুর্নীতি করতেই হবে। তাই জনগণ কখনই দোকানদার, ব্যবসায়া পছন্দ করে না বরংচ দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের শায়েস্তা করার জন্য দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর দারস্ত হয়। কিন্তু এখন উল্টো হয়ে যাচ্ছে । সেনাবাহিনীকেই ব্যবসায়ী বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালকের নামে অনেক জেনারেলরা অনেক দোকানদার বা ফটকাবাজদের ভাই!!!! বড় দুর্ভাগ্যজনক।
মনে হচ্ছে অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে একটি বিদেশী শক্তি আমাদের ঐতিহ্যবাহী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নষ্ট করে দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশপ্রেমিকদের ভাবা উচিত বলে অনেকে মনে করেন।
লেখকঃ সাবেক সংসদ সদস্য

মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬

নিউইয়র্কে ইমামসহ ২ জন হত্যার নিন্দা জামায়াতের

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের কুইন্সের আল-ফুরকান জামে মসজিদের ইমাম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মাওলানা আলাউদ্দিন আকঞ্জি ও তার সহকারী তারা মিঞা দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ১৫ আগস্ট প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “নিউ ইর্য়কের কুইন্সের আল-ফুরকান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকঞ্জি ও তার সহকারী তারা মিঞা দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি এ সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন করছি। 
আমি আশা করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে হত্যাকারী দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান করবেন।

আমি নিহত মাওলানা আলাউদ্দিন আকঞ্জি এবং তার সহকারী তারা মিঞার জীবনের সকল নেক আমল কবুল করে তাদের জান্নাতবাসী করার জন্য মহান আল্লাহর দরবার দোয়া করছি, এবং তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদ ইনু, জিয়া ও এরশাদ??

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদ ইনু, জিয়া ও এরশাদ??
[১] 
এদিকে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর লিখা “ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস : বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড” বইটিতে দেখা যায় ১৯৮১ সালের ২১শে মে সেনাবাহিনীর ৩ জন সাবেক সদস্য জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তারিখের সামরিক অভ্যুত্থান এবং সপরিবারে শেখ মুজিব হত্যার ব্যাপারে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এবং বর্তমান ডেমোক্রেটিক লীগে যোগদানকারী আওয়ামী লীগের তৎকালীন গ্রুপ দায়ী”। 
২১শে মে ১৯৮১ জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশকারী সেনাবাহিনীর ৩ জন সাবেক কর্মচারীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক নায়েক সুবেদার মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন (সহ-সভাপতি, বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা - সাবেক গণবাহিনী, দফতর সম্পাদক ), সাবেক নায়েক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ (সদস্য - বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা)। 
তারা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, “১৯৭৪ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করা হয় বিপ্লবী গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা। বীরোত্তম কর্নেল তাহের হলেন সৈনিক সংস্থার প্রধান। জাসদের তরফ থেকে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকলেন হাসানুল হক ইনু। ক্যান্টনমেন্টে গোপনে গঠিত করা হতে লাগলো বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার ইউনিট। 
১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাসে জাসদ দেশব্যাপী এক হরতাল আহবান করে এবং সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার কর্মসূচি দেয়। হরতালের পূর্বদিন জাসদের অন্যতম কর্মী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিখিল চন্দ্র সাহা বোমা বানাতে গিয়ে মারা যান। তার নামানুসারে এই বোমার নাম রাখে নিখিল বোমা।
১৯৭৫ সনের জানুয়ারী মাসে শেখ মুজিব বাকশাল গঠন করেন এবং অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমতাবস্থায় হীনবল ও উপায়ন্তরহীন জাসদ নেতৃত্ব শেখ মুজিবের কাছে বাকশালে যোগদানের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু শেখ মুজিব তখন এই প্রস্তাবকে আমল দেননি।
ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে জাসদ নেতৃত্ব সেনাবাহিনীর কিছু বিক্ষুদ্ধ তরুণ অফিসারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। তাদের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলা হয় বিপ্লবী ফোরাম। এই ফোরামের ঘন ঘন বৈঠক বসতে থাকে এখানে সেখানে। গুলশানের এক বাড়িতে বসে নির্ধারিত হয় অভ্যুত্থানের নীল নকশা। সেই বৈঠকেই জাসদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করার প্রস্তাব প্রদান করা হয়।
এই নীল নকশা মোতাবেকই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। জাসদ নেতারা বিশেষত: গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার নেতারা প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর জিপে করে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে কুরিয়ারদের পাঠিয়ে দেয়া হয়। নির্দেশ দেয়া হয়, এই অভ্যুত্থান জাসদের স্বপক্ষে অভ্যুত্থান এবং এখনকার বিপ্লবী দায়িত্ব হলো বিভিন্ন ফাঁড়ি ও ট্রেজারিসমূহ থেকে যতটা সম্ভব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা। এই নির্দেশ অনুযায়ী মোহাম্মদপুর ফাঁড়ি ও নারায়ণগঞ্জের একটি ফাঁড়ি প্রকাশ্য লুট করা হয় এবং লুন্ঠিত অস্ত্র শস্ত্র তোলা হয় পিটার কাস্টার্সের এলিফেন্ট রোডস্থ বাসভবনে। পরবর্তীকালে পিটার কাস্টার্স এই অস্ত্র শস্ত্রসহই গ্রেফতার হয়। ভারত থেকে ২৪ ঘন্টার নোটিশে বহিষ্কৃত পিটার কাস্টার্সের সঙ্গে জাসদের কি সম্পর্ক ছিল তা জাসদ নেতারা কখনোই পরিষ্কার করে বলেনি। তবে জেলখানায় পিটার কাস্টার্স প্রকাশ্যেই বলে বেড়াতো যে, সে জাসদকে চল্লিশ লক্ষ টাকা দিয়েছে। জাসদের কেউই এর কোন প্রতিবাদ করতো না। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্যোগ্য যে, ১৫ই আগস্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশব্যাপী তিনটি ফাঁড়ি লুট করা সম্ভব হয়।
[২]
এছাড়াও আওয়ামীলীগের নিজেদের এই হত্যাযজ্ঞের সাথে সম্পৃক্ততার প্রমান পাওয়া যায় শহিদুল ইসলাম মিন্টুর সম্পাদনায় প্রকাশিত “শতাব্দীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অজানা অধ্যায়” বই তে -
"... শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের 'প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের' শিকার হয়ে নিহত হয়েছিলেন। এ যুক্তি যারা দেন তারা তাদের যুক্তির পক্ষে '৭৫-এর পরবর্তী ঘটনার উল্লেখ করেন। প্রকৃতপক্ষে ক্যু'দেতার পর যা ঘটলো তা হচ্ছে খন্দকার মোশতাক পুরোনো আওয়ামী লীগারদের নিয়ে সরকার গঠন করলেন। মুজিব বিরোধী অন্যান্য সংগঠনকে তিনি মন্ত্রিসভায় আমন্ত্রণ জানালেন না। মুজিবের ১৮ জন মন্ত্রীর মধ্যে তিনি ১০ জনকে বহাল রাখলেন। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে মাত্র ১ জন মোশতাকের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লো। পূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র আবু সাঈদ চৌধুরী বাদে ৯ জনই বাকশালের নির্বাহী পরিষদ বা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
মোশতাকের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের একক অন্তর্ভুক্তি 'প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের' ফল। এরা শেখ মুজিবের বাকশাল গঠন মেনে নিতে পারেননি। একটি তথ্যে জানা যায়, আওয়ামী নেতাদের একটি অংশ (যাদের মধ্যে ছিলেন ওবায়দুর রহমান, নুরে আলম সিদ্দিকী, নুরুল ইসলাম মঞ্জু, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন) বাকশাল গঠনের পর এক গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে বাকশাল বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নেন। এই সূত্রের মতে, অভ্যুত্থানকারীদের সাথে এইসব নেতাদের যোগাযোগ ছিল। আওয়ামী লীগের সংসদীয় আমলের শেষের দিকে যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেই মোহাম্মদ উল্লাহও স্বীকার করেছেন যে, মুজিবের মন্ত্রিসভায় অনেকে বাকশাল বিরোধী ছিলেন।
শেখ মুজিবের মন্ত্রীদের অন্যতম সদস্য ও বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইউসুফ আলী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'অভ্যুত্থানকারী মেজরদের অন্যতম মেজর ডালিম তৎকালীন ভাইস-প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ও কামরুজ্জামানকে ক্ষমতা গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছিলেন।' ব্যাপারটি যদি সত্যি হয়, তবে ভাবতে অবাক লাগে যে, সৈয়দ নজরুল ও কামরুজ্জামানের মতো ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা কেন শেখ মুজিবকে কথাটা খুলে বলেননি। এর সঠিক ব্যাখ্যা এখন আর পাওয়া সম্ভব নয়। কেননা এদের অধিকাংশ এখন বেঁচে নেই। অধ্যাপক ইউসুফ আলী মিথ্যা পরিবেশন করবেন এটা ভাবা না গেলেও ঘটনাটি অধিকাংশ মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। '৯১ জুলাই মাসে কর্নেল ফারুক বলেছেন, 'প্রয়োজনে তিনি হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দেবেন।' কর্নেল ফারুক কি আওযামী লীগ নেতাদের একটা অংশের সাথে তার পূর্ব যোগাযোগের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন?" 
[৩]
কর্নেল (অব:) শাফায়াত জামিল এর লিখা “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর” বইতে পনেরো আগস্টের অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে এরশাদের ঘনিষ্ঠতা ও তাদের প্রতি সহমর্মীতা লক্ষণীয়। পরবর্তী সময়ের দুটো ঘটনা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, কর্নেল শাফায়াত জামিলের বর্ননায় – “প্রথমটি, খুব সম্ভবত:, মেজর জেনারেল জিয়ার সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পরবর্তী দ্বিতীয় দিনের ঘটনা। আমি সেনাপ্রধানের অফিসে তার উল্টোদিকে বসে আছি। হঠাৎ করেই রুমে ঢুকলেন সদ্য পদন্নোতি প্রাপ্ত ডেপুটি চিফ মেজর জেনারেল এরশাদ। এরশাদের তখন প্রশিক্ষণের জন্য দিল্লিতে থাকার কথা।
তাকে দেখামাত্রই সেনাপ্রধান জিয়া বেশ রুঢ়ভাবে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি বিনা অনুমতিতে কেন দেশে ফিরে এসেছেন। জবাবে এরশাদ বললেন, তিনি দিল্লিতে অবস্থানরত তার স্ত্রীর জন্য একজন গৃহভৃত্য নিতে এসেছেন। এই জবাব শুনে জিয়া অত্যন্ত রেগে গিয়ে বললেন, আপনার মতো সিনিয়র অফিসারদের এই ধরণের লাগামছাড়া আচরণের জন্যই জুনিয়র অফিসাররা রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করে দেশের ক্ষমতা দখলের মতো কাজ করতে পেরেছে। জিয়া তার ডেপুটি এরশাদকে পরবর্তী ফ্লাইটেই দিল্লি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তাকে বঙ্গভবনে যেতেও নিষেধ করলেন। এরশাদকে বসার কোন সুযোগ না দিয়ে জিয়া তাকে একরকম তাড়িয়েই দিলেন।
পরদিন ভোরে এরশাদ তার প্রশিক্ষণস্থল দিল্লিতে চলে গেলেন ঠিকই, কিন্তু সেনাপ্রধান জিয়ার নির্দেশ অমান্য করে রাতে তিনি বঙ্গভবনে যান। অনেক রাত পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থানরত অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর থেকেই মনে হয় এরশাদ আসলে তাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করার জন্যই ঢাকা এসেছিলেন”।
দ্বিতীয় ঘটনাটি আরো পরের। জিয়ার শাসনামলের শেষদিকের কথা। ঐ সময় বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারী অফিসাররা গোপনে মিলিত হয়ে জিয়া সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করে। এক পর্যায়ে ওই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেলে তাদের সবাইকে ঢাকায় তলব করা হয়। সম্ভাব্য বিপদ আঁচ করতে পেরে চক্রান্তকারী অফিসাররা যার যার দূতাবাস ত্যাগ করে লন্ডনসহ বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। এদিকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে কর্মরত কয়েকজন সদস্য একই অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে বিচারের সম্মুখীন হন। আরো অনেকের সঙ্গে লে: কর্নেল দীদারের দশ বছর এবং লে: কর্নেল নুরুন্নবী খানের এক বছর মেয়াদের কারাদন্ড হয়। প্রধান আসামীরা বাংলাদেশের সরকার ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদেশে নিরাপদেই অবস্থান করছিল। ঐ বিচার তাই একরকম প্রহসনেই পরিণত হয়।
পরবর্তীকালে, জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর অভ্যুত্থানকারীদের মধ্যে যারা চাকরি করতে চেয়েছিলেন, এরশাদ তাদেরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে পুনর্বহাল করেন। দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্বাসিত হল ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারীরা পোস্টিং নিয়ে তাদের অনেকে বিভিন্ন দূতাবাসে যোগ দেয়।
শুধু পুনর্বাসনই নয়। এরশাদ আগস্ট অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত উল্লেখিত অফিসারদের কর্মস্থলে বিনাঅনুমতিতে অনুপস্থিতকালের প্রায় তিন বছরের পুরো বেতন ও ভাতার ব্যবস্থাও করে দেন”। 
বাংলাদেশের মানুষ আজ বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে, যারা সেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে, ছোট্ট শিশু রাসেল হত্যার সাথে প্রত্যাক্ষ্য বা পরক্ষভাবে যুক্ত ছিল অথবা হত্যার পর যাদের ট্যাঙ্কের উপর দাঁড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ্যে উল্লাস করতে দেখা গেছে তারাই আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কোলে আশ্রিত। অথচ যেই গুটিকয়েক লোক সেদিন এই হত্যার প্রতিবাদ করেছিল যেমন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি আজ নিগৃহীত।

তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা ॥ লে: কর্নেল (অব:) এম এ হামিদ পিএসসি [ শিখা প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ । পৃ: ২৫-২৮ ]
জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি ॥ মহিউদ্দিন আহমদ [ প্রথমা প্রকাশন : জানুয়ারি, ২০১৫ (তৃতীয় সংস্করণ) । পৃ: ১৭৬-১৭৯ ]
ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস : বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ॥ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
[ চারুলিপি - ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৬ । পৃ: ১৮৫-১৯০ ]
শতাব্দীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অজানা অধ্যায় / সম্পাদনা: শহিদুল ইসলাম মিন্টু ॥ [ শিখা প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৭ । পৃ: ৩৯-৪০ ]
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর ॥ কর্নেল শাফায়াত জামিল (অব:) [ সাহিত্য প্রকাশ - ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৮ । পৃ: ১২০-১২১ ]

অবিলম্বে ব্যারিস্টার আরমানকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবীতে দেশের সকল মহানগরীগুলোতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ পালিত


আমাদের বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ ডেস্ক; ১৬ আগষ্ট ২০১৬ঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য কারাবন্দী জনাব মীর কাসেম আলীর ছোট ছেলে ও তার মামলার ডিফেন্স আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানকে বাসা থেকে তুলে নেয়ার প্রতিবাদে ও অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী আজ ১৬ আগস্ট রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল মহানগরীগুলোতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বিভিন্ন মহানগরী থেকে প্রাপ্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের খবর নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ 

ঢাকা মহানগরী
আজ সকালে ঢাকা মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে মহানগরী জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ড. রেজাউল করীমের নেতৃত্বে মহানগরীর বাড্ডা এলাকায় একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। 

চট্টগ্রাম মহানগরী
আজ সকালে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে মহানগরী জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্য জনাব ফয়সাল মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে কোতওয়ালী এলাকায় একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

খুলনা মহানগরী
আজ সকালে খুলনা মহাগরী জামায়াতের উদ্যোগে খুলনা মহানগরী জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য আবু নাইমের নেতৃত্বে খুলনা শহরে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

সিলেট মহানগরী
আজ সকালে সিলেট মহাগরী জামায়াতের উদ্যোগে মহানগরী জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী শাহাজাহান আলীর নেতৃত্বে মহানগরীর আম্বরখানা এলাকায় একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

রাজশাহী মহানগরী
আজ সকালে রাজশাহী মহাগরী জামায়াতের উদ্যোগে রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

রংপুর মহানগরী
আজ সকালে রংপুর মহাগরী জামায়াতের উদ্যোগে রংপুর মহানগরীর মাহীগঞ্জ থানা জামায়াতের আমীর জনাব আনোয়ারুল ইসলাম কাজলের নেতৃত্বে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

বরিশাল মহানগরী
আজ সকালে বরিশাল মহাগরী জামায়াতের উদ্যোগে বরিশাল মহানগরী জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্য শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বে বরিশাল মহানগরীর বিমানবন্দর এলাকায় একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

গাজীপুর মহানগরী
আজ সকালে গাজীপুর মহাগরী জামায়াতের উদ্যোগে গাজীপুর মহানগরী জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ সানাউল্লাহর নেতৃত্বে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

কুমিল্লা মহানগরী
আজ সকালে কুমিল্লা মহাগরী জামায়াতের উদ্যোগে মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে মহানগরীর রানির বাজার এলাকায় একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

সারাবিশ্ব বঙ্গবন্ধুর নামেই বাংলাদেশের পরিচয় জানেঃ আইআইইউসি’র আলোচনায় প্রফেসর ডঃ আজহারুল ইসলাম

আমাদের বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ  ডেস্ক; ১৫ আগষ্ট ২০১৬ঃ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি)’র  ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডঃ এ.কে.এম. আজহারুল ইসলাম বলেছেন, সারাবিশ্ব বঙ্গবন্ধুর নামেই বাংলাদেশের পরিচয় জানে।বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে বঙ্গবন্ধুর নামটি জড়িয়ে আছে।
বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার আইআইইউসি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডঃ এ.কে.এম. আজহারুল ইসলাম এ কথা বলেন। আইআইইউসি’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর(চলতি দায়িত্ব) প্রফেসর ডঃ দেলওয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে বক্তব্য রাখেন, আইআইইউসি’র ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী, আইআইইউসি’র রেজিস্ট্রার ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা স্কোয়াড্রন লীডার (অবঃ) মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম, স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্টুডেন্ট এ্যাফেয়ার্স  ডিভিশনের পরিচালক। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডঃ এ.কে.এম. আজহারুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর যাদুময় নেতৃত্ব জাতিকে স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিয়েছিল। এদেশের স্বাধীনতা অর্জ নের জন্য প্রথমেই এবং বার বার যে নামটি উচ্চারিত হবে তা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।তার অতুলনীয় রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিপ্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডঃ এ.কে.এম. আজহারুল ইসলাম এ কথা বলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অতিথি আলোচকের বক্তব্যে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে এখনও কউ কউ হীনমন্যতায় ভোগেন।এই হীনমন্যতা থেকে বেড়িয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মতো নেতােএকটি দেশে, একটি জাতিতে বারবার জন্মায় না।
আইআইইউসি’র রেজিস্ট্রার ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা স্কোয়াড্রন লীডার (অবঃ) মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা দাশত্ব থেকে মুক্ত হয়েছিলাম।মুক্তিযোদ্ধা এবয় বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখার এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতি আলোকপাত করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ডঃ দেলওয়ার হোসেনে বলেন, একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পরও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভেদের রাজনীতি করেন নি। তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ছেয়ে ছিলেন।তিনি নির্দিষ্ট কোন দলেন নন, তিনি জাতির নেতা।
আলোচনা সভা শেষে বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফেরাত কামনা করে মুনাজাত করা হয়।

সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬

ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক শহীদ আব্দুল মালেক -ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম


আমাদের বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ   আজকের এই দিনে ইসলামী শিক্ষাকে জাতীয় শিক্ষানীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র জনপ্রিয় ছাত্রনেতা আব্দুল মালেক ভাই সন্ত্রাসীদের হাতে ১৯৬৯ সালের ১২ আগষ্ট আহত হয়ে ১৫ আগষ্ট শাহাদাত বরণ করেন। 
একজন মানুষ এ ভূবনে স্ব-মহিমায়,জ্ঞানে,ধ্যানে,চিন্তা-চেতনায় কত উজ্জ্বল ভাস্বর হতে পারে শহীদ আব্দুল মালেক তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে অনাগত পৃথিবীর কাছে। একটি জাতির মেরুদণ্ড হলো শিক্ষা,সেই ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক,বীর সেনানী শহীদ আব্দুল মালেক। একটি উন্নত নৈতিক চরিত্র সম্পন্ন যুব -ছাত্রসমাজ ছাড়া একটি জাতির এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। এরাই জাতির মূল চালিকা শক্তি। শহীদ আব্দুল মালেক সেটি উপলব্ধি করেছেন বলেই তিনি শিক্ষাব্যবস্থার গোড়াপত্তনের ভিত্তি আবিস্কার করেছেন,সে লড়াইয়ে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের প্রাণ। এদেশ ঋণী হয়ে থাকবে শহীদ আব্দুল মালেকের আত্নার কাছে যুগের পর শতাব্দীর পর শতাব্দী। বিশেষ করে আজকের আধুনিকতার নামে নব্য জাহিলিয়াতের যাতাকলে পিষ্ট তরুণ প্রজন্মকে শহীদ আব্দুল মালেক দিয়েছেন এক অনন্য পথের দিশা। তাই আজকের নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদ আব্দুল মালেক একটি প্রেরণা,একটি বিশ্বাস, একটি আন্দোলন,একটি ইতিহাস,একটি মাইলস্টোন। শহীদ আব্দুল মালেককে হত্যা করে ইসলামী আদর্শকে স্তদ্ধ করা যায়নি। বরং এক মালেকের রক্ত বাংলার ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে ছড়িয়ে একটি আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে। লক্ষ-কোটি মালেক আজ একই আদর্শের ছায়াতলে সমবেত। সুতরাং শহীদ আব্দুল মালেকের খুনীরা আজ অভিশপ্ত, ঘৃণিত এবং পরাজিত। জাতি তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
মূলত ইংরেজরা সুকৌশলে চিন্তার বিভ্রান্তি ও বিভাজন সৃষ্টির জন্যই সাধারণ শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা এই দুই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে গিয়েছিল। স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়কে মাস্টার এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা মাদরাসা থেকে মোল্লা তৈরির একটি ব্যবস্থা ইংরেজ সরকার প্রবর্তন করেন। লক্ষ্য ছিল জাতির উন্নতি অগ্রগতির মূল স্রোত থেকে মুসলমানদের আলাদা রাখা। অথচ আজাদী লাভের পর পরই প্রয়োজন ছিল দুই বিপরীত ধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একটি বহুমুখী সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। সরকারি এই ভ্রান্তনীতির কারণেই শিক্ষা সংস্কারের বিষয়টি একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়। পাকিস্তান আমল থেকেই অনেকগুলো কমিশন গঠিত হয়। এসব শিক্ষা কমিশনের কোনো রিপোর্টে জাতীয় আদর্শ ইসলামের প্রতিফলন ঘটেনি। পক্ষান্তরে সেক্যুলার,নাস্তিক্যবাদী ও ধর্মবিমুখ সমাজতন্ত্রীরা মুসলিম জাতিসত্তার বিলোপ সাধন করে সেক্যুলারিজম বা ধর্মহীনতা চাপিয়ে দেয়ার জন্য সর্বাত্নক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত। আজকের মতো সে সময়েও রাম-বাম আর সেক্যুলারিস্ট বুদ্ধিজীবীরা ইসলাম ধর্ম আর মুসলমানদের বিরোধিতা একটি কর্মসূচিতে পরিণত হয়। তা স্পষ্ট হয় ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলেন তখন। এই ঘোষণা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। মুসলমানরা শিক্ষিত হয়ে উঠলে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবে,তখন আর তাদের সেবাদাস করে রাখা যাবে না। এই ভয়ে রবীন্দ্রনাথের মতো মনীষী পর্যন্ত এর বিরোধিতা করেন। ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতায় গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে তারা সভা করলো। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং বিশ্বকবি। তার মুসলমান প্রজারা শিক্ষিত হয়ে উঠলে জমিদারের শাসন ও শোষণ চালানো হয়ত বাধাগ্রস্ত হবে,এই ভয়ে তিনি চাননি মুসলমানরা শিক্ষিত হয়ে উঠুক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে হিন্দু সংবাদপত্রগুলো বিষোদগার করতে থাকে। বাবু গিরীশচন্দ্র ব্যানার্জী,ড. স্যার রাম বিহারী ঘোষ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোশ মুখার্জীর নেতৃত্বে বাংলার এলিটগণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ১৮ বার স্মারকলিপি সহকারে তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। বড়লাটের কাছে এই বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদর্শন করলেন যে,পূর্ব বাংলার মুসলমানগণ অধিকাংশই কৃষক। অতএব,বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করলে তাদের কোনো উপকার হবে না। ঢাকার হিন্দুরা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করতে লাগলেন। ‘এ হিস্ট্রি অব ফ্রীডম মুভমেন্ট’গ্রন্থে তারই উল্লেখ আছে।
কিন্তু সকল যড়যন্ত্র আর বিরোধিতা ছাপিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,আর ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক এখন শহীদ আব্দুল মালেক। সুতরাং শহীদ আব্দুল মালেক আজ একটি সফল আন্দোলনের নাম। একটি প্রেরণার বাতিঘর। যে ঘরে আশ্রয় নেয়া তরুণ-যুবক, বৃদ্ধ-বনিতা সবার উপলদ্ধি আর শূন্যতা যেখানে, শহীদ আবদুল মালেক ১৯৬৯ এর ২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপা আয়োজিত মুক্ত আলোচনা সভায় Milton প্রদত্ত শিক্ষার সংজ্ঞাটির বিশ্লেষণ করেছেন ঠিক এভাবেই- ‘Harmonious development of body, mind and soul কখনো কোনো আদর্শের ভিত্তি ছাড়া হতে পারে না।’ এই উচ্চারণ এখন জাতীয় শ্লোগানে পরিণত হয়েছে। সেই কালজয়ী শ্বাসত বিধান আল-ইসলাম। সেরা দায়ীর উজ্জ্বল নজির স্থাপন করেছেন শহীদ আব্দুল মালেক। আজকের আধুনিক পৃথিবী এ কথাই প্রমাণ করছে যে মানুষের শান্তির জন্য প্রধান হুমকি অনুন্নয়ন ও দরিদ্রতাই নয় বরং অনৈতিকতাও একটি বড় সমস্যা। Morality, Manner বা Ethics.আর সেই জিনিস মানুষের মধ্যে কেবলমাত্র জাগ্রত করতে পারে ইসলামী শিক্ষা। পশ্চিমারা তার গগণচুম্বী উন্নতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দূরতিক্রম্য অগ্রযাত্রা সত্ত্বেও মানবিকতার এক করুণ সঙ্কট (Crisis) মোকাবেলা করছে। Education does not necessary mean mare acquisition of Degrees and Diplomas. It emphasizes he need for acquisition of knowledge to life a worthy life. শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র কিছু ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা অর্জন নয় বরং সম্মানজক জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন।’
আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধর্ম ও নৈতিকতাবিহীন একটি কারখানায় পরিণত করেছি। ধর্মবোধ তথা স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যই মানুষকে দায়িত্ববোধ সম্পন্ন,কর্তব্যনিষ্ঠ,ন্যায়পরায়ণ,সৎকর্মশীল,জবাবদিহিতা ও বিনীয় হতে শেখায়। বিখ্যাত মনীষী Sir Stanely Hull -এর মতে, ‘If you teach your children three R’s : Reading, Writing and Arithmetic and leave the fourth ‘R’ : Religion, then you will get a fifth ‘R’ : Rascality.’ অর্থাৎ ‘যদি আপনি আপনার শিশুকে শুধু তিনটি ‘R’ (Reading, Writing, Arithmetic) তথা পঠন,লিখন ও গণিতই শেখান কিন্তু চতুর্থ ‘R’ (Religion) তথা ধর্ম না শেখান তাহলে এর মাধ্যমে আপনি একটি পঞ্চম ‘R’ (Rascality) তথা নিরেট অপদার্থই পাবেন।
আলবার্ট সিজার তার Teaching of Reference of or Life গ্রন্থে শিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনা রাখতে গিয়ে বলেছেন, ‘Three kinds of progress are significant. These are progress in knowledge and technology, progress in socialization of man and progress in spirituality. The last one is the most important’.তার ভাষায় ‘আধ্যাত্মিকতার বিকাশই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’তাহলে আমরা সামগ্রিকভাবে বলতে পারি যে,শিক্ষার ল্য হচ্ছে আমাদের আত্মার বিকাশ,আধ্যাত্মিকতার বিকাশ,মানসিক বিকাশ। শিক্ষা মানুষকে মনুষ্যত্ব দান করে,মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে,চরম সভ্যতায় উন্নীত করে,পরম আলোকে পৌঁছে দেয়। শহীদ মালেক সেদিন ক্ষুরধার তথ্য ও যুক্তিপূর্ণ উপায়ে ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন,“মানুষ কি মনে করেছে,আমরা ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?” আব্দুল মালেক শহীদ তাঁর জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে সেই পরীক্ষাই দিয়ে গেছেন। সারাটা জীবন কষ্ট করেছেন। আর্থিকভাবে খ্বুই অসচ্ছল একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বগুড়া জেলায় এই ক্ষণজন্মা নক্ষত্র আবিভূত হয়েছিল। জীবন যাপনের অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ থেকেও তিনি ছিলেন বঞ্চিত। কিন্তু তিনি ছিলেন মোহমুক্ত। সেই কচি বয়সে তাঁর মায়ের কোলে থাকার পরিবর্তে তিনি বাড়ি থেকে অনেক দূরে লজিং থেকেছেন। দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে আর সাতরিয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে তাকে। ক্ষুধার যন্ত্রণা, অমানুষিক পরিশ্রম কিংবা দুঃখ-কষ্টের দিনযাপন কোনো কিছুই পিচ্ছিল করতে পারেনি তাঁর চলার পথ। “অহংকার হচ্ছে আল্লাহর চাদর” প্রিয়নবী (সা.) এই হাদীসের বাস্তব উদাহরণ ছিলেন শহীদ আব্দুল মালেক। তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেষ্ঠত্ব সত্ত্বেও মনের দিক থেকে ছিলেন একেবারেই নিরহঙ্কার। এসএসসি,ও এইচএসসিতে মেধা তালিকায় স্থান আর ঢাবি সেরা ছাত্রের পোশাক বলতে ছিল একটি কমদামী সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবী যাতে ইস্ত্রির দাগ কেউ কখনো দেখেছে বলে জানা যায় না। শহীদ আব্দুল মালেক প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন তাঁর কর্মীদের। সে ভালোবাসা ছিল নিখাদ নিঃস্বার্থ। জনাব ইবনে মাসুম লিখেছেন :” তিনি ছিলেন তাদের দুঃখ-বেদনার সাথী। তাঁর এই আন্তরিকতার জন্য অনেক কর্মীর কাছে তিনি ছিলেন অভিভাবকের মতো। কর্মীর যোগ্যতাকে সামনে রেখে উপদেশ দিতেন,অনুপ্রেরণা যোগাতেন প্রতিভা বিকাশে। ভাবতে অবাক লাগে,প্রতিটি কর্মী সম্পর্কে তিনি নোট রাখতেন। প্রতিটি কর্মীর ব্যাপারে নিজের ধারণা লেখা থাকতো তাঁর ডাইরিতে। এমনিভাবে ভাবতেন তিনি কর্মীদের নিয়ে। ফলে কর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন প্রিয় মালেক ভাই,একজন অভিভাবক,একজন নেতা।” মালেক ভাই হয়ত কাস করছেন,সময় পেলে পড়ছেন। এরপর আন্দোলনের কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছুটে চলছেন। রাতে হয়তো পোস্টারও লাগাচ্ছেন কর্মীদের সাথে। আবার অনেক সময় পোস্টার লাগাবার পর অন্যান্যদের কাজ শেষ করার পূর্ব পর্যন্ত একটু সময় পেতেন,তখন সিঁড়িতে ঠেস দিয়ে অথবা পীচঢালা নির্জন পথে একটু বসে বিশ্রাম নিতেন।” নূর মুহাম্মদ মল্লিক লিখেছেন,-”সারাদিন কাজ করে রাতের বেলায় তাঁর নিজের হাতে কান্ত শরীরে সেই একমাত্র পাজামা পাঞ্জাবী ধোয়া রুটিন কাজের কথা। কোনো এক রাতে সেটি ধোয়া সম্ভব হয়নি বলে সকালে ধোয়া পাঞ্জাবী আধা ভেজা অবস্থায় গায়ে জড়িয়ে মালেক ভাই গিয়েছিলেন মজলিসে শূরার বৈঠকে যোগ দিতে। মালেক ভাইয়ের পোশাক যেমন সাধাসিধে ছিল,দিলটাও তেমন সাধাসিধে শুভ্র মুক্তার মত ছিল। প্রাণখোলা ব্যবহার তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।” প্রতিকূল পরিবেশকে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসা নেতৃত্বের যোগ্যতার অন্যতম উপাদান। আর প্রতিকূলতাকে জয় করার নামই তো আন্দোলন। এই কাজের জন্য চাই অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব। শহীদ আব্দুল মালেক ছিলেন তার জীবন্ত ইতিহাস। তার অসাধারণ কর্মকাণ্ডের তুলনা যেন তিনি নিজেই।
ভাষা সৈনিক মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম লিখেছেন- “শহীদ আব্দুল মালেক তরুণ বয়সেই এমন এক উজ্জ্বল নজির রেখে গেছেন যা এদেশে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে চিরদিন প্রেরণা যোগাবে। এতগুলো গুণ একজন ছাত্রের মধ্যে এক সাথে থাকা অত্যন্ত বিরল। একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে শিক্ষক ও ছাত্র মহলে তার সুখ্যাতি সত্ত্বেও তার নিকট ছাত্রজীবন থেকে আন্দোলনের জীবনই বেশী প্রিয় ছিল। যথাসম্ভব নিয়মিত কাসে হাজির হওয়াই যেন তার জন্য যথেষ্ট ছিল। পরীক্ষায় ভাল করার জন্য তার মধ্যে কোনো ব্যস্ততা ছিলনা। ওটা যেন অতি সহজ ব্যাপার ছিল। কাসের বাইরে তাঁকে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো চিন্তাধারা বা আলাপ-আলোচনা করতে বড় একটা দেখা যেত না। তার সহপাঠী ও সহকর্মীরা তাকে পরীক্ষায় খুব ভাল ফল করার দিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিলে মৃদু হেসে বলতেন,বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ডিগ্রি নিতে হবে যাতে আয়-রোজগারের একটা পথ হয়। কিন্তু ওটাকে জীবনের চরম লক্ষ্য বানিয়ে নিতে চাই না। খুব ভাল রেজাল্টের ধান্ধা করলে ক্যারিয়ার গড়ে তুলবার নেশায় পেয়ে বসবার আশঙ্কা আছে। আব্দুল মালেকের শাহাদাত আর পরবর্তী শাহাদাতের তুলনা করলে এটাই দেখি একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির শাহাদাতের ফলে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল,ঐ ধরনের প্রতিক্রিয়া পরবর্তীদের ক্ষেত্রে হয়নি। আন্দোলন যখন শক্তি সঞ্চয় করেছে মাত্র তখন একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির শাহাদাত আন্দোলনের শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।” আর আজকের এ সময়ে শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার শাহাদাত বিশ্বমুসলিম উম্মাহর প্রেরণার উচ্চতর মিনার রচনা করতে সক্ষম হয়েছে,আলহামদুলিল্লাহ।
১৯৬৯ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের এ সাংগঠনিক ক্রান্তিকালে শহীদ আব্দুল মালেকের ভূমিকা সম্পর্কে শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী লিখেছেন,“দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সবাই স্বীকার করেছেন,ব্যাপারটা আমাদের সাংগঠনিক শৃংখলার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। কিন্তু একে স্থায়ীভাবে প্রতিহত করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিতে কেউই সাহস পাচ্ছে না। আমার কাছে ব্যাপারটা অত্যন্ত পরিষ্কার ছিল। ঢাকা এবং পূর্ব-পাক সংগঠনের নেতৃত্বকে দূর্বল এবং অসহায় মনে করে সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্থ করার মানসে কিছু সংখ্যক অ-কর্মী কর্মী সেজে এ অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে এগুলো দমন করার জন্য যখন দায়িত্বশীল কর্মীদের রাজী করাতে পারিনি, তখন দায়িত্ব ছেড়ে সরে পড়ার মনোভাব আমার প্রবল হয়েছিল। ‘আমার হাতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আগে আমি সরে পড়ি,তারপর যাদের উপর দায়িত্ব আসবে তারা পারলে সংগঠনকে বাঁচাবে নতুবা নিজেরাই দায়ী হবে’ এমন বাজে চিন্তা আমার মধ্যে একাধিকবার এসেছে। সংগঠন জীবনে এ ছিল আমার সবচেয়ে দূর্বল মুহুর্ত। আব্দুল মালেকের একক হস্তক্ষেপে সেদিন দরবেশী কায়দায় এহেন শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে আমি রক্ষা পেয়েছিলাম।” 
শহীদ আব্দুল মালেক ছিলন একটি চলমান ইনসাকপিডিয়া। জানতে হলে পড়তে হয়। অধ্যয়নের কোনো বিকল্প নেই। শহীদ আব্দুল মালেক এ বিষয়ে আমাদের সকলের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। আন্দোলনী কর্মকাণ্ডের শত ব্যস্ততা মালেক ভাইয়ের জ্ঞানার্জনের পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও তিনি নাশতার পয়সা বাঁচিয়ে বই কিনতেন, সংগঠনের এয়ানত দিতেন। অথচ তাঁর রেখে যাওয়া এই দেশের ইসলামী আন্দোলনের অধিকাংশ নেতা কর্মীই এক্ষেত্রে দুঃখজনকভাবে পিছিয়ে আছেন। শ্রদ্ধেয় কৃতী শিক্ষাবিদ ড. কাজী দীন মুহাম্মদ-এর স্মৃতিচারণ থেকে আমরা জানতে পারি,শত ব্যস্ততার মাঝেও জ্ঞানপিপাসু আব্দুল মালেক দীন মুহম্মদ স্যারের কাছে মাঝে মধ্যেই ছুটে যেতেন জ্ঞানের অন্বেষায়। ইসলামী আন্দোলন করতে হলে নানা বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয়। কুরআন- হাদীস,অর্থনীতি,রাজনীতি,ব্যবসা-বাণিজ্য,ব্যাংকিং-বীমা,সমাজনীতি,বিচারব্যবস্থা,আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি মরহুম আব্বাস আলী খান এ প্রসঙ্গে এক স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধে বলেন : “বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর পাকা হাতের লেখা পড়তাম মাসিক পৃথিবীতে। বয়স তখন তাঁর উনিশ-বিশ বছর। একেবারে নওজোয়ান। কিন্তু তার লেখার ভাষা ও ভঙ্গী বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর তীক্ষè ও গভীর জ্ঞান তাঁর প্রতি এক আকর্ষণ সৃষ্টি করে।” জনাব কামারুজ্জমান লিখেছেন-রাতে ঘুমানোর আগে দেখতাম মালেক ভাই ইংরেজি একটি ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছেন। আবার কিছু কিছু নোট করছেন। তিনি মাসিক পৃথিবীতে চলমান বিশ্ব পরিস্থিতির উপর লিখতেন। বুঝলাম সেই লেখার জন্য মালেক ভাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তখন থেকেই বিদেশী ম্যাগাজিন পড়ার ব্যাপারে আমার মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। মালেক ভাইয়ের অনেক স্মৃতি আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।
যুগে-যুগে নবী-রাসূল (সা.) সাহাবায়ে আজমাইন,আর সত্যপথের পথিকদের যে কারণে বাতিলরা হত্যা ঠিক একই কারণে শহীদ আব্দুল মালেক,শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা,সাইয়েদ কুতুব আর হাসাল আল-বান্নাকে হত্যা করা হয়েছে। তারা সারা পৃথিবীর মানুষের প্রেরণা। তারা মরেও অমর। তারা এক অনন্য জীবনের সন্ধান পেয়েছে, সেই অনন্ত জীবনের নাম শাহাদাত। চিঠিতে তিনি স্পষ্ট করে সেই নিঃস্বার্থ ও নির্মোহ সিদ্ধান্তের কথাই বলেছেন শহীদ আব্দুল মালেক,“বাইরের পৃথিবীতে যেমন দ্বন্দ্ব চলছে তেমনি আমার মনের মধ্যেও চলছে নিরন্তর সংঘাত। আমার জগতে আমার জীবনে আমি খুঁজে নিতে চাই এক কঠিন পথ,জীবন-মরণের পথ। মায়ের বন্ধন ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। বৃহত্তর কল্যাণের পথে সে বন্ধনকে ছিঁড়তে হবে। কঠিন শপথ নিয়ে আমার পথে আমি চলতে চাই। আশির্বাদ করবেন। সত্য প্রতিষ্ঠার এ সংগ্রামে যেন আমার জীবনকে আমি শহীদ করে দিতে পারি। আমার মা এবং ভাইরা আশা করে আছেন আমি একটা বড় কিছু হতে যাচ্ছি। কিন্তু মিথ্যা সে সব আশা। আমি বড় হতে চাইনে, আমি ছোট থেকেই সার্থকতা পেতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র হয়ে বিলেত ফিরে যদি বাতিলপন্থীদের পিছনে ছুটতে হয় তবে তাতে কি লাভ?
জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের বিদায়ে কেঁদেছে গোটা জাতি। দলমত নির্বিশেষে সবাই এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সে সময়ের সংবাদ পত্র তার সাক্ষী। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল জাতীয় নেতারা নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছিল। আওলাদে রাসুল শহীদ আব্দুল মালেকের জানাজার পূর্বে আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে বলেছিল- “শহীদ আব্দুল মালেকের পরিবর্তে আল্লাহ যদি আমাকে শহীদ করতেন তাহলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করতাম। শহীদ আব্দুল মালেকের শাহাদাতী তামান্নার তীব্রতা প্রতিধ্বনিত হয়েছে সাবেক লজিং মাস্টার জনাব মহিউদ্দিন সাহেবের কাছে লেখা চিঠির ভাষায়- “জানি,আমার কোনো দুঃসংবাদ শুনলে মা কাঁদবেন। কিন্তু উপায় কি বলুন? বিশ্বের সমস্ত শক্তি আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আমরা মুসলমান যুবকরা বেঁচে থাকতে তা হতে পারে না। হয় বাতিলের উৎখাত করে সত্যের প্রতিষ্ঠা করবো,নচেৎ সে চেষ্টায় আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। আপনারা আমায় প্রাণভরে আশির্বাদ করুন,জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও যেন বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারি। কারাগারের নিরন্দ্র অন্ধকার,সরকারি যাঁতাকলের নিষ্পেষণ আর ফাঁসির মঞ্চও যেন আমাকে ভড়কে দিতে না পারে।” শহীদ আব্দুল মালেকের হত্যাকারীদের বিচার এখনো হয়নি। এই দুনিয়ার আদালতে তাদের বিচার না হলেও আল্লাহর আদালত থেকে তারা রেহাই পাবেনা এটাই আমাদের বিশ্বাস। শহীদ আব্দুল মালেকের খুনীরা অনেকেই এখন রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অধিষ্ঠিত। শহীদ আব্দুল মালেকের হত্যার প্রতিশোধ তার উত্তরসূরীরা এই জমিনে কালেমার পতাকা উড্ডীন করার মাধ্যমে গ্রহণ করবে,ইনশাল্লাহ। 
হে! আরশের মালিক, শহীদ আব্দুল মালেক এবং তাঁর সহযোদ্ধা শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সহ সকল শহীদদের জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমীন।

About

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

আমার ব্লগ তালিকা

Translate

Translate

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24

সর্বশেষ

অনুসরণকারী