ණ☛ " আমি একজন সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। শুধু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারই নয় বরং রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। যে পরিবারের সৎ, আদর্শ ও প্রতিবাদের জন্য শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতেও পরিচিতি রয়েছে। যাক আমি আমার ব্যাপক পরিচিতি উল্লেখ করতে আগ্রহী নই। উপরের এই উক্তি গুলো আমার জীবনে বাস্তব পরীক্ষিত। যেহেতু আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান তাই ছেলে বেলা থেকেই বেড়ে উঠার পাশাপাশি বাবা চাচাদের যুদ্ধের সময়কার গল্প বেশি বেশি শুনতাম। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা, ছবি সংগ্রহ করা ও দেশাত্ববধক গান প্রচুর পরিমাণে শুনতাম। ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা, বিভিন্ন লেখকের বই পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে পড়তাম। মনে প্রানে হ্বদয়ে জায়গা দিয়েছিলাম একটি নাম ' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান'। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণটা মুখস্থ ছিল। যেহেতু আমার পরিবারের সাথে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার সাথে একটা সুমুধুর সম্পর্ক ছিল সেই সুবাদে সুযোগ পেলেই যেতাম তাঁর বাসায়। একবার তো এক মজার ঘটনা ঘটলো, তখন আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে স্কুলের হাফ টাইম-এ পেট খারাপের কথা বলে হেড মাষ্টারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় গিয়ে ছোট ফুফির সাথে ধানমন্ডী ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধু যাদুঘরে গেলাম, গিয়েই তো খেলাম ধরা দেখি আমার হেড মাষ্টার ( অধ্যক্ষ মৃত কামরুজ্জামান, সাবেক আওয়ামীলীগ এম পি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ) ঐখানে বসা। স্যার আমাকে দেখা মাত্র মৃদু হাসলেন এবং বুঝে গেলেন আমার ছোট হ্বদয়ে শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা।
ණ☛ আমাদের বাসায় শেখ মুজিবর রহমানের যে বিশাল বিশাল ছবি ছিল তা আমার মনে হয় সারা বাংলাদেশে এত বড় এবং এতো ছবি কারো বাসায় ছিল না। যার কারণে শুধু মাত্র শেখ হাসিনার মিশিলে এই ছবিগুলো নিয়ে যাওয়া হতো, আমরাও শেখ হাসিনার পাশেই থাকতাম। মুক্তিযুদ্ধের একটি সর্ট ফিল্ম আছে নাম ৭১'এর যীশু। এই ছবিটি অতুলনীয়। আমার ধারনা আমার মত খুব কম যুবকই আছে যারা ৭১'এর ইতিহাস এতো বেশি পড়েছে বা জেনেছ। এখনকার তরুণ সমাজ ইতিহাস সঠিক ভাবে না পড়ে না জেনে, শুনে শুনে তর্ক করে যুক্তি, ভিত্তি জ্ঞান ছাড়া। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমি আমার মাথায় রাখি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অনুভূতি আমি আমার হ্বদয়ে রাখি ঠিক যেন ৭১'এর একজন মুক্তিসেনার মত। শেখ মুজিবরের প্রতি অন্ধের মত পাগল ছিলাম যে , শেখ মুজিবরের কণ্ঠের সাথে ঢাকার সাবেক মেয়র ও সাবেক ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মৃত মেয়র হানিফের কণ্ঠের সাথে খুব মিল ছিল। তাই মেয়র হানিফের কণ্ঠের ভাষণ শুনার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে থাকতাম।
ණ☛ কিন্তু ১৯৯৭ সালে আমার প্রিয় চাচা মুক্তিযোদ্ধা মৃত মতিউর রহমান রেন্টুর ('আমার ফাঁসি চাই'- এর লেখক) - এর সাথে শেখ হাসিনা যে অনৈতিক ব্যবহার করেছে তার পর থেকে একটা অনীহা জন্মায় আওয়ামীলীগের প্রতি। সেই অনীহা থেকেই নতুন করে আবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করি। শুরু করতে না করতেই জানতে পারলাম যে ৭ই মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন শুধু মাত্র একজন জ্বালাময় পাঠক, তখন প্রশ্ন জাগল এর রচয়তা কে? খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জনাব নূরে আলম সিদ্দিকী ও জাসদের আধ্যাত্মিক গুরু সিরাজুল আলম খান। এরপর ধীরে ধীরে ইতিহাস বলতে শুরু করলো শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কাজে লাগিয়েছিলেন বাংলাদেশে জনগণের আবেগ, ভালোবাসা। শেষ পর্যন্ত তিনি অপেক্ষায় ছিলেন এবং আশায় ছিলেন ক্ষমতা তাঁর হাতে হস্তান্তর করা হবে। উনি যদি একবারের জন্যও বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইতেন এবং ৭ই মার্চেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন তাহলে এক মাসও লাগতো না বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হতে। এই মর্মে আজ স্পষ্ট বোঝা যায় শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন।
ණ☛ সুতরাং এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভারতীয় গোলামীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও ঐ সময় স্বাধীনতার পক্ষে সম্মতি দেননি। কি কি কারণে দেয়নি? কিন্তু কেন? একবারও কি আমরা হাতিয়ে বা গবেষণা করে দেখেছি? কারন গুলো কি কি? দেখিনি বা দেখতেও চাইনি। হয়তো; ঐ কারন গুলো বোঝার মতো জ্ঞান আমাদের নেই। আর যারা বুঝেছেন বা জানতেন তারা প্রকাশ বা ব্যাখ্যা করলে বের হয়ে আসত বা আসবে যে জামায়াতে ইসলামীরা স্বাধীনতার বিরোধী নয় বরং দেশ প্রেম থেকেই দেশের ও জাতির মঙ্গলেই তারা ৭১'এর স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো। শুধু কি জামায়াতে ইসলামী? আমাদের বাংলার প্রথম স্তম্ভ শেরে বাংলা এ কে ফজরুল হকের পর দ্বিতীয় স্তম্ভ যিনি মৌওলানা ভাসানী তিনিও চাননি ভারতীয় গোলামী।
ණ☛ একজন ব্যক্তির স্বার্থের জন্য আমরা লাখো রক্তের বিনিময়ে ত্যাগ স্বীকার করে এতো কিছু পর আমরা স্বাধীন একটা দেশ পেয়েও পরাধীনতার শিকলে আটকা পরলাম যার মাশুল এখনও দিতে হচ্ছে। যেই গার্মেন্স শিল্প আমার দেশের অহংকার যা ভারত একশত বছরে সাধনা করলেও আমার দেশের গার্মেন্স শিল্পের সাথে পারবে না। নিজের দেশের শার্ট প্রবাসে বসে বেশি দাম দিয়ে কিনেও বিশ্বাস হয় না যে এইটা আমার দেশের তৈরি যা ইউরোপের ফ্যাশান বাজারে তাল মিলিয়ে চলছে তাও আবার বিশ্ব বিখ্যাত ফ্যাশানের রাজা ইতালিতে। চোখ আমার ছল ছল করে যখন দেখি আমার দেশের এই গার্মেন্স শিল্প ধ্বংসের পিছনে এই সরকারের আরো একটি অনুদান রয়েছে। খাবারে ফরমালিনের অতিরিক্ত উদারতার কারণে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের খাবার প্রবেশের অনুমতি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইলিশের দেশ বাংলাদেশ, গলদা চিংড়ির দেশ বাংলাদেশ, আম কাঁঠালের দেশ বাংলাদেশ, পান সুপারির দেশ বাংলাদেশ, স্বাদের লাউ বানাইল মরে বৈরাগী আজ এই গুলো কথাই থেকে যাচ্ছে এই সব আসছে ভারত, বার্মা, পাকিস্থান, শ্রীলংকা ও চায়না থেকে আর তাই আমাদের খেতে হচ্ছে আর এইটাও এই সরকারের ফসল। বর্তমান সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অভিশাপ। পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন আমাদের সুন্দরবন। এই বন আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই বনকে ঘিরে একটি পর্যটক অঞ্চল তৈরি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতো পাশাপাশি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া যেতো চোখ বন্ধ করে। বিগত ৬ বছরে তার কিছুই না করে বরং তেল ফেলে পৃথিবীর মূল্যবান সম্পদের একটি সুন্দরবনকে আজ ধ্বংসস্তূপ দার প্রান্তে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । বাংলাদেশ আজ সকল ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এমনকি ধর্ম চর্চার দিক থেকেও ভারতের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। ভারতের সরকার ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক চর্চা, অর্থনৈতিক অবস্থা শিক্ষণীয়। অপরদিকে বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রে ভারতের অনুমোদন ও স্বীকৃতি ছাড়া এক চুলও এদিক ওদিক হওয়া সম্ভব নয়।
ණ☛ বন্ধুত্ব সম্পর্ক আর দাসত্বের ভিতরে এক বিশাল পার্থক্য রয়েছে। গত মাসে ভারতের সাথে যে চুক্তিগুলো বর্তমান সরকার করেছে তা এখন পর্যন্ত জনসম্মুখে উপস্থাপন করা হয়নি। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় এই চুক্তিগুলো সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতের সমর্থন নিতে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোন গোপন চুক্তি? বাংলাদেশের এই সকল ক্ষেত্রে ভারতের কাছে পরাধীনতার ও গোলামীর যে হুঁশিয়ারি জামায়াতে ইসলামী দিয়ে এসেছিলো আজ তা হুবুহু মিলে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশীরা স্বাধীনতা তথা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সকল প্রকার স্বাধীনতার বিসর্জন দিয়ে কোন একটি রাজনৈতিক দলের নিজ কেন্দ্রিক সুবিধার জন্য দেশকে আজ বিসর্জন দিতে যাচ্ছি। আর এই বিরোধিতা করতে গিয়েই জামায়াতে ইসলামীদের যেসব শীর্ষ নেতারা বিনা বিচারে মিথ্যা দুর্নাম নিয়ে নাটকীয় ভাবে ফাঁসিতে একজন একজন করে ঝুলছেন এতে করে ঐসব নেতারা বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টান্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে বিশ্ব গণতান্ত্রিক ও ইসলামিক আন্দোলনের এক একজন সৈনিক হয়ে।
('রাকেশ রহমান'---লেখক কলামিস্ট ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন