ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে ভারতের সাথে বিরাজমান অভিন্ন নদীর পানির সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সরকার কোনো সহযোগিতা চাইলে জামায়াতে ইসলামী তা দিতে প্রস্তুত আছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
মকবুল আহমাদ বলেন, ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ। ভারত ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ৫৪টি অভিন্ন নদী প্রবাহিত হচ্ছে এবং এ সব নদীর পানি বাংলাদেশ হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে।
ভারত আন্তর্জাতিক আইন-কানুন উপেক্ষা করে বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দেওয়ায় বাংলাদেশ তার ন্যায্য পানি পাচ্ছে না। আপাততঃ ৩টি অভিন্ন নদী নিয়ে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নিলেও পর্যায়ক্রমে পুরো প্রকল্পই বাস্তবায়ন করবে।
উজানের দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যৌথ নদীর ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করা জরুরী। কিন্তু ভারত আলোচনা ছাড়াই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালুর কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত পরীক্ষা শেষ হয়নি। ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৬ কোটি মানুষকে এর খেসারত দিতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঙ্গা পানি চুক্তি করা হলেও গ্যারান্টি ক্লজ না থাকায় বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছে না এবং বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
প্রমত্তা পদ্মা এখন ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বর্ষার সময় ফারাক্কা গেট খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছরই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জামায়াত আমির বলেন, ভারত সরকার বরাবরই বলে আসছে যে, তারা এমন কোনো প্রকল্প বা বাঁধ দেবে না যাতে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।
বাংলাদেশের জনগণ ভারতের প্রতি এ আস্থা রাখতে আগ্রহী কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের জনগণ বারবার হতাশ হচ্ছে। কারণ, ফারাক্কা বাঁধের সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।
তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি এখনও হয়নি। টিপাইমুখ বাঁধ দেয়া হলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৪ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সর্বশেষ আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষেই মরুভূমিতে পরিণত হবে।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বাঁচা-মরার সঙ্গে জড়িত হলেও ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচিত সরকারের কোনো উদ্যোগ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেই।
নিজ দেশের ন্যায্য পাওনা প্রতিবেশীর নিকট থেকে আদায় করার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতা কোথায় তা দেশের জনগণ বুঝতে অপারগ।
জামায়াত প্রধান বলেন, ভারতের সঙ্গে বিরাজমান অভিন্ন নদীর পানির সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সরকার কোনো সহযোগিতা চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তা দিতে প্রস্তুত।
তাই আমি সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক ডাকার জন্য ভারতকে চাপ দিন। সরকারি পর্যায় ছাড়াও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা হতে পারে।
আমরা আশা করবো ভারতের বর্তমান প্রধান মন্ত্রী নরেদ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে যে ওয়াদা করেছিলেন তা রক্ষা করবেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু পদক্ষেপ ভারত নেবে না।
সেই সঙ্গে আমি আশা করবো বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগণ তাদের ন্যায্য পানির হিস্যা পাওয়ার জন্য দলমত নির্বিশেষে ভূমিকা রাখবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন