ණ☛ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পরিহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানের একটি ভাল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি সমঝোতায় প্রস্তুত আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোণঠাসা অবস্থার ইতি ঘটানো ও নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য হিন্দুর এক সম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়েছে
ණ☛ । ‘পজিটিভ টার্ন ইন বাংলাদেশ’ বা বাংলাদেশে ইতিবাচক দিক পরিবর্তন শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি বিএনপির দীর্ঘদিনের। কিন্তু তারা এ সরকার গঠনের দাবি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে বিস্তার লাভকারী অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা সমাধানের একটি ভাল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এতে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। তখন থেকেই বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংকটে। খালেদা জিয়া ও তার শরিক বিরোধী দলগুলোর দাবি ছিল নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কিন্তু সে দাবি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তারা ওই নির্বাচন বর্জন করে। এর ফলে নির্বাচন পরিণত হয় একতরফা।
ණ☛ এতে সরকারের গণতান্ত্রিক অর্জন নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই রাজপথের লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে বিএনপি ও তার মিত্র জামায়াতে ইসলামী। এর আগে কর্তৃত্ববাদী শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যুগের পর থেকে বাংলাদেশ প্রায়ই রাজনৈতিক অচলাবস্থার মুখে পড়েছে। এর কারণ, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরস্পরকে ঘায়েল করার খেলা। নির্বাচন ও সংসদ অধিবেশন বর্জন, নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন-বিক্ষোভ খুব বেশি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিতর্কিত নির্বাচনের প্রায় ১৯ মাস পরে সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দল হয়তো বুঝতে পেরেছে, তারা দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাই খালেদা জিয়া ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি সমঝোতার জন্য প্রস্তুত।
ණ☛ দুই প্রধান দলের মধ্যকার বিদ্বেষ ও অবিশ্বাস নিয়ে বেশ ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বিএনপি ও জামায়াত সহিংস কায়দায় প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছে। সরকারও বেশ কঠোর হস্তে বিরোধী দলকে দমন করেছে। গত বছরের নির্বাচনের পর থেকেই রাজনৈতিক সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছিল। অনেকেই শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিক ঝোঁকের সমালোচনা করেছেন। পরিস্থিতি এখনও ঘোলাটেই রয়ে গেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রের বিরোধী শক্তিসমূহ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের সুযোগ কাজে লাগাতে অপেক্ষা করছে। এটি গোপন কিছু নয় যে, রাজনৈতিক এ বিশৃঙ্খলা কাজে লাগাতে আক্রমণাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে ইসলামপন্থিরা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের দায়ে নিজেদের ২ নেতার ফাঁসির পর থেকে জামায়াত শেখ হাসিনা সরকারের জন্য বিশেষ মাথাব্যথার কারণ ছিল। সবচেয়ে বড় কথা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হলে, সামরিক বাহিনীর আরেকটি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অজুহাত বের করার সত্যিকারের বিপদও ছিল।
ණ☛ পেছনের অবস্থার বিপরীত একটি বিষয় হলো, বিএনপি নিজের অবস্থান নরম করার ইঙ্গিত দিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোণঠাসা অবস্থার ইতি ঘটানো ও নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা। বিএনপির উচিত জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা ও দলটির অনুসৃত কৌশল বর্জন করা। শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নীতির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে নীতিতে আবার শক্তিশালীকরণই হওয়া উচিত সামনের পাথেয়। পার্লামেন্টে কার্যকর সরকার ও বিরোধী দলের অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের একটি অপরিহার্য বিষয়, বিশেষ করে অপরিপক্ব গণতন্ত্রের জন্য তো বটেই।
নিউজ অর্গান টোয়েন্টিফোর.কম :
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন