বিজ্ঞাপন দিন

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই ঈদ উত্তর সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। ব্যাংক খোলা এবং যথারীতি ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এই গ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। ঢাকার সবুজবাগ থানার রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১:b>ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও, শাহীবাগ বাজার

রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৬

ছাত্রজনতাকে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছে ছাত্রশিবির

সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার দাবিতে ছাত্রজনতাকে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছে ছাত্রশিবির।
রোববার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল ইয়াছিন আরাফাত এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে শিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, নাস্তিক্যবাদী রাষ্ট্র গঠন করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দেয়ার চক্রান্ত করছে সরকার। রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে সম্প্রতি কালে কোন বিতর্ক না থাকলেও সরকার তাদের অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে ২৮ বছর আগের একটি রিটকে সচল করেছে। একের পর এক ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের পর এখন সরাসরি দেশকে ইসলাম শুন্য করার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু সরকারের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র জনগণ মানবে না।
তারা বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একের পর এক ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অসংখ্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও কুরআনের মাহফিলে ১৪৪ ধারা জারি করে আওয়ামী লীগ তাদের ইসলাম বিদ্বেষী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের শীর্ষ আলেম ও দেশপ্রেমিক ইসলামী নেতৃবৃন্দের উপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তার আরেকটি উদাহারণ ইতিহাসে বিরল। সরকার দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করার পর এবার ধর্মীয় অধিকারকেও হরণ করতে চায়।
শিবির নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলাম বিরোধী তৎপরতা কার স্বার্থে? দেশের সর্বস্তরের মানুষ এর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। রাজধানীসহ সারাদেশে মানুষ রাজপথে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আগামীকাল জামায়াতে ইসলামী শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচি আহবান করেছে। আমরা এই হরতালকে পুরোপুরি সমর্থন করছি। একই সাথে দেশের সর্বস্তরের ছাত্রজনতাকে ইসলাম রক্ষার এই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানাচ্ছি। আমরা সরকারকে বলতে চাই, দেশের মানুষ এখনো শান্তিপূর্ণ উপায়ে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু ইসলাম এদেশের মানুষের কাছে জীবনের চেয়ে বেশি প্রিয়। কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে জনগণ তা মানবে না। সুতরাং সরকারের উচিৎ জনগণের অনুভূতিকে সম্মান দেখিয়ে আত্মঘাতি এ ষড়যন্ত্র থেকে সরে আসা।

রাষ্ট্রধর্ম মামলার আবেদনকারী থেকে পিছু হটলেন বদরুদ্দীন উমর


রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে করা রিটের সঙ্গে নিজের কোনও সম্পর্ক নেই বলে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি ও কলামিস্ট বদরুদ্দীন উমর। রবিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়।
. বিবৃতিতে বদরুদ্দীন উমর বলেন, ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকার রাষ্ট্রধর্ম আইন করার সময় যে প্রতিরোধ কমিটি হয়েছিল, আমি তার প্রেসিডিয়ামের সদস্য ছিলাম। কমিটির পক্ষ থেকে একটি মামলা তার বিরুদ্ধে করা হয়েছিল, কিন্তু কিছুই হয়নি। এখন সেই মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। আমার নামও তার সঙ্গে জড়ানো হয়েছে। আমি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি, রাজনৈতিকভাবেই আমরা সে সময় আন্দোলন করেছিলাম এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবেই মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু তখন যে পরিস্থতিতে মামলা করা হয়েছিল সে পরিস্থিতি এখন আর নেই।
বিবৃতিতে বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, সে সময় এরশাদের প্রস্তাবিত আইনটির বিরোধিতা তারাও করেছিলেন। ইচ্ছা থাকলে তারা ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এই আইন বাতিল করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেনি। উপরন্তু তারা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম আইন বহাল রেখেছেন। তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে এটা স্পষ্ট যে, তারা এই আইনের পক্ষপাতী। এই পরিপ্রেক্ষিতে সেই পুরনো মামলা পুনরুজ্জীবিত করা অর্থহীন। এই মামলা পুনরুজ্জীবিত করার আগে আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করা হয়নি। এই মামলার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।

৩য় বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন উপজেলা জামায়াতের আমীর আলহাজ্ব অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী

কক্সবাজার টেকনাফ হোয়াইকং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩য় বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন উপজেলা জামায়াতের আমীর আলহাজ্ব অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী। ২২ মার্চ ২০১৬ই তারিখে অনুষ্ঠিত টেকনাফ উপজেলঅয় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতায় ২ ব্যক্তি নিহত এবং অর্ধশত ব্যক্তি আহত হওয়ার পর তুমুল সমালোচনার মুখে পরে প্রশাসন।
সহিংসঘটনাবহুল টেকনাফের ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টির নির্বাচন সম্পন্ন হলে সবার দৃষ্টি থাকে হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইআুনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিকে। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে দায়িত্বরত আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিরপেক্ষ ও কঠোর ভূমিকায় থাকায় শত চেষ্টা করেও এখানে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী ও তার সমর্থকেরা সুবিধা করতে পারে নি। 
বিগত দিনের সততা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের পরাজিত করে টানা তৃতীয়বারের মত তিন হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন উপজেলা জামায়াতের আমীর আলহাজ্ব অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী।

বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৬

ইনুর জাসদের এক করুণ উপাখ্যান -ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম


জাসদ ভাঙ্গার খবরটি এখন ”ট্যক অব দ্যা কান্ট্রি”। প্রতিদিনই আসছে পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠনের খবর। এতো অল্প লোকের দল! তাও আবার দু’ভাগ? তাহলে দু’দলে কয়জন করে নেতা-কর্মী থাকবে? ব্যাপারটি তো খুবই জটিল! দেশে বাম দলগুলো এখন যে কয় দলে বিভক্ত তা রীতিমত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে আসার মত একটি ঘটনা। এর উত্তরও রীতিমত বিস্ময়কর! অধিকাংশ বাম দলই এখন ব্যানার সর্বস্ব। এক সময় ছাত্রলীগ ভেঙে গঠিত হয়েছিল জাসদ ছাত্রলীগ। এককালে বেশ অনেক জৌলস ছিল ছাত্ররাজনীতিতে। দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল নিজেদের একক অবস্থান। 
কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় ও ছাত্র অঙ্গন থেকে ছিটকে পড়ে বাম সংগঠনগুলো। বাম রাজনীতির এই করুণ পরিণতির কারণ চমৎকারভাবে বিশ্লেষণ করে জনাব মহিউদ্দিন লিখেছেন“রাজনীতিতে পরিশীলিত ভাষা ব্যবহার করার চেয়ে জাসদ গালাগালি করতে অভ্যস্ত। জাসদকে কেউ বলতো ‘জারজ সন্তানের দল’, কেউ বলতো ‘ভারতের সেকেন্ড ডিফেন্স লাইন’। দলটির সমালোচনা হিসেবে সম্ভবত সবচেয়ে শোভন মন্তব্যগুলো ছিল ‘উগ্র’, ‘হঠকারী’ ও ‘বিভ্রান্ত’। 
এদের আরেকটি প্রবণতা হলো, নিজ দলকে একমাত্র খাঁটি বিপ্লবী দল হিসেবে দাবি করা এবং অন্য সব দলকে কুচক্রী, ষড়যন্ত্রকারী, বিশ্বাসঘাতক ও দেশি-বিদেশি শক্তির এজেন্ট হিসেবে চিত্রিত করা।” জাসদ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল এবং চরমপন্থার দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকছিল। এ সময় অন্য বাম দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে যারা ‘সশস্ত্র বিপ্লবে’ বিশ্বাস করে, প্রচারধর্মী বক্তব্যই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এসব বক্তব্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল বাগাড়ম্বরে পরিপূর্ণ এবং মার্ক্স-এঙ্গেলস-লেনিন-স্ট্যালিন-মাও সেতুংয়ের উদ্ধৃতিতে ভরা। যেমন কিছু একটা বলতে চাইলে যুক্তি দেওয়া হতো---এটা করতে হবে, কেননা কমরেড লেনিন এ কথা বলেছেন..., ওভাবে যাওয়া যাবে না, কারণ চেয়ারম্যান মাও এ বিষয়ে এই কথা বলেছেন ইত্যাদি। বাম রাজনীতিতে এই পীরবাদী প্রবণতা স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে প্রায় অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল। তাদের কেউ কেউ ‘ভারতের দালাল-মুক্তিযোদ্ধাদের’ খতম করাকে বিপ্লবী কাজ মনে করত। (সুত্র: জা.উ.প-অস্থির সময়ের রাজনীতি)
বর্তমান মহাজোট সরকারের আলোচিত-সমালোচিত মন্ত্রীদের মধ্যে জনাব হাসানুল হক ইনু অন্যতম। তিনি অতি কথনকারী মন্ত্রী হিসাবেই বেশী পরিচিত। বে-রসিকরা বলে থাকেন ইনু সাহেবের দলের জনসমর্থন থেকে উনার কথার ওজন নাকি অনেক বেশী। এই বাম নেতাদের অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থী হলে অনেকের জামানত হারানোর সম্ভাবনাই বেশী! জনাব ইনু সাহেব বিনা ভোটে এমপি, মন্ত্রী হয়ে ধরাকে যেন সরাজ্ঞান করছেন প্রতিনিয়ত। অবস্থা দেখে মনে হয় বাম রাজনীতির প্রতীক খদ্দর পাঞ্জাবী আর মোটা ফ্রেমের চশমা ছেড়ে ক্ষমতার দাপটে এখন তারা যেন বে-সামাল। বিএনপি-জামায়াতকে যত অ-শোভন ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাষায় গালাগালি করাই যেন ইনু-বাদল সাহেবদের একমাত্র মিশন। 
এদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা শফি সাহেবকে তেঁতুল হুজুর এবং হেফাজতে ইসলামীকে আরো কত কি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বিশ্লেষণে আখ্যায়িত করেন তা সকলেরই জানা। আলেম-উলামা, দাঁড়ি-টুপিকে সব সময় জনাব ইনু সাহেব কাঁটাক্ষ করেই চলেছেন। আলেম-উলামাকে অ-সম্মান করলে আল্লাহ তা সহ্য করেন না। বিশেষ করে বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে ইনু সাহেবের অশালীন, অশোভন কটুক্তি যেন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দারুণভাবে কলুষিত করছে। এমন জাতীয় নেতাদের থেকে আমাদের নতুন প্রজন্ম কি শিখছে!! তাই যেন আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাসদের কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দলটি আবার ভাঙ্গনের মুখে পড়ল। এজন্য দলীয় নেতা-কর্মীরা মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর অশাসনতান্ত্রিক একপেশে ও ক্ষমতার অপব্যবহারকে দায়ী করছে। গত কয়েকদিন আগে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কাউন্সিল অধিবেশন থেকে বের হয়ে দলের একাংশ নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে। ঘোষিত ওই কমিটির সভাপতি হয়েছেন শরীফ নূরুল আম্বিয়া। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন নাজমুল হক প্রধান। (সুত্র: প্রথম আলো-মার্চ ১৩, ২০১৬)
এদিকে মন্ত্রী হওয়ার পর হাসানুল হক ইনুর আর্থিক অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতা ও ব্যক্তিগত অনুরাগের কারণে জাসদে ফের ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল। জাতীয় সংসদ ভবনে নজি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন, এই বিস্ফোরণ হওয়ার নেপথ্যে কাজ করেছে মন্ত্রী হওয়ার পর উনার (ইনু) আর্থিক অস্বচ্ছতা। তার আর্থিক আচরণ সম্পর্কে দলে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে অস্পষ্টতা আছে, অস্বচ্ছতা আছে। দলীয় সভাপতি হিসেবে ব্যক্তিগত রাগ-অনুরাগ, ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি তাই নিয়েছেন। আপনার (ইনু) হঠকারী, তথাকথিত মন্ত্রীত্বের ঔদ্ধ্যত্বের কারণে সব কিছু ধ্বংস করছেন। এর উত্তর উনাকেই দিতে হবে। আর এ কারণেই আজ দলের এ অবস্থা। (সুত্র:১৩ র্মাচ, ২০১৬ শীর্ষ নিউজ) 
ষোড়শ শতাব্দী থেকেই মূলত কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের চিন্তা শুরু হয়। চার্লস ফ্যুরিয়ার, সেন্ট সাইমন, রবার্ট ওয়েন প্রমুখ এ ঘরানার দার্শনিকদের মাধ্যমে। ১৯১৭ সালে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি রাশিয়ায় প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর ৮০-এর দশক থেকেই শুরু হয় সমাজতন্ত্রের পতন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাজতন্ত্রকে বর্জন করে তাদের মুক্তির জন্য গণতান্ত্রিক ধারা ও শাশ্বত বিধান আল-ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। সেখান থেকে সমাজতন্ত্রীদের আক্রোশের বস্তুতে পরিণত হয় ইসলাম ও গণতন্ত্র। সত্তরের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বাম রাজনীতির অনেকটাই ছন্নছাড়া অবস্থা দেখা দেয়। বিশ্ব রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়া ভাব কাটিয়ে উঠতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে টিকে থাকার সংগ্রামে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এর মধ্যে অনেকে তওবা করে বাম রাজনীতি ছাড়লেও বিরাট অংশ এখন অন্য দলের আড়ালে,আবডালে থেকে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও নিজেদের স্বার্থ হাসিলে সবচেয়ে বেশি তৎপর। এরই মধ্যে কেউ কেউ আবার উদ্ভট মন্তব্য করে আর বড় দলগুলোকে কুপরামর্শ দিয়েও অতীতের প্রতিশোধ কিছুটা মিটিয়ে নিচ্ছেন। সেই অভিযোগটি এখন তুঙ্গে মহাজোট সরকারের বাম ঘরানা মন্ত্রী, এমপি এবং প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতিতে জাসদ এখন ছাগলের বাছুর তিন নম্বরটার ভূমিকায় অবতীর্ণ। এক সময় আওয়ামীলীগের প্রচন্ড প্রতিদ্বন্ধী হলেও এখন ক্ষমতা ভোগী আর লুটপাটের অংশীদারিত্ব নিয়ে বাঘ-সিংহ যেন এখন এক ঘাটে পানি খায়। ইনু সাহেবের উদ্ভট মন্তব্যের দায় আওয়ামীলীগকেই নিতে হচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা ক্ষেত্র তৈরীতে জাসদের ভূমিকা নিয়ে আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই এখন প্রশ্ন তুলছেন।
জাসদ মনে করে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ‘কুকুরে-কুকুরে কামড়াকামড়ি’ :-
জাসদের একটি অংশ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যকার লড়াইকে বলেছিল ‘কুকুরে-কুকুরে কামড়াকামড়ি’। মতিয়া চৌধুরী বলেছিল” শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুিগ বাজামু” ”কর্নেল তাহের সম্ভবত জানতেন না ১৫ আগস্ট তারিখটিই অভ্যুত্থানের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। তবে এরকম একটা ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়। কোটি টাকার প্রশ্ন ছিল, কবে, কখন? শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর ক্ষোভ ছিল অপরিসীম। তাহের মনে করতেন, ‘মুজিব সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়নে চরম অবহেলা দেখিয়েছে এবং রক্ষীবাহিনীর মতো একটা কুখ্যাত আধা সামরিক বাহিনী তৈরি করেছে।” ১৯৭১ সালে নঈম ১১ নম্বর সেক্টরে তাহেরের সহযোদ্ধা ছিলেন এবং প্রায়ই তাঁর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করতেন। তাহের আক্ষেপ করে নঈমকে বললেন, ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া। ১৫ আগস্টের পর গণবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। লিফলেটের শিরোনাম ছিল, ‘খুনি মুজিব খুন হয়েছে---অত্যাচারীর পতন অনিবার্য।’ (জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি, পৃষ্ঠা নং- ১৭৯) এ নিয়ে রাজনৈতিক উভয় দলের স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশে তা আপাতত থেমে গেলেও যে কোন সময় তা আবার মাথাচাড়া দিতে পারে।
জনাব মহিউদ্দীন লিখেছেন- ”জাসদের এক প্রচারপত্রে শিরোনামে ‘এই কি সোনার বাংলা---শেখ মুজিব জবাব দাও’ সভা, জমায়েত, মিছিল, ধর্মঘট ইত্যাদি জনগণের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব ফরমান জারি করে সেগুলোও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, যাতে জনগণ কুকুরের মত মরতে থাকলেও আর প্রতিবাদ করতে না পারে! যত্রতত্র জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা; হয়রানি চলছে নিরীহ মানুষদের। এটাই মুজিববাদী গণতন্ত্রের স্বরূপ। ‘বাংলাদেশে আজ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ’ বলে উল্লেখ করা হয়। গত ২৫ মাসে গুম ও খুন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। রক্ষীবাহিনী ও পুলিশের হামলা হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার পরিবারে। জেলে রাজবন্দী আছে ১৮ হাজারের ওপর। হুলিয়া আছে প্রায় ২৫ হাজার নেতা ও কর্মীর নামে। বাড়ি পুড়েছে প্রায় আড়াই হাজার। নারী ধর্ষণ অসংখ্য। প্রগতিশীল নেতা ও কর্মীদের গুম ও খুন করার জন্য এক ঢাকা শহরেই নামানো হয়েছে প্রায় দেড়’শ স্কোয়াড। 
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ খুনের আড্ডা। ১৯৭৩-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যত ভোট পেয়েছে, তার শতকরা ৫২ ভাগ জাল, আর প্রায় ২০ ভাগ মানুষের দারিদ্র্যের সুযোগে লোভ-লালসার মাধ্যমে ঠকিয়ে নেওয়া। উপনির্বাচন এবং স্কুল-কলেজের নির্বাচনও বস্তুত ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও বুলেট ব্যবহারের নির্বাচন।” এটি ছিল আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে আপনাদের বক্তব্য। আজ ক্ষমতার লোভে আওয়ামীলীগের সব অপকর্মই এখন ইনু-বাদল আর মেনন সাহেবদের কাছে হালাল এবং জায়েজ!!
জাসদের উপর আওয়ামীলীগের নির্মম নির্যাতন: -
জাসদের কর্মীদের প্রতি জাতীয় রক্ষীবাহিনীর সদস্যদের আচরণ ছিল নির্মম। রক্ষীবাহিনীর হাতে নির্যাতিত জাসদের কর্মীদের অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ। তেহাত্তর সালে এসব ‘সংঘর্ষে’ জাসদের ২৩ জন কর্মী নিহত হন বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। জাসদের কর্মী খুঁজে বের করে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ ছিল রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে। পঁচাত্তরের ১ জানুয়ারি সিরাজ শিকদারকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই রাতেই তাঁকে হত্যা করা হয়। লেখা হয় ‘ক্রসফায়ারের’ চিত্রনাট্য। একটা প্রেস নোটে বলা হয়, পুলিশ তাঁকে নিয়ে অস্ত্রের সন্ধানে সাভারে গিয়েছিল। গাড়ি থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে সিরাজ শিকদার নিহত হন। (জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি) এভাবে দেশে সর্বপ্রথম ‘ক্রসফায়ারের’ নামে হত্যার রাজনীতি শুরু করে আওয়ামীলীগ। ইনু-বাদল সাহেবরা এখন সেই রক্তের সাথে গাদ্দারী করছেন না?
এইডা হাসানুল হক ইনুর কামঃ-
১৭ মার্চের মিছিল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও নিয়ে জাসদের মধ্যে অনেক বিতর্ক হয়। এটা ছিল দলকে আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার একটি অংশ। পরিকল্পনাটি সফল হয়। অনেক চড়াই-উতরাই সত্ত্বেও জাসদের রাজনীতির গণতান্ত্রিক ধারাটি এত দিন বজায় ছিল। ১৭ মার্চ এ ধারার পরিসমাপ্তি ঘটে। এ প্রসঙ্গে জাসদের কেন্দ্রিয় কমিটির কৃষি সম্পাদক হাবিবুল্লাহ চৌধুরীর ভাষ্য এরকম : প্রথমে শুনলাম, গুলি করেছে হাবিবুল হক খান বেনু। পরে জানলাম, এইডা হাসানুল হক ইনুর কাম।”(সুত্র: জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি)
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ মুজিবুর রহমান সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন নিজ দলের চাটুকারদের মাধ্যমে। শেখ মুজিবুর রহমানকে এই শ্রেণীর বামরাই প্রলুদ্ধ করে বাকশাল কায়েম করিয়ে ছিলেন। ইতিহাসের বিচারে এটিই ছিল তার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুল। ২৮ অক্টোবর ২০০৬ পল্টন ময়দানে আওয়ামীলীগ লগি-বৈঠা দিয়ে প্রকাশ্য মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নাচানাচি করে উল্লাস প্রকাশ করেছে বাম ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এই বামরাই শাহবাগের জন্ম দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করে নাস্তিকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টির জন্য বামরাই দায়ী, এখন আবার বামপন্থীদের কু-বুদ্ধি আর উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে শেখ হাসিনার জনসমর্থনকে শূন্যের কোটায় নিয়ে গিয়েছে। এখন চলছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সংবিধান থেকে মুছে ফেলার চক্রান্ত। জাতিকে বিপদগামী করতে ইনু সাহেবদের বিভাজনের রাজনীতির মাশুল গোটা জাতিকেই হয়ত একদিন গুনতে হবে।

সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫

চট্টগ্রামে শিবির নেতাকে গ্রেপ্তার ও তাকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ব্লগার নিলয় হত্যা মামলায় জড়ানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ


চট্টগ্রামের শিবির নেতা তারেক হোসেনকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার এবং তাকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ব্লগার নিলয় হত্যা মামলার সাথে জড়ানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারী জেনারেল আতিকুর রহমান বলেন, তারেক হোসাইনকে শনিবার রাত ১১ টায় ঘুমন্ত অবস্থায় বাসা থেকে অন্যায়ভাবে আটক করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পরে পুলিশ তাকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত থানা হাজতে আটকে রেখে ডিবি পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ডিবি পুলিশ তাকে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার নিলয় হত্যাকান্ড মামলায় গ্রেফতার দেখায়। অথচ ব্লগার নিলয় খুন হওয়ার কয়েকদিন পরেই নিহতের স্ত্রী খিলগাঁও থানায় ১১/৭/১৫ নং যে মামলাটি দায়ের করেছেন তার এজাহারে তারেকের নাম নেই। এ ঘটনার সাথে তারেক জড়িত থাকতে পারে এমন কথা নিহতরে আত্বীয় স্বজন, তদন্ত কর্মকর্তা বা অন্য কেউ সামান্যতম উচ্চারন না করলেও এত দিন পরে এসে এই নিরীহ মেধাবী ছাত্রকে এই মামালায় জড়ানো হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও সাজানো। মূলত সরকার ও পুলিশ প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে না পেরে নিজেদের লজ্জাজনক ব্যর্থতা আড়াল করতে এই মেধাবী ছাত্রকে বলির পাঠা বানাতে চাইছে। এটি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপকৌশল মাত্র। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই ছাত্রশিবিরের কোন নেতা কর্মী এই ধরনের কোন কাজের সাথে জড়িত নয়। সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই শিবির নেতা তারেক কে গ্রেফতার করেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বার্থান্বেষী মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পুলিশের একের পর এক বেআইনি কর্মকান্ড দেখতে দেখতে দেশের মানুষ বিরক্ত ও ক্ষুদ্ব। নিরাপরাধ ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে তাদের নিয়ে নাটক সাজানো ও ইচ্ছামত মামলায় জড়িয়ে দেয়া পুলিশের নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে। এই অমানবিক ও দায়িত্বহীন আচরণ এক দিকে যেমন অনেক নিরীহ ছাত্রের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে অন্য দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির ভাব মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে। যা একটি রাষ্ট্রের জন্য চরম লজ্জাজনক। আমরা অবিলম্বে নিরাপরাধ শিবির নেতাকে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার মুক্তির দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে ভবিষ্যতে এমন আইনের শাসনের পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

৫ বছরে জার্মানে মুসলমানের সংখ্যা চারগুণ বাড়বে


16 Nov, 2015 আগামী ৫ বছরের মধ্যে জার্মানে মুসলমানের সংখ্যা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ কোটিতে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 
সম্প্রতি আমেরিকার আন্তর্জাতিক পলিসি ইন্সটিটিউট কাউন্সিল স্টোন গেট এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মান সরকার এবার (২০১৫ সালে) প্রায় ১৫ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং ২০১৬ সালে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও বর্তমানে জার্মানে প্রায় ৬ লাখ মুসলিম অধিবাসী বসবাস করছে।
বাভারিয়ার মিউনিসিপালিটির অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইউভা ব্রেন্ডেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ২০২০ সালে জার্মানে মুসলমানের সংখ্যা চারগুণ বৃদ্ধি পাবে।
জার্মানে মুসলিম জনসংখ্যার এ বৃহৎ পরিবর্তনের ফলে সেদেশের পরিবেশেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগবে এটা বলা যায় নিঃসন্দেহে।উৎসঃ বাংলানিউজ24

অন্তর্কোন্দলে ৬ মাসে আওয়ামী লীগের ৩৫ নেতাকর্মী খুন


দলীয় পদ-পদবি, চাঁদার টাকা ভাগাভাগিসহ নানা কারণে খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসব কারণে গত ৬ মাসে ৩৫ নেতাকর্মী খুন হয়েছেন।
খুন আতঙ্কে ভুগছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কখন কে কোথায় কীভাবে আক্রান্ত হন সে আশঙ্কায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠা রয়েছে তারা।
এছাড়া একের পর এক খুনের ঘটনায় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাজধানীসহ সারাদেশের চিত্র প্রায় একই। এসব হত্যাকা-ের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তার। এছাড়া টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও মাদক ব্যবসার ভাগবাটোয়ারার বিষয়ও আছে বেশ কিছু হত্যাকা-ের নেপথ্যে। হত্যাকা-ের সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ভাগবাটোয়ারার বিষয় জড়িত।
তবে দলটির শীর্ষ নেতারা বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তাঁরা বলছেন, দলের ভেতর কোনো কোন্দল নেই। সন্ত্রাসী, খুনি ও মাদক ব্যবসায়ীদের কোনো দলও নেই। একটি কুচক্রীমহল আওয়ামী লীগের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে নানা অপপ্রচার করছে। ১৩ আগস্ট রাজধানীর মধ্যবাড্ডার পানির ট্যাঙ্কি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুবলীগের দু’গ্রুপের গোলাগুলিতে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩ নেতা নিহত হন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটেছিল।
১৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর গেট এলাকায় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার ওপর গুলিবর্ষণ করেছেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা। সবুজ (২৪) নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মী নিহত হন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘দলীয় কোন্দলে কোনো খুনোখুনির ঘটনা ঘটেনি। যদি এমন প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে দল ও সরকার অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দল এবং তাদের সক্রিয় কোনো ভূমিকা না থাকায় সরকারি দলের নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগত নানা সুযোগ-সুবিধা হাসিলের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে ক্ষমতাসীন দলটির মধ্যে খুনোখুনি ও অন্তর্দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে।
বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার ও মিডিয়া কোম্পানি ওয়ার্ল্ড সেফগার্ড অ্যান্ড মিডিয়া লিমিটেড, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে।
আসকের তথ্যমতে, ‘গত ছয় বছরে (২০০৯-১৫) সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অন্তত ১৭২ নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও চরমপন্থিদের হাতে খুন হয়েছেন আরও ৭৪ জন।
এসব হত্যার পাশাপাশি দলীয় কোন্দলে সৃষ্ট সংঘর্ষে ছয় বছরে আহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৬৯১। এদের প্রায় সবাই সরকারি দলের নেতাকর্মী। এ সময়ে নিজেদের মধ্যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ১১১টি। এছাড়া গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ২৫ নেতা খুন হয়েছেনÑ বলছে ওয়ার্ল্ড সেফগার্ড অ্যান্ড মিডিয়া লিমিটেড।
৫ জুন ঝালকাঠি সদর উপজেলায় তৌহিদুল ইসলাম সিকদার নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় গগন বাজার সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি বিনয়কাঠি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
১৭ জুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বালাইশপুর গ্রামে মফিজ উল্লাহ (৫৫) নামে এক মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতাকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত মফিজ উল্লাহ বশিকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় লাদেন মাছুম বাহিনীকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
১৯ জুন ফেনীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মোহাম্মদ মানিক (৩০) নামে যুবলীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। মানিক ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কিছুদিন আগে বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের কিছু নেতাকর্মীর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ওই বিরোধের জেরে ইউনিয়নের ধোন সাহাদ্দা গ্রামের কয়েকজন যুবলীগ কর্মী বালিগাঁও ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে উজ্জ্বল মেম্বারকে মারধর করেন। এ ঘটনায় মোয়াজ্জেমের সমর্থকরা কুরুচিয়া গ্রামে গিয়ে মোহাম্মদ মানিককে গুলি করেন। জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মিয়াজী ওরফে স্বপন অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা অস্বীকার করে বলেন, দুর্বৃত্তরা মানিককে গুলি করে হত্যা করেছে।
২৮ জুন লালমনিরহাট সদর উপজেলা যুবলীগ সদস্য বুলেটকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, শত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা রাতে তাঁকে ফোন করে মহেন্দ্রনগর বাজারে ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
২৯ জুন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের কেয়ারী গ্রামের ছিদ্দিক মিয়ার ছেলে স্থানীয় ছাত্রলীগকর্মী হারুনুর রশিদ বাবুর সঙ্গে একই গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে ওসমান গনির হাতাহাতি হয়। এর জেরে ওইদিন সন্ধ্যায় বাবুর পক্ষ নিয়ে কেয়ারী গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত ওমর ফারুকের নেতৃত্বে ৮-১০ নেতাকর্মী ওসমানের ঘর, তাঁর চাচা আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াকুব আলী ও চাচাতো ভাই সিরাজ মাস্টারের ঘরে ভাঙচুর চালায়। এ সময় তাদের বাধা দিলে ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াকুব আলী ও তাঁর চাচা ফজলুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে শনিবার দুপুর ৩টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইয়াকুব আলী।
৪ জুলাই চট্টগ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষে নুরুল হুদা নামে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১২ জন। নুরুল হুদা বাড়বকু- ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। সীতাকুন্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে নিহত নুরুল হুদা ও ছালামত উল্লাহ ছুট্টুর মধ্যে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। জমি চাষকে কেন্দ্র করে পূর্বশত্রুতার জেরে ছালামত উল্লার পক্ষের লোকজনের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’
৫ জুলাই কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় ইয়াকুব আলী (৫৮) নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গাজীপুরের টঙ্গীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ইয়াকুব আলী উপজেলার কেয়ারী গ্রাম আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১১ জুলাই রাজবাড়ী সদরের পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুস ছাত্তারকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি রেল কর্মচারী ছিলেন। পুলিশ ও চেয়ারম্যানের ধারণা, জমিজমা সংক্রান্ত পূর্বশত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যা করে।
২১ জুলাই জেলার রানীনগরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আমজাদ হোসেন (৩৫) নামে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। উপজেলার বোঁহার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের স্ত্রী ফাইমা বিবি বাদী হয়ে রানীনগর থানায় ৩৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ ৫ আসামিকে গ্রেফতার করে।
২৪ জুলাই পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুরে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। নিহত দানেজ শেখ আমিনপুরের চরপাড়া মালঞ্চি গ্রামের কিয়ামুদ্দিন কেরু শেখের ছেলে এবং আমিনপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
৩১ জুলাই চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হান্নান ছোটকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি উপজেলার দর্শনা পৌরসভার শ্যামপুর গ্রামের মরহুম তনু মল্লিকের ছেলে। সীমান্তবর্তী ঈশ্বরচন্দ্রপুর কানাপুকুর ব্রিজের অদূরে গত বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
১ আগস্ট সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নের নামারবাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সন্দ্বীপ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ওপর হামলা চালিয়ে ওই কর্মীকে খুন করে।’
৭ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি ইউনিয়ন যুবলীগের দফতর সম্পাদক মিলন সরকারকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেওটি ইউনিয়নের মুহুরীগঞ্জ বাজারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। মিলন স্থানীয় সারেং বাড়ির নাদেরুজ্জামানের ছেলে। মিলনের মুহুরীগঞ্জ বাজারে ডেকোরেশনের ব্যবসা রয়েছে।
একইদিন বরিশালের আগৈলঝাড়ায় রাসেল ব্যাপারী (২৩) নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় রিন্টু (২২) নামে আরও এক ছাত্রলীগ কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। আগৈলঝাড়া উপজেলার ট্যামার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাসেল ব্যাপারীর মৃত্যু হয়।
১২ আগস্ট দুপুরে সিলেট মদন মোহন কলেজ ক্যাম্পাসে আগের দিনের বিরোধের জেরে ছাত্রলীগকর্মী আবদুল আলীকে প্রণজিৎ দাশের নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে ছুরিকাঘাত করেন। সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার পর আলীর মৃত্যু হয়। আলী একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ও সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নিজসিলাম গ্রামের আলকাছ মিয়ার ছেলে।
২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের স্মরণে শুক্রবার বিকালে কালিয়াকৈর পৌর আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান চলার সময় কাছের চা দোকানের সামনে হত্যা করা হয় কালিয়াকৈর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলামকে (৫০)।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এই হত্যাকা- ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
১ সেপ্টম্বর দুর্বৃত্তের গুলিতে পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ কর্মী মেহেদী হাসান বাদল নিহত হয়েছেন। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার শেরশাহ কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে পিছন থেকে মেহেদীকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। শেরশাহ কলোনির বাসিন্দা মুখলেছুর রহমানের ছেলে মেহেদী।
৬ সেপ্টম্বর গফরগাঁও উপজেলার নবগঠিত পাগলা থানার পাইথল ইউনিয়নে রাজমিস্ত্রিকে খুন হয়েছেন। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, পাইথল পশ্চিমপাড়া ক্লাবঘর থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে রাজমিস্ত্রি মো. আজিজুল হককে (২৪) হয়েছেন। সে পাইথল পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো. সুলতানের ছেলে। তার পরিবারের লোকজন খুনের সংবাদ পেয়ে পাগলা থানায় বিষয়টি অবহিত করে। পাইথল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আফতাব উদ্দিন ঢালী জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে খুন হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
১৪ সেপ্টম্বর ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের নিগুয়ারি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহর উদ্দিন (৬০) দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হয়েছেন। ডুবাইল গ্রামের খোকা মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তিনি গফরগাঁও উপজেলার (পাগলা) মাখল গ্রামের মৃত শামসুদ্দিনের ছেলে।

১ অক্টোবর ফেনীর সোনাগাজীতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের হাতে গিয়াস উদ্দিন (৩০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় রানা নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী এবং সেলিম নামে এক যুবলীগ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
৮ অক্টোবর কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আকম শাহাব উদ্দিন ফরায়েজী দুর্বৃত্তের হাতে খুন হয়েছেন। খুনের আলামত নষ্ট করতে তার মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশ এসিডে ঝলসে দেয়া হয়েছে।
শাহাব উদ্দিন ফরায়েজীর ছেলে মেহেদী হাসান জানান, তার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
২০ অক্টোবর হাতুড়ির আঘাতে রাজশাহী নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম (৫০) খুন হয়েছেন। নগরীর লক্ষ্মীপুর প্যারামেডিকেল রোডে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ নিহত আসলামের খালাতো ভাই জাহিদকে আটক করেছে। নিহত আসলাম নগরীর হেতেমখাঁ এলাকার মৃত ইসলামের ছেলে। তিনি রাজশাহী ওয়াসার পানির পাম্পচালকের কাজ করতেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, এক সপ্তাহ আগে জাহিদের সঙ্গে আসলামের বাকবিত-া হয়। এরই জের ধরে জাহিদ কৌশলে আসলামকে লক্ষ¥ীপুর এলাকায় নিয়ে গিয়ে তার ভাগ্নে পাভেলের সহযোগিতায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন।
২০ অক্টোবর বাগেরহাটের রামপালে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের কালিকাপ্রসাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল মাজেদ সরদার (৬৫) রাজনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি কালিকাপ্রসাদ গ্রামের প্রয়াত আব্বাস সরদারের ছেলে।
২২ অক্টোবর নাটোরের সিংড়া উপজেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় আবদুল হান্নান নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী খুন হয়েছেন। সিংড়া উপজেলার ইটালী ইউনিয়নের তিরাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
২৩ অক্টোবর রংপুর পীরগাছা উপজেলার দামুরচাকলা বাজারে আওয়ামীলীগ নেতা সদরুল ইসলামকে(৪৫) নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বাড়ি ফেরার সময় উপজেলার দামুরচাকলা বাজারের পূর্ব পার্শ্বে ইট ভাটার নিকট একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী তার পথ রোধ করে। পরে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মাথা ও হাত-পা দ্বিখন্ডিত করে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়।
২৫ অক্টোবর নোয়াখালীতে ছাত্রলীগ মাগুরায় আওয়ামী লীগ কর্মী খুন আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীতে ছাত্রলীগ কর্মী তারেক হোসেন স্বপন ও মাগুরায় আওয়ামী লীগ কর্মী আরব লস্কর খুন হয়েছেন।
দলীয় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে চাটখিল পৌরসভার ছয়ানী-টগবা গ্রামে ছাত্রলীগ কর্মী তারেক হোসেন স্বপনকে (২৪) নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গঙ্গারামপুর ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকছুদুর রহমান ডলার এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ শেখের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। বিরোধের কারণেই তিনি খুন হন।
৩০ অক্টোবর যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার কাগজপুকুর বাজারে আব্দুস সামাদ (৪৫) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত সামাদ কাগজপুকুর গ্রামের নসরউদ্দিনের ছেলে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান জানান, নিহত সামাদের শরীরে কোপের দাগ রয়েছে। চোরাকারবারি ব্যবসায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কর্মী ছিল।
১০ নভেম্বর রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধূপুর ইউনিয়ন এর বাজেমজকুর গ্রামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত রহমত আলী (৫৯) আওয়ামী লীগের টেপামধূপুর ইউনিয়ন কমিটির নেতা। পেশায় তিনি ওষুধ ব্যবসায়ী। ঘটনার সময় তিনি রাত সাড়ে ১০টায় বাড়ি ফেরার পথে চৈতার মোড় বাজারের কাছাকাছি পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত তার ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। খুনিরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।
সর্বশেষ গতকাল ১৪ নভেম্বর জমি নিয়ে বিরোধের জের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী মহিলা লীগ নেত্রী হালিমা বেগম জরিনাকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে স্বামীসহ প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
Media watch Bangladesh এর সৌজন্যে

জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে- খালেদা জিয়া

বর্তমান সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের কারণে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা এবং দেশে জাতীয় সংকটে মুক্তির দিশারী। সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, উপনিবেশবাদ বিরোধী দীর্ঘ সংগ্রামে তিনি জীবদ্দশায় আপসহীন নেতৃত্ব দিয়েছেন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে উপমহাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মজলুম জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শোষকের বিরুদ্ধে মওলানা ভাসানী নির্ভীক ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, পাকিস্তানি গণবিরোধী দু:শাসনের বিরুদ্ধে তিনি সম্মুখভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ৫০ দশকেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, স্বাধিকার এবং এক পর্যায়ে স্বাধীনতা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা তথা গণতন্ত্র, মৌলিক-মানবাধিকারসহ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রশ্নেও কোন আপস করেননি। খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মানুষের মৌলিক-মানবাধিকার যখন হুমকির সম্মুখীণ হয় তখন মওলানা ভাসানী আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হন। তার শেখানো পথ অনুসরণ করে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে আমাদের চিরদিন সাহস জোগাবে। তিনি বলেন, আজ দেশে এক নব্য স্বৈরাচার ক্ষমতায় বসে আছে। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ধুলোয় লুণ্ঠিত। মানুষের ভোটের অধিকার হরণকারী বর্তমান সরকার গায়ের জোরে তাদের অপশাসন বজায় রেখেছে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া দেশ পরিচালনাকারী এ সরকারের শাসনামলে আজ শুধুই গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারগুলোই বিপন্ন হয়ে পড়েনি-জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীণ হয়ে পড়েছে। আগ্রাসী শক্তির আগ্রাসী হুমকির মুখে রয়েছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। জাতির এই সংকটের মুহূর্তে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর প্রদর্শিত পথই দেশের মানুষকে শক্তি ও সাহস জোগাবে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে এবং অপশাসন, অপরাজনীতিকে জনগণের ইচ্ছাধীনে পরাস্ত করতে। ঢাকার নিউজের সৌজন্যে

নৌ মন্ত্রণালয়ের ৬ জাহাজ ক্রয়ে ২২৩ কোটি টাকার ঘাপলা, পদে পদে অনিয়ম

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য বিদেশ থেকে ৬টি জাহাজ কিনতে গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকৃত দামের চেয়ে প্রায় ২২৩ কোটি টাকা বেশি দামে জাহাজ ক্রয়ের বাণিজ্যিক চুক্তি করা হয়েছে। তাও অনভিজ্ঞ এক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই জাহাজ সরবরাহ করা হচ্ছে। গত বছরের ৩০ এপ্রিল বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর অন্যান্য সকল আনুষ্ঠানিকতা এখন সম্পন্নপ্রায়। আর্থিক চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে বর্তমানে। এই জাহাজ ক্রয়কে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে প্রতিটি পদে পদে লাগামহীন দুর্নীতির চিহ্ন স্পষ্ট। এমনকি সর্বশেষ যে আর্থিক চুক্তি সম্পাদন হতে যাচ্ছে, এতে অর্থ পরিশোধের শর্তসমূহে নজিরবিহীন অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। সরকারের স্বার্থ মোটেই দেখা হচ্ছে না। মোটা অংকের কমিশনের লোভে চুক্তিতে বড় ধরনের ঘাপলা রেখে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এই ৬টি জাহাজ কেনা হচ্ছে ১৪৩৯ কোটি টাকায় (১৮৪.৫ মিলিয়ন ডলার), যা মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের চেয়ে প্রায় ২২৩ কোটি টাকা বেশি। তাও যে কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে এবং মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক যাদের ডকইয়ার্ড পরিদর্শন করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে এই জাহাজ সরবরাহ নেওয়া হচ্ছে না। অন্য একটি কোম্পানি থেকে জাহাজ নেওয়া হচ্ছে, যাদের জাহাজ তৈরির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই। বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক এদের ডকইয়ার্ডও পরিদর্শন করা হয়নি।

সবচে’ অবাক ব্যাপার হচ্ছে, চায়না ন্যাশনাল ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন নামে যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জাহাজ ক্রয়ের প্রাথমিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে তাতে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন অর্থাৎ সরকারের স্বার্থ মোটেই দেখা হয়নি। সকল রেওয়াজ ও নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে চুক্তিমূল্যের শতকরা ৫৫ ভাগ অর্থই জাহাজ তৈরির কাজ শুরুর আগে অর্থাৎ অগ্রিম পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কারণে আইন মন্ত্রণালয় এই চুক্তির খসড়া এক দফায় ফেরত পাঠিয়েছে। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়কে অন্যভাবে ম্যানেজ করে চুক্তিটির ওপর ইতিবাচক মতামত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, চূড়ান্ত করা এই চুক্তিতে বিভিন্নভাবে চুক্তিমূল্যের শতকরা ৫৫ ভাগ অর্থ অগ্রিম পরিশোধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা নজিরবিহীন। আন্তর্জাতিক চুক্তির রীতি অনুযায়ী, জাহাজ ক্রয় চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট জাহাজ তৈরি ও ডেলিভারির বিভিন্ন ধাপে মূল্য পরিশোধের নিয়ম রয়েছে। এই ধাপগুলো হলো- কাঠামো নির্মাণ, ইঞ্জিন বসানো, ইন্টেরিওর ফিনিশিং, সী ট্রায়াল প্রভৃতি। জাহাজটি যাতে মানসম্মতভাবে তৈরি হয়, জাহাজ তৈরিতে পর্যবেক্ষণ যাতে ভালো ফলাফল দেয়, সেজন্যই এই ধাপগুলো চুক্তিপত্রে নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে। চুক্তিস্বাক্ষর বা ধারাগুলো সেভাবেই হয়ে থাকে। কিন্তু, এই চুক্তিতে দেখা যাচ্ছে, কাজ শুরুর আগেই তিন ধাপে শতকরা ৫৫ ভাগ অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বস্তুত, নিজেদের কমিশনের অর্থ হাতিয়ে নিতেই নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা এমনটি করেছেন।
এই চুক্তিতে মূল্য পরিশোধের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপে আর্থিক চুক্তি স্বাক্ষরের ১০ দিনের মধ্যে শতকরা ১৫ ভাগ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এরপর জাহাজ নির্মাণের জন্য যখন প্রথম স্টিল প্লেট কাটা হবে, তার ৭ দিনের মধ্যে দিতে হবে চুক্তিমূল্যের ১৫ ভাগ অর্থ। তৃতীয়ত, যখন জাহাজ তৈরির কাজ শুরু করা হবে তার ৭ দিনের মধ্যে দিতে হবে আরো ২৫ ভাগ অর্থ। অর্থাৎ মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ৫৫% অর্থ আদায় করে নেবে কোম্পানিটি। অথচ, জাহাজ ডেলিভারি দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রথম ১৫% প্রাপ্তি থেকে ২৭ মাস পর্যন্ত। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, চুক্তি স্বাক্ষরের কিছু দিনের মধ্যে পর পর তিন দফায় ১৫% অর্থ আদায় করে নিয়ে সেই অর্থ অন্যত্র বিনিয়োগ করে সেখান থেকেও বড় অংকের অর্থ আয় করার সুযোগ পাবে কোম্পানিটি।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রথম স্টিল প্লেট কাটা বাবদ অর্থ পরিশোধের শর্তটি অত্যন্ত হাস্যকর। যা পৃথিবীর অন্য কোনো চুক্তিতে নেই। তাছাড়া, চুক্তি স্বাক্ষরের ১০ দিনের মধ্যে ১৫% অর্থ পরিশোধের শর্তটিও সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র কাজ শুরুর সময় ১০% পর্যন্ত অর্থ পরিশোধ করে বাকি ৯০% অর্থ জাহাজ তৈরির বিভিন্ন ধাপে পরিশোধের ব্যবস্থা রাখা যেতো। সেক্ষেত্রে জাহাজটি মানসম্মতভাবে তৈরি হচ্ছে কিনা, পর্যবেক্ষণ করা যেতো। অগ্রিম অর্থ পরিশোধের কারণে বাড়তি যে সুদের বোঝা সেটা থেকেও রক্ষা পাওয়া যেতো। কিন্তু, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের দুর্নীতির বড় অংকের কমিশন হাতিয়ে নেওয়ার লোভে সরকারি স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছেন এক্ষেত্রে। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিজে উপস্থিত থেকে মন্ত্রী শাহজাহান খানের সঙ্গে যোগসাজশে বাংলাদেশ সরকারের স্বার্থবিরোধী এই অবৈধ বাণিজ্যিক চুক্তিটি সম্পন্ন করেছেন। এরপর বাকি কাজ আনুষ্ঠানিকতার ধারায়ই এগুচ্ছে।
প্রথম নেগোসিয়েশন কমিটির দরপত্র মূল্যায়ন
৬টি জাহাজ ক্রয়ের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১২ সালের জুলাই মাসে। এই প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়।
এরপর ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রথম নেগোসিয়েশন কমিটি গঠন করা হয়। চীনা প্রতিষ্ঠান সিএমসি’র সঙ্গে আলোচনা চলে। উল্লেখ্য, সিএমসি জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি চীনা সরবরাহকারী অর্থাৎ মধ্যস্বত্বভোগী প্রতিষ্ঠান। সিএমসি’র প্রস্তাব অনুযায়ী জাহাজ ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট জাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ডকইয়ার্ড পরিদর্শন করেন। এছাড়া কমিটি ক্লার্কসমসহ কয়েকটি এডজাস্টার কোম্পানির মতামত নেয়। পরিদর্শন এবং এডজাস্টার কোম্পানির মতামতের ভিত্তিতে ওই ক্যাটাগরির ৬টি জাহাজ ক্রয়ের ব্যয় নির্ধারণ করে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার। কমিটি সে অনুযায়ী একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দেয়।
কিন্তু, মন্ত্রী এবং তৎকালীন সচিব এতে ক্ষুব্ধ হন। মন্ত্রী শাহজাহান খান এবং তৎকালীন সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম চেয়েছিলেন আরো বেশি দর নির্ধারণ করতে। এজন্য কমিটির ওপর চাপও প্রয়োগ করেছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। কমিটি প্রকৃত রিপোর্টই জমা দেয়। এর জের হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তদবির করে কমিটির সদস্য, শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক (কমার্শিয়াল) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ও নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) গোলাম মওলাকে ওএসডি’র ব্যবস্থা করেন মন্ত্রী।
পছন্দের দরপ্রস্তাব
এই কমিটি থেকে দুই সদস্যকে ওএসডি করানোর পর নতুন একজন সদস্য এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি হলেন বিএসসি’র নতুন নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) ইয়াসমিন আফসানা। নতুন কমিটির ওপরও প্রচ-ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয় বেশি মূল্য নির্ধারণ করে রিপোর্ট পেশ করার জন্য। একে কেন্দ্র করে কমিটির একাধিক সদস্য এ সংক্রান্ত সভাতেও অংশ নেননি।
এসবের ফলে মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দফতরে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও থেমে থাকেনি মন্ত্রীর অপতৎপরতা। কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে কমিটির কাছ থেকে অস্বাভাবিক দামে জাহাজ কেনার সুপারিশ আদায় করা হয়েছে। এই কমিটি বস্তুত মন্ত্রী এবং তৎকালীন সচিবের ইচ্ছা পূরণ করেছে। কমিটি এই ৬টি জাহাজের দাম সুপারিশ করেছে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার এবং এর সঙ্গে আরো সার্ভিস চার্জও যুক্ত করতে বলেছে। প্রস্তাবকৃত জাহাজের মান অনুযায়ী বাজারের যে দর তারচেয়ে এই মূল্য অনেক বেশি। অবাক ব্যাপার হলো, এই দরও পরে ঠিক থাকেনি।
আরো পছন্দের দ্বিতীয় নেগোসিয়েশন কমিটি
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কমোডোর মকসুমুল কাদেরের নেতৃত্বে গঠন করা হয় দ্বিতীয় নেগোসিয়েশন কমিটি। মন্ত্রী-সচিবের অত্যন্ত পছন্দের এই কমিটি গঠন করা হয় ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল। এই কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয় মন্ত্রী-সচিবের অত্যন্ত অনুগত কর্মকর্তাদেরকে। এদের মধ্যে ছিলেন সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. আলাউদ্দিন। তিনি এর আগে দীর্ঘ ৪ বছর চট্টগ্রাম বন্দরে শাস্তিমূলক পোস্টিং হিসেবে নিম্নপদে কাজ করেছেন। নেগোসিয়েশন কমিটির অন্য একজন সদস্য ছিলেন ইলিয়াস রেজা। ইলিয়াস রেজা মূলত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ অডিট অফিসার। কিন্তু, তাকে শাস্তিমূলকভাবে গভীর সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছিলো। নতুন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নেগোসিয়েশন কমিটির এই সদস্যরা মন্ত্রী-সচিব যেভাবে বলেছেন, ঠিক সেভাবেই কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন।
জানা গেছে, নেগোসিয়েশনের জন্য সিএমসির প্রতিনিধিদল ঢাকা আসেন এপ্রিল, ২০১৪ এর প্রথমার্ধে। তারা প্রায় দু’সপ্তা ঢাকা থাকেন। কিন্তু, তারা শেষদিন বৈঠকে বসেন বিএসসির নেগোসিয়েশন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে। এর আগে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তাদের সাক্ষাতই হয়নি, যা অবাক করার মতো ঘটনা। বস্তুত, নেগোসিয়েশন কমিটির সদস্যরা ছিলেন ভয়ভীতির মধ্যে। মন্ত্রী-সচিবের আদেশ পালন ছাড়া তাদের করার কিছুই ছিলো না।
এমনও অবাক করার মতো ঘটনা ঘটেছে, নেগোসিয়েশন কমিটির সদস্যরা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং রিপোর্ট তৈরি করার আগেই শিপিং কর্পোরেশনের তৎকালীন দুর্নীতিবাজ এমডি কমোডোর মকসুমুল কাদের কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই সিএমসির চীনাস্থ প্রধান কার্যালয়ে ই-মেইল করে জানিয়ে দেন ১৮৩.৫ মি. ডলার দর ধরার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার এই ই-মেইলটি ছিলো সম্পূর্ণ অনৈতিক। বিএসসির এমডির এই অনৈতিক কর্মকাcBgeর কারণে নেগোসিয়েশন কমিটি বেকায়দায় পড়ে যায়। দর এর থেকে কমানো সম্ভব হয়নি আর।
অবশ্য, ইতিমধ্যে আরো একটি ঘটনা ঘটে যায়। এপ্রিল, ২০১৪ এর ১৬/১৭ তারিখের দিকে মন্ত্রী শাহজাহান খানের সভাপতিত্বে বিএসসির একটি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নেগোসিয়েশন কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী ওই সভায় বলেন, চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নাকি তার নেগোসিয়েশন হয়েছে। তিনি ১৮৫.৫০ মি. ডলার দরে রাজি হয়েছেন। সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামেরও এতে সায় আছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে নেগোসিয়েশেন কমিটির সদস্যরা অবাক হন।
নেগোসিয়েশন কমিটির রিপোর্টের আগেই চুক্তিস্বাক্ষর
৬টি জাহাজ ক্রয়ের ব্যাপারে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পন্ন হয় ৩০ এপ্রিল, ২০১৪। অথচ এ সময় পর্যন্ত নেগোসিয়েশন কমিটি তাদের রিপোর্টই পেশ করেনি। নেগোসিশেন কমিটির কাছ থেকে পরবর্তী মাসের অর্থাৎ মে মাসের ২২ তারিখে চাপ প্রয়োগ করে বেক ডেট দিয়ে রিপোর্ট আদায় করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, নেগোসিয়েশন কমিটির দু’জন সদস্য (নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়) তাদের রিপোর্টে ১৮৩.৫০ মি. ডলার দরের কথা উল্লেখ করেছেন। এমনকি তারা এও বলেছেন যে, যেহেতু জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই নতুন এবং যেহেতু পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে জাহাজ কেনা হচ্ছে না তাই এ জাহাজগুলোর দর আরো কম হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, প্রথম যে মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটি বিদেশে গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে এসে ওই ৬ জাহাজের দাম নির্ধারণ করে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার বা ১,২১৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা ধরে)। কিন্তু, পরবর্তীতে মন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী চুক্তি হয়েছে ১৮৪.৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১,৪৩৯ কোটি টাকা)। যা মূল্যায়ন কমিটির প্রস্তাবনার চেয়ে ২৮.৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২২৩ কোটি টাকা) বেশি।
উল্লেখ্য, পরবর্তীতে নতুন কমিটি মন্ত্রীর পছন্দের যে রিপোর্ট পেশ করেছিল তাতে মূল্য ধরা হয়েছিল ১৭৫ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, এই কমিটির সুপারিশের চেয়েও প্রায় ৭৪ কোটি টাকা বেশি দাম ধরে চুক্তি করা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, জাহাজ ক্রয়ের এই চুক্তিতে সবচে’ বড় জালিয়াতিটি হয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জাহাজ কেনার জন্য আলাপ-আলোচনা চলছিল এবং কমিটির সদস্যরা জাহাজ নির্মাণকারী যে প্রতিষ্ঠানের শিপইয়ার্ড পরিদর্শন করে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার দাম নির্ধারণ করেছিল সেখান থেকে এখন জাহাজ কেনা হচ্ছে না। চুক্তিতে নতুন যে প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সে সম্পর্কে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যরা আগে থেকে জানতেনই না। নতুন এই প্রতিষ্ঠানের নামও শোনেননি তারা কখনো। 
৬টি জাহাজ ক্রয়ে এক নজরে বড় দাগের যেসব অনিয়ম
১. বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য ৬টি জাহাজ ক্রয় করার জন্য যে বাণিজ্যিক চুক্তি করা হয়েছে তাতে আইন মন্ত্রণালয় এবং ইআরডির মতামত নেয়া হয়নি। অথচ বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে কোনো চুক্তির আগে এ ধরনের মতামত নেয়াটা অপরিহার্য।
২. বাণিজ্যিক চুক্তির আগে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নেয়াটাও অপরিহার্য ছিলো। অথচ এগুলোর কোনোটিই করা হয়নি।
৩. চুক্তি স্বাক্ষরের পর তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ)তে। কিন্তু, তখন মন্ত্রিসভা কমিটির আর কিছুই করার থাকে না, এটি অনুমোদন করা ছাড়া। যেহেতু ইতিমধ্যে চীনের মতো একটি প্রভাবশালী দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে। ফলে প্রথমে অনুমোদন না করলেও পরে অনুমোদন করতে বাধ্য হয়েছে সিসিইএ।
৪. একই অবস্থা হয়েছে আইন মন্ত্রণালয় এবং ইআরডির মতামতের ক্ষেত্রেও। যেহেতু চুক্তি আগেই হয়ে গেছে, তাই আইন মন্ত্রণালয় এবং ইআরডি ইতিবাচক মতামত দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে মতামতের সঙ্গে তারা যেসব নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলোও যথাযথভাবে মানা হয়নি।
৫. জাহাজ ক্রয়ের জন্য প্রথম যে মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিলো তারা দর যাচাই এবং চীনের ডকইয়ার্ড পরিদর্শন করে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার দর সুপারিশ করেছে। পরবর্তীতে অবৈধভাবে সেই কমিটির দর পরিবর্তন করা হলো। অবৈধভাবে গঠিত পছন্দের কমিটি সুপারিশ করলো ১৭৫ মিলিয়ন ডলার। সেটাও অনুসরণ করা হয়নি। চুক্তি করা হলো ১৮৪.৫ মিলিয়ন ডলারে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, ক্লাকসমের (জাহাজের বাজার দর পর্যালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান) তথ্য অনুযায়ী বাজার দর ইতিমধ্যে নাকি সাড়ে ৫% বেড়ে গেছে। যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ১৫৬ মিলিয়ন ডলারের উপর সাড়ে ৫%। কিন্তু এক্ষেত্রে ধরা হয়েছে ১৭৫ মি. ডলারের উপর সাড়ে ৫%, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
৬. চীনের যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জাহাজ ক্রয়ের চুক্তি করা হয়েছে তারা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নয়, সরবরাহকারী। দরপত্র মূল্যায়নকারী কমিটি চীনের যে জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের ডকইয়ার্ড সরেজমিন পরিদর্শন করে এসেছে সেখান থেকে এখন জাহাজ নেয়া হচ্ছে না। যে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের জাহাজ এখন নেয়ার জন্য চুক্তি করা হয়েছে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যরা তাদের চেনেন না, তাদের ডকইয়ার্ড পরিদর্শন করেননি বা তাদের সঙ্গে কোনো রকমের আলোচনাও হয়নি। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিএসসির এমডিসহ মন্ত্রী-সচিবের পছন্দের কর্মকর্তারা এই নতুন প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে ও আতিথেয়তায় চীন সফর করে এসেছেন। বস্তুত, এটি ছিলো প্রমোদ ভ্রমণ।
৭. অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি এবং কিস্তি যেভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে চুক্তির আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি মোটেই অনুসরণ করা হয়নি। এতে সরকারের স্বার্থ মোটেই দেখা হয়নি। দেখা যাচ্ছে যে, জাহাজ সরবরাহের সময় দেয়া হয়েছে ২৭ মাস পর্যন্ত। অথচ জাহাজ নির্মাণের শুরুতেই তিন কিস্তিতে (১৫%+১৫%+২৫%) মোট চুক্তিমূল্যের শতকরা ৫৫% ভাগ অর্থ পরিশোধ করে দেয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। প্রাপ্ত এই অর্থ সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাইরে যে কোনো খাতে দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগ করে রাখতে পারবে। অন্যদিকে অগ্রিম এতো অর্থ পরিশোধের কারণে বাংলাদেশ সরকারকে এরজন্য বিপুল অংকের সুদের বোঝা বইতে হবে।
৮. চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৫%, প্রথম স্টিল প্লেট কাটা বাবদ ১৫% এবং জাহাজ নির্মাণ শুরু বাবদ ২৫% অর্থ দেওয়া হবে। জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে এ ধরনের চুক্তি আন্তর্জাতিক রীতিনীতি বিরোধী। ‘প্রথম স্টিল প্লেট কাটা’ বাবদ ১৫% পরিশোধের যে শর্তটি দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত হাস্যকর।
৯. জাহাজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধের কিস্তিগুলো নির্ধারণ করার নিয়ম হলো, নির্মাণকাজ শুরু, কাঠামো নির্মাণ, ইঞ্জিন বসানো, ক্রেন বসানো, ইন্টেরিওর ফিনিশিং, সী ট্রায়াল প্রভৃতি। জাহাজটি যাতে মানসম্পন্নভাবে তৈরি হয়, জাহাজ তৈরিতে পর্যবেক্ষণ যাতে ভালো ফলাফল দেয় সেজন্যই অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে এই ধাপগুলো চুক্তিপত্রে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
১০. ইআরডির মতামতে যা বলা হয়েছে-
ক) চুক্তিমূল্য আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু, চুক্তির পর দর বাড়ানো বা কমানোর কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু বাণিজ্যিক চুক্তি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, দর নির্ধারণ হয়ে গেছে তাই ইআরডি এ বিষয়ে কোনো মতামত দেয়া থেকে বিরত থেকেছে।
খ) ইআরডি প্রথম দুটি কিস্তি ১৫% এবং ১০% করার কথা বলেছে।
অথচ, এক্ষেত্রে ইআরডির নির্দেশনাও মানা হয়নি। প্রথম দুটি কিস্তি করা হয়েছে ১৫% এবং ১৫%।
গ) ইআরডির মতামতে বলা হয়েছে, চুক্তিটিতে পারফরমেন্স গ্যারান্টি এর সিকিউরিটি ডিপোজিট/বন্ড এর বিষয়টি পরিষ্কার নয়, Warranty Period এর জন্য কী পরিমাণ অর্থ জমা থাকবে তা উল্লেখ করা প্রয়োজন।
কিন্তু, ইআরডির নির্দেশনার পরও এ ব্যাপারে কোনোই পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দেখা যাচ্ছে, Warranty Period এর সময় কোনো অর্থই জমা থাকছে না। চুক্তিতে শুধুমাত্র এই সময়ে তাদের একজন ইঞ্জিনিয়ার এখানে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে।
ঘ) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাহাজ সরবরাহ করতে না পারলেও ৪৫ দিন পর্যন্ত কোনো জরিমানা দিতে হবে না, চুক্তিতে বলা আছে। এটা শূন্য দিনে নামিয়ে আনার জন্য ইআরডি বলেছে। অর্থাৎ নির্ধারিত তারিখের মধ্যে জাহাজ সরবরাহ করতে না পারলে যাতে ওই তারিখের পরই জরিমানা আরোপ করা যায় সেজন্য ইআরডি এই পদক্ষেপ নিতে বলেছে।
অথচ, ইআরডির এই নির্দেশনাও মানা হয়নি।
ঙ) বিলম্বে জাহাজ সরবরাহের জন্য প্রতিদিন ১২০০০ ডলার জরিমানা নির্ধারণের কথা বলেছে ইআরডি।
কিন্তু, ইআরডির এই নির্দেশনা না মেনে প্রতিদিনের জন্য জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ডলার মাত্র।
চ) জাহাজের মান নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইন্ডিপেন্ডেন্ট সার্ভেয়ার নিয়োগ এবং তাদের খরচ বহনের বিষয়টি বাণিজ্যিক চুক্তির যথাযথস্থানে সন্নিবেশিত করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ইআরডির নির্দেশনার পরও চুক্তিতে এর কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
১১. আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতে বলা হয়েছে-
ক) রেগুলেশন, রুলস, কনভেনশনস, কোড, রেজুলেশন ইত্যাদি নথিতে না থাকায় চুক্তির ক্ষেত্রে এগুলোর সংশ্লিষ্টতা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
খ) প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে দরপত্র মূল্যায়ন এবং পিপিআর অনুসরণ করতে বলা হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতে।
অথচ, প্রতিযোগিতামূলক দর বা পিপিআর এক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি।
অভিজ্ঞতাহীন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জাহাজ ক্রয়
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জোসান চ্যাংহোং ইন্টারন্যাশনাল শিপইয়ার্ড কোম্পনি লি. নামে একটি চীনা প্রতিষ্ঠান এই জাহাজগুলো নির্মাণ করবে। কিন্তু, এই প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই নতুন। জাহাজ রফতানির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাই এদের নেই।
এদিকে চীনের যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে এক্ষেত্রে কাজ করছে অর্থাৎ যাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সিএমসি নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি নিজেরা কোনো জাহাজ নির্মাণ করে না। সিএমসি একটি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন মেকানিকেল এবং ইলেক্ট্রিকেল দ্রব্যাদি আমদানি-রফতানি করে থাকে এই প্রতিষ্ঠান। জাহাজ উৎপাদন তো নয়ই, সরবরাহকারী হিসেবেও এদের অভিজ্ঞতা নেই।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ ক্রয়ের কাগজপত্র ও চুক্তিতে সিএমসিকে চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাস্তবে সিএমসি চীনের সরাসরি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নয়। চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমুহের তালিকায় সিএমসির নাম নেই। সিএমসির ওয়েবসাইটেই বলা আছে, এটি চীনের অন্য একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অধীন প্রতিষ্ঠান মাত্র। শীর্ষ কাগজের সৌজন্যে

মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বেগম খালেদা জিয়ার বাণী


“জাতীয় নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই ও তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি।
মওলানা ভাসানী- যাঁকে মজলুম জননেতা হিসেবে মানুষ জানেন, তিনি ছিলেন আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা এবং দেশে জাতীয় সংকটে মুক্তির দিশারী।
সাম্রাাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, উপনিবেশবাদ বিরোধী দীর্ঘ সংগ্রামে তিনি জীবদ্দশায় আপোষহীন নেতৃত্ব দিয়েছেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে উপমহাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মজলুম জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শোষকের বিরুদ্ধে মওলানা ভাষানী নির্ভিক ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন।
পাকিস্তানী গণবিরোধী দু:শাসনের বিরুদ্ধে তিনি সম্মুখভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ৫০ দশকেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, স্বাধীকার এবং এক পর্যায়ে স্বাধীনতা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা তথা গণতন্ত্র, মৌলিক-মানবাধিকার সহ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রশ্নেও কোন আপোষ করেননি।
আমাদের দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মানুষের মৌলিক-মানবাধিকার যখন হুমকির সম্মুক্ষীণ হয় তখন মওলানা ভাষানী আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হন। তাঁর শেখানো পথ অনুসরণ করে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে আমাদের চিরদিন সাহস যোগাবে।
আজ দেশে এক নব্য স্বৈরাচার ক্ষমতায় বসে আছে।
দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ধুলায় লুন্ঠিত। মানুষের ভোটের অধিকার হরণকারী বর্তমান সরকার গায়ের জোরে তাদের অপশাসন বজায় রেখেছে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া দেশ পরিচালনাকারী এ সরকারের শাসনামলে আজ শুধুই গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারগুলোই বিপন্ন হয়ে পড়েনি-জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুক্ষীণ হয়ে পড়েছে। আগ্রাসী শক্তির আগ্রাসী হুমকির মুখে রয়েছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। জাতির এই সংকটের মূহুর্তে মজলুম জননেতা মওলানা ভাষানী’র প্রদর্শিত পথই দেশের মানুষকে শক্তি ও সাহস যোগাবে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে এবং অপশাসন, অপরাজনীতিকে জনগণের ইচ্ছাধীনে পরাস্ত করতে।

আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”

About

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

আমার ব্লগ তালিকা

Translate

Translate

আমাদের বাংলাদেশ নিউজ 24

সর্বশেষ

অনুসরণকারী