শেখ হাসিনার সান্নিধ্যে উচ্ছসিত ছাত্রলীগ নেত্রী শারমিন সুলতানা লিলি সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সভানেত্রী হিসেবে শারমিন সুলতানা লিলিকে দায়িত্ব দেয়ার মাধ্যমে চমক দেখাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শারমিন সুলতানা লিলি ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। দক্ষ সংগঠক ও অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। নানা অনুষ্ঠানে লিলিকে দেখতে পেয়ে কাছে ডেকে স্নেহও করেন শেখ হাসিনা।
আর সংগঠনে নেতৃত্ব বিকাশ ও পরিচর্যার ব্যবস্থা না করেই বয়সসীমা চাপিয়ে দেওয়ায় প্রায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাওয়া ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বিচারে লিলিই সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুদিনব্যাপী ছাত্রলীগের ২৮তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথমবারে মত ছাত্রলীগের সম্মেলনে থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী চমক দেখাতে পারেন এমন বিবেচনায় এখন পর্যন্ত সম্মেলনে কোন পদ্ধতিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি।
ফলে নতুন কমিটির জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েও তার কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছে না। বরং বলছে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করা গেলে নির্বাচন হবে না।
এদিকে সমঝোতার মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে- এ খবরের ভিত্তিতে প্রথমে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাতকে কেন্দ্রীয় সভাপতি করা হচ্ছে। কিন্তু শুক্রবার বয়সসীমার কারণ দেখিয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করার পর এর অবসান ঘটে।
পরে শুক্রবার রাতে খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা ও স্পিকার পদে নারীর পদায়নের প্রেরণা সামনে রেখে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভানেত্রীও করা হবে একজন ছাত্রীকে।
এদিকে লিলিকে ছাত্রলীগের সভানেত্রী করলে তার সাথে সাধারণ সম্পাদক করা হবে কাকে তা নিয়ে ছাত্রলীগের নীতি নির্ধারণে প্রভাবশালী নানা পক্ষের (সিন্ডিকেট) মধ্যে নানা সমীকরণ মেলানো হচ্ছে।
বৃহত্তর ফরিদপুর থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে একজনের থাকাটা এক ধরনের অলিখিত নিয়ম বলে চলে আসছিল। কিন্তু গত দুই কমিটিতে এ অঞ্চলের কেউ ছিল না। এবার ওই অঞ্চলের সব সাবেক নেতাই তাদের একজন প্রতিনিধি শীর্ষ নেতৃত্বে রাখতে চান। তাদের অনেকের পছন্দ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ। তার বাড়ি মাদারীপুর।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং ফরিদপুর অঞ্চলের সর্বশেষ শীর্ষ পদধারী লিয়াকত শিকদারের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট নতুন সভাপতি হিসেবে সোহাগের বিষয়ে একমত। তবে লিলিকে সভানেত্রী করা হলে সোহাগকে সাধারণ সম্পাদক করতে চান তারা।
এছাড়াও এ অঞ্চলের অন্য প্রার্থীরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা, উপ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও আরেফিন সিদ্দীক সুজন। তারা সবাই মাদারীপুরের।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জ থেকেও দীর্ঘদিন শীর্ষ নেতৃত্বে কেউ নেই। এবার এ জেলার আনোয়ার হোসেন আনু, কাজী এনায়েত এবং এফ রহমান হলের সভাপতি সায়েম খান রয়েছেন।
এদিকে পরিবেশ সোহাগকে সভাপতি করা হবে এমন বিবেচনায় লিয়াকত ‘সিন্ডিকেট’ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করতে চাওয়া হয়েছিল। তার বাড়ি সিলেটে।
অবশ্য সিলেট বিভাগ থেকে লিটন দাসও সাধারণ সম্পাদক পদে শক্তিশালী প্রার্থী। তিনি ছাত্রলীগের উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী।
বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলও দীর্ঘদিন শীর্ষ নেতাবঞ্চিত। এবার এ অঞ্চল থেকে প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শাহেদ ও উপ-ছাত্র বৃত্তি সম্পাদক ইমতিয়াজ বুলবুল বাপ্পি।
বরিশাল অঞ্চল থেকে শক্তিশালী প্রার্থী কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক আসাদুজ্জামান নাদিম।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের সম্মেলনের বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম গত বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
জানা গেছে, এ সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে পরামর্শ দেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ বলেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারীরা এবারের কমিটিতে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে নির্বাচন না সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ছাত্রলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করে সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়ছে। উদ্যানের দক্ষিণ পাশে ২৫ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে।
আজ শনিবার অধিবেশনপর্ব শুরু হবে সকাল ১০টায়। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দিন সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও শোকপ্রস্তাব পেশ, গণসংগীত ও বক্তৃতা পর্ব চলবে। আর কাউন্সিল অধিবেশন হবে পরদিন রবিবার। সেখানেই নতুন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।
ছাত্রলীগের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২৪২ মনোনয়ন পত্র জমা পড়লেও ৩২ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বতর্মানে সভাপতি পদে ৬৪ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৪২ জন প্রার্থী রয়েছেন।
উৎসঃ অনলাইন বাংলা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন